না খেয়ে খেয়ে মেয়েটা প্রায় আধ মরা হয়ে গেছে; রাত জেগেছে অনেক দিন। স্বাভাবিক ভাবেই পেশার কমে গিয়েছে। শারীরিক দুর্বলতা এবং মানসিক অবসাদগ্রস্ততা থেকে লো-পেশার । এছাড়া আর কোন কারণ তো আমি দেখছি না। ইন্দু কোন বোকামি করার মেয়ে নয়; ও খুব সাহসি মেয়ে আমি জানি । সবটাই ওর বাড়াবাড়ি আর খামখেয়ালি। চোখ দু’টো কেন যেন ভিজে আসছে বারবার, এটা কি করলো ইন্দু? আর কেনইবা করলো? আজ ইন্দু’র এ অবস্থার জন্য কি আমি দায়ি ? আমিই দায়ি’।
যাবে তো যাও, জ্বালিয়ে যাও।
বেলা শেষে আমিও যাবো;
নগরের নাগর দোলায় চেপে নাটক
আর না, এবার শেষ হোক,
দিনটা ক্যালেন্ডারে ক্রোস দিয়েছি
লাল মার্কারে,
ক্রোস পড়েছে হৃদয়ে, ভালোবাসায়ও ।
হায় রে ! অভাগি! হায়!
এক জনমে কত আর কষ্ট দেবে বলো ?
নীল!
লাল!
অথবা ঝুড়ি ঝুড়ি কালো।
আমিতো তাতে অঙ্কিত করেছি
বহু রঙের স্পষ্ট হৃদ স্পন্দন।
তুমি অনল
যতই দাও দহন,
আমি উড়ন্ত উলি
বারবার মরি, গড়ি সুখসদন।
এক জনমে কতইবা কষ্ট দেবে আর ?
কি নিপুনে গড়বে তপ্ত আসর?
উঠুক ঝড়;
তুমুল ঝড়, যতটা এ হৃদয়ে বয়
ততটাও তো বাহিরে নয়।
নরম একটা হাত রণ’র কাঁধে চাপর বসালো, পিছন ফিরতেই মা’কে দেখলাম।
কি’রে রণ খুশি তো? তুই এখনও কি ভদ্র ছেলের খেতাবটা ধরেই আঁকড়ে থাকবি বাবা ?
মাকে জড়িয়ে ধরতেই এতদিনের চাপা কান্না বের হতে শুরু করলো।
পাগল ছেলে; কই তুই তো আমাকেও বলিস নি, কেন বলিস নি ? আজ তিনটে জীবন নষ্ট হতে বসেছে তোর জন্য।
মা’য়ের কথাগুলো নাটক সিনেমার ডায়লগের মতো লাগছে, ভালো লাগছে না আমার। আমি যদি এখনই ছুটে ইন্দুর কাছে যেতে পারতাম।
ইন্দুকে আমি খুব কাছ থেকে চিনিরে বাবা, ও খুব ভালো মেয়ে। ও তোকে ছাড়া বাঁচবে না’রে।
মা! এসব তুমি কি করে জানলে?
অনু বলেছে;
কি অনু বলেছে!
হ্যাঁরে বাবা, ইন্দুই অনুকে বলেছে।
কি বলছো মা? ইন্দু এমনটা কেন করলো ?
ইন্দু মেয়েটাকে আমারও খুব পছন্দরে রণ, এবার ভেবে দেখ তুই ইন্দুকে বাঁচাতে যাবি, নাকি অনুকেই বিয়ে করতে যাবি। এ বিয়ে তুই করিস না। আমি যে তোর মা, সন্তানের সুখই আমার সুখ। আমি জানি তুই মনে মনে ইন্দুকেই ভালোবাস। নিজের সম্মান, ভদ্র ছেলের খেতার আর কষ্ট পাবার ভয়ে কোন কিছু আমাদের জানতে দিস নি। আজ যদি তুই ইন্দুকে ফিরিয়ে দিস, তবে সে মারা যাবে, জীবন তোকেই কাঁদতে হবে বাবা। একটি জীবনের মূল্য তুই কি দিয়ে শোধ করবি? মেয়েটা তোকে যে খুব ভালোবাসে। ইন্দুকে বাঁচা রণ’।
আর আজকের এ আয়োজন; এসব কি ? অনুকে কি জবাব দেবো ?
এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠলো-
রণ’ কেমন আছো ?
অনু তুমি এখন ফোন দিলে, কিছু বলবে?
হু বলবো তো অনেক কিছুই, তুমি শুধু আমার বাড়িতে না এসে আমার বাড়ির কাছে যে “বিয়ে বাড়ি” কমিউনিটি সেন্টারটা আছে সেখানে চলে আসো । ওকে, আমি রাখছি।
হ্যালো.......হ্যালো অনু শুনতে পাচ্ছো ?
মা এসব কি হচ্ছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
আগে চল না’রে সবই বুঝতে পারবি। এই তোমরা বাদ্যযন্ত্র বাজানো থামিয়ে দিলে কেন? বাজাও জোরে জোরে বাজাও।
ওদিকে ইন্দু’র কি অবস্থা ? কেউ কিচ্ছু বলছে না কেন ? বর পোশাকটাকে দাগি আসামির পোশাক মনে হচ্ছে আমার। অনু কে কমিউনিটি সেন্টারের গেটে দেখতে পাওয়াটা আমার. কাছে পৃথিবীর অনেকগুলো আশ্চর্যের মধ্যে একটি। আমি গাড়ি থেকে বের হতেই অনু ছুটে আসলো, ওর তো ছুটে আসার কথা না । আমাকে রিসিভ করবে কনে পক্ষের লোকেরা।
রণ এসে পড়েছো? অনেকক্ষণ অপেক্ষ করেছি তোমার জন্য।
মেয়েটা এ কি বলছে? অনু কি বিয়ে’র আনন্দে বোধ বুদ্ধি সব হারিয়ে ফেলেছে? তবে অনুকে তো কনে পোশাকে দেখছি না। ওকে দেখে মনে হচ্ছে নিমন্ত্রিত অতিথি।
এসো; এই বর এসেছে বর এসেছে বলে আমার হাতটা ধরলো; বেশ শক্ত করেই ধরলো। নিয়ে গেলো বিয়ের মঞ্চে। মঞ্চের চেয়ার ফাঁকা। একটিতে আমাকে বসালো অন্যটিতে এখনও কেউ আসে নি। অনু কোথায়? হয়তো এখনও তার কনে সাজা হয় নি। ইন্দু কি ভালো আছে। ও কি সুস্থ্য হয়ে উঠেছে? যদি ইন্দু’র কাছে দৌড়ে চলে যেতে পারতাম, এক নজর ওকে দেখতে পারতাম। কিছুক্ষণ পরেই আমার বিয়ে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে আমি এ বিয়ে করতে চাই না, চাই না।-
ভুলগুলো আজব্দি যত্নে লালন করেছো ?
ওখানে সাদা কালো রঙে গধূলীতে দাও প্রাণ
এখানে বসন্ত নেই; কীট পতঙ্গ আর হাড় পঁচা ঘ্রাণ।
শুধুই কালো’র মিছিল; অথচ জোনাক জ্বলে
কই!মৃত্তিকা ছেদনে-
আলো কই?
বসন্ত কই?
শুধুই নিশীথ নিস্তব্দতার জলসা বয়; অথচ কবিতারা হাসে
কই!শব্দছন্দহীন জীবনে-
শব্দ কই?
ছন্দ কই?
ভুলগুলো আজব্দি যত্নে লালন করেছো ?
ভাসে না রঙিন শব্দেরা; যা দিয়ে দু’খানা ছন্দ হয়।
সে বার বসন্তে ছেড়েছি ধরা
এ বসন্তে পরিপূর্ণ মরা;
আমি যে বসন্তে মরা।
অনু কাউকে একজন কনে সাজিয়ে নিয়ে আসলো-
রণ কনেকে এনেছি।দেখবে না কনেকে?
আমি চমকে উঠলাম, মানে কি বলছো অনু? এ কে?
অনু কনের ঘোমটা সরিয়ে দিল,
ইন্দু আমার সামনে কনে সেজে দাঁড়িয়ে, হ্যাঁ ইন্দুই তো।
ইন্দু কনে বেশে আমার সামনে! আমি স্বপ্ন দেখছি না তো ;
না রণ তুমি সত্যিই দেখছো । হাতটা দাও তোমার; ইন্দুকে ছুঁয়ে দেখো ও সত্যিই তোমার ইন্দু।
অনু আমার ডান হাতটা ইন্দু হাতে দিল। ইন্দু চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না, অঝরে কেঁদে দিল। আমারই বুকে মুখ খানা গুজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
বিলকুল চেনা;
খুব পরিচিত, খুবই চেনা
আশা আক্ষেপে শ্রাবণ বোনা।
বিক্ষোভ ক্ষোভ যাই বলুক লোকে
ধীরে চক্ষু হয়ে গাল বেয়ে
পরিশেষে বিঁধে বুকে।
খুব চেনা; থেমে থেকে কান্না ঝরে
লোকে বলে শ্রাবণ ধারা,
এবেলা থেকেই যাও, বুঝলে
বারিরূপে যদি দিলেই ধরা।
অনু তুমিই এসব করেছো? কেনইবা করলে ? ইন্দুকেই বা কোথায় পেলে?
হাসপাতালে; না খেয়ে খেয়ে দুর্বল ছিল, কিছুটা সুস্থ্য করে তোমার কাছেই ফিরিয়ে আনলাম। তোমাদের ভালোবাসাই যে সত্যি; ইন্দু মেয়েটা তো মরেই যেতো তোমাকে ছাড়া। তুমি তো আমাকে কিছুই বলো নি। ইন্দুই সবটা বলেছে, তাও আবার বিয়ের আগের দিন। তুমি যে ওকে ভালোবাস সেটাও আমার অজানা থাকার কথা না, ছিঃ ছিঃ রণ তুমি পুরুষ হয়েও এমন একটা কাজ করলে কি করে বলো তো ?
বিশ্বাস করো অনু আমি পরিবার আর সমাজের ভয়ে ইন্দুকে আজব্দি ‘ভালোবাসি’ কথাটি বলতে পারি নি, ওর সাথে কোন দিন কথাও বলি নি। শুধুমাত্র নিজের স্বার্থটাই দেখেছি। নিজের ভদ্রতার খেতাব ধরে রাখতে আমি ইন্দুকে ভালো করে দেখার সাহসটুকুও দেখাই নি।অথচ এই আমিই ওকে পাগলের মতো ভালোবাসেছি, ওকে বুঝতেও দেই নি । যখন শুনেছি ও অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে তখন থেকেই বুকের ভিতরটা মরুভূমি হতে লাগলো । তুমি আমাকে ক্ষমা করো অনু। আমি ইন্দু কে ছাড়া তোমাকে হয়তো বিয়ে করতে পারতাম, কিন্তু আমরা কি সুখি হতাম? তোমার কাছে আমাদের ঋণের শেষ নেই অনু। সারা জীবন আমরা তোমাকে মনে রাখবো।
খবরদার, একদম আজেবাজে কথা বলবে না রণ, বন্ধুত্বে আবার কিসের ঋণ-ফিন । সেদিন তো কথাই বলতে পারো নি, আজ যে একদম কথার খৈ ফুটছে। লাজুক রণ’র কি তাহলে লাজ ভেঙ্গেছে ?
ইন্দু তখনও আমার বুকে মাথা গুজে বাচ্চাদের মতো কেঁদে যাচ্ছে-
ও চোখে মুহূর্তে ভরা জোয়ার এলো
একই নক্ষত্রতলে ভেজা চোখে
তৃষ্ণা মেটাই;
আদিম শেওরা পরা বিছানায় খন্ড খন্ড গদ্যের উল্লাস।
এই বুঝি আমাদের বিশ্বাস?
হু; এটাই আমরা।
তুমি যেন এই মাত্র চন্দ্র থেকে নেমে এলে;
এক ঝুড়ি রূপালী নিঃশ্বাসে জ্বালাও ব্রতের আলো।
কি ব্রত করবে? নক্ষত্রটা ছিটকে যাবে এক্ষুনি।
সুখ নাকি কনকনে শীত?
অথবা চৈত্রের দুপুর, এই নাও মানুষের গন্ধ দিলাম।
শোন ইন্দুবতী; নিঃশ্বাসটুকু এখনই শেষ করো না।
মনে পড়ে; বেলকুনি থেকে কত্ত হাজার নিঃশ্বাস ছুড়ে দিতে;
আমি কুড়িয়েছি আশ্বাস
তোমার চোখ ভরা বিশ্বাস।
এখন আমরা এখানে।
ও চোখে জোয়ার আর এনো না
বিন্দুমাত্রও না; জোয়ারে দহন জ্বালা তুমি বুঝবে না ?
পাগলি; আর কান্না নয়। এই তো আমি; মুখখানা তোলো এবার। খুব ভালোবাসি তোমাকে ইন্দু। আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ইন্দু তুমি আমার, আমারই থাকবে।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
রণ ইন্দুকেই ভালোবাসে, কিন্তু পরিবার আর সমাজের ভায়ে কোন দিনই রণ ইন্দুর ভালোবাসায় সারা দেয় নি। তবু বুকের সমস্তটা জুড়েই ইন্দুর বাস। অনু নামের মেয়েটির সাথে রণ’র বিয়ে ঠিক হয়েছে ঠিকই কিন্তু রণ মনে মনে এ বিয়ে রাজি নয়। ওযে শুধু ইন্দুকেই ভালোবাসে। ইন্দুও রণকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। তাই তো ইন্দু দিনেপর দিন না খেয়ে খেয়ে নিজেকে শেষ করতে চেয়েছে। রণ তার মায়ের চোখ কে ফাঁকি দিতে পারে না। তিনিও চায় ইন্দুকে যেন রণ বিয়ে করে সুখি হয়। বিয়ের ঠিক দু’দিন আগে ইন্দু রণ’র হবু স্ত্রী অনুকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। অনু তাই বিচক্ষনতা আর নিজস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বিয়ের দিনই ইন্দু কনে সাজিয়ে রণ’র সামনে হাজির করে। রণ অবাক হয়ে যায়। অনু’র প্রতি রণ কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে। ইন্দু আর রণ’র ভালোবাসা সার্থক হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে।
০৭ জুলাই - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
১৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪