রক্তধারা

অশ্লীল (এপ্রিল ২০২০)

Nazma Hossain
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.৩৩
  • ১৫৩

মহাসড়কের   দু’ধারে সবুজ ফসলের ক্ষেত, মাঝে-মাঝে কিছু বসতবাড়ি। সাঁই-সাঁই করে ছুটে চলেছে গাড়ি। বাসে করে ঢাকার পথে রওয়ানা দিয়েছে লিলি। তার ছোট ভাই অস্টম শ্রেণির ছাত্র তাকে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিয়ে গেছে।  কয়েকমাস আগে তার বাবা দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়েছে। ঘর আলো করে প্রথম সন্তান এই কন্যা শিশুটি জন্ম নিলে তার বাবা বড় শখ করে নাম রেখেছিলো নূরজাহান লিলি। টুকটুকে লাল ঠোঁট আর তুল-তুলে গালের ফর্সা এই মেয়েটি  লিলি ফুলের মতই স্নিগ্ধ সুন্দর। তবে বাবার আদর আর মায়ের স্নেহচাদরের সুখ তার বেশিদিন সইলোনা। সে যখন অস্টম শ্রেণিতে পড়ে তখন তার বাবার রোগ ধরা পড়ে। একটি কিডনি নস্ট অন্যটি অকেজো হওয়ার পথে—বাবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছুটাছুটি— তারপরেও জেএসসিতে ভালো করে। ‘এ’ প্লাস পাওয়ায় ফুল ফ্রি পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। শুধু বাবা দেখে যেতে পারলোনা। দু’বছর ধরে ডায়ালাইসিসের খরচ যোগাতে গিয়ে এমনই অবস্থা হয় আত্মীয়-স্বজনও আর ঋণ দিতে চায়না। পরে তার মায়ের একটি কিডনি দান করে তবু শেষ রক্ষা হয়না।  অবস্থাসম্পন্ন পরিবার হয়েও চিকিৎসার খরচ যোগাতে যেয়ে জমি বিক্রি আর ঋণ করে আজ পথে বসার যোগাড়। অভাবের সংসার আর চলতে চায়না –তার চাচাত বোন পারুল আপা ঢাকায় থাকে, দুলাভাই গার্মেন্টসের ঝুট কাপড়ের ব্যবসা করে। একটা কাজ দিতে পারবে বলে ডেকে এনেছে আপা। ফোন করে বলে দিয়েছে ঢাকায় এসে পৌঁছালে লিলি যেন ফোন করে দুলাভাই এগিয়ে নিয়ে যাবে। লিলি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাটন মোবাইলটির দিকে যা ওর বাবার বুক পকেটে থাকতো—নিশ্চয় বাবার গায়ের গন্ধ এটাতে লেগে আছে। এখনো তার ছোঁয়া আছে। ওর চোখ বেয়ে পানি নামে--ঢাকায় আসার সময় ওর মা ওর হাতে দিয়ে বলেছে যোগাযোগ করার জন্য। অথচ বাবা বলেছিলো এসএসসিতে ভালো ফল করলে ওকে একটা স্মার্টফোন কিনে দিবে। এখন যেটা পেয়েছে সেটাই বা কম কীসে—তার বাবার অনুপস্থিতির শূণ্যতা বুঝতে দেয়না—এটা কাছে থাকলে মনে হয় বাবা তার সাথে আছে। বাবার স্মৃতিগুলো স্লাইড শো-এর মত একটার পর একটা  মনে আসতে থাকে—বাবাকে কী ভোলা যায়? দু’চোখ বেয়ে বন্যা নামে—তার পাশে বসা লোকটি ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করে। লিলি জানালার পাশে চেপে বসে সিটিয়ে যেতে থাকে। তারপরও লোকটি আরো বেশি জায়গা নিয়ে দু’পা ফাঁক করে বসে থাকে--  পুরুষরা কী বাসে উঠলে পা চেপে বসতে পারেনা? লোকটি গা ঘেঁষে বসে বলে কাঁদছো কেন তুমি?—লিলির লাউ-ডগার মতো নরম শরীরে এই প্রথম অশ্লীলতার ছোঁয়া লাগে, মানুষ অত বেহায়া হয় কী করে? ওড়নার আঁচলে চোখ মুছে সে। হেল্পারের  কথায় সম্বিত ফিরে ঢাকায় এসেছে বাস। পারুলকে ফোন করে  জানায় বাস কাউন্টারে দুলাভাইকে পাঠানোর জন্য।
     সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড, মধ্যাহ্নের সূর্যটা ঠিক মাথার উপরে। লিলি বাস কাউন্টার খুঁজে নিয়ে বসে—কত বাস আসে চলে যায়। কত মানুষ আসে যায়। মানুষগুলোর চোখ যেন ওকে গিলে খাচ্ছে। দৃষ্টিতেও যেন অশ্লীলতা! বাসের ড্রাইভার হেল্পাররা ওর মাথা থেকে পা পর্যন্ত দৃষ্টি লেহন করে চলেছে। কখন যে এর অবসান ঘটবে? থ্রিপিসের জর্জেট ওড়নায় উঠতি যৌবন ঢাকার চেষ্টা পুরুষদের দৃষ্টি এড়ায়না। দুলাভাই ফোন করে তিশা নামক গাড়ির কাউন্টারে এসে ওকে রিকশায় তুলে রওয়ানা হয়। ঢাকার রিকশাগুলো এতই ছোট নাকি? ওর দুলাভাই গায়ের সাথে লেপ্টে থাকে আর কোমরের পিছন থেকে হাত দিয়ে ধরে রেখেছে—মাঝে মাঝে সেই হাত আরো উপরের দিকে উঠানোর চেষ্টা করে। সে বলে—দু’লাভাই আমাকে ধরে রাখতে হবেনা—পড়বোনা’। ওর নেমে যেতে ইচ্ছে করে—কিন্তু পারেনা—তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হবে। বাড়িতে দুঃখিনী মা আর নিষ্পাপ ছোট ভাইটি ওর দিকে চেয়ে আছে। ভাইয়ের সামনে জেএসসি পরীক্ষা না হলে ওর সাথে আসতো। লিলির এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দুই মাস বাকি—এই সময়টুকুতে কিছু আয় রোজগারের চেষ্টা না করলে বাঁচবে কীভাবে? রাস্তাও ভাঙ্গা-কেটে ড্রেন করে রেখেছে—ঢাকায় রাস্তায় শুধু কাজই চলে নাকি? দুলাভাই আরো চেপে ধরে ও—রিকশা যাত্রা শেষে একসময় বাসায় এসে উঠে। পারুল আপা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। বাসাটা  ছোট হলেও ভালোই—বড় একটা বেডরুম তাতে আপা-দুলাভাই থাকে, একটা ড্রয়িং কাম ডাইনিং, কিচেন আর ওয়াশরুম। রাতে পারুলের থাকার জায়গা হয় কিচেনে। ড্রয়িং রুমে থাকতে আপা নিষেধ করলো—সামনে চলাচলের জায়গা। তবু ভালো—একটা আশ্রয় হয়েছে।
   একটা পরিচিত গার্মেন্টসে অস্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেয় দুলাভাই। মালিকের বড় একটা সাপ্লাইয়ের অর্ডার আছে সামনে তাই বাড়তি লোক দরকার। এই সুযোগে লিলির কাজ পাওয়ার সৌভাগ্য। সে অনেক আনাড়ি, তাই শিক্ষানবীস হয়ে কাজ শিখতে হচ্ছে—মাঝে মাঝে সেকশন সুপারভাইজার তাকে কাটিং ও সেলাই মেশিনের কাজ হাত চেপে ধরে শিখায়, পিছনে ওর পিঠ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মাথার উপরে ঝুঁকে মেশিন চালনা শিখায়। মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ আসে, লিলির দম বন্দ হয়ে আসে। ভাল লাগেনা তার--কখন যাবে এই লোকটা—ওর স্পর্শ আর চাউনিতেও যেন অশ্লীলতা। সুপারভাইজার ধমকায়—‘একসাথে চলাফেরায় তোর এত লজ্জা কিসের?   কাজ তো শিখতে হবে নাকি?’ দু’দিন পরে বলে- ‘লাঞ্চ আওয়ারের একটু আগে ছাদে আসিস, জরুরী কথা আছে’। লিলি বলে-‘কী কথা এইখানে বলেন?’ উত্তর দেয়-‘না, সবার কাজের ক্ষতি হবে’। লিলি ভেবে পায়না কী এমন কথা যা এখানে বলা যায়না?—থাক,  গেলেই শুনা যাবে সবাই একটায় লাঞ্চের জন্য ছাদেই যায়—না হয় দশ মিনিট আগেই গেলেই হয়। ছাদে উঠে দেখে এককোণায় আমগাছের ডাল ঝুলে আছে তারই ছায়ায় দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে মনোযোগ দিয়ে রেখেছে—মনে হয় ইন্টারনেট দেখছে। তাকে দেখেই বললো-‘আমরা তো একসাথেই কাজ করি। চল, একটা ছবি তুলি—স্মৃতি হয়ে থাকবে’।একটানে ওকে বুকের ভেতর নিয়ে সেলফি তোলার জন্য মোবাইল তাক করতেই দ্রুত ওড়না টেনে মুখ ঢেকে ফেলে লিলি। গ্রামে থাকলেও সে জানে মোবাইলে ছবি তুলে নেটে ছেড়ে দিয়ে  ব্ল্যাকমেইল করে। কিছুতেই ফাঁদে পা দেয়া যাবেনা—আপ্রাণ চেষ্টা করে অশ্লীল ওই বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার। এর মধ্যেই লাঞ্চ করতে আসা অন্য কর্মীদের পায়ের আওয়াজ আর কন্ঠ শুনে ওকে ছেড়ে দিয়ে বলতে থাকে—‘এত দেমাগ ভালোনা’।-দ্রুত নেমে যায় সুপারভাইজার। 
 চলতে থাকে লিলির গার্মেন্টস কর্মী আর নাগরিক জীবন। প্রথম কয়দিন লোকালবাসে যাতায়াত করেছে, এতে খুব বেশি যাত্রি উঠায় –যা মুড়ির টিনের চেয়েও বেশি। এসব বাসে উঠার অভিজ্ঞতা নেই। একদিন উঠার সময় ভিড়ের মধ্যে একটি শক্ত হাত শরীরের স্পর্শ কাতর অংগে চাপ দেয়। ভেবে পায়না এতে ওরা কী সুখ পায়?—আগে জানলে হাতে ধারালো ব্লেড নিয়ে রাখতো—এক পোচে কেটে দিতো সেই অশ্লীল হাত। কী ভালোই না হতো!—কিন্তু ভিড়ের মধ্যে চিনবে কী করে কোন হাতটি অপরাধী? আসলে কোন লাভ হয়না। রাতে ফেরার সময় বেশি সমস্যা হতো—একদিন বুকে হাত পড়েতো অন্ধকারে একদিন নাভীর নিম্নাংশে অশ্লীল স্পর্শ অনুভব করে। নারী হয়ে জন্ম নেয়াই কী আজন্ম পাপ?—এরপর সে বাসে চড়া বাদ দেয়। অনেকেই তো হেঁটে গার্মেন্টসে যায়—টাকাটাও বেঁচে যায়। প্রথম কয়দিন পা ব্যাথা করত—বাসায় এসে রাতে ফ্লোরে পাতা কাঁথার বিছানায় শুয়ে কঁকাতো—এখন গা সয়ে গেছে। এত ননীর পুতুল হলে তো চলবেনা! তাকে যে বাঁচতে হবে—পড়া লেখা চালিয়ে যেতে হবে।
  বাসায় যে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি তা-ও না। আপা- দুলাভাইয়ের ফরমাশ খাটতে হতো। একরাতে কিচেনের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়েছে লিলি, মাঝরাতে দরজা নক করার শব্দ। প্রথমে খুলেনি, আপা বাড়িতে নেই-ওনার ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গিয়েছে-  ফিরে আসার কথা। এসেছে কি-না, হয়তো সেই ডাকছে। পরে দরজা খুলে দেখে   দুলাভাই দাঁড়িয়ে।--‘আমাকে এককাপ চা দিস’। লিলির প্রশ্ন— ‘এতরাতে’?  চোখ কচলাতে থাকে লিলি—কাঁচা ঘুমে ছিলো।-- ‘না, তোর আপাও ঘরে নাই—মাথাটা একটু ধরেছে—ঘুম আসছে নাতো’—।   লিলির ভয় লাগে—‘ ঠিক আছে আপনি ঘরে যান—আমি নিয়ে আসি’। দ্রুত গ্যাসের চুলায় চা করে ফিরতেই দেখে দুলাভাই দুয়ারে দাঁড়িয়ে। আপনি যাননি?’—নাহ—তোর মিষ্টি হাতের মিষ্টি চা বানানো দেখছিলাম। লিলি চা এগিয়ে দেয়। কাপ না ধরে লিলির হাত ধরে দুলাভাই। ঝন ঝন করে কাপ ভেঙ্গে গিয়ে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে খান–খান হয়। লিলির বিশ্বাসও ভেঙ্গে যায়। দুলাভাই তাহলে ভালোনা—এজন্যই ড্রয়িং রুমে থাকতে দেয়নি আপা। দুলাভাইয়ের পায়ে গরম চা পড়ে যাওয়ায় দু’পা পিছিয়ে যায়—‘তোর থাকার জায়গাটা নষ্ট করে দিলাম--আমি পা-টা ধুয়ে বারান্দা থেকে মপ নিয়ে এসে পরিষ্কার করে দিচ্ছি—ভয় নাই’। এই সুযোগে লিলি দরজা বন্ধ করে দেয়। ফুপিয়ে কান্না আসে লিলির—কোথাও কী শান্তি নেই? এমন সময় ফোন আসে—লিলির আপা বলে—‘শোন, বেশি রাত হয়ে গেলো বলে আসতে পারলামনা। সাবধানে থাকিস—কেউ ডাকলেও দরজা খুলবিনা’। লিলি উত্তর দেয় ‘ঠিক আছে’--। কান্নার কন্ঠ শুনে ওর আপা বলে—‘কিরে কাঁদছিস কেন? ভয় কিসের? আমি সকালেই এসে পড়বো’। লিলি ভেবে পায়না, মানুষ এমন কেন? নারী দেহ কি শুধুই একতাল মাংস? তার কি কোথাও স্বস্তি নাই? নিরাপত্তা নাই?
জঘন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে চলে তার যাপিত জীবন। একদিন সুপারভাইজার এসে বলেছে গার্মেণ্টস মালিক তোর সাথে পরিচিত হতে চায়, তার রুমে ডেকেছে। পা টিপে টিপে মালিকের রুমে ঢোকে লিলি। ওকে দেখেই বলে বাড়িতে কে কে আছে? বলে মা আর ভাই আছে। বাবা নেই?—না। বাবার চেহারাটা মনে করতেই ওর চোখে পানি আসে, হু-হু করে কেঁদে ফেলে । মালিক উঠে লিলির ছোখ মুছানোর সময় গালটা টিপে দেয়। সুসজ্জিত রুমের সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে-‘শোন- তোকে ডেকেছি আমার একটা ছোট্ট কাজের জন্য, আমার শরীরটা ভালো নেই—ম্যাজ-ম্যাজ করছে, ঠান্ডা লেগেছে। হাত পা একটু টিপে দে তো’।  
লিলি বলে –‘আমি এসব কাজ পারিনা’
‘আচ্ছা আমি শিখিয়ে দিচ্ছি’-বলেই লিলির হাতটা টিপে ধরে। এমন সময় পিয়ন চলে আসে। লিলি ছুটে বেরিয়ে এসে কাজে যোগ দেয়। সবাই শুধু তার রূপটাই দেখে- কষ্টটা বুঝেনা। হাঁপিয়ে উঠে সে।
একদিন বাড়ি থেকে ফোন আসে ওর মায়ের অবস্থা খারাপ—ওকে দেখতে চায়। একদিকে স্বামী শোক অন্যদিকে কচি মেয়েটা অচেনা পরিবেশে পাঠিয়েছে, উপরন্তু কিডনী দান করে শরীর প্রায় অচল। যেন ফোন পাওয়া মাত্রই আসে। ভালোই হলো মাকেও দেখে আসবে একমাসের বেতনটাও দিয়ে আসবে। লিলি তাড়াতাড়ি ছুটির ব্যবস্থা  করে, মাত্র একদিন ছুটি পায়। মালিক কিছুতেই ছাড়তে চায়না। কারণ বড় একটি লটের সাপ্লাই দ্রুত পাঠাতে হবে। ওর কাজ শেষ হয় রাত আটটায়-অনেক কষ্টে সন্ধ্যা ৭টায় বের হতে পারে। ফিরে এসে কাজটা পুষিয়ে দিবে এই শর্তে। 
লিলি বাসস্ট্যান্ডে এসে একটা লোকাল বাস পায়, ভাল বাস আসতে অনেক দেরি, আর এদিকে সময় বেশি লাগালে গ্রামের ভেতরের রাস্তায় যেতে কষ্ট হবে। তাই উঠে পড়ে।    বিধি বাম- সন্ধ্যার পরে ট্রাক চলা শুরু হয়ে যায়, সারা ঢাকা শহরেই ট্রাফিক জ্যাম, কাঁচপুর ব্রীজের অবস্থা তথৈবচ। কোনরকমে শীতলক্ষ্যা ব্রীজ পার হয়ে মেঘনা ঘাটে এসে      বিরাট গাড়ি বহরে আটকা পড়ে বাস। মেঘ্না ব্রীজে ফাটল তাই কাজ চলছে। দেরি দেখে অনেক যাত্রি নেমে হেঁপার হয়ে ঐপারে গিয়ে অন্য গাড়িতে উঠবে। কারো বাড়ি কাছাকাছি তাই চলে যাচ্ছে। কী করবে লিলি একা পথও চিনতে পারবেনা। বাসের হেল্পার অভয় দেয় –বাসতো যাবে বসে থাকলেও সমস্যা নাই।–একসময় গাড়ি মেঘনা পার হয়ে দ্রুতবেগে ছুটে চলে। এবারে চান্দিনার মাধাইয়া বাজারে এসে প্রায়স অব যাত্রি নেমে যায়—কিছু লোকাল যাত্রি উঠেছে। তাই লিলির অন্য কোন ভয় জাগেনি। গার্মেন্টসের পরিশ্রমে আর বাসায় আতঙ্কে ভালো ঘুম হতোনা। চোখেও ক্লান্তি নামে—রাতের হিমেল হাওয়ায় চোখ বুঁজে ফেলে। হঠাত  গাড়ি ব্রেক করলে তন্দ্রালু ভাবটা কেটে যায়—হেল্পার বলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রাস্তা চার লেনের কাজ চলছে তাই জ্যাম । কঠিন পরিস্থিতি, পুরুষ যাত্রিরা নেমেযায়। লিলি নামতে চাইলে গাড়ি জোরে টান দেয় ড্রাইভার। হেল্পার বলে, অন্য একটা ছোট রাস্তা ঘুরে নূরীতলা নিয়ে গেলে কাছেই কেরণখাল গ্রাম, পৌঁছে দিবো, চিন্তা নাই। লিলির ওদের কথা ভালো লাগেনা, গাড়ির দরজায় এসে চেঁচাতে থাকে ‘আমাকে নামান- আমাকে নামান, আমি অটো রিকশা করে চলে যাই’!  হেল্পার-কন্ডাক্টর ওকে টেনে সিটে নিয়ে যায়। হেল্পার ওড়না ধরে টান দেয়- কন্ডাক্টর ব্যাগে হাত দেয়—লিলির আত্মরক্ষার পরামর্শটি মনে পড়ে যায়—। পারুল আপা বলেছিলো সেফটিপিন ফুটিয়ে দিয়ে বাঁচার জন্য। বাসে একবার পিছন সিট থেকে একটা হাত বার-বার সাইড থেকে ওর গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করলে ফিরে দেখে এক বয়স্ক লোক এই কান্ড করছে। দ্রুত সেফটিপিন দিয়ে খোঁচা দিলে পট করে হাতটা সরে গিয়েছিলো। এই বুদ্ধিটা কাজে লাগায়--জামার ঝুলে রাখা সেফটিপিন নিয়ে হেল্পারের হাতে বসিয়ে দেয়। ঝটপট ব্যাগের সাইড চেইন খুলে ছোট একটা কাগজের পুরিয়া খুলে ছিটিয়ে দেয়। ওদের চোখে মরিচের গুড়া সামান্য পড়াতেও কাজ হয়েছে। ততক্ষণে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে কাছে আসার চেষ্টা করছে—লিলি গাড়ির জানালা খুলে দেখে ঘন ঘোর অন্ধকার, বাস এসে পড়েছে কৃষি ক্ষেতে। কাছে কোন বাড়িঘরের চিহ্নমাত্র নাই, বাঁচাও-বাঁচাও চিৎকার করতে করতে সে কাঁধের ব্যাগটা হাতে ধরে জানালা দিয়ে লাফ দেয়। ওতে আছে ওর কষ্টের এক মাসের বেতন, ভাইএর পড়ার খরচ, মায়ের চিকিৎসা আর ওর ভবিষ্যৎ। ছিটকে                                                                                                                                                   পড়ে যায় ব্যাগ। মোবাইল ফোনে রিং বাজতে থাকে--- মনে হয় ওর দেরি দেখে বাড়ি থেকে ফোন করেছে--। ওর মাথাটা চৈত্রের শুষ্ক-শক্ত জমিনে আছড়ে পড়ে, ঝিম–ঝিম করতে থাকে—ফিনকি দিয়ে ছোটে রক্তধারা—সবুজ জমিনে এঁকে যায় লাল আলপনা। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে--আর কিছু মনে পড়েনা লিলির। এই রক্তে কী চিহ্ন আছে কোন অশ্লীলতার?   
                   ------------সমাপ্ত-----------

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী লেখা খুবই ভালো লাগলো।

১৯ মার্চ - ২০২০ গল্প/কবিতা: ১ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.৩৩

বিচারক স্কোরঃ ২.৩৩ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪