ফেরারী ভালবাসা

ভালবাসা (ফেব্রুয়ারী ২০২৫)

জুলফিকার নোমান
  • 0
  • ৪২
সেদিন মিরপুর বেনারশী পল্লীতে যখন পিছন থেকে আমার ডাকনাম ধরে ডাক শুনলাম, তাও আবার নারীকন্ঠের, তখন একটু অবাকই হলাম। ফিরে তাকাতেই দেখি একটি ছোট্ট ছেলের হাত ধরে সুন্দরী একজন মহিলা আমার দিকেই এগিয়ে আসছেন।

মুখের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলাম, ভদ্রমহিলার ঠোঁটের বামপাশে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি কেটে যাওয়ার দাগ। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকাতে তিনি একটু হাসলেন; খেয়াল করলাম, হাসলে উনার গালে টোল পড়ে।

- তুমি নিশ্চয়ই রেশমা ?
- - চিনতে এতক্ষণ লাগল ?
- একটু দ্বিধায় ছিলাম, অপরিচিত সুন্দরী মহিলাদের দিকে কি একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা যায় ?
- - বাহ্, ভালই বলেছো রুমী, 'অপরিচিত' ! আমি কিন্তু এতদিন পরেও ঠিকই তোমাকে চিনেছি। তুমি অবশেষে আমাকে চিনলে কিভাবে ?
- তোমার টোল পড়া হাসি আর ঠোঁটের কাটা দাগ দেখে।
- - ঠোঁটের কাটা দাগের কারণ কিন্তু তুমি !

শুনে একটু অপ্রস্তুতই হলাম আমি। সাথে সাথেই বললাম, " তুমি সেদিন জোর করে আমার মত একজন নতুন চালকের সাইকেলে সহযাত্রী হয়েছিলে । আমি কিন্তু তোমায় ফেলে দেইনি, তুমিই তাল রাখতে না পেরে পিছনের ক্যারিয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলে।"
- - তুমি কিন্তু তখন সাইকেল চালাচ্ছিলে বাঁধ ভাঙা গতিতে, আমি আস্তে চালাতে বললেও তুমি কিন্তু শোননি।

- তা বটে, ফলাফল দীর্ঘদিন পাশাপাশি ইউনিটে থাকা দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতায় ছেদ পড়া, অবশেষে তোমাদের বাসা বদল। সে সময় মোবাইল ছিল না, তোমার সাথে যোগাযোগেও ছিল বারণ, এভাবে একসময় হারিয়েই যাও তুমি !
- - সেদিন আমি কিন্তু আম্মার কাছে তোমার ব্যাপারে কোন নালিশ জানাইনি। আমার ঠোঁটের অবস্থা দেখে আর তোমার সাইকেল থেকে পড়ে এটি হয়েছে শুনে আম্মা আর স্থির থাকতে পারেননি, ছুটে গিয়েছিলেন তোমাদের বাসায়।
- আর দুই পরিবারের মধ্যে এই কথা সেই কথার তিক্ততায় আমাদের ভাল লাগা আর ভালবাসার গন্তব্যে পৌছাঁতে পারেনি।

এরপর কিছুক্ষণ দু'জনেই চুপচাপ, শুনতে পাচ্ছিলাম, 'আপা, ভালো শাড়ি আছে, এদিকে আসেন।' খেয়াল করলাম, দোকানীরা কিছু বিক্রি করার জন্যে 'ভাই'-এর চেয়ে 'আপা'কেই প্রথমত: বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। চুপচাপ থাকার মাঝে উভয়ে একটু লজ্জাও পেলাম, যখন তাদের কাছ থেকে শুনতে পেলাম, 'ভাই, ভাবীর জন্য মানানসই সুন্দর শাড়ী আছে, এদিকে আসেন।'

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নীরবতা ভেঙে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ''তোমার বরের কথা জানা হলো না, তিনি আছেন তো?''
- - এটা কি ধরণের প্রশ্ন ?
- তুমিই না বলতে, 'টোল পড়া মেয়েদের সাথে জোড় বাঁধতে নেই, তাদের বর বেশি দিন বাঁচে না।'
- - 'ও, এই কথা' বলে মিষ্টি করে হাসলো রেশমা।

কথায় কথায় জানলাম, ইংরেজি সাহিত্যে পাশ করা রেশমা ছোটবেলার সেই প্রতিজ্ঞা ধরে রেখেছে, তার বর একজন ইঞ্জিনীয়ার। আমিও বুয়েটিয়ান ইঞ্জিনীয়ার শুনে সে বলল, 'আমি জানতাম, তুমি ইঞ্জিনীয়ারই হবে।'

রেশমার ছেলেটি যাবার জন্য অস্থির না হলে আমাদের আলাপ হয়তো আরও কিছুক্ষণ চলতো। এর মধ্যেই রেশমার সেই আগের স্টাইলের পীড়াপীড়িতে শীঘ্রই তার বাসায় যাব বলে কথা দিলাম, সেই সাথে আমার নিজের বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলারও প্রতিশ্রুতি দিলাম। পরস্পরের মোবাইল নম্বর বিনিময় করে বিদায় নেয়ার সময় আগের মতই বললাম, 'রাস্তায় দেখে শুনে সাবধানে যেও।'

শুনে হাসলো রেশমা। দেখলাম, সেই আগের মতো টোল পড়া হাসি। আর নিচ ঠোঁটের বাম পাশের কাটা দাগটা সেখানকার একটি বাঁকা দাঁতের সাথে একাকার হয়ে রেশমার হাসির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এটি দেখে সেই ক্লাস সেভেনের পর থেকে দীর্ঘ পনেরো বছর বয়ে বেড়ানো অপরাধবোধের ভার কিছুটা হালকা মনে হলো। সেই সাথে আক্ষেপও হতে লাগলো আমার। কারণ, সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়ায় সবাই শুধু রেশমার ঠোঁটের কাটা দাগটাই দেখেছে, কিন্তু এতে আমার হৃদয়ের কুঠরিতে তিল তিল করে জমানো ভালবাসার মাঝে যে গভীর ক্ষত তৈরী হয়েছিল, তা কি কেউ কখনো জেনেছে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী অনেক ভালো লাগলো প্রিয়জন। ভালোবাসা নিরন্তর। ভালো থাকবেন।
অশেষ ধন্যবাদ, প্রিয়। আপনার ভালো লাগা আমাকে লিখতে উৎসাহিত করবে। শুভ কামনা রইলো।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

তাকাতেই দেখি একটি ছোট্ট ছেলের হাত ধরে সুন্দরী একজন মহিলা আমার দিকেই এগিয়ে আসছেন।

১৬ জুলাই - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্বাধীনতা”
কবিতার বিষয় "স্বাধীনতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারী,২০২৫