মঞ্চ কথা

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১১)

Mashiur Rahman
  • 0
  • ১০৮৬
আমরা যেখানটাতে অবস্থান করছিলাম তার প্রাকৃতিক পরিবেশটা ছিল মনোরম: আকাশে সূর্য এবং মেঘ ছিল - তাদের লুকোচুরি খেলা আমাদেরকে আলোড়িত বিলোড়িত করতো। হাওয়া ছিল মৃদু-মন্দ আর ছিল সবুজ ছায়া বীথিকা দলের গমনা-গমন। পাশে বিচিত্র স্বভাবের মনোরমা নদী আমাদেরকে যার পর নাই উপকৃত করতো।- কিন্তু এ-সবের অস্তিত্ব আমাদেরকে যতটা না নাড়া দিত, তার চেয়ে বেশি নাড়া দিত - সেই প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে জাত মানুষদের ইম্পেরেটিভ সেনটেন্স। সর্ব স্তরের মানুষের দেহাবয়ব আমাদের লৰ্য গোচর হতো এবং তার চেয়ে বেশি দেখতাম আমরা মানুষের তৈরি ঘর-দুয়ার ইমারত কাঠামো, পোশাকাদি,যন্ত্রাদি আর কৃত্রিম ছলা-কলাদি। সমাজের যিনি মাথা - তার কথা রং (ভুল) হলেও শিরোধার্য ছিল আর অনেক অবশ্য পালনীয় কথা অখ্যাতজন বললে তা আমাদের কাছে অগ্রাহ্য ছিল।
সুতরাং মঞ্চে যিনি তার কথা আমাদের শোনার ইচ্ছা না থাকলেও শুনতে হচ্ছিল। যেখানে সে বচনের উচ্চ-বাচ্যতা চলছিল - সেটা একটা আপাত সাম্প্রদায়িক শিৰাঙ্গন হলেও তারা উগ্র সাম্প্রদায়িক মনোভাবের ছিল না। আমরা ছিলাম নিচে আর যিনি বলছিলেন তিনি ছিলেন মঞ্চে। কিন্তু তিনি তারও চেয়ে অনেক বড় মঞ্চ নায়কের কথা বলছিলেন। যিনি একটি দেশ-জাতির কর্ণধার ছিলেন, এখন প্রয়াত তাঁর মহত্বের কথা আমাদেরকে শুনতে হচ্ছিল। মঞ্চে তিনি যে প্রয়াত শীর্ষ মঞ্চ নায়কের মহত্বের কথা প্রচার করছিলেন তারও সেটা নিজের ইচ্ছা থেকে ছিল না, কমান্ডমূলক বাক্য দ্বারা তিনিও তাড়িত। অর্থাৎ কিনা ৰমতাসীন সরকারি দলের প্রয়াত নেতার গুণগান প্রচার কার্য ছিল সে সভার উদ্দেশ্য এবং সরকারি চিঠির বরাতে সে আয়োজন। চল্লিশ বছরের স্বাধীনতা জীবনে যে কাজ তারা কখনো করেনি আজ বাধ্য হয়েছে সে কাজ করার।
দেখলাম, এমন কমান্ড চিঠিতে অনেক সত্য কথা বেরিয়ে আসে - যা মানুষ গোপন করে এসেছে বিশেষ স্বার্থ হাসিলের জন্য - দলীয় মত পার্থক্যের কারণে অনেক সত্য কথাই মানুষ বলতে চায় না - সব সময় একটা রং চড়িয়ে একটা মিথ্যা ফানুস সে উড়াতে চায়। এমন ধারণার কারণ - মাওলানা আঃ ছালাম মিয়া, মাও: মোতালেব শেইখ তারা প্রাচীনতর জন আমাদের জামানায়। তারা সেই বিশাল বপু দরাজ গলার বিশাল নেতা জাতির কর্ণধারকে স্বচক্ষে দেখেছিলেন পেয়েছিলেন ৰণতরে হলেও তার সংস্পর্শ। আমরা যারা তাদের বক্তৃতাগুলো শুনছিলাম তারাতো কখনো ভাবিই নি যে অত বড় মহান নেতার সংস্পর্শ আমাদের এ অখ্যাত গাঁয়ের কোথাকার অখ্যাত মাওলানা শিৰক কাছ থেকে দেখেছিলেন। হ্যাঁ এতদিন যদি তাদের এ পরিচয়টা পেতাম তাহলে অন্তত আমরাও সে মহত্বের সংস্পর্শ অনুভব করতে পারতাম !
তিনি মাওলানা আঃ সালাম সাব আমাদের সে অনুচ্চ মঞ্চে বলে চলেছিলেন - তাঁর মতো মহান নেতা আর ২য়টি নেই।..... আমি তার সাথে একাধিকার করমর্দন করেছি... কত সদাশীল আন্তরিক তিনি ছিলেন।.... আমি যখন ফরিদপুরের মাদ্রাসায় পড়ি ...... ইত্যাকার তার জীবনের ঘটনা সমৃদ্ধ বর্ণনা বক্তৃতামালা আমাদেরকে যার পর নেই নতুন কথা শোনার স্বাদ এনে দিচ্ছিল। লৰ্য করছিলাম, যারা সে প্রয়াত নেতার নাম এলে তাচ্ছিল্যের সাথে প্রত্যাখ্যান করতো, আজ তারাই কি গভীর মনোযোগের সাথে সে প্রয়াত নেতার কথা শুনছে !
ইনিই না সেই মাওলানা সালাম, যিনি ক্রমাগত ঐ প্রয়াত নেতার দলের- যারা আজ ৰমতায় তাদের বিরুদ্ধে নানান কটু-কাটব্য করতেন - এমন কথাও বলতে শোনা গেছে -'জারজ সন্তান আবার জাতির কর্ণধার হয় কেমন কইরা আঃ ! জাতির জনকতো ছিল আঃ সেই কায়েদে আজম.... !' শব্দের উচ্চারণে কি ভক্তি প্রণয় দৃশ্য। অথচ আজকে তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে কথা বলছেন তা যে মঞ্চ কথা অভিনয় তা আমাদের কারো মনে হচ্ছিল না ; বরং আমাদের মনে যে প্রতীতি জম্মাছিল তা হলো সত্যের। আমাদের কাছে আরো প্রতীয়মান হচ্ছিল- মানুষতো মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলে না- বা করেনা অভিনয়ও ; বরঞ্চ মানুষ মঞ্চের বাইরে মিথ্যা অভিনয় মঞ্চকথা বলে বেড়ায়।
মাওলানা মোতালেব বলছিলেন ঘূর্ণিঝড়ের কথা। সেটা দেশ স্বাধীনের পর। তিনি তখন ছোট - ১২/১৩ বছরের কিশোর, গিয়েছিলেন স্কুলে। সেদিন দুপুর বেলা কোথা থেকে এক প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাস এসে তাদের বাড়ি-ঘর এলাকা সব মুহূর্তের মধ্যেই করে দিয়ে গেল লন্ড-ভণ্ড। কলের মাথা উড়ে গেছে, টিনের চালা দুমড়ে-মুচড়ে কাগজের মতো উড়ে গিয়ে পড়লো কোথায় কোথায়। তিনি তার কাঁধ দেখিয়ে বললেন- এই যে, কাটা দাগ তা ঐ ঝড়ে টিন পড়ে কেটেছিল। আরেকটু সোজাভাবে লাগলে আজকে এখন আমাকে আর এখানে কথা বলা হতো না সেদিনই হয়ে যেতাম শহীদ। তো সেই ঝড়ের খবর শুনে এসেছিলেন শেখ সাহেব। যে অজ গাঁয়ে কখনো আজও পর্যন্ত যায়নি কোনো সরকারি বড় অফিসারও সেখানে দেশের প্রেসিডেন্ট ! এই নদী দিয়ে স্পীড বোটে তিনি গিয়েছিলেন। টিনের আঘাতে আমার জখম দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন এবং তার নির্দেশ মতো আমাকে স্পীড বোটে করে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। এ-সব বলছিলেন মাওলানা মোতালেব আর কেমন বাষ্পাকুল হচ্ছিল তার চোখ-মুখ। কিন্তু আমরা আরো অবাক হচ্ছিলাম, এতদিন আমরা এ-সব কথা শুনিনি বলে। এ দেশের একজন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট নাকি খলিফা ওমর তুল্য ছিলেন । তার গল্প এতো শোনা গেছে মাওলানাদের কাছ থেকে কিন্তু এ মহান নেতার এমন বদান্যতার কথা কেন এতদিন বলেন নি মাওলানা মোতালেব ? সত্য কথা তবে কি মানুষ মঞ্চে এসে বলে ? আর জীবন বাঁচাতে বা চালাতে যা বলে তা সব মিথ্যা -মঞ্চের ?
আরেকজন প্রফেসর বলছিলেন গ্রীক ট্র্যাজেডির গল্প। ইডিপাস সে নাটকের নাম। লিখেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ বছর আগে সফোক্লিস নামে নাট্যকার। সে নাটকের গল্পটা হলো এমন যে, দলে দলে লোকসব জলপাইয়ের ডাল হাতে রাজদরবারে এসে হাজির হচ্ছে। সেকালে সেদেশে এমনি নিয়ম ছিল যে, লোকরা কোনো সমস্যায় নিপতিত হলে দলে দলে রাজদরবারে এসে রাজার কাছে জানতে চাইত কেন এমন হচ্ছে যে, তাদের জমিতে ফসল ফলছে না। চারিদিকে অভাব অনটন আর দুরবস্থা ? রাজা বিষয়টা আগে থেকেই জেনেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত এবং কেন এ দুরবস্থা তার কারণ জানার জন্য তিনি ইতিমধ্যে মন্দিরে লোক পাঠিয়েছেন। মন্দির থেকেই তখন সব তথ্য পাওয়া যেত। মন্দিরে যিনি গিয়েছিলেন, তিনি এসে সংবাদ দিলেন যে, এ দুরবস্থার কারণ হলো- বর্তমান রাজার আগে যে রাজা ছিল, তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং হত্যাকারী এখনও এ দেশেই বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। আর সে জন্যই দেশের এ দুরবস্থা। -প্রফেসর সাহেব এ-সব বলছিলেন আর আমরা সবাই শুনছিলাম। শুনছিলাম - আজ জাতির জনকের বিচার হচ্ছে কিন্তু সে বিচার কেন তার দলের লোকরা এসে করবে ? পুরো জাতিই তো সে অন্যায় হত্যার বিচার চাবে ? তবে আমরা কিনা কত অকৃতজ্ঞ ।- যার দ্বারা আমাদের পরিচয় হলো, তাকেই আমরা হত্যা করলাম আর আইন করলাম এ হত্যার বিচার করা যাবে না! - প্রফেসর সাহেবের এমন বিশ্লেষণ আমরা আগে শুনিনি বা আমাদেরকে শুনানো হয় নি। এবং আবার আরেকজনের নিকট থেকে প্রমাণ পেলাম যে, মঞ্চে যারা কথা বলে তারা মিথ্যা বলেনা; বরং জীবনের পথে চলতে গিয়ে মানুষকে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়।
এবম্বৎ আমাদের মঞ্চ কথা শেষ হলে আমরা সবাই আবার জীবনের পথে বের হলাম এবং দেখলাম আমরা এখানে মঞ্চ ছেড়ে আমরা সবাই স্বাধীন । আর স্বাধীন হয়েই আবার মিথ্যাকে জীবনের অঙ্গ মনে করলাম।
আরেকবার আমরা সবাই বুঝলাম, পরাধীন মঞ্চই তবে আমাদের জন্য প্রযোজ্য।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য সেই পুরোনো অতি পুরোনো একটা কথা "সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মুগ্ধ জননী............. মানুষ করোনি।" মানুষ করতে গেলে কিছু কমান্ড লাগেই ........ লেখাটা ভালো হয়েছে....
মোঃ মুস্তাগীর রহমান এমস সুন্দর লেথার জন্য ধন্যবাদ.............
সায়মা আক্তার না পরার তালিকায় অনেক সুন্দর লিখা রয়া jai
বিন আরফান. আমার দেখা ভালো গল্পের মধ্যে একটি. আলহামদুলিল্লাহ অপূর্ব লিখেছেন. আর সুন্দর একটি মতামতের জন্য আমি অভিভূত. দুয়া রইল. আরো ভালো লিখুন. আমার লেখা বঙ্গলিপি পড়ার আমন্ত্রণ রইল. http://www.golpokobita.com/golpokobita/article/736/372
নষ্ট কবিতার একটি অংশ ( Nirob Ouhan Masum) খুব সুন্দর গল্প ।ভাল লাগলো । ধন্যবাদ ।

২০ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী