মুক্তির দিন

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১১)

তৌসিক খান tonmoy
  • 0
  • ৮৭২
সবেমাত্র সন্ধ্যা লেগেছে। এখনও চারিদিকে পুরোপুরি অন্ধকার নেমে আসেনি। আমি বাবা ও আমাদের গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে মাগরিবের নামায পড়ে বাসায় ফিরে এলাম।মসজিদে আমাদের সাথে অবশ্য আরো কয়েকজন ছিলেন। ইমাম সাহেব আমাদের বাড়িতেই থাকেন। আমিও বাবার মতো উনাকে খুবই পছন্দ করি। বাবা উনাকে কী কারণে পছন্দ করেন জানি না , কিন্তু আমার উনাকে পছন্দ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, উনার কাছ থেকে নানান ধরনের জ্ঞানের কথা জানতে পারা যায়। আমার এসব জ্ঞানের কথা শুনতে বড় ভালো লাগে। কী সুন্দর কিন্নর কণ্ঠ তার! আমার মনের একটা গোপন ইচ্ছা হলো- তার সাথে আমার আপুর বিয়ে দেওয়া। সমস্যা হলো, আমি আপুর চেয়ে অনেক ছোট তো, তাই আপুকে হুট করে কিছু বলতে পারি না। আমি পড়ি নাইনে আর আপু পড়ে কিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাছাড়া দেশে নাকি এখন যুদ্ধ হচ্ছে। এ সময় এই কথা বলা যায় কিনা তাও বুঝতে পারছি না। সবাইকে এখন কেমন যেন অস্থির বলে মনে হয়। এমনকি পশু-পাখিদেরও। আমি কিন্তু মহানন্দেই আছি। স্কুল বন্ধ। কবে খুলবে তাও জানিনা। যুদ্ধ না থামলে আর স্কুল খুলবে বলে মনে হয় না। স্কুলে এখন পাক সেনারা ক্যাম্প বানিয়েছে। শুনেছি সেখানে তারা নাকি অনেক খারাপ কাজ করে।
যাহোক, যা বলছিলাম, আমি মহানন্দেই আছি। যুদ্ধ কিংবা বাইরের কোনোকিছুই আমাকে তেমনভাবে স্পর্শ করে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে বলে আপুও এখানে চলে এসেছে। এখন আমি আর আপু মিলে সারাদিন অনেক মজা করি। শুধু আপু কেমন যেন অন্যমনস্ক, মনমরা হয়ে থাকে বলে মনে হয়। অথচ যুদ্ধের আগে যখন আপু এখানে থাকতো, তখন আমরা কী যে মজা করতাম! আমি বুঝি, দেশে এখন খারাপ অবস্থা চলছে বলে আপু এরকম আছে । যুদ্ধ থামলে সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে। তখন আপু আর ইমাম সাহেবের বিয়ে হবে। যে করেই হোক,আমি আপুকে রাজি করাবো। মা মরার আগে বা পরে আমি কোনো কথা বলেছি আর আপু তা শোনেনি, এমনটা কখনো হয়নি। কাজেই এবারও হবে না।
আমি আপুর ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বললাম , ভেতরে আসবো আপু ?
আপু আমার দিকে না তাঁকিয়েই বলল, আয়। ভেতরে আয়।
আপু খাটে হেলান দিয়ে বসে কী যেন সেলাই করছে। আমি আপুর সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, কী করছো আপু ?
এবার আপু আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। তারপর বলল, কিছু না। তুই দাঁড়িয়ে কেন? বস।
আপু আমার হাত টেনে তার কাছে বসাতে বসাতে বলল, আয়। আমার কোলে আয়।
আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, তুমি যে কী বলো না আপু! আমার কী কোলে চড়ার বয়স আছে?
আপু আমাকে টেনে তার কোলে বসিয়ে বলল, তাই নাকি? আমার লৰী সোনা, চাঁদের কনাটা এখন বড় হয়ে গেছে?
অবশ্যই বড় হযেছি। আমি এখন নাইনে পড়ি।
আপু চোখ কপালে তোলার ভঙ্গি করে বলল, তাই নাকি! অবশ্য আমার কাছে তুই নাইনে পড়লে যা, টু- থ্রিতে পড়লেও তা, সবই সমান।
সবই সমান মানে?
আপু আমার নাকে নাক ঘসে বলল, সমান মানে ঐ যে বললাম, তুই আমার সবসময় কাছে লৰী সোনা , চাদের কণা, পুটুস পুটুস বাবু।
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় আব্বা গলা খাঁকারি দিয়ে শব্দ করে কাশলেন। তিনি ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি বললাম, কিছু বলবে আব্বু?
আব্বু আপুর দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার বোনকে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
আপু নিচের দিকে তাকিয়ে আমাকে বলল, উনাকে বলতে বল। আমি শুনতে পাচ্ছি।
একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, আপু কিন্তু আব্বুর সাথে কথা বলে না। আব্বুর দিকে দৃষ্টিও দেয় না। কারণ আব্বু হলো রাজাকার। আমার আপু রাজাকারদের একদম পছন্দ করে না। আপু শুধু মুক্তিবাহিনীদের খুব পছন্দ করে। আমিও আপুর মতো। আমারও রাজাকার আব্বুর সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না। কিন্তু আমি তো আব্বুকে অনেক ভয় পাই তাই কিছু বলতে পারি না। তাছাড়া আমার আপুর মতো এত সাহসও নেই। মাঝে মাঝে মনে হয়, ইস! আমার সাহস যদি আপুর মতো কিংবা মুক্তিবাহিনীর মতো হতো! আমাদের গ্রামের যুবক ছেলেরা প্রায় সবাই মুক্তিবাহিনীতে চলে গেছে। আমিও যদি যেতে পারতাম! আরেকটু বড় হলেই নাকি ওরা আমাকে নিতো। আমি 'আরেকটু বড়' হওয়ার জন্যে অপেৰা করি। তখন আমি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিব। সবার আগে আমি পাক সেনাদের না মেরে রাজাকারদের মারবো। কে বাপ, কে ভাই এসব বিবেচনায় আনবো না। সব রাজাকারদের মারবো । সব। এমনকি আব্বুকেও। এটাও আমার মনের আরেকটা গোপন ইচ্ছা - যা আমি কাউকে বলিনি, হয়তো বলবোও না।
আব্বু খুক খুক করে নকল কাশি কেশে বললেন, আম্মা! ভালো আছেন?
আপু রাগি গলায় বলল,আমি কেমন আছি তা আপনার জানার প্রয়োজন নাই। যা বলতে এসেছেন তা বলে বিদায় হন।
আব্বু ফিসফিস করে বললেন, বলতে চাচ্ছিলাম, আজ বাসাতে পাক সেনারা আসবে। তাদের দাওয়াত জানিয়েছি। আপনি দয়া করে নিজের ঘর থেকে বের হয়েন না । দরজা জানালা সব বন্ধ করে ঘর অন্ধকার করে ঘাপটি মেরে থাকবেন। কোনো শব্দও করবেন না। মোট কথা, কেউ যেন বুঝতে না পারে এই ঘরে কেউ আছে।
বুঝলে কী হবে? আমাকে আপনার আদরের পাক সেনারা ধরে নিয়ে যাবে?
ছি:! এসব কী বলেন আম্মা? আপনাকে ধরবে কেন? আপনাকে উনারা বোনের মতো স্নেহ করে। তাছাড়া আমি রাজাকার। আমাকে উনারা অনেক সন্মান করেন।
আব্বুকে থামিয়ে আপু বলল, আপনি থাকেন আপনার সন্মান নিয়ে। আর পেছনের ঘরে যে দুই মেয়েকে আটকে রেখেছেন তাদের কী হবে? পাক সেনাদের হাতে তুলে দেবেন? একবারও মনে হয় না, এই বয়সী আপনার একটা মেয়ে আছে। এসব মেয়েরা আপনার কন্যা সম।
আব্বু গম্ভীর গলায় বললেন, আপনাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। এসব আমি ভাববো। আর পেছনের ঘরে যে দুই মেয়ে আছে তারা হিন্দু। মালাউন জাত। এদের এ দেশ থেকে তাড়াতে হবে। সব মালাউনকে এই দেশ থেকে শেষ করে দিতে হবে। আর তাছাড়া আমি হিন্দু মেয়ে বেশি ধরি। মুসলমান মেয়েছেলে তেমন একটা না।
হিন্দুরা মানুষ না? আপনি এখান থেকে দূর হন। আপনাকে অসহ্য লাগছে।
আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হাসান, যা বললাম তাই কর।
আব্বু চলে গেলেন। আমি উঠে গিয়ে ঘরের বাতি নিভিয়ে দিলাম।

রাত বাড়ছে। কত রাত হয়েছে জানিনা। ঘর সম্পূর্ণ অন্ধকার। অন্ধকারময় ঘর ভালোই লাগছে। আমি আর আপু দুজন জড়াজড়ি করে শুয়ে আছি। আপু আমার পিঠ চুলকে দিচ্ছে আর আমাকে নানান ধরনের গল্প বলছে। সব গল্পই যুদ্ধ বিষয়ক। মনে হয়, যুদ্ধের সময় সব গল্প যুদ্ধেরই হয়।
একসময় আমি আপুকে বললাম, আপু , তুমি কী সেলাই করছিলে?
আমি একটা পতাকা বানাচ্ছিলাম।
'জয় বাংলা' পতাকা?
হু।
পতাকা দিয়ে কী হবে আপু?
পতাকা আমরা আমাদের উঠানে লাগাবো।
আব্বু দিবে না।
দিবে না মানে?অবশ্যই দিবে। পতাকা তো আজ লাগাবো না। যেদিন দেশ স্বাধীন হবে সেদিন লাগাবো।
দেশ কী স্বাধীন হবে আপু?
অবশ্যই হবে। হতেই হবে।
আমাদের মুক্তিবাহিনীরা যুদ্ধে জিতলেই দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে , তাই না আপু?
হঁ্যা ঠিক তাই। আচ্ছা শোন, আমি যদি তখন না থাকি ,তাও কিন্তু তুই অবশ্যই এই পতাকা লাগাবি।
আমি অবাক হয়ে বললাম, তুমি থাকবে না মানে?
আপু মন খারাপ হওয়া গলায় বলল, যুদ্ধের সময় তো কত কিছুই হতে পারে। ধর, আমি মারা গেলাম। দেখিস না কত মানুষ মারা যাচ্ছে।
আমি বললাম, এসব কথা বলবে নাতো আপু। আমার কান্না পাচ্ছে।
আপু বলল, তাই নাকি? তুই না বড় হয়ে গেছিস। বড়রা কাঁদে নাকি?
আমি কিছু বললাম না।
আপু কোমল গলায় বলল, তুই আমাকে খুব ভালোবাসিস?
হু।
আব্বুর চেয়ে বেশি?
অনেক বেশি। তোমাকে আমি আম্মুর মতো ভালোবাসি। আম্মু আমাদের অনেক ভালোবাসতো তাই না আপু?
হঁ্যা ।
গ্রামের সবাই বলে, আম্মুকে নাকি আব্বু মেরেছে। এটা কী সত্যি আপু?
আপু ধরা গলায় বলল, তুই আরেকটু বড় হ। তখন তোকে সব বলবো। বলতে তো আমাকে হবেই।
আমি বললাম, আপু তুমি কাঁদছ নাকি?
কই নাতো। শোন, যেদিন পতাকা লাগাবো সেদিন তুই সবুজ পাঞ্জাবি পরবি আর আমি পরবো সবুজ শাড়ি।
আমরা সেদিন খুব মজা করবো তাই না আপু?
হু। সেদিন হবে আমাদের মুক্তির দিন, আমাদের বিজয়ের দিন।
আপুর মুখ থেকে 'বিজয়ের দিন, মুক্তির দিন' কথাগুলো শুনে অন্যরকম ভালো লাগা বোধ করলাম। কেমন যেন চাঞ্চল্য অনুভব করলাম।
আমি বললাম, কিন্তু আমার যে সবুজ পাঞ্জাবি নেই।
আপু বলল, অসুবিধা নাই। আমি বানিয়ে দিব।
আমাদের সাথে ইমাম সাহেব থাকলে অসুবিধা আছে?
না নেই। বিজয়ের দিনে সবাই পাশে থাকলেই বরং ভালো।
তাহলে উনার জন্যেও একটা সবুজ পাঞ্জাবি বানিয়ে দিও।
আচ্ছা দিব।
আপু!
উ!
আমার খুব ইচ্ছা ইমাম সাহেবের সাথে যেন তোমার বিয়ে হয়। তুমিও খুব ভালো, উনিও খুব ভালো। তোমাদের খুব মানাবে। উনাকে তুমি বিয়ে কর। প্লিজ আপু প্লিজ।
আপু খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল, আচ্ছা দেশ স্বাধীন হোক, তখন দেখা যাবে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিন্তু না বলতে পারবে না।
আচ্ছা সে দেখা যাবে।
এমন সময় পাক সেনাদের পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। তাদের বুটের শব্দে কেমন যেন গা ছমছম করে।
আমি নিচু গলায় বললাম, ওরা এসে গেছে তাই না আপু?
আপুও ফিসফিস করে বলল, তাইতো মনে হচ্ছে।
আমি শব্দ করে বললাম, জানোয়ারের বাচ্চা।
আপু বলল, ওরা তারচেয়েও খারাপ। ওদের জানোয়ার বললে জানোয়ারদের অপমান করা হয়।
আর আব্বুর মতো যারা রাজাকার তারা?
তারা আরো খারাপ। খারাপের চেয়েও খারাপ।

আরো কিছু সময় কাটলো। আপু আমাকে শক্ত করে ধরে আছে। মনে হচ্ছে, আপু মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে।
আমি হঠাৎ বললাম, আপু , আমার মুক্তিবাহিনীতে যেতে ইচ্ছে করে। তোমাকে তো বলা হয়নি, আমি রফিক স্যারের কাছ থেকে বন্ধুক চালানো শিখেছি। গুলিও করতে পারি। রফিক স্যার বলেছেন আমার নিশানা ভালো।
আপু অবাক হয়ে বলল, রফিক স্যার কে?
আমি বললাম, আমাদের স্কুলের গণিতের শিৰক। এখন মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। মাঝে মাঝে এখানে আসে।
এখানে আসে কী জন্যে?
কখনো খেতে আসে, কখনো রাতে থাকতে আসে।
আব্বু এসব জানে ?
নাহ্। জানবে কোথা থেকে? আমি তো স্যারকে আমার ঘরে লুকিয়ে রাখি। মাঝে মাঝে স্যার দু'একজন বন্ধু নিয়ে আসে। তারাও মুক্তিবাহিনী। রাতে স্যার যখন থাকতো, তখন বন্ধুক চালানো শিখেছি। আমারও স্যারের মতো যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করে আপু।
আপু আমার ঠোঁটে হাত রেখে বলল, চুপ। একদম চুপ। এসব কথা ভুলেও কখনো উচ্চারণ করবি না। খবরদার।
এমন সময় সেই বুটের আওয়াজ আবার শোনা গেল। পাশের ঘওে আটকানো মেয়ে দুটির তীব্র ও তীৰ আর্তচিৎকার শোনা গেল। সাথে কান্নার আওয়াজও ভেসে আসছে।
পাক সেনাদের একজন আব্বুকে বলল, শুকরিয়া । বহুত আচ্ছা কাম কিয়া।
তারপর আরেক পাক সেনা উর্দুতে বলল, এই দুটোকে গাড়িতে রেখে আস।
এরপর একজন আব্বুকে উর্দুতে জিজ্ঞেস করলো, এই ঘরে কে? এই ঘর ভেতর থেকে লাগানো কেন?
আব্বু ভাঙ্গা উর্দুতে বলল, কু কুছ নেহি। কুছ নেহি।
এমন সময় দড়াম শব্দে আমাদের ঘরের দরজা ভেঙ্গে গেল। হুড়মুড় করে ঘরে কয়েকজন ঢুকে পড়ে বাতি জ্বালালো। তাকিয়ে দেখি আমাদের সামনে তিনজন মিলিটারি দাঁড়ানো।
তাদের একজন আব্বুকে উর্দুতে জিজ্ঞেস করলো, এরা কারা?
আব্বু বলল, এরা আমার ছেলে মেয়ে । একেবারে খাঁটি পাকিসত্দানি।
তাদের একজন অন্যজনকে চোখের ইশারায় কী যেন বলল। সাথে সাথে দুজন মিরিটারি এসে একজন আপুকে অন্যজন আমাকে ধরলো।
ওদের সাথে থাকা তৃতীয়জন মিলিটারি আব্বুকে বলল, আপনার মেয়েকে আমাদের পছন্দ হয়েছে। আমরা একে নিয়ে গেলাম।
আব্বু কিছু না বলে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইলো।
আমি চিৎকার করে বললাম, আমার আপুকে ছেড়ে দে শুয়োরের বাচ্চা। ছেড়ে দে বললাম।
আমার কথা শুনে পাক সেনারা হা হা করে হেসে উঠলো। কী কুৎসিত সেই হাসি!
ততৰনে ইমাম সাহেব চলে এলেন। তিনি এসে খপ করে এক মিলিটারির পা ধরে বললেন, আলস্নাহর দোহাই লাগে। উনাকে ছেড়ে দেন। এত বড় ৰতি আপনারা করবেন না।
যার পা ইমাম সাহেব ধরে ছিলো, সেই মিলিটারি লাথি মেরে ইমাম সাহেবকে ফেলে দিয়ে বলল, ভাগ ইহাছে।
আমি আপুর দিকে তাকালাম। আপু নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু তার গাল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। রাগে - জেদে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কিছু একটা করতে হবে। আমি বেঁচে থাকতে কেউ আমার আপুর কোনো ৰতি করতে পারবে না। কিছুতেই না।
যে মিলিটারি আমাকে ধরে ছিলো আমি তার হাতে শক্ত করে কামড় বসিয়ে দিলাম। তার ঘাড় থেকে বন্ধুক পড়ে গেল। সে ব্যাথায় কুঁকড়ে চিৎকার করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিল। আমি তার সাথে সাথেই পড়ে থাকা বন্ধুক তুলে কেউ কিছু বুঝার আগেই গুলি চালানো শুরু করলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় মিলিটারিরা কিছু করতে পারলো না। সাথে সাথে দুই মিলিটারি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আমিও গুলি কেেরছিলাম তাদের মাথায় । কিন্তুু ততৰনে অন্য মিলিটারিটাও আমাকে গুলি মেরে দিল। আমি সরে গেলাম। কিন্তুু পুরোপুরি পারলাম না। গুলিটা লাগলো আমার পেটে। আমিও ঐ মিলিটারির বুকে গুলি করে মাটিতে পড়ে গেলাম। প্রায় সাথে সাথেই আপু দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, কী করলি তুই? এটা তুই কী করলি?
আমি দুর্বলভাবে হাসার চেষ্টা করলাম। আমার হাসি দেখে আপু হু হু করে কেঁদে ফেললো। ইমাম সাহেব তার পান্জাবি খুলে আমার পেটের গুলি লাগা স্থানে চেপে ধরলো। কিন্তুু তাতে রক্ত পড়া মনে হয় আরো বেড়ে গেলো।
এতৰনে আব্বু ' বাজান! আমার বাজান গো '! বলে আমার কাছে আসতে গেলে আপু নিচে পড়ে থাকা একটা বন্ধুক তুলে ' শুয়োরের বাচ্চা ' বলে আব্বুকে ঠাস ঠাস শব্দ করে দুইটা গুলি করে দিলো। আব্বু হতভম্ব দৃষ্টিতে আপুর দিকে তাঁকিয়ে থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। মনে হয়, তিনি মারা গেছেন।
আপু এবার আমার কাছে এসে আমার মাথা তার কোলে তুলে নিল। তারপর ইমাম সাহেবকে বললেন, আপনি এখানে বসে কী করেন? দয়া করে দেখেন না কোনো ডাক্তার পান কিনা!
ইমাম সাহেব 'যাচ্ছি' বলে ঘর থেকে বের হয়ে পড়লেন। যাওয়ার আগে বিড়বিড় করে কী যেন পড়ে আমার মাথায় তিনবার 'ফ'ু দিয়ে গেলেন। কোনো সূরা কিংবা দোয়া হবে হয়তো।
আমি কোনো ব্যাথা অনুভব করছি না। কিন্তুু আমার খুব কস্নানত্দ লাগছে। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। কিনত্দু আমি প্রানপন চেষ্টা করছি চোখ খোলা রাখতে। আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তার চোখের পানি এসে পড়ছে আমার গালে।
আমার ভাবতে খুব ভালো লাগছে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে। বিজয়ের দিন এসেছে। বিজয়ের দিনে আপুর কথামতো আমি আর ইমাম সাহেব আপুর বানানো সবুজ পানজাবি পড়েছি। আপুও পতাকার সাথে মিল রেখে সবুজ শাড়ি পড়েছে। আমরা তিনজন মিলে স্বাধীন বাংলার পতাকা লাগিয়েছি। সেই পতাকা বাতাসে পতপত করে উড়ছে। আহারে! কী সুন্দর বিজয়ের দিন! কী সুন্দর মুক্তির দিন!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ শামছুল আরেফিন ইস,আমার হিংসে হচ্ছে খুব,আমি যদি সেই ছোট্ট ছেলেটি হতাম আর আমার অমন একটা আপু থাকতো কি এমন ক্ষতি হত। অসাধারন লিখেছেন ভাই আপ্নি।প্রতি লাইন এ লাইন এ রোমাঞ্চ ছড়ান ছিল।খুবী সুন্দর।এক কথায় অসাধারন।মেয়ে হলে এতক্ষনে আপনার প্রেমে পরে জেতাম। আপনার জন্ন একটু খারাপ লাগছে এই ভেবে আপনার গল্পটি অনেক সুন্দর,কিন্তু ভিউ অনুজায়ী পিছিয়ে আছে।আশা করি পাঠকরা ঠিকই বের কর এ নিবে। অনেক অনেক শুভ কামনা থাকলো ।
মা'র চোখে অশ্রু যখন সুন্দর অনেক সুন্দর চমত্কার
শাহরিয়ার Read some of story from this section ... I think this is the most excellent out of all ......It comes almost reality.......... best wishes for the writer..... and must will get appreciation to www.golpokobita.com …………expect will get next story like more heartrending to our freedom fighter ....................... Shahrair
সূর্য স্বাধীনতার ১৮ বছর পর জন্ম নেয়া একটা ছেলে, যে এভাবে একটা দৃশ্য তুলে আনতে পারে যা সে দেখেনি, তখন মনে হয় আমাদের ইতিহাস বদলে দেবার ক্ষমতা কারো নেই.................. অনেক ভালো লাগলো....
বিষণ্ন সুমন এই গল্পটাই দারুন একটা গতি আছে, যা পাঠক ধরে রাখতে সক্ষম
নষ্ট কবিতার একটি অংশ ( Nirob Ouhan Masum) ভাল অবশ্যই ভাল বলতেই হবে ।
বিন আরফান. তন্ময়, তোমার থেকে আমার বেশি ভালো লেগেছে. অপূর্ব লিখ তুমি. চালিয়ে যাও আরো ভালো করতে পারবে. ভোট দিলাম.
বিষণ্ন সুমন শুভকামনা রইলো
তৌসিক খান tonmoy নিজের গল্প দেখে ভালো লাগছে

১২ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪