সাপলুডু খেলা

অর্জন (এপ্রিল ২০২৩)

জুলফিকার নোমান
মোট ভোট ১৩ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৯৩
  • ১০
  • 0
  • ৬৯
আজগর সাহেবের বৈষয়িক অর্জনে অনেকের সহযোগিতা থাকলেও তা হারানোর ক্ষেত্রে তিনি নিজেই যথেষ্ট ছিলেন।

অভাবী পরিবারের সন্তান আজগর সাহেবের এসএসসি পর্যন্ত কেটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার চন্ডীপাশা এলাকায় জায়গীর মাস্টার হিসেবে। এরপর ডিপ্লোমা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় ছিলেন ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে, যার অর্থায়নে ছিলেন তার দূরসম্মপর্কের এক মামা।

উভয় সহযোগিতার ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট পরিবারের মেয়ে বিয়ে করার পরোক্ষ শর্ত থাকলেও আজগর সাহেব বিয়ে করেছিলেন তার এলাকা নেত্রকোনার মদন থানার কদমশ্রী গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন এক মেম্বারের মেয়েকে, বিনিময়ে পেয়েছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরির জন্য "প্রয়োজনীয়, সকল কিছু।

চাকরি পাওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আজগর সাহেবকে। লবিং আর টাকার গুনে সবসময় ভাল জায়গায় পোস্টিং নিয়েছেন, যুগের তাল আর তৈল এর সুষম সমন্বয় ঘটনার মাধ্যমে দুহাত ভরে কামিয়েছেন। ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায়ও বাড়ি করেছেন, গাড়িও রয়েছে একাধিক, ব্যাংক ব্যালেন্সের কথা তো বলাই বাহুল্য।

তবে সংগত কারনে স্থাবর-অস্থাবর এসব সম্পদের অধিকাংশই তিনি নিজ নামে করেননি। ইতোমধ্যে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং টাও করে নিয়েছেন।

তবে বৈষয়িক অর্জনের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার পারিবারিক অশান্তি। নালার মাছ যখন বড় নদীতে এসে পরে, তখন সেটি দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আজগর সাহেবের কাছেও আজকাল পারিবারিক সহচার্যের চেয়ে মদ-জুয়া নিশীথের পার্টি বেশি স্বস্তিকর মনে হয়। তার চাকরি প্রাপ্তিতে সর্বাত্মক সাহায্য করা শশুর সাহেবও ইদানিং তার কাছে পাত্তা পান না, অন্যান্যদের কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ঊনপঞ্চাশ বছরের জীবনে দীর্ঘদিনের অনিয়মে আজগর সাথেবের শরীরে বাসা বাধে দুরারোগ্য ব্যাধি যার চিকিৎসা দেশে সম্ভব হলেও তিনি করান থাইল্যান্ডে। বাইপাস সার্জারিও করাতে হয়, তবে তা তিনি করান সিঙ্গাপুরে। দেশের বাইরে চিকিৎসা করানোটা আসলে এক ধরনের সিম্বল অফ স্ট্যাটাস।

এর মাঝে নেত্রকোনা অঞ্চলের হাওর এলাকার বাধ নির্মানে ব্যাপক অনিয়মের খবর ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার হয়। এই প্রজেক্টের অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় অন্যান্যদের সাথে আজগর সাথেবও সাময়িক বরখাস্ত হন। এবার আর তিনি টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে পারেন নি, ফলে শুরু হয় আইনজীবীর পেছনে দৌড়ানো। অথচ ব্যাপক লবিং এবং টাকা খরচের মাধ্যমে তিনি এই লাভজনক পোস্টিংটি নিয়েছিলেন।

মানুষের পতন যখন শুরু হয়, তখন সবদিক থেকেই শুরু হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে শেয়ার ব্যবসায় ব্যাপক লস খান আজগর সাহেব, বেনামে থাকার তার সম্পত্তিগুলোও পারিবারিক বিরোধে হাতছাড়া হয়ে যায়, ঝুট ব্যবসা আগুনে বিলীন হয়ে যায়।

নিজের চিকিৎসা আর চাকরি ফিরে পাবার লড়াইয়ে আইনজীবীর পেছনে টাকা ঢালতে ঢালতে একসময় ফুলে ফেপে ওঠা ব্যাংক ব্যালেন্সও টান পরে, ফলে স্ট্যাটাস বিসর্জন দিয়ে সাধের বাড়ি গাড়িও বিক্রি করে দিতে হয়।

আস্তে আস্তে বন্ধু-বান্ধবের গন্ডি একেবারেই ছোট হয়ে আসে আজগর সাহেবের, ছেলেমেয়েরাও নিজ নিজ পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকায় বাবাকে সময় দিতে পারে না।

ইদানিং মাঝে মাঝেই নস্টালজিকতা পেয়ে বসে আজগর সাহেবকে। একদিন বৃষ্টি ঝরা বিকেলে তার হঠাৎ করে মনে পরে মনিকার কথা, যাদের বাড়িতে সে জায়গীর মাস্টার হিসেবে ছিল। মনিকা ছিল বেশ চঞ্চল একটা মেয়ে, পড়ানোর পাশাপাশি নানা রকম খুনসুটিও চলতো তার সাথে। এলাকায় সবাই জানতো মনিকার সাথে তার বিয়ে হবে।

-লুডু খেলতে পারি, কিন্তু সাপলুডু খেলি নাই কখনো।
-সাপলুডু খেলা লুডু খেলার মতোই, তবে সাপের মুখে পড়লে আবার লেজের গোড়ায় চলে আসতে হয়।
-আজকে পড়ার কি হবে তাহলে?
- আমি আপনাকে সাপলুডু খেলা শিখাচ্ছি, এটাও তো পড়ার মধ্যেই পরে। পার্থক্য এই, আজ আপনি পড়বেন। খেলা চললো কিছুক্ষণ, খেলার মধ্যে আজগর সাহেব কখনো তার চেয়ে এগিয়ে গেলেই সে বলে উঠছিলো, বেশি খাইতে যাইয়েন না, সাপের মুখে পরে যাবেন। আর হাসছিলো খিলখিল করে।
মনিকা এখন কোথায় আছে, জানেন না তিনি। কিন্তু তার সেই হাসির অনুরনন আজগর সাহেবের কানে আজ আরও স্পস্ট হয়ে বাজছে।

পেয়ে হারানোর বেদনায় কাতর আজগর সাহেবে নিজেই নিজের কাছে আজ প্রশ্ন রাখছেন, সেই সময় এত কিছুর পিছনে না ছুটে মনিকাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে এমন কিই বা ক্ষতি হত?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিষণ্ন সুমন অভিনন্দন ও ভালোবাসা রইলো ভাই
অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সব সময়।
মোঃ মোখলেছুর রহমান আন্তরিক অভিনন্দন
অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সব সময়।
সাইফুল সজীব সুন্দর উপস্থাপনা
অনুপ্রাণিত হলাম। অশেষ ধন্যবাদ।
ফয়জুল মহী মাশাআল্লাহ। চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর প্রকাশ।
আপনার ভালো লাগাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। অনেক ধন্যবাদ।
বিষণ্ন সুমন গল্পটার শুরুতেই মন ছুঁয়ে গেল আমার জন্মস্থান ঘিরে শুরু হয়েছে বলে। আমার গ্রামের বাড়ি নান্দাইলের মুশুলি। চন্ডিপাশা স্কুলের মরহুম সামাদ মাষ্টার আমার খালু।
আপনি ঐ এলাকার জেনে খুশি হলাম। গল্পটি আপনার মন ছুঁয়েছে জেনে অনুপ্রাণিত হলাম। অশেষ ধন্যবাদ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

সাপলুডু খেলা আর জীবন

১৬ জুলাই - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৯৩

বিচারক স্কোরঃ ২.৩৩ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৬ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪