বর্ষার হাসি

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

এফ, আই , জুয়েল
  • ২৭
  • 0
# হাসিটা বাসী হওয়ার আগেই তাকে চুমু দিতে চেয়েছিলাম । কিন্তু আচমকা সে-ই চুমু দিয়ে দিল । এবারের চুমুটাতে সময় ও শক্তির মাত্রাটা একটু বেশী বলে মনে হলো । সিনেমায় দেখেছিলাম মানুষ রুপী নাগিণীর চুমুর শীতল ছোঁয়ায় মৃত্যুর হাতছানি । ফুল-বালিকার দেহ-পল্লবে বসে বিলাসী ভ্রমর চুম্বনে চুম্বনে অবশ করে লুঠে নেয় মধুরস । অবশ্য এটা একটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় ব্যাপার ।

তার লাল টুক-টুক শিরীন ঠোঁটের আলতো ছোঁয়ার আড়ালে এক উৎকট গন্ধের তীব্রতা আনন্দময়ীর আগমনকে রুখে দিল । সুন্দর লগ্ন মধুময় হওয়ার আগেই বিশ্বাস বিড়ম্বনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো । এত সুন্দর সুন্দর সাজ আর রুপের বাহারের আড়ালে এই গন্ধের রহস্যটা কি ? তাহলে কি আত্মা দূষিত হয়ে গেছে ? প্রেমময় যা কিছু হচ্ছে,-- সবই ছলনা ! নষ্ট মনের বেহায়া নাচন ? --- এ রকম অনেক কিছু অবাক হয়ে ভাবতে থাকে রাহা ।

ধন, জন আর শক্তির অহংকারে মত্ত হয়ে রাহা একবার মেঘরাজকে বলে পাঠিয়েছিল , বৃষ্টি থামানোর জন্য । মেঘরাজ সেটা শোনেনি । এতে রাহা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছিল , " আমি ইনসান , সৃষ্টির সেরা জীব । আমার কথা অমান্য করার সাহস মেঘরাজ পায় কি করে " ?
মেঘরাজ উত্তর পাঠিয়েছিল , " ধ্যান- জ্ঞান আর মনুষ্যত্বের দিক থেকে তুমি আর মানুষের স্তরে নেই । তোমার অবস্থান এখন চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও অনেক নীচে নেমে গেছে । এই অবস্থায় প্রকৃতির আর কেউ তোমার কথা মানতে পারে না । বরং তুমিই শয়তানের কথা মানতে মানতে ক্লান্ত হয়ে যাবে । ধ্বংসের পথে ধাবিত হতে থাকবে ।

এরপর রাহা কামালে ইনসানিয়াত বা পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে । কিন্তু পথের দিশা পায়নি । জীবনের এমন জটিল মূহুর্তে শিলার সাথে তার পরিচয় হয় ।পরে ধীরে ধীরে অন্তরঙ্গতার সৃষ্টি হয় ।

রুপ, গুন আর পরপোকারের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে,-- সে শিলা দেবী নামে পরিচিত । পুরুষ মানুষদের সাথে বেশী মেলা মেশার কারনে অনেকে তার সতীত্ব নিয়ে কলঙ্কিত কথা বলে । এত কিছুর তীব্রতা সয়ে সয়ে শিলা এগিয়ে যেতে চায় । সে জানে জীবনে সফল হতে হলে, এরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই এগুতে হবে ।
২/ বর্ষা কাল । প্রকৃতিতে নতুন জীবন ও নব যৌবনের দোলা । রাহা আর শিলা যাচ্ছে বড় দাদুর বড় বাড়ীতে সাহিত্য আসরে যোগ দেয়ার জন্য । প্রতি ঋতুতেই বড় দাদুর বাসায় সাহিত্য আসর বসে । এই আসরের প্রতি শহরের সকল স্তরের লেখক-লেখিকা ও কবি-অকবিদের একটি বাড়তি আর্কষণ থাকে । কারণ সভা শেষে নাস্তা দেয়া হয় । প্রতি বছর আষাঢ়ী পূর্ণিমার পরের দিন " বর্ষা ঋতু " উপলক্ষে সাহিত্য আসর বসে । এটা প্রায় সবারই জানা ।

বর্ষা , বন্যা, বাদল, প্লাবন সহ নাম না জানা অনেকেই এসেছে সাহিত্য আসর উপভোগ করবার জন্য । বড় দাদুর তদারকীতে আলোচনা চলছে খোশ মেজাজে । কখনো কবিতা , কখনো গান-- । এর সাথে করতালি ও হাসির উল্লাস সবাইকে মাতিয়ে রেখেছে ।

গ্রাম্য প্রবাদ আছে , " আষাঢ়ী দিন আর পুষারী রাইত । মানে হলো ,-- আষাঢ় মাসের দিন বড় । আর পৌষ মাসের রাত বড় । দিন বড় হওয়ায় বর্ষা মওসুমে ভাবুকেরা অনেক ভাবনা ভাববার যথেষ্ট সময় পায় । আর ভাবনাগুলো লেখনীর পরশে গল্প-কবিতার রুপ ধারণ করে কাব্য সৃষ্টি করে । আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বর্ষা ঋতুর প্রাধান্যটা হয়তো এ কারনেই বেশী । দাদুর এমন মজাদার কথা শেষ হতে না-হতেই করতালি আর উল্লাসের এক ভিন্ন অভিনন্দন ।
এরপর এক এক করে সবার গল্প-কবিতা ও মুক্ত আলোচনা চলতে থাকে ।
বর্ষার রুপে মোহিত হয়ে বর্ষাকে ভালবেসে বর্ষার রুপ বর্ননা ও বিরহের কত-শত কথা । আবার জন জীবনে কষ্ট-দূঃখ ও বেদনা সৃষ্টিকারী হিসাবে বর্ষাকে দোষ দিয়ে ভাবনার বাহারী প্রকাশ । এ যেন অতীতের প্যান-প্যানানীর এক নবতর ধারা ।
কিন্তু শিলার আরোচনায় সবাই চমকে উঠে । একটু নড়ে চড়ে বসে । উন্নত আর্কষনীয় ব্যাক্তিত্ব আর জ্ঞান মেশানো কথা বলার কারনে শিলার বক্তব্যের গুরুত্বই আলাদা । শিলা বলতে থাকে ,---- " বর্ষা , বৃষ্টি আর পানির ইতিহাস অনেক পুরাতন । সৃষ্টির আদিম প্রভাতে পানীয় জলের বাহারী ব্যাবহার স্রষ্টা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন । বজ্র- বিদ্যুৎ-বৃষ্টি সহ বর্ষা আসবে , বর্ষা যাবে । এর থেকে সুফল নেয়ার জন্য আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে । ঐশী কিতাব গুলোতে বিভিন্ন প্রকার পানি ও এদের উপকারিতা সর্ম্পকে অনেক কথা আছে । বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে কি লাভ ? এই পানি পান করলে কি লাভ ? তা আমাদেরকে ভাবতে হবে , জানতে হবে । বর্ষার জল মৃত পৃথিবীকে কিভাবে নোতুন জীবন দান করে ,- তার ইঙ্গিত স্বয়ং স্রষ্টা জানিয়ে দিয়েছেন ।

পৃকৃতির পরতে পরতে নব-জন্মের উন্মাদনা সৃষ্টিকারী বর্ষার বারি রাশির সঞ্জীবনী ক্ষমতার রহস্য উন্মোচনে আমরা যতই অগ্রসর হব,-- ততই এর থেকে মহা মহা উপকার পেতে থাকব । বর্ষা শুধু বর্ষা নয় । এ যেন জীবনের যোগানদাতা । শুধু ভাব আর কল্পনায় ভাসলে চলবে না । বর্ষার আসল রুপ, শক্তি ও সৌন্দর্য জানার চেষ্টা করতে হবে । আর এর থেকে কিভাবে উপকার নেয়া যায় , তা নিয়ে গবেষকের মত ভাবতে হবে । আর এই ভাবনা গুলোকে সাধারণ মানুষের উপযোগী করে কবিতা-গল্প ও গানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে । আর এভাবেই যে কোন বিষয় নিয়ে দিক-নির্দেশনা মূলক সাহিত্যের ধারা সৃষ্টি হতে পারে । যা মানব জীবনে সুখ-শান্তি ও কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবে । ধন্যবাদ । ধন্যবাদ সবাইকে ।

আবেগ ভরা কত সুন্দর সুন্দর মধুময় শব্দে শ্রদ্ধা-স্নেহ নিবেদন করে করতালির দমকা হাওয়া ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে । সবাই শিলার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ।

এরপর বক্তব্য দিতে এসে রাহা তেমন কিছু বলতে পারে না । সে শুধু গল্পের মত অতীতের একটি ঘটনা বর্ননা করে । ঘটনাটা হলো ,--- " বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর স্কুল জীবন থেকেই সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখতেন । ছাত্রদের মুখে মুখে তার প্রশংসা । স্কুলের যে সকল শিক্ষক কবিতা লিখতেন, তারা এই ব্যাপারটাকে ভাল মনে গ্রহন করতে পারলেন না । কবি রবি তখন সম্ভবত সষ্ঠ অথবা সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র । কতিপয় শিক্ষক ও ছাত্রের উপস্থিতিতে এক শিক্ষক রবীন্দ্রনাথকে বলল,-- খুব নাকি কবিতা লেখ ? এতই যদি পারো ,-- তাহলে আমি দুটি কবিতার লাইন বলছি , তুমি পরের লাইন গুলি মিলাও-তো । "
শিক্ষক বলল, " রবি করে জ্বালাতন আছিল সবাই /
বরষা ভরসা দিল আর ভয় নাই /
পরের লাইন দুটি রবি ঠাকুর মিলালেন,----
" মীনগন হীন হয়ে ছিল সরোবরে /
এখন তারা মহাসুখে জল ক্রীড়া করে / "
ঐ শিক্ষকেরা রবি বাবুর প্রতিভার ঝলক উপলদ্ধি করে খামুশ হয়ে গিয়েছিল । তারা রবি বাবুর কবি প্রতিভাকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন । "
কাজেই আমাদেরকে ভাবনায় বিভোর হলে চলবে না । ভাবনাকে জ্ঞানের সাথে বিকশিত করতে হবে । প্রকৃতির হাসি দেখে শুধু শুধু অবাক হলে হবে না । এই হাসির রহস্য ভেদ করার সাধনা থাকতে হবে ।

সব শেষে বিদায়ী ভাষনে দাদু বলছে ,--- শেষ হতে যাচ্ছে অনেক জ্ঞানের স্বরলিপি মাখা আজকের জলসা । বর্ষা ঋতুতে মেঘের ক্রন্দনে বৃষ্টির ফোটায় ফোটায় জ্ঞানের ফল্গুধারা------- আগে এভাবে বুঝতে পারিনি । বর্ষা আসে । আসে বার বার । হাসে নতুন হাসি । সেই হাসি কভূ হয় নাতো বাসি । আমাদেরকেও হাসতে হবে । বিশ্ব মজানো , ভূবন মাতানো নির্মল হাসি ।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিজানুর রহমান রানা এ যেন জীবনের যোগানদাতা । শুধু ভাব আর কল্পনায় ভাসলে চলবে না । বর্ষার আসল রুপ, শক্তি ও সৌন্দর্য জানার চেষ্টা করতে হবে । আর এর থেকে কিভাবে উপকার নেয়া যায় , তা নিয়ে গবেষকের মত ভাবতে হবে ।-----------ধন্যবাদ লেখককে।
Muhammad Fazlul Amin Shohag ভাই আসলে আপনি খুব ভালো লেখেন। গল্পটি ভালো লাগলো।
শামীম আরা চৌধুরী হাসি বেঁচে থাক....। বেশ প্রজ্ঞাময় লেখা। সুন্দর।
M.A.HALIM গল্পে কিছু মূল্যবান মেসেজ আছে তাই ভালো লাগলো। মান অনুযায়ী ভোট ও পেলেন। শুভ কামনা রইলো।
বশির আহমেদ লেখা টা চমত্কার l তবে লিখা টা কে গল্প না বলে প্রবন্ধ বলা বাঞ্চনীয় নয় কি ?
জাবেদ ভূঁইয়া দারুন হয়েছে গল্পটি!আমার গল্পটি পড়ার অনুরোধ রইলঃ http://www.golpokobita.com/golpokobita/article/2236/2344
অবিবেচক দেবনাথ অনেক ভালো গল্প
সুন্দর সকাল উপমা গুলি খুবই ভালো লাগলো .... শুভো কামনা রইলো...

১৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪