হিয়ার মাঝে তুমি রও

শীত (জানুয়ারী ২০২০)

Tanvir Ahmed Rifat
  • ১৫
  • ৭১
সকাল ১১টা, জিয়া উদ্যান। গায়ে চাদর জড়িয়ে পত্রিকা হাতে সিঁড়ির উপর বসে আবির; ভ্রু জোড়া কুঁচকে দেশী পত্রিকায়, মনযোগ দিয়ে বিদেশী সংবাদ পাঠ করছে। শীতের সকাল, উদ্যানের চারপাশটা একটু শান্ত। দিন বাড়ার সাথে সাথে শান্ত পরিবেশটা আর থাকবে না।
: চা গরম, চা গরম, চা, চা, চা।
: স্যার চা খাইবেন?
পত্রিকার ওপাশ থেকে চেহারাটা একবার দেখিয়ে আবার ডুবে গেল।
: কত করে কাপ?
: পাচ ট্যায়া স্যার।
আবির চোখের সামনে থেকে পত্রিকা খানিকটা নামালো। ৮/১০ বছরের একটা রোগা ছেলে তার সামনে দাঁড়ানো। পরণে ছেঁড়া স্যান্টু গেঞ্জি আর রংধনু টাইপের হাফপ্যান্ট। ভাল করে লক্ষ্য করার জন্য আবির পত্রিকা ভাজ করে হাতে নিল। ছেলেটার চেহারায় কোন ভাবল্যাশ নেই, কিছুক্ষণ পর পর জিহ্বা দিয়ে শুকনা ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে। পা খালি, চেহারায় খসখসে ভাব।
: কি নাম তোমার?
: আমার নাম দিয়া কি’তা করবেন? চা খাইলে কন?
আবির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, পাল্টা প্রশ্ন করলো
: এই! তোমার শীত লাগে না।
: যে না স্যার। আমরা গরীব মানুষ।
গরীবির সাথে শীতের কি সম্পর্ক আবির মেলাতে পারলো না। যাবগে সেই সব। ফ্লাক্স ২টা তার চাইতেও বড়। দু’হাত দিয়ে প্রাণপ্রণে টেনে উপরে ধরে রাখার চেষ্টা। তারপরও ঘাস ছুঁইছুঁই করছে। এ যেন ঘাস আর ফ্লাক্সের মাঝে ছোয়াছুঁই খেলা।
: স্যার চা দিমু?
: তিন কাপ দাও।
ঘাসের উপর ফ্লাক্স ভর্তি চা। ছেলেটা চা ঢালছে কাপে; চিপা চা, ফ্লাক্সের মাথা চিপে চিপে বের করা হচ্ছে সেই চা।
: তোমার নাম কিন্তু এখনো বল নি।
ফাঁটা ঠোঁটে হাসি-
: স্যার আমার নাম মোতাব্বর। কিন্তু বস্তির হগলে ডাহে মুইত্তা।
: স্ট্রেইঞ্জ
: ইসটেরিঞ্জ না স্যার, মুইত্তা।
মানুষের নাম এইভাবে কেউ খারাপ ভাষায় উচ্চারণ করতে পারে এটা আবিরের জানা ছিল না। অদ্ভুত, বিরাট অদ্ভুত। ধরা যাক এটা ছেলে না মেয়ে, আর তার নাম রাখা হলো সুচিত্রা, তাহলে কি সেই মানুষগুলো তাকে সুচিত্রা বাদ দিয়ে আলকাতরা বলে ডাকত। অথবা তার নাম রাখা হলো আগুন, নিশ্চয় তখন তাকে বেগুন বেগুন বলে সবাই ডাকাডাকি করত।
: স্যার বাকি দুই কাপ কারে দিমু।
: বাকী দুইকাপ আমি খাবো, তবে তুমি ঘুরে এসো।
: এহনি রাইখা দেন স্যার। পরে আইলে চা না থাকতে পারে। শীতের দিনে মাইষে চা বেশি খায়।
: তাই না কি!
: হ স্যার। শীতের দিনে মানুষ ভাত কম চা বেশি খায়।
: এই নাও এই চাদরটা তুমি এখন থেকে পরবে।
: ছেলাটা আগ্রহ ভরেই চাদরটা গায়ে দিল।
: স্যার আপনি দিছেন চাদর, আরেকজন দিছে কম্বল। আপনি দিলেন দিনে, তারা দিল রাইতে। তয় স্যার আপনার চাদর দেওয়াটা আমার বাল লাগছে আপনেরে কি সেলাম করমু।
বলতে বলতে মোতাব্বর আবিরের পায়ের কাছে চলে এল। আবির না না বললেও সে নাছোড় বান্দা। আবির পা যত উপরে তোলছে মোতাব্বরের হাত তত উপরে উঠছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে মোতাব্বর পা না ছুঁয়ে ঘরে ফিরবে না; এই করিণু পণ।
অবশেষে আবিরের হার মোতাব্বরের জয়। মোতব্বার চাদর গায়ে খুশি মনে হেলেদুলে চলে গেল। আবির হাতের চা শেষ করে আবার পত্রিকায় মনোনিবেশ করল। হঠাৎ পড়ায় ছন্দপতন-
: সরি,সরি,সরি ২০ মিনিট দেরী করে ফেললাম।
ফাইনালী পত্রিকা পড়ার সময় শেষ। পত্রিকা ভাঁজ করে-
: এত সরি বলার কি আছে, আমি তো জানি তোমার দেরী হতে পারে তাই’ত একটু পড়াশোনা করছিলাম।
আবির পত্রিকাটা বসার সিঁড়িতে বিছিয়ে দিলো। রিমি লক্ষ্য করলো আবিরের গায়ে আজ কোন গরম কাপড় নেই। গায়ে হালকা ফিন ফিনে একটা পাঞ্জাবি তার উপর সাধারণ ধরণের একটা সুয়েটার। সাথে জিন্স আর ফিতা সু; স্যান্ডল ‘সু’ যাকে বলে।
: আচ্ছা তুমি দেরী করে আসলে আমি কি কখনো কিছু বলেছি?
: না কিছু বলো নি, তারপরও নিজের একটা অনুশাচনা থাকে না।
: এই অনুশোচনা-টোচনা আমার সাথে দেখাবে না। লেট হবে এটা তো জানি!
: তারমানে ধরেই নিয়েছ আমি “লেট কুমারী”।
: না, বরং তুমি আমার কাছে মহামূল্যবান। যেটার কোন দাম হয় না। আমি কথাটা এই জন্য বললাম, দেশের যে অবস্থা সে অবস্থায় তুমি যে ২০ মিনিট দেরী করে আসতে পেরেছ সেটা তো অনেক। আর বলতে পারো অপেক্ষা করার মাঝেও একটা আনন্দ আছে।
: মানে; বুঝিনি। ঝেড়ে কাশো, সবদিনকার প্রতিশোধ কি একদিনে তোলবে। চাইলে তোলতে পারো।
: দেখ রিমি কথাটা তোমাকে বুঝিয়ে বললে তুমি বুঝবে।
: ঠিক আছে বুঝাও।
আগ্রহ নিয়ে রিমি পায়ের উপর পা তোলে আবিরের দিকে তাকালো। হাঁটুতে হাত তার তালুতে উপর রিমির থুতনি। গভীর মনযোগ।
: শুন, আমরা ছেলেরা যেমন হুটহাট করে এদিক সেদিক চলে যেতে পারি, কিছু করে ফেলতে পারি তোমরা মেয়েরা কিন্তু তেমনটা পরো না; বা বলা যায় তোমাদের করতে দেওয়া হয় না। কারণ তোমাদের জন্য পারিবারিক নিয়মটা একটু বেশি। সেটাও ভালোর জন্য। যেমন ধরো তোমাকে এখানে আসতে হলে প্রথমে পরিবারকে ম্যানেজ করতে হয়। তারপর কিছু কাজ থাকলে সেগুলো সারতে হয়। নিজেকে তৈরী করে নিতে হয়। সবকিছু শেষ করে রাস্তায় এসে আবার বাস বা নির্দিষ্ট বাহনের জন্য অপেক্ষা। আমরা ছেলেরা বাসে দৌড়াদৌড়ি করে উঠতে পারলেও তোমরা মেয়েরা তা পারো না; আর তোমাদের এটা শোভাও দেয় না। তার উপর অনেক বাসে মহিলা সিট বা অন্যান্য সিট খালি থাকে না; ফলাফল, তোমাদের উঠানো হয় না। আমরা ছেলেরা ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে বাদুর ঝুলা ঝুলে যাতায়াত করতে পারলেও তোমরা পারো না। কারণ মানুষ গুলো এখন আর মানুষ নেই, সব দানব হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত নারীরা বাসে কোন না কোনভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছে। যা খুবই হতাশার। তাই আমি সময় নিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করি, আর যখনই তোমাকে দেখি; তোমার হাসি মুখ দেখি তখনই আমার অপেক্ষার কষ্টটা দূর হয়ে যায়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাঙ্খিত ফলটি পেলে কি যে আনন্দ হয় সেটা বলে বুঝানো যাবে না।
দীর্ঘ বক্তৃতার পর আবির রিমির চোখের দিকে তাকলো। রিমি কখন মেরুদন্ড সোজা করে বসেছে এটা আবির টের পায়নি, তার চোখে পানি চিকচিক করছে। নোনা পানি। রিমি বুঝতে পারছে না কি বলবে-
: আবির, আমার মনে হয় জীবনে নিশ্চয় কোন ভালকাজ করেছিলাম, যার জন্য তোমার মত একজন মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে।
আবির টিস্যু এগিয়ে দিয়ে-
: দেখ, সামান্য এই অপেক্ষা যদি মেনে নেওয়ার মনমানসিকতা না থাকে তাহলে ভবিষ্যতে ঘর বাঁধবো কি করে। আর আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে কি শিখাব।
রিমির কান্না জড়ানো ঠোঁটে পূর্ণিমার একচিলতে হাসি। এই হাসি সচারচর সে কাউকে উপহার দেয় না। শুধু এটা আবিরের জন্য। আবির তো আর অন্য সবার কাতারে পরে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী সৃজনী লেখা। সুনিপুন ভাবনা।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০২০
আব্দুর কাদির এককথায় অসাধারণ। ভোট রইল প্রিয়।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০২০
আব্দুর কাদির এককথায় অসাধারণ। ভোট রইল প্রিয়।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০২০
আব্দুর কাদির এককথায় অসাধারণ। ভোট রইল প্রিয়।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০২০
আব্দুর কাদির এককথায় অসাধারণ। ভোট রইল প্রিয়।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০২০
আব্দুর কাদির এককথায় অসাধারণ। ভোট রইল প্রিয়।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০২০
আব্দুর কাদির এককথায় অসাধারণ। ভোট রইল প্রিয়।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০২০
আব্দুর কাদির এককথায় অসাধারণ। ভোট রইল প্রিয়।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০২০
আব্দুর কাদির এককথায় অসাধারণ। ভোট রইল প্রিয়।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০২০
আব্দুর কাদির এককথায় অসাধারণ। ভোট রইল প্রিয়।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০২০

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

একটি শীতের প্রেম কাহিনী। যেখানে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্য তীব্র শীত উপেক্ষা করে অপেক্ষা করছে। দেরী করে আসার পরও তার মধ্যে কোন রাগ অভিমান নেই। বরং সে তার প্রেমিকাকে সান্তনা দিচ্ছে। প্রেমিকা এমন প্রেমিক পেয়ে নিজের জীবনকে ধন্য মনে করে।

২৮ নভেম্বর - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪