মিজান কে চাকরি প্রয়োজনে ঢাকা যেতে হবে। সন্ধ্যার দিকে ফোন আসে, ঢাকা যেতে মিজানের গ্রাম থেকে গাড়িতে ৯ থেকে ১০ ঘন্টা সময় লাগে । সকাল আটটার মধ্যে অফিসে থাকতে হইবে। অফিস থেকে এমনটাই জানিয়েছে মিজানকে,, মিজান ভাবল রাতে খাবার খেয়ে, দশটার দিকে গাড়িতে রওনা দিবো। মিজান সন্ধ্যার দিকে, টিকেট কাউন্টারে একটি টিকেট বুক দিয়ে রেখেছিল। মিজান যথা সময়ে বাস কাউন্টারে গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ল ।
গাড়ির সুপারভাইজার মিজান কে একটি সিট দেখিয়ে দিল। মিজান সেই সিটে বসে পড়ল। আর মিজান খেয়াল করলো পাশে একটি বৃদ্ধ মহিলা বসে। এতক্ষণে এই গাড়িটা ঢাকার দিকে ছেড়ে দিয়েছে। মিজান খেয়াল করলো কান্নার শব্দ শোনা যায়। পাশে বসা মহিলাটি কান্না করছে। মিজান মনে মনে ভাবল বৃদ্ধ মহিলাটি কে কিছু জিজ্ঞাসা করবো। আবার ভাবল বৃদ্ধ মহিলাটি যদি কিছু মনে করেন।। হঠাৎ মিজান শুনতে পায় কে যেনো তাকে ডাকছে, মিজান ভাল করে খেয়াল করলো, সেই বৃদ্ধ মহিলাটি কিছু বলবে, বৃদ্ধ মহিলা মিজান কে বলল, বাবা তুমি কোথায় যাবে। মিজান দেখল তাড়াতাড়ি সব সামলিয়ে নিয়ে কিভাবে সুন্দর করে কথা বলছে। মিজান বলল আমি ঢাকাতে যাবো। আমার চাকরি কাজের জন্য। মিজানের আগে কোনদিন রাতে যাতায়াত করেনি। বৃদ্ধ মহিলাটি বলল, তোমার চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। মিজান বলল জি আমার একটা ইন্টারভিউ আছে।
আমার অনেক দিনের স্বপ্ন আমি একটা চাকরি করব। অনেক জায়গায় সিভি দিয়ে আসছি। কোন কাজ হয়নি, মানুষের পিছে ঘুরতে ঘুরতে জুতার নিচে ক্ষয় হয়ে গেছে। কোন লাভ হয় নাই। এটা হবে কিনা জানিনা । বৃদ্ধ মহিলাটি বলল আল্লাহ তোমার মনের আশা পূর্ণ করুক বাবা । মিজান বৃদ্ধ মহিলাকে জিজ্ঞেসা করল আপনি কার কাছে যাবেন । বৃদ্ধ মহিলাটি বলল, এই জীবনে আমার সব থেকেও নাই । মিজান বলল বুঝতে পারি নাই, আপনার কথা। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের কে বিবাহ করিয়েছি। প্রথম দিকে ছেলের বউ আমাকে অনেক যত্ন করতো। আমাদের সংসার অনেক সুখের ছিল। মনে হতো সংসারে স্বর্গ আছে। এক মাস পরে ছেলে, ছেলে বউ কেউ দেখতে পারতো না আমাকে। দিনে এক বেলা খেতে দিতো। আবার কোনদিন দিতো না আর কিছু বললে ছেলের বউ আমাকে ধরে মারধর করতো, ছেলে কোন প্রতিবাদ করতো না। রাতে কোনো দিন বারান্দায় আবার কোন দিন রান্না ঘরে থেকেছি। চার মাসের মতো। গ্রামের মাতাব্বর কে বললে দু-এক দিন ভালো থাকতো । কিছুদিন পর পুনরায় আবার আগের মতো শুরু হতো। কথাগুলো বলছে আর বৃদ্ধ মহিলাটি অঝোরে দু চোখের জল ফেলছে। মিজান ও কথাগুলো শুনে দু চোখের জল ফেলছে। বৃদ্ধ মহিলাটি বলল তাই, মনের দুঃখে সব ছেড়ে ঢাকা দিকে রওনা দিয়েছি। আমার একটি মেয়ে বিয়ে দিয়েছি।
মেয়ে স্বামী কে নিয়ে সে ঢাকাতে থাকে, জানিনা কোথায় থাকে। মিজান বাড়ি থেকে হালকা কিছু খাবার সঙ্গে নিয়ে ছিল । সেগুলো বৃদ্ধ মহিলাটি কে দিয়ে বলল আপনি এগুলো খান, আমার মনে হয় কিছু খাওয়া হয়নি রাতে আপনার। বৃদ্ধ মহিলাটি খাবার গুলো দেখে খুশি হয়ে গেল। বৃদ্ধ মহিলা সেগুলো খেয়ে নিলো। মিজান কে প্রাণ ভরে দোয়া করলো । এদিকে ভোর হয়ে আসছে,, মিজানের গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই বৃদ্ধ মহিলাটি নেমে গেল। মিজান অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল, , মিজান বলল আপনি থাকেন। আমার কাজ শেষ হলে আপনার মেয়েকে আমি খুঁজে দিবো । বৃদ্ধ মহিলাটি কোন কথা না শুনে হাঁটা শুরু করে দিল। মিজান মনে মনে ভাবল এমন সন্তান আছে। যারা মাকে এত কষ্ট দিতে পারে। ধিক্কার জানাই ঐ সমস্ত সন্তানকে, যারা মার সাথে এমন আচরণ করতে পারে। সমাজে এরকম চলতে থাকলে, কোন বাবা-মা তার সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে না।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এই গল্পে একজন মায়ের স্বপ্ন কিভাবে ধুলিস্যাৎ হয়ে যায় সেটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।। মানুষ স্বপ্ন দেখে স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে।। সবার স্বপ্ন সত্যি হয় না।
০৩ নভেম্বর - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
২৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪