এক চটকানা দিমু, হালার বেডা, তরে কইছি খাইয়া এহন ঘুমা, তর পুলিশ বাপে আইলে এইহানে ঘুমাইবার দিবো না। লাইথ্থাইয়া খেদাইবো।
তাইলে তুই এহন মাসি পিসির গানহান গা, হেলে ঘুম পাইবো। হারাদিন রাইত ঘুমাইতে পারুম । একজন মায়ের বুইন, আরেক জন বাপের বুইন। আইচ্ছা! হেরা কি হুদাই ঘুম পাড়ায় ? হেরা কিন্তু খারাপ কাম করে না, নাকি কও মা ? তুই যেমন ঢং কইরা, কাইন্দা, মায়ার নাহান মুখহান কইরা মাইনসেরতন হাত পাতো হেরা কিন্তু হেমন না । জন্মের পরতোন কাপড় মুড়ি দিয়া হুইয়া থাহি, মাইনসে পয়সা ফিক্কা মারে, তর হাতে দেয়, ক্যান তুই কাম করতে পারো না ? আমারে তো ঘুম পারানোর গানতো তর গাইতেই হয় না।
লাশের লালসায় আঁধার জাগে
জিবন্ত মানুষের ক্ষতে বৈশাখী ঝড়ে
দিনে-দুপুরে নিশাচরের আনাগোনা,
দূর্বৃত্তের হাতে আলোর মশাল।
শেষ কথা-
‘রাক্ত দাও,নইলে মানচিত্র খাবো’
লাশের বুকে দামি বুটের ছাপ।
আঘাতে আঘাতে নর হাঁড়ের প্রাসাদে-
ধর্ষিতার বুকে লাল-সবুজের অবক্ষয়।
কোন বারন নেই, তুমি তো স্বাধীন,
লাল দালানে হাজার বিচার ঝুলে আছে।
তুমি দিনের বেলা ভিক্ষে করো
আঁধার হলেই সুরা ধরো,
সুর-সুরায় রাত্রমাখা
স্বাধীনতা তুমি বড্ড একচোখা।
বেশি রাইতে আবার চুপ মাইরা পার্কে লইয়া যাও, ভালো মন্দ খাওয়াও তারপর আমি নিজেই ঘুমাইয়া পড়ি, তহন কি আর ঘুম পায় ? হারাডা দিন তো ঘুমাছি । আইচ্ছা প্রতিদিন সকালে কি খাওয়াছ; যে আবার ঘুমাইয়া পরি ? কই তুই তো ঘুমাছ না । মা! ওমা ! তুই কি জানস আমার বাপ কেডা ?
মায়ের দেহের অনেক অংশ পুড়ে গেছে; আমি পোশাক দেখেই চিনেছি ; গত মাসেই সদরঘাট এলাকায় জজকোর্টের সামনের গেটে এদের দেখেছিলাম, মনে আছে খুচরো পাঁচটা টাকাও দিয়েছিলাম। পার্ট টাইম জব নিয়েছি একটা সাপ্তাহিক পত্রিকাতে। ক্রাইম রির্পোটার। বেশি বেতন না, তবু কিছুটাতো সংসারের চেহারা ফেরাতে পারবো। ক্রাইমের উপর বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করতে ওখানে যাওয়া।
ওখানে নাকি বড় বড় সন্ত্রাসীদের দেখতে পাওয়া যায় । যদিও হাতকড়া পরিহিত থাকে, চোখগুলো বড় বড় আর লাল, । সবাই সেখানে সন্ত্রাস না, আবার সবাই সাধুও না।
বাহদুর শাহ্ পার্ক বেলা দেড়টা, রুটি কলা খেয়ে ওখানেই সেদিন বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। ক্যামেরাটা হাতেই ছিল,
ইস ! কি নির্মম !
বাচ্চাটার বয়স হয়তো সাত/আট বছর হবে। বাহাদুর শাহ্ পার্কে ওরা একপলিথিন আইঠা আর বাসি বিরিয়ানি মজা করে খাচ্ছে। যেন অমৃত। চোখের সামনে সেই দৃশ্য এখনও জ্বল জ্বল করে…..
অবেলায় ভিক্ষুকের আবেদন
‘ভাত খাবো, ভাত দে’
চৈতালি মুখর আলসে বেলায়-
ক্রন্দিত কন্ঠে বায়সের নিবেদন!
হাভাতে কুকুরটাও জিব লকায়।
তুই রাইতের কালে এত হাজস ক্যান ? আমারে ঘুমাইতে কইয়া তুই কই যাস?
এমন হাজারও প্রশ্নের জবাব ছেলেটির মা দিতে পারে নি।
বাপজান একক্ষান গল্প কই হোন তাইলে|
হয় হেডাই কও, শুনি.......
এক গ্রামে একটা সুন্দরি মাইয়া ছিল, বয়স আর কত; পনের-ষোল হইবো। হে তার সৎ মায়ে’র সঙ্গে ঢাহা শহরে আইছে, কামের ধান্দায়।
সৎ মা কোনডা আবার মা ?
ও তুই বুঝবি না।
আইচ্চা, হেরপর কি ?
হেরপর আবার কি, বড়লোকের বাসায় কাম নিলো, বড় বাড়ি, বাড়িয়ালা বেডায় ভালোই আসিল, কিন্তু হের যে, ছোড ব্যাডা, হালায় একটা শয়তানের বাসা।
কেন মা? হালায় কি করছে ?
সুন্দরী মাইডারে একদিন খাইল্লা বাসা পাইয়া; উু …….উু……..উু..
এ মা কান্দস ক্যান, এইডা তো গল্প, তয় তুই কান্দস কেন? নাকি আবার মায়া শুরু করলি? গল্পডা কনা হুনি, ভালোই তো|
মাইডারে হালায় ছিইড়া খাইলো, হালায় মানুষ খোড়, কুত্তা।
কও কি? মানুষের মাংস মানুষে খায়!
খায়রে খায়, ওরা হামগো নাহান আইঠা খাবার খায় না। ওরা তাজা মানুষ খায়।
এ মা ওরা কি রাক্ষস?
হয় রে বাপ ওরা রাক্ষস। মাইয়া ডারে বড়লোক শালা কামড়াই কামড়াই খাইছিল। কি রক্ত ! কি রক্ত ! দৌড়াইয়া কোন রহমে পলাইছে, দোহানে গিয়া কাইন্দা কাইন্দা কইলো-
‘ভাই হামাক এক্কান ফোন করতে দেবেন’?
দোহানদারের মোবাইল দিয়া হ্যাছে ফোন দিয়া কইলো-
‘মারে হামাক ঢাকাত তোন লিয়ে যা, মা’|
‘কারার ঐ লৌহ কপাট,ভেঙ্গে ফেল
করলে লোপাট’
মানুষেরই রণ গীতে অমানুষে পায় প্রাণ,
ঘ্রাণ; ভগিনী,জননী আর স্ত্রী পোড়া ঘ্রাণ।
প্রেমিকাটিও আছে হয়তো
বাসি বকুলের মতো।
তোরা মানুষের শৌর্য নে;
আবার মানুষ জন্ম দে।
হেরপর কি মাইডারে নিছে ?
আরে না, কেউ আসে নাই। হেইডা তো মাইডার সৎ মা, বাহে তো কবেই মরছে।
মাইয়াডারে আর কেউ নিতে আসে নাই।
মাইয়াডা এহন কোতায়; মা ?
চুম মেরে বসে সেদিন মহিলাটির কথা শুনলাম, তবে ছেলের উত্তর মা আর দিতে পারে নি। ছেলেটি অনেকক্ষন চেষ্টা করেছিল, কিন্তু মা তাকে সেই মেয়েটির কথা বলেনি। হয়তো জীবনের শ্রেষ্ঠতম কষ্টে কথাগুলো তার সন্তানকে বলেছে। কি করে বলবে ? ধর্ষিতা মেয়েটি আর কেউ নয় হয়তো সে নিজেই। আজ হয়তো দিনের বেলা ভিক্ষা আর রাতের বেলা বেশ্যাবৃত্তি দু’টোই পেটের তাগিদে করতে হচ্ছে।
বস্তিগুলোতে প্রায়ই আগুন লাগছে; আজও আগুন লাগার খবর পেয়ে এখানে আসি। ছেলেটির মা চীর নিদ্রায়। আগুনে পুড়ে মরেছে, অনেক লোকজনের ভীড়ে তার নিথর পোড়া দেহ পড়ে আছে। চেয়ে আছে আকাশের দিকে, সাদা ফকফকে দাঁত আর ঝলসানো চোখে বিদ্রুপ হাসিতে তাকিয়ে আছে। তোমরা শোন; শুনতে পাচ্ছো ? অভিশম্পাতে অভিশম্পাতে ভরিয়ে দিচ্ছে সমস্ত আকাশ, মাটি, মানুষকে। আমি নিজেও সেই অভিশাপ থেকে মুক্ত নই, কেউ মুক্ত নয়।.....
এইতো সেদিন রঙিন ভোরে অতিথি পক্ষীকূলে
আগুন্তুকের মতো শীতের কোলে
নয়তো মরা বেলায় গোপনে মরেছি;
কখনও দিনের শেষে স্বপ্নের বুকে
রক্তে নৈবেদ্য দিয়েছি।
চায়ের ধোঁয়াতে পোড়া মানুষের ঘ্রান
কুয়াশা নতুবা কু-আশা হৃদয় ধুয়াশা ম্লান,
রক্ত ছাপে ব্যালটে বুলেটে গণনা হয়েছে প্রাণ;
তবু সংরক্ষিত ধর্মের গালে চর মারে আঁধারে,
ঘরের ফোঁকরে সভ্য সমাজবোদ্ধা উঁকি মারে
আলু পোড়া দেবে কার ঘরে?
আমিও উষ্ণতা নেবো;
নিতেও চাই পাওনা হিস্যা,
‘তোমরা রক্ত দাও; আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো’
বাঙালী বোকা নয়
রক্ত! আর নয়;
আমি বরং স্বাধীন মানচিত্র হবো
নিজের মতো আকাশ সাজাবো,
ফুল,পাখি, নদী সবার কথা কবো
বলতে পারো মানুষ কোথায় পাবো?
পাশে বসে ছেলেটি কি যেন খুঁজেছে, আস্তে করে তার কাছে গিলাম –
এটা কি তোমার মা ?
হয়; আপনে কেডা?
আমি রণ;
তোমার নাম কি ?
নাম নাই; রণ মানে কি ?
রণ মানে যুদ্ধ; তোমারও একটা নাম দিতে হবে, তোমার নাম দিলাম ‘সংগ্রাম’।
হেডার মানে কি ?
এখন বুঝবে না, পড়ে বুঝবে।
আমি যদি তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাই, তুমি কি যাবে ?
ক্যান আমনের সাথে জামু ক্যান ? আমি তো ভালোই আছি, মা নাই তাইলে কি ? রাস্তায় ঘুমাইয়া নিজে নিজে ভিক্ষা করুম।
আমি আপনার লগে যামু না;
আমি তো তোমাকে সুন্দর পোশাক দেবো, ভালো ভালো খাবার খেতে দেবো। পড়াশুনা করাবো । ভালো থাকবে, চলো.............
সাহেব; ও পথে যাবো নে
বড্ড আঁধার যে,
হা-ভাতেi দল দু’হাত বাড়িয়ে।
ওরা কারা?
সে কি গো সাহেব! তুমি বুঝি এ রাজ্যে নতুন?
কিছুই যে জানো নে;
ওরা স্বাধীনতার ক্ষুধার্থ মরা।
তুমি চলো গো; নির্ভয়ে চলো
সাহেব; আজ কি আমাবস্যে-
নাকি পুন্নিমে গো?
ঠিক ঠাওর করতে পারছি নে।
আজ আমাবস্যে;
এ আবার নতুন কি সাহেব ? সেই কবে আঁধার নেমেছে-
পুন্নিমেতো আসেনে সাহেব ;
ও পথে যাবো নে।
ওটাই যে স্বাধীনতার পথ গো
তুমি চলো; এ আধাঁরেই চলো
জল খাবে ?
ভালো নোনতা বিস্কুট আছে নেবে ?
এটুকুই তো পথ, চল না গো।
ওই দেখো; ওরাও যে কিছু খায়নি
খায় নি আকাশ, সবুজও খায় নি
অমানিশায় ভরসাও পায়নি।
সর্ষে দানায় জীবন্ত স্বর্গ খুঁজি; করেছি নত মাথা
সেই কবে আধাঁর নেমেছে-
নামেনি একফোঁটাও স্বাধীনতা।
এটাই কি জীবনের আরেক নাম?
অথচ; আমারই নাম নাকি ‘সংগ্রাম’।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
গল্পটি গল্প হলেও এমনটাই সত্যি। পরাধীন দেশে সংগ্রামের মতো শিশুরা আজো রাস্তায় দিন আর রাত কাটায়। কোন দিনে ভিক্ষে করে রাতে তারই দেহ বিক্রী করে পেটের ক্ষুধা মেটায়। এমন কি ছিল সেই মা ? এমনি ভাবেই কি সংগ্রামের বেড়ে ওঠার কথা ছিল। চিল শকুনেরা স্বাধীন ভাবে তাদের নষ্ট মস্তিস্কের বিষাক্ত ভাবনা ছড়িয়ে দিয়ে গোটা রাষ্ট্রে, সমাজে। এমন স্বাধীনতা চাই নি যেখানে নষ্ট চেতনাই দেশের ঘারে চেপে বসবে। সুন্দর মা, সুন্দর দেশ চাই । মুক্ত সংগ্রাম মুক্ত মানুষ চাই ।
০৭ জুলাই - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
১৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪