আহা----,কি সুন্দর নীল আকাশ । সবদিক থেকে পৃথিবীকে ঘিরে রেখে দিয়েছে । ধরার বুকে সবুজের অপরুপ রুপের বাহার । তরু ,মরু ,পাহাড় ,নদী , ঝরনা ,সাগর---সহ আরো আরো অনেক কিছু এখানে অনুপম সৌন্দর্যের প্রবাহ সৃষ্টি করে চলেছে । সময়ের সাথে এর রুপ বদলের বিচিত্র খেলা রহস্য আর কৌতহলের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে । জল-স্থল-অন্তরীক্ষে রয়েছে মাছ-পশু-পাখি সহ বিভিন্ন রকম জীবের বসবাস । সবার অঙ্গ ছুয়ে বাতাস বয়ে চলেছে---দ্বিগবিদিগ---সকলদিক ।
দিন-রাতের পালাবদলে অনেক সময় গত হয়ে গেছে । পৃথিবী সবেমাত্র তার কৈশর পেরিয়েছে । মানুষের বসবাসের উপযোগী এ ধরার বুকে আদী পিতা-মাতা আদম-হাওয়ার আসার সময় হয়ে গেছে । কিন্তু তার আগে ঘটে গেল অন্য একটি ঘটনা । বেহেস্তী পরিবেশে ফুরফুরা মেজাজে আদম-হাওয়ার দিন ভালই কাটছিল । হঠাৎ করে ( নিষিদ্ধ বৃক্ষ ) গন্ধম তলায় যাওয়াতে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল । তাদেরকে পৃথিবীতে নেমে আসতে হলো ।
অনেক দুরত্বের ব্যাবধানে দু'জন দু'জায়গায় এসে পরলেন । বিরাট পৃথিবী । অজানা---, অচেনা পরিবেশ । পতি-পত্নি একে অপরকে হন্যে হয়ে খুজে বেড়াতে লাগলেন । এখানে কেউ নেই । তাই কাউকে জিজ্ঞেস করার মত কোনো উপায়ও মিলছিল না । একমাত্র স্রষ্টার কাছে কাকুতি-মিনতি করে এরকম অসহ্য বিরহ-বেদনার কথা বলা ছাড়া অন্য কোনো পথ আর খোলা ছিলনা । অবশেষে একদা স্রষ্টার সাহায্য এলো । আদম-হাওয়া একে অপরের দেখা পেলেন ।
মাটির মানুষ মাটির পৃথিবীতে সঙ্গীর সাক্ষাৎ পেয়ে ধন্য হলো । তাদের সংগ্রামী জীবনের বসন্ত বাতাসে---, বাসরের বিলাসী বাসনা বার বার উঁকি দিতে লাগলো । কখনো ( জোড়া-জোড়া ) দুইজন--, কখনোবা একজন---, এইভাবে তাদের অনেক সন্তান হতে লাগলো । লোকমুখে শুনা যায়---, তাদের না'কি কমবেশী আশি জোড়া সন্তান হয়েছিল । প্রতি জোড়ায় একজন ছেলে আর একজন মেয়ে জন্মগ্রহন করতো । আবার কখনো কখনো জোড়া ছাড়া শুধু একজন করে জন্ম নিত । তবে এই সংখ্যা খুবই কম ।
এরকম এক বিরাট কাফেলা নিয়ে আদম-হাওয়ার পরিবার গড়ে উঠলো । সেই সময়টা ছিল খাদ্য সংগ্রাহক যুগ । খাদ্য উৎপাদনের দরকার হতোনা । প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত খাদ্য-শস্য , ফল-মূল ও পশু-পাখি-মাছ সংগ্রহ করে খেতে হতো ।
সারা পৃথিবীতে এই একটি মাত্র পরিবার । পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ ও সুযোগের মালিকানা তাদের হাতে । আদম (আঃ) এবং তার ছেলে শীষ (আঃ) নবুওতের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন । মানে কয়েকজন নবী সেই পরিবারে অবস্থান করছেন । এসকল দিক বিবেচনায় আদম পরিবারে শুধু শান্তি আর শান্তি থাকার কথা । কিন্তু হঠাৎ করে অশান্তির আগুন যেন---, দাউ-দাউ করে জ্বলে উঠলো ।
আদম (আঃ)--এর বড় ছেলের নাম 'হাবীল' । বিয়ের বয়স হলে হাবীলের জন্য যে মেয়েটিকে পছন্দ করা হয়েছিল---, তা নাম 'আকলিমা' । এদিকে কাবীল আর আকলিমা একসাথে একই জোড়ায় জন্মগ্রহন করেছিল । কাবীল জেদ ধরে বসলো---, সে আকলিমাকেই বিয়ে করবে । কিন্তু আদম নবীর উপর স্রষ্টার ওহী হলো----, জোড়া ভেঙ্গে বিয়ে দিতে হবে । একই জোড়ার কাউকে বিয়ে করা যাবে না । স্রষ্টার এই আদেশ কাবীল কিছুতেই মানতে রাজী হলোনা । আদম (আঃ) বিপাকে পরলেন । স্রষ্টার নাফরমানীর অভিশাপ কত ভয়াবহ হতে পারে ----,এটা তার অজানা ছিল না । অনেক ভেবেচিন্তে আদম (আঃ) হাবীল ও কাবীলকে স্রষ্টার নামে কিছু উৎসর্গ (কুরবানী) করতে বললেন । দু'ভাই রাজী হলো ।
হাবীল কিছু শস্যদানা এনে একজায়গায় রেখে দিল । আর কাবীল একটা মোটা-তাজা পশু একটু দুরে বেঁধে রেখে দিল । কিছুক্ষন পর আসমান থেকে একটা অগ্নি এসে হাবীলের শস্যদানা গুলোকে পুড়িয়ে ছাই-ভস্ম করে দিল । এতে বুঝা গেল---, হাবীলের কুরবানী স্রষ্টা কবুল করেছেন । সে সময় কুরবানী কবুল হওয়া--- না-হওয়ার ব্যাপারটা এভাবেই সাথে সাথে বুঝা যেত ।
এই ঘটনায় কাবীল খুবই উত্তেজিত হয়ে উঠলো । তার অভিযোগ---, যেহেতু আদম (আঃ) নবী---সেহেতু তিনি স্রষ্টাকে বলে কয়ে বড় ছেলের ( হাবীলের) কুরবানীকে কবুল করিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছেন । এটা সে কিছুতেই মানবে না । সে আকলিমাকেই বিয়ে করবে । অনেক ভেবেচিন্তে কাবীল সিদ্ধান্ত নিল---, হাবীলকে হত্যা করতে হবে ।
তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃ হত্যায় প্ররোচিত করলো । একদিন সুযোগ বুঝে একটি বিরাট পাথর দিয়ে হাবীলের মাথায় আঘাত করলো । হাবীল মাটিতে লুটিয়ে পরলো----, তার মৃত্যু হলো । সেই সময়ের মানুষগুলো কমবেশী নব্বই ফিট লম্বা ছিল । এরকম একজন বিশালদেহী মানুষের দেহকে কি করবে----,কোথায় লুকাবে ? কাবীল কোনো কুল-কিনারা করতে পারছিল না ।
এমন সময় অদুরে দু'টি কাক মারামারি করতে করতে একটি কাকের মৃত্যু হলো । জীবীত কাকটি গর্ত করে মৃতঃ কাকটিকে মাটিতে ঢেকে দিল । এ দৃশ্য দেখে কাবীল হায়-হায় করে উঠলো । সে বলতে লাগলো--, “ আমি কি এই কাকের চেয়েও নির্বোধ ! আমি আমার ভ্রাতাকে লুকাবার ব্যবস্থা করতে পারছি না !"----এইদিক থেকে কাককে মানুষের আদি শিক্ষক বা গুরুও বলা যেতে পারে ।
প্রথম পুত্রের এরকম মৃত্যুতে আদম (আঃ)--এর অন্তর জ্বলিয়া যেতে লাগলো । পুত্র শোক---তাকে অতিশয় কাতর করে দিল । এ যন্ত্রনা---,এ যাতনা দেহ-মনকে জ্বলে-পুড়ে ছাড়খার করে দিতে লাগলো । সুখের পরিবারে দুঃখের ঢেউ আছড়ে পরতে লাগলো । গোটা পরিবারে ঘন-শোকের ছায়া নেমে এলো । আর্ত্মনাদ আর মাতমে প্রকৃতি স্তদ্ধ হয়ে গেলো ।
কিন্তু এ হত্যার জন্য শুধু কি কাবীলই দায়ী ? ইবলীস শয়তান সহ একটা বিরাট গ্রুপ এই হত্যাকান্ড ঘটানোর জন্য গভীর ষড়যন্ত্র করেছিল । ইবলীসের প্রপৌত্র---, মানে তার নাতীর ছেলে " হামা জ্বীনও "--- এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল । তখন সে কৈশরে উপনীত ।
শীলাদেবী হাতের ইশারায় আমাকে থামিয়ে দিল । পরন্ত বিকেল বিদায় নিয়েছে । রোদ চলে গেছে । আঁধার নেমেছে । চাঁদের আলো নদীতে বিকিরন ঘটাচ্ছে । চাঁদনী মাখা ঘন সন্ধা । মাছের মত কি জানি বড় একটা পানিতে ঢেউ তুলে মিলিয়ে গেল । হঠাৎ করে শীলাদেবী রেগে গেল । সে উঠে দাড়িয়ে বলতে লাগলো----, " এত বকবক করছিস কেন ? এ কাহিনীতো আমি জানি---, অনেক জানি---, তোর চেয়ে বেশী জানি---ভাল জানি ।“
আমি বললাম--," তাহলে এতক্ষণ আমাকে শুধু শুধু বলালে কেন ? থামালে না কেন ?”
সে বললো---," তোর প্যঁচাল ভালই লাগছিল । শুনতে মজা পাচ্ছিলাম । এজন্য তোকে থামাইনি । আর একটি কথাও বলবি না । সোজা বাড়ী চল । বাড়ীতে যেয়ে 'হামা জ্বীনের' কথা শুনবো । আমার শরীরটা কাঁটা দিয়ে উঠেছে । ভয় ভয় লাগছে । একটু দোয়া পড়ে আমাকে একটা ফু' দেতো । "
এই প্রথম শীলাদেবী আমার কাছে কিছু একটা চাইলো । তবু আবার কাকুতি-মিনতি করে । কিন্তু মুখের জোরটা ঠিকই থাকলো ।
শীলাদেবী আমার খুবই প্রিয়----, আমিও তার
দু'জনার দুটি মন---,শুধু দু'জনার ,
আমার ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্য আমারি থাক
শীলাদেবীর সাধনার বাহার তাকেই মানাক ।।
১৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৬২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪