দিনাজপুরে যে বাসায় ভারা থাকতাম, তার পাশের বাসায়ই থাকত সে । নাম আদ্রিতা । পদবীটা জানা নেই ।
আমার বাড়ীর একদম দক্ষিণে ছিল আমার ঘর । জানালায় দাড়ালে সোজা চোখ পরে আদ্রিতার দিকে । ওর পড়ার টেবিল জানালার কাছেই ছিল । থাইগ্লাস থাকায় দেখতে অসুবিধা হতো না । দেখতে ছিল আসাধারণ ।
উত্তরবঙ্গে এতো সুন্দরী মেয়ে সচরাচর চোখে পরে না । শুনেছিলাম তারা এখানকার স্থায়ী না । কিন্তু তাদের স্থায়ী ঠিকানা আমার জানা নেই ।
কাজল-কালো বড়-বড় দুইটি চোখ, ছোট্ট একটি নাক তাতে ধাতব নলক পরা । বিভিন্ন ধাতুর সংমিশ্রণে তৈরী । হয়তো বংশের প্রতিক । গোলাপী ঠোটের কথা না বললেই নয় । মনে হয় রং করেছে, সাধারণে এমন হয় না, হয়তো ।
এরকম কোন রমনীর প্রেমে পরতে কোনো পুরুষের বেশি সময় লাগবে না । এলাকার সকলেই প্রায় তার প্রেমে হাবুডুবু খায় । কিন্তু সে জানতো বলে মনে হয় না ।
একদিন সকলে আমি স্কুলে যাব বলে রেডি হচ্ছিলাম । হঠাৎ আদ্রিতার বাবাকে আমাদের বাসার দিকে আসতে দেখে খানিকটা অবাক হই । কারণ তিনি এমন কাজ আজ দ্বিতীয়বার করছেন ।
গতবছর তার মা মারা যাওয়ায় অন্তেষ্টি ক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন ।
তার আগে বা পরে এসেছিলেন বলে মনে পরে না আমার
বাড়িতে না আসলেও বাবার সাথে তার বিশেষ অন্তরঙ্গতা ছিল । বাবা প্রয়ই তার দোকানে যেতেন আড্ডা দিতে ।
বাবার সরকারী চাকুরী । অবসর গ্রহন করেছেন প্রায় দুবছর । এখন বেশিরভাগ সময় তিনি তার বয়সীদের সহিত গল্প করেই কাঁটাতে ভালোবাসেন ।
তিনি এসে আমায় দেখেই বললেন,"বাবা কেমন আছো ?" আমি বললাম,"জ্বী,কাকু ভালো আছি । কিন্তু আপনি হঠাৎ এইদিকে ! কোন বিশেষ প্রয়োজনে কী ?" তিনি বললেন,"না বাবা, তেমন কিছু না । তোমার বাবা নেই বাসায় ?" আমি প্রতিউত্তরে,"বাবা তো একটু আগেই বাহিরে গেলেন । আপনি বসুন, বাবা চলে আসবে কিছুক্ষণে ।" তিনি বললেন,"না বাবা,আজ আর বসবো না," বলেই একটা কার্ড আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,"এটা তোমার বাবাকে দিও ।" আমি হাতে নিয়ে বললাম,"আচ্ছা ।"
তিনি আর থামলেন না । কার্ড দিয়েই চলে গেলেন । তিনি চরে যাওয়ার পর আমি কৌতুহলে কার্ডটি খুললাম । খুলে যা দেখলাম তা আমার হার্ট অ্যাটাক করার জন্য যথেষ্ট, কিন্তু কেন জানি না, হার্ট অ্যাটাক হলো না ।
দেখে যা বুঝলাম, তা হলো এটি একটি বিয়ের কার্ড । আর বিয়েতে পাত্রি হলো সয়ম আদ্রিতা।
যাকে বিয়ে করার জন্য ছোটবেলা থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি তার বিয়ের কার্ড হাতে পেয়ে প্রথমে খুব কষ্ট পেলাম ।
কিন্তু কিছু করার ছিল না । কাউকে যদি বলি তাহলে সেই আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে । কারণ আদ্রিতা আমার থেকে প্রায় ছয় বছরের বড় ।
ভালোবাসার মানুষকে সবসময় আপন ভাবতে হয়, তাই আপন ভেবেই আদ্রিতাকে নাম ধরেই ডাকি । এতে এখন আর কেউ কিছু বলে না । আগে সবাই প্রচুর বকাবকি করত ।
কার্ডটা টেবিলে রেখে স্কুলে গেলাম । কিন্তু সেদিন আমার মন পড়াতে আর বসলই না ।বারবার একই চিন্তা মাথার ওপর দিয়ে ঘুরছে, ছোট থেকে যাকে ভালোবাসি সে বিয়ে করে অন্য কারো ঘরের বউ হয়ে যাবে ! আর জানার ফাক দিয়ে তাকে দেখতে পারব না, এসব ভেবে খারাপ লাগছিল খুব ।
এমনই করে বিয়ের দিন এসে গেল । রামকৃষ্ণ মিশনের হলে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল । বিয়েতে অথিতী এসেছিল উল্লখযোগ্য সংখ্যাতে । যেরকম আয়োজন করা হয়েছিল তাতে উভয় পক্ষেরই খুব মোটা অংকের খরচ হয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
একে একে বিয়ের সব পর্বই শেষ হয়ে গেল । সব শেষ । এখন বিদায়ের পালা । আমার এক বন্ধু বিদায় দেখার জন্য আমায় ডাকছিলো । আমি ওকে ধমক দিয়ে বলেছিলাম যে ওখানে দেখার কিছুই নেই, এখন আদ্রিতা কেঁদে কেঁদে বলবে যে ও শ্বসুর বাড়ীতে যাবে না ।
আমরা দুজনই বিদায়ে গেলাম না । কিন্তু হঠাৎ একটা পুরুষ কন্ঠের ক্রন্দন শুনে আর না গিয়ে পারলাম না । "আমি শ্বসুর বাড়ী যাব না," বলে কান্না করছে নব জামাতা ।
এ দৃশ্য দেখে আমার অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছু করার ছিল না ।
পাত্রি না গিয়ে পাত্র কেন শ্বসুর বাড়ীতে যাবে, এই কথাটাই ভেবেছি সারাদিন ।
পরে মায়ের কাছে শুনেছিলাম, আদ্রিতাদের পূর্বপুরুষরা উপজাতি । ওদের সমাজে ঘর জামাই-এর প্রচলন রয়েছে । নতুন জামাতাই হলো তাদের "ঘর জামাই" ।।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
ঘর জামাই
১১ সেপ্টেম্বর - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪