সবুজ বিপ্লবের সবুজ সংকেত ।।

সবুজ (জুলাই ২০১২)

এফ, আই , জুয়েল
  • ১৭
  • ৮৮
পাগলী পাগলী ভাব নিয়ে অদ্ভুত অপরুপ রকমের মন মাতানো একটা হাসি হাসতে হাসতে রাণীমাতা নিজেকে বেসামাল করে দিয়েছিল । ক্ষনিকের তরে ছিটকে পরেছিল তার উচ্চ বংশীয় মর্যাদা ও আর্কষনীয় ব্যাক্তিত্বের বলয় হতে ।
একেতো জেদী । তার উপর জেদের মাত্রাটা এমন এক জায়গায় পৌছেছিল----, যেখানে জিততে হলে---, ঐ ভাবে হাসা ছাড়া তার আর অন্য কোনো উপায়ও ছিল না ।

বণ্যেরা বনে সুন্দর , শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ।
দাও ফিরে সেই অরন্য , লও এই নগর ।
----- প্রবাদ বাক্যের মত এ কথা গুলোর চলমান ধারনাকে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য রাণীমাতা একটা বিপ্লবের ডাক দিল ।


শীলা দেবী অনেকটা জোর করেই তার সাথে রাতটা কাটাবার জন্য বাধ্য করেছিল । শুক্ল পক্ষের উজ্জ্বল সেই রাতের ঘটনা-প্রবাহ অনেক নতুন রহস্যের জন্ম দিয়েছিল । ঘন যৌবনের পূর্ণিমার সেই চাঁদ প্রকৃতির পরতে পরতে জোঁয়াড় আর জাগড়নের যে শিহরণ বইয়ে দিয়েছিল----, শীলা দেবীর সাথে থাকার কারনে সেটা বুঝতে পারা অনেকটাই সহজ হয়েছিল ।


শীলা দেবীর ছোট বোন লীলাবতী । উঠতি বয়সের অপরুপ সুন্দরী তরুনী । ওজোন স্তরের ফাটল , গ্রীন হাউস এ্যাফেক্ট , বিশ্ব উঞ্চতা ও মরু-প্রক্রিয়া ----, এগুলো নিয়ে তার চিন্তার অন্ত নাই । এজন্য নাকি বেশী বেশী গাছ লাগানো দরকার । ওর বকবকানি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা ।
আমি বললাম----, বকবকানী থামা । যদি পারিস--- একটা পাগলী হাসি দিতে দিতে রাণী মাতার দলে যোগ দে । তারপর রাণী মাতার চেয়েও একধাপ এগিয়ে সবুজ বিপ্লবের ডাক দে । তখন সবাই তোকে সবুজ কণ্যা বলে ডাকবে । ঐ যে একটা গান আছে না ----, " দূর্বা সবুজ , পত্র সবুজ আর চির সবুজ বন---- । তার চেয়েও সবুজ কণ্যা , তোমার অবুঝ মন ।"
তোর মনের স্তরের ফাটল কোন সবুজ দিয়ে বন্ধ করবি---- আগে সেই চিন্তা কর । এ কথায় সে রেগে গিয়ে বলল ---, আপনাকে দিয়ে বন্ধ করব । তারপর আহত নাগিনীর মত ফোঁস ফোঁস করে চলে গেল ।

শীলা দেবী কিছুটা বিব্রত হলো । সে বললো---, এটা কি হলো ? আমি বললাম---, " আধ্যাত্মিকতার সবক দিতে হলে মন নিয়ে মশকরার এই প্রাথমিক স্তর অতিক্রম করা খুবই বিপজ্জনক । এতে প্রতিনিয়ত অপমানিত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা থাকে । আপনার অনুরোধেই আমি তাকে হালকা সবক দিতে চেয়েছিলাম ----,অনেকটা রাণীমাতার ঐ Love you---এর মত ।


মিথ্যা মহলে সবাই বসে আছে । গুরুরাজ আজরাহা সহ সবাই বেশ চিন্তিত । দেশটার কি হবে----এই চিন্তায় সবাই বিষন্ন ।
সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এই সোনার বাংলার খাদ্য-শস্য লুঠ হয়ে যাচ্ছে--- বিভিন্ন কৌশলে । আর তা অশুভ শক্তির হাতে যেয়ে জমছে । এর পাশাপাশি মাদকে ভাসছে গোটা দেশ । দূর্ভিক্ষের হালকা ধাক্কা আর মাদকের বিলাসীতায় দেশটা সম্পূর্নভাবে একটা মেথর রাষ্ট্রে পরিনত হয়ে যেতে পারে । ক্ষুধা , মাদকতা আর তীব্র বাজনার তালে তালে আর্যরা যেভাবে মানবতার ভিত্তিমূলে আঘাত করে একটি জাতীর নিম্ন বর্ণের মানুষকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মেথর বানিয়ে রেখেছে----, সেই সমীকরনের সমীরণ কিন্তু বড়ই মারাত্মক ।


কেউ বলছে---, রাস্তা-ঘাট , ব্রীজ-কালভার্ট উড়িয়ে দিতে হবে । লুঠের লট-বহরের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে হবে । কেউ বলছে----, না । বুদ্ধিভিত্তিক এই লুঠের বিরুদ্ধে বুদ্ধিভিত্তিক অবস্থান নিতে হবে । কেউ বলছে---, আমরা বেশী বেশী আবাদ করে আর গাছ লাগিয়ে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে দিব । কিন্তু বিপ্লবকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া হবে এবং এর সুফল কিভাবে পাওয়া যাবে ---- এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলছে না ।

গুরুমাতা এসে গেছে । সবাই সবার কথা বলে যাচ্ছে । শীলা দেবী সবুজ বিপ্লবের পক্ষে । আমি গুরুমাতাকে সম্মান জানিয়ে বললাম ----, সাধু-সণ্যাসী-সাধকদের জ্ঞানহীন বিপ্লবে জড়িয়ে না পরাই ভাল । এদেশে মালিকের বা জনগনের চেয়ে আমলা বা চাকরের অবস্থা অনেক ভাল । চুরি করে করে হূষ্ট-পুষ্ট হয়ে চাকরেরা এখন মালিককে ধমক দিচ্ছে । আত্মশক্তি ও ঐক্যের অভাবে মালিক বা জনগন এখন চাকরদের হাতে জিম্মী হয়ে পরেছে । এই মুহুর্তে যে কোনো বিপ্লবের সুফল চাকরদের দ্বারা ছিনতাই হতে বাধ্য । জনগনের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে --- জনতার রুহের জগতে রুহানী বিপ্লবের তরঙ্গ সৃষ্টি করা প্রয়োজন ।


গুরুমাতা বললেন----, এ বড় কঠিন কাজ । আমরা ইনসান । আমাদের শত্রু ইবলীশ শয়তান । তার বিরুদ্ধে জিততে হলে আধ্যাত্মিকতার পথ ধরে রুহানী বিপ্লবের বিকল্প নাই । কিন্তু আমরা এই বিপ্লব চালিয়ে যাব সবুজ বিপ্লবের আড়ালে । প্রকৃতির সবুজ আর মনের সবুজ ------ এই দুই সবুজের সৌন্দর্য্য ও শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে । এর জন্য সাধনার যে পথ সেই পথে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ।


রাণীমাতার কাছে এই বিপ্লবের বাণী পৌছে দিতে হবে । গুরুমাতা বারবার আমাকে কেন রাণীমাতার কাছে পাঠাতে চায়-----, তা ঠিকমত বুঝে উঠতে পারি না । শীলাদেবী বলে----, আমি নাকি সাধনায় অনেক দুর এগিয়ে গেছি । তাই আমার উপর গুরুমাতার বিশ্বাস আর ভরসাটা একটু বেশী । এজন্য জ্ঞান-বুদ্ধির সীমার বাইরের ব্যাপার গুলোতে তিনি আমাকে জড়িত করতে চান ।


রাণীমাতা এক আজব মহিলা । তার রয়েছে কয়েক রকমের জ্ঞান । সাপ ,জ্বীন ও মানুষের আদলে অদ্ভুত-অপরুপ আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী----এই রানীমাতা । জ্বীন-যাদুর শক্তিসহ তার রয়েছে অসম্ভব রকমের সম্মোহনী ক্ষমতা ।

আমি অনেক তোয়াজ করে রাণীমাতাকে বললাম----, আপনি যদি আপনার জ্বীন গুলির দ্বারা জেনে নিতেন ---, আগামী ৫০ বছর পৃথিবীতে বৃষ্টিপাতের পরিমান কেমন হবে----, তাহলে খুব ভাল হতো ।

রাণীমাতা বিরক্তিভরা ভাব দেখিয়ে অনেকটা এড়িয়ে গেল । ভাগ্যিস----, এবার তাকে Love you বলি নাই ।
রংমহলে জন্মদিনের জলসায় Love you বলাতে রাণীমাতা অন্তরে যে ধাক্কা খেয়েছিল ----, সেটা এখনো সামলে উঠতে পারে নাই । মনের কথা মনে রেখে এখন মেজাজ দেখাবার সুযোগটা ভালই কাজে লাগাচ্ছে ।


গল্প-গান আর গনিতের জটিলতা রাণীমাতার খুবই পছন্দ । তাকে বললাম---, একদা মিশর অধিপতি স্বপ্নে দেখেছিল----, সাতটি মোটা-তাজা গাভীকে সাতটি জীর্ণ-শীর্ণ দূর্বল গাভি খেয়ে ফেলছে । আর সাতটি সতেজ-সবুজ শীষ এবং অপর সাতটি শুষ্ক শীষ । ----এই স্বপ্ন তার কাছে দুঃস্বপ্নের মত মনে হতে লাগল । তিনি এর ব্যাখ্যা জানার জন্য ছটপট করতে লাগলেন ।

ইউসুফ নবী এই স্বপ্নের ব্যাখ্যায় বললেন----, প্রথম সাত বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে । ফল-ফসলে ভরে যাবে । পরের সাত বছর খরা হবে । দূর্ভিক্ষ দেখা দিবে । এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রথম সাত বছরের খাদ্য-শস্য শীষ সমেত সংরক্ষন করতে হবে ।
--- এই গল্প শুনে রাণীমাতা যখন একটু উদারতা দেখালো----, তখন তাকে বললাম----, আগামী ৫০ বৎসর বৃষ্টিপাতের পরিমানটা জানতে পারলে পৃথিবীতে খাদ্য-শস্যের ভারসাম্যা আন্দাজ করা সহজ হতো । কোনো অশুভ শক্তি কৃত্রিম দূর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিতে চাইলে তার মোকাবেলায় বুদ্ধিভিত্তিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা যেত । গুরুমাতা এরকম একটি চেতনাকে বিকশিত করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ।

রাণীমাতা বলল---, আমরাও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি । সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছি । সবার আগে মাদক মুক্ত সমাজ গড়ব । মাদককে প্রতিহত করব ।
আমি বললাম----, রাণীমাতা । মাদকের সুফল যারা ভোগ করছে---, সেই মাফিয়া চক্রে দেশটা ভরে গেছে । ঠুনকো আওয়াজ দিয়ে এটা প্রতিহত করা অত সহজ নয় । তারচেয়ে বরং তরুন প্রজন্মের মানসিকতার গতিমুখ বদলে দেয়া দরকার । তাদেরকে বুঝানো উচিত----, এক শ্রেনীর মানুষ নেশা করে বিশ্ব শাসন করছে । আর এক শ্রনীর মানুষ নেশা করে মেথরের চেয়েও নিচে নেমে যাচ্ছে । হে জাতীর তরুনেরা-----, তোমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ----, তোমরা কোন পথে চলতে চাও ?


রাণীমাতা তার মুচকী হাসিকে চেপে ধরে বললো---, তাহলে তুমি কি আমাকে প্রথম Love you--টা নেশা অবস্থায় দিয়েছিলে ! এরপর রাণীমাতা আওযাজ করে পাগলীর মত হাসতে লাগলো । রাণীমাতার এই হাসিকে যদি কখনো কোনো সাধক পুরুষ উসকিয়ে দিতে পারে -----, তাহলে যে অট্রহাসির সৃষ্টি হবে তার প্রভাবে অনেক বিপ্লব এক মোহনায় মিলিত হয়ে এক মহা বিপ্লবের আলপনা আঁকতে থাকবে ।।

[ এই লেখায় আগের লেখার ধারাবাহিকতা রয়েছে । ]
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ অনেক অনেক সুন্দর গল্প। ভাললাগা ও ভালবাসা রইলো।
Sisir kumar gain সুন্দর লেখা।শুভ কামনা আপনার জন্য।
Arup Kumar Barua জীবনের অভিজ্জতা আপনার লেখায় ফুটে উঠে | ভালোলাগলো |
সিয়াম সোহানূর ভিন্ন আমেজের গল্প। বেশ পরিচ্ছন্ন। অনেক কিছু শেখা হল। অভিনন্দন জুয়েল ভাই।
রোদের ছায়া গল্পের শিক্ষনীয় দিক খুব ভালো লাগলো , তবে বানান অনেক জায়গায় ঠিক করা দরকার ( না হলেও চলে অবশ্য ).....খুব ভালো উপস্থাপনা //
খোরশেদুল আলম জুয়েল ভাই, সব সময় বিষয়ের সাথে মিল রেখে ধারাবাহিকতায় লিখে যাচ্ছেন। চমৎকার লিখেছেন। Love you--
সূর্য ভিন্নতর চিন্তায় সবুজের চেতনা তুলে ধরেছেন। অনেক ভাল লাগলো।
স্বাধীন একটা ঘোর তৈরি করে দিলনা গল্পটা! সবুজ বিপ্লব আর মাদক বিরোধী মনোভাবে অনেক ভাল লাগল গল্পটা
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি lekhay rani matar choritro dekhlei bujha jay jewel vaiyer golpo......onek valo laglo dhonnobad jewel vai..................

১৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪