হৃদয়ের আর্তনাদ

ভাঙ্গা মন (নভেম্বর ২০১৯)

মোছা: আফরুজা আক্তার
  • ৫৭
গভীর রজনীতে শয্যায় শুয়ে থেকেও বীপার যেন দুটি লোচনে নিদ আসছেনা। ক্রান্তের শত স্মৃতি তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।পরিপার্শ্বে কোথাও যেন কোন সাড়া শব্দ নেই।পাশের রুমের সকলেই নিদের রাজ্যে এমনকি নিজের রুমে পাশের বেডে শুয়ে থাকা বান্ধবী বিন্দিও তাতে অংশ নিয়েছে। রুমের লাইট, ফ্যান সব বন্ধ। হালকা শীত। রুমের জানালাটা বন্ধ করতে ভুলে যাওয়ায় শির শির মলয় রুমের ভিতর ঢুকে শরীরটা যেন আরও শীতল করে দিচ্ছে। কিন্তু এমন পরিবেশেও বীপা যেন নিজের মন্টাকে আর দমে রাখেতে পারছেনা। তাই সে অশ্রু সজল চোখে আলতো পায়ে দরজার জানালাটা খুলে বারান্দায় এসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।উদাস করা মনে আকাশের দিকে তাকায় ।কেবল মাত্র কয়েকটি তারকা মিটি মিটি জ্বলছে আর চাদটি যেন ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বীপা আবারও মনের অজান্তে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
এদিকে নিজের রুমে শোয় বান্ধবী ঘুমের মাঝেই কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে জেগে ওঠে। কিন্ত সে আন্দাজ করতে পারেনা কোথায় থেকে আসছে এই শব্দ। আর ততক্ষণে ভালো ভাবে লক্ষ্য করে দেখে বারান্দার দিক থেকে আসছে। তখন দু’চোখ বন্ধ করেই আসতে শব্দ করে বলে বীপা বারান্দায় এমন করে কাঁদছে কে?
ওপাশ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে বিন্দি তার চোখ খুলে বিছানায় উঠে বসে। কিন্ত কিছুই দেখা যায় না।তাই সে লাইটা জ্বালিয়ে দেয়। দেখতে পায় বীপা রুমে নেই ।দরজাটা খোলা।
বীপা আবারও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।মনের কষ্টগুলো কারো নিকট প্রকাশ করতে না পাড়ায় যেন বুকে পাহাড়ে পূর্ণ হয়েছে।
বিন্দি এক পা, দু’ পা করে বারান্দায় গিয়ে পেছন থেকে বীপার কাঁধে হাত রেখে বলে তুমি অমন করে কাঁদছো কেন!কি হয়েছে তোমার?
বীপা যেন এমন দুঃসময়ে বান্ধবীকে কাছে পেয়ে আবারও গলা জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
বিন্দি বলল, বীপা এবার কান্না বন্ধ করো। তাছাড়া পাশের রুম থেকে সকলেই উঠে আসবে। সমালোচনা বলবে।এখন বল কি হয়েছে তোমার ? বাসায আন্টি/আংকেলের কোন সমস্যা হয়নি তো ?
বীপা মাথা নেড়ে উত্তর দেয় না। তারা ভালো আছেন।
তাহলে বল বীপা কি হয়েছে তোমার। তুমিতো জানো বান্ধবীর কাছে কিছু লুকাতে নেই। আর বান্ধবী মানে হলো একে অপরের দুঃসময়ের সাথী।তাই বিপদে তোমার পাশে যদি নাইবা দাড়াতে পারলাম তবে কিসের বান্ধবী বল?
বীপা বলল, আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে বিন্দি, আমি যে আর বাঁচতে চাইনা।
সর্বনাশ! মনে?
হ্যাঁ বিন্দি হ্যাঁ।তুমিতো জানো, আমি আমার পাশের গ্রামের বিজয় নামের একটি ছেলেকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসতাম।তাকে নিয়ে সুখের ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেতাম। একই সংগে স্কুল/কলেজে লেখাপড়া করে আসছি। কিন্ত দুঃখের বিষয় এবারের মাষ্টার্সে অন লাইনে দু’জন দু’কলেজে চান্স পেয়েছি।
বীপা এখন থাকনা এসব কথা। বর্তমানে কি হয়েছে সেটা বল?
বিন্দি, গত এক সপ্তাহ পূর্ণ হয়ে গেল বিজয়ের মোবাইলটা বন্ধ দেখায়। তাছাড়া বিজয়ও আমার মোবাইলে একটি বার ফোন দেয় না। তবু নিজের মন্টাকে অনেক শান্তনা দিয়ে রাখি। ভাবি আগামীকাল হওতো খোলা পাবো। সে হওতোবা কোন সমস্যায় পড়েছে। কিন্ত আজ সন্ধাবেলায় ফোন দিলে বিজয়ের ফোনে একটা মেয়ের কন্ঠ পাই। পরিচয় নিয়ে জানতে পারলাম সে নাকি বিজয়ের স্ত্রী।গত ৫দিন হলো সে বিয়ে করেছে। তারপর তথ্যটা যাচাই করার জন্য বান্ধবী পরিচয় দিয়ে তার মায়ের সাথে কথা বললে একই কথা জানতে পাই।
বিন্দি এখন তুমিই বল, আমি যে এই ব্যর্থ জীবন নিয়ে আর বেচে থাকতে চাইনা। লেখাপড়া শিখে যার জন্য বড় হতে চেয়েছিলাম সেই তো আজ আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। তাই লেখাপড়া ছেড়ে আগামীকালই গ্রামের বাড়িতে চলে যাবো।
বীপা এমন কথা তুমি আর কদাচ মুখেও নিয়ে আসবেনা।আর এতোদিনেতো অন্যকে বুঝতে পেরেছো। তাই এবার নিজেকে একটু বুঝতে শেখ ঠিক আছে? তাছাড়া তোমাকে যে লেখাপড়া শিখে চাকুরী নিতে হবে। কিছুতেই হাল ছেড়ে দিলে চলবেনা। এক বিজয় চলে গিয়েছে তাতে কি হয়েছে। দেখবে ১০টা বিজয় তোমার পিছু নিয়েছে। এবার ঘুমাও।তুমিতো জানো আগামীকাল মাষ্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা। বরং লেখাপড়ায় মন দাও বুঝলে!
তখন সে বান্ধবী বিন্দির কথায় নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করল। প্রেমের ব্যথা বুকে নিয়ে লেখাপড়া শেষ করে।
প্রায় দু’বছর পর বীপার বাংলা বিভাগে কলেজের চাকুরী হয়। প্রেমের ব্যর্থতায় মন্টা ভেংগে গেলেও এখন সে বিধবা মাকে নিয়ে প্রায় সুখেই আছে।খুব ছোট্ট বেলায় তার বাবা মারা গেছেন। ভাংগা মনেই তার লেখাপড়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল।
বীপা শহরেই কলেজের পাশেই বাসা ভারা নেয় তার মাকে সংগে নিয় থাকবে বলে। তাই সে ভাবছে সামনে ২৫ তারিখে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মাকে নিয়ে আসবে। দুখুনী মায়ের মুখে হাসি ফুটাবে। একটু শান্তিতে রাখার চেষ্টা করবে। আর এজন্য পরম আনন্দে মায়ের জন্য দামি পোশাক, মুল্যবান জিনিস পত্রাদী, ভালো খাবার কিনে রাখে।
কিন্ত বিধাতার কি এমন নির্মম পরিহাস: বীপা রেডি হয়ে সকাল ৮টায় গ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটে। আর এমন সময় বীপার চাচী বাড়ি থেকে বান্ধবী বিন্দির কাছে ফোন দিয়ে জানার বীপার মা খামোকা হার্ড এটাক্ট করে মারা গিয়েছে। আর তাই যেন বীপাকে না জানিয়ে তার সংগে করে নিয়ে আসে।
বিন্দি চাচীর কথায় ফোনের লাইনটা কেটে দিয়ে বীপাকে ফোন দিয়ে জানায় সেও তার সাথে যাবে এজন্য অপেক্ষা করতে।
তারপর যেই কথা সেই কাজ। বিন্দি এসে উপস্থিত। বীপা যেন বিন্দির এমন ব্যবহারে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
দু’জনে গাড়িতে যাত্রা করে। বীপা মাঝে মাঝেই তার মায়ের মোবাইলে ফোন দিতে চায়। কিন্ত বিন্দি নানা বাহানা দেখিয়ে সেই সময়টি কাটিয়ে দেয়।
একসময় তারা পাশের গ্রামে ঢুকতেই ছলনাময় প্রেমিক বিজয় ও তার স্ত্রী বীপার সামনে পড়ে। আর তখন বীপার যেন আবারও কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা লেগে যায়।কিছু না বলে চোখে অশ্রু নিয়ে সামনের দিকে এগুতে থাকে।
বীপা ও বিন্দি যতই বাড়ির কাছি কাছি যেতে থাকে লোকজন ততই একে অপরের মুখ চাওয় চাওই করতে থাকে। আর বিন্দি তাদের সব কিছুই বুঝতে পারছে।
একসময় তারা বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই বীপার নানী এসে দুখুনী নাতীর গলা জড়িয়ে কাঁদতে লাগল। আজ যেন তাদের বাড়িতে লোকজনের বিশাল সমাবেশ।
বীপা মা, মা বলে ডাক দিতেই সেখানে উপস্থিত সকলেই কেঁদে ফেলে। তার মাকে বাড়ির পিছনে শেষবারের মত গোছল করানো হচ্ছে। অবশেষে সে তার মায়ের মৃত্যুর কথা জানতে পারে। দুঃখের ঘোরে তার মন্টা যেন ভেংগে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। অতপর সে মৃত মায়ের কাছে গিয়ে জ্ঞানশুণ্য হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
হায়রে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! মা নেই, বাবা নেই। সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য যাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ভালো বেসেছিল সেও বিশ্বাসের প্রাচীর ভেংগে বুক ভরা ব্যথা দিয়ে চলে যায়। বীপার ভাংগা হৃদয়ের আর্তনাদ দেখার মত যেন কেউ নেই।
তারপর বীপা ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পায়। গ্রাম বাসী সকলেই বীপার মাকে কাফন দাফন করিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত করে রেখে চলে যায়।
বীপা যেন আজ বড়ই অসহায়।তারপর থেকে হাজারো দুঃখ, কষ্ট বুকে জড়িয়ে ভাংগা মন্টা নিয়ে দিনের পর দিন পাড়ি দিতে থাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Hasan ibn Nazrul প্রকৃতি কখনও কখনও সবকিছু কেড়ে নেয়। হয়ত নতুন কিছু দিতে বা নাইবা দিল তাতে কি!!!
কেতকী লিখতে থাকুন। গল্প কবিতায় স্বাগতম। শুভেচ্ছা সহ ভোট রইলো।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

হৃদয়ের আর্তনাদ

১৭ অক্টোবর - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪