জারজ সন্তান

স্বাধীনতা (মার্চ ২০২০)

মোঃ আব্দুল মুক্তাদির
মোট ভোট ২৬ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.৬৩
  • ১৩৫৮
'কার্তিক ও কার্তিক... তুই কি ঘরে আছিস বাবা?' বাবার ডাক শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বাহিরে এলাম আমি। বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখে ভয়ের ছাপ। বললাম----
-'বাবা আমি ঘরে আছি তো...'
-'যাক তোকে দেখে আমি নিশ্চিন্ত হলাম।'
-'কি হয়েছে বাবা?... তুমি কি কিছু দেখে ভয় পেয়েছ নাকি?'
-'তুই বাহিরে বের হোসনি, ভালো করেছিস। প্রশান্তকে একদল যুবক পিটিয়েছে।'
-'বলো কি বাবা!... ঐ ফেসবুকের জের এতদূর এসেছে?'
-'তাই তো বলছি বাবা...কোথা থেকে কি হয় বলা যায়না। তুই কয়েকদিন তোর গোপাল কাকার বাড়ি থেকে ঘুরে আয়।'

আমি শ্রী কার্তিক সাহা। আমার পূর্বপুরুষদের জন্ম একদা ব্রিটিশ ভারতে এবং আমার জন্ম অধুনা বাংলাদেশে। রাজশাহীর ছোট শান্ত একটা গ্রামে আমার আবাস। আমাদের গ্রামে মুসলিম-হিন্দু সম্পর্ক মোটামুটি সৌহার্দ্যপূর্ণ। কিন্তু সম্প্রতি আমাদের গ্রামে হিন্দু বিদ্বেষ তীব্র হয়েছে। যদিও আমি ছোট বেলা থেকেই দেখছি কিছু দোষ দেখলেই মুসলিমরা আমাদের 'নেংটির জাত' , 'নেংটির বাচ্চা' বলে গালি দেয়। ব্যাপারটাকে আমরা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছি। তবে এখন বিদ্বেষ আরো ছড়িয়েছে। ফেসবুকে হিন্দু কে একজন যেন নবী মুহাম্মাদকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। পরে জানতে পারলাম যিনি এই কাজটি করেছেন তিনি একজন সমাজকর্মী। তার সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নাই। কিন্তু এটা নিয়ে আমাদের গ্রামে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই হিন্দু পাড়ায় হামলা শুরু হয়েছে। আমার কাকার ছেলে প্রশান্তদা কে একদল যুবক পিটিয়েছে। কাকার বাড়িতে ভাংচুর করেছে। আমরাও ভয়ে ভয়ে আছি। অনেক হিন্দু ছেলে-পুরুষ গ্রাম থেকে পালিয়ে গেছে। ব্যাপারটা নিয়ে আমরা খুব ভীতিকর অবস্থার মধ্যে আছি। পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হবার পর সবাই নড়েচড়ে বসেছে। তারপর থেকে পুলিশ আমারদের পাড়ায় টহল দিচ্ছে। স্থানীয় সংসদসদস্য বলেছেন, 'হিন্দু পাড়ায় হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। কোন হিন্দুর উপর হামলা সহ্য করা হবেনা। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নাই।' তারপরও আমার বাবা সাহস না পেয়ে আমাকে ভারতের আসানসোলে পাঠালেন।

বাবার দূর সম্পর্কের ভাই গোপাল কাকার বাড়িতে উঠেছি আমি। কাকারা আমার জন্মের আগে ভারতে এসেছেন। আমি আগে কখনো আসিনি। এবারই প্রথম এলাম। কিভাবে এলাম সেই কষ্টের কথা বলে বোঝানো যাবেনা।
এক বিকেলে কাকার বারান্দায় বসে থেকে কাকার কাছে আমার দুর্দশার কথা বলছি। কাকা বললেন---
-'হ্যাঁরে কার্তিক, তুই তো এখানে এসেছিস, ভালোই করেছিস। আমি ভাবছি দাদা-বৌদি কিভাবে আছেন?'
-'আমারও সেই চিন্তা হচ্ছে কাকা...আমি তো একা আসতেই চাইলাম না। বাবা জোর করে পাঠিয়ে দিলো। বলল, সবাই চলে গেলে বাড়িঘর দখল করবে ওরা। সেটাই ওরা চায়, আমরা যেন সবাই চলে যাই।'
-'বড় মুশকিল...'
-'বাবা বললেন, এখন কয়দিন পুলিশের টহল চলবে। আমাদের চিন্তা তোকে করতে হবেনা। তুই পরিস্থিতি ভালো হলে ফিরে আসিস।'
-'তোর বাবাকে আমি বলেছিলাম এখানে আসতে। এতদিনে এখানকার নাগরিক হয়ে যেত। কিন্তু তোর বাবা বাংলাদেশের জমিগুলো ছেড়ে আসতে চায়নি।'
-'এবার মনে হয় জমিগুলো জলের দামে বিক্রি করে আসতে হবে কাকা... আর এখানে এসেই বা কি করবো? বেকার হয়ে ঘুরতে হবে...'
-'তা হয়তো কিছুদিন বেকার হয়ে ঘুরতে হতো...কিন্তু একটা কাজ জুটে যেত...
আমাদের কথা থেমে গেলো। কাকার কাছে এক ছেলে এলো। দেখে মুসলিম ছেলে মনে হল। ছেলেটি বলল----
-'সালাম চাচা কেমন আছেন?'
-'আমি তো ভালো, তুমি কেমন আছো? তোমাকে তো দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে।'
-'মন ভালো নাই চাচা, বড় বিপদের মধ্যে আছি।'
-'কেন কি হয়েছে?'
-'কে যেন গুজব রটিয়েছে আমাদের বাড়িতে গরু জবাই হয়েছে। আর আমি নাকি গরুটা জবাই করেছি।'
-'তারপর?'
-'তারপর আর কি? আমরা সবাই খুব ভয়ের মধ্যে আছি।'
-'শুনে তো আমারই ভয় লাগছে।'
-'আপনি বলেন কাকা, আমাদের পক্ষে কি ঈদ ছাড়া গরু কেনা সম্ভব?'
-'তারপর?'
-'তারপর কালকে গো-রক্ষক দলের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি, বলছে মরার জন্য প্রস্তুত থাকতে।'
-'সর্বনাশ!!'
-'কদিন আগে একদল হিন্দু ছেলের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তারা বলছিল, 'মুসলিমদের ভারত থেকে বের করা উচিত। এদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, এরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে... ইত্যাদি।' আমি বলেছিলাম, 'এত দিন বাস করে আমরা আজ বের হব কেন? আমাদের বের করে দিলে ১৯৪৭ এ সাথে নিয়েছিল কেন?' -এ নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমার মনে হয় তারাই এ গুজবটা রটিয়েছে। আর গো-রক্ষকের নাম করে তারাই এ হুমকি দিতে পারে। আব্বা তো বলছে, আমাকে কয়েকদিন পালিয়ে থাকতে। আপনার কাছে এলাম চাচা যদি কিছু টাকা ধার দিতেন। এই মুহূর্তে হাতে একটা টাকা নাই।'
-'তা দিচ্ছি, কিন্তু যাবি কোথায়?'
-'দেখি, কোথায় যাওয়া যায়?'
এরপর আমি কথা শুরু করলাম, 'আপনার আর আমার অবস্থা দেখছি একই...'
ছেলেটা আমাকে বলল, 'আপনি কে ভাই?'
কাকা বললেন, 'ও আমার দূর সম্পর্কের ভাইপো, বাংলাদেশ থেকে ভয়ে পালিয়ে এসেছে।'
ছেলেটা বলল, 'ঠিক আছে, আজ আসি চাচা। দেখি আজ কার বাড়িতে ঠাই হয়?'
ছেলেটা উঠতেই কাকা বললেন---
-'আজ তুই এখানেই থাক ফরিদ।'
-'আমার মত গরুখোরকে তুমি আবারো থাকতে বলছ চাচা?'
-'তুই কি আজ আমার বাড়িতে নতুন নাকি রে? তুই আর তোর বাবার কাছ থেকে আমরা কত সেবা পেয়েছি, সেসব কি ভুলে গেছি?'
-'সত্যি চাচা, তোমার মত মানুষ না থাকলে আমাদের মত গরিব মুসলিমরা টিকতে পারতোনা। ঠিক আছে চাচা আমি বাড়ি থেকে একটু আসছি।'
ছেলেটা যাবার পর কাকাকে বললাম---
-'কাকা, ছেলেটা কে?'
-'ওর বাবা আর ও এককালে আমাদের বাড়িতে কাজ করেছে। খুব ভালো ছেলে, খুব বিশ্বস্ত। কোন দিন সুযোগ পেয়েও কোন কিছু চুরি পর্যন্ত করেনি। এমন একটা ভালো ছেলের বিপদ দেখে মনটা খারাপ হল।'
-'দেখেছেন কাকা ওর আর আমার অবস্থা একই। কেন যে দুই অঞ্চলে সংখ্যালঘু নামক হতভাগাদের উৎপত্তি হল?...'


বিকেলে ফরিদ এলে আমি ও ফরিদ কাকার পুকুর পাড়ে গিয়ে বসলাম। আমি বললাম----
-'বুঝলেন ফরিদ ভাই তোমার আমার অবস্থা এক।'
-'আপনার নামটা কি দাদা?'
-'কার্তিক সাহা।'
-'তা কার্তিক দা, চাচা বলল, বটে তুমিও নাকি ভয়ে দেশ ছেড়েছ?'
-'হ্যাঁ ভাই, আমরা সবাই মিলে মিশে থাকলেও ছোট কাল থেকেই দেখে আসছি, গ্রামের কারো সাথে আমাদের বিবাদ বাঁধলে আমাদের হিন্দুর বাচ্চা, নেংটির বাচ্চা ইত্যাদি বলে গালি দেয়া হয়। কিন্তু মুসলমান কাউকে গালি দিলে মুসলমানের বাচ্চা বলে গালি না দিয়ে, তার নাম ধরেই গালি দেয়া হয়। বড় হয়ে বুঝলাম এটার কারণ।'
-'আমাদের দুই দেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা একই ভাই। আমাদেরও এরা 'কাটামোল্লা' বলে। জঘন্য এদের কথাবার্তা...'
-'ওখানেও ভয়ে আছি। কোনদিন দেশটা ছাড়তে হয়। যদিও সরকার আশ্বাস দিচ্ছে, তারপরও ভয় লাগে।'
-'এখানেও ভাই একই অবস্থা.... পাড়ার দাদা বাবুরা বলে, আমরা নাকি বহিরাগত। আচ্ছা কার্তিক দা, তুমিই বলো,কত বছর বাস করলে আমরা বহিরাগত নাম থেকে মুক্তি পাবো?
-'কি আর করবে? সংখ্যালঘু বলে কথা। আমার হয়েছিলো কি জানো? তরুণ বয়সে একবার এক মুসলমান মেয়েকে ভাল লেগেছিল। তার সাথে তিন বছর মন দেয়া নেয়াও হয়েছিল। কিন্তু এটা যে কত বড় দুঃসাহসের কাজ তা পরে বুঝতে পেরেছিলাম হাড়ে হাড়ে। ঐ ঘটনার পর থেকে আমার প্রেম প্রীতির প্রতি টান চলে গেছে।'
-'আর এখানে কি হয় জানো?'
-'কি হয়?'
-'উফফফ...... 'মুসলিম তোষণ', 'মুসলিম তোষণ' ......ছোট বেলা থেকে এটা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের সরকার আমাদের মত অনগ্রসর শ্রেণীকে যদি এগিয়ে নিতে আমাদের সুবিধার জন্য কিছু কাজ করে সেটাই কি মুসলিম তোষণ?
-'আমারও একই অবস্থা। গ্রামে পূজার সময় পুলিশ পাহারা দিয়ে দেবী মায়ের বিসর্জন দিতে হয়। কারণ আর কিছু না। যাতে আমাদের উপর কোন হামলা না হয়। এটা নিয়ে গ্রামের লোকরা খুব বিদ্রুপ করে সরকারকে। বলে এই সরকারের কাজই খালি নেংটিদের তেল মাখা। নেংটিদের এত তেল মাখার পরও কোথাও কোথাও দেশের বৈমাত্রেয় সন্তানদের উপর হামলা হয়। তারপর কিছু দিন মিছিল মিটিং ফেসবুকিং অতঃপর সব বন্ধ।'
-'আমরাও ভারতের বৈমাত্রেয় সন্তানের মত। দিনে ৫ বার আযান শুনলে নাকি দাদা বাবুদের মাথা ধরে। তবে বললেই হয়, 'মুসলিমরা ভারত ছাড়ো', 'ভারত অসাম্প্রদায়িক নয়', 'ভারতে মুসলিম তোষণ চলবে না।'
-'তোষণের কথা যখন উঠলো, তখন বলি শোন, যখন অসাম্প্রদায়িক সরকার ক্ষমতায় আসে তখন আমরা স্বপ্ন দেখি যে এবার হয়ত কিছুটা সুবিধে হবে। তখন কিছু মুসলিমরা জিগির তোলে, এইবার 'হিন্দুদের তেল মাখতে দিন যাবে সরকারের'। ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালুর জন্য মুসলিমরা কত যে কথা বলেছে, 'গেল গেল দেশটা হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে', 'মুসলিম দেশে এখন দেবীর গুণ গান পড়তে হবে', 'শালা সরকার, কয়েকটা ভোটের জন্য আর কত নিচে নামবি?...ইত্যাদি...ইত্যাদি...'
-'বুঝলে ভায়া , আমরা হচ্ছি হতভাগা। নিজেদের আমরা হতভাগাই বলবো। নিজ ভূমিতে বাস করেও যদি আমাদেরকে সংখ্যালঘু ডাক শুনতে হয় তবে আমরা তো হতভাগাই।'
-'ঠিক বলেছ। যতদিন আমাদের মাথার উপরে বৃটিশ রাজদন্ড বিদ্যমান ছিল ততদিন আমরা আজকের চেয়ে ভালই ছিলাম।'
-'ঠিক, স্বাধীনতা পেয়ে সংখ্যাগুরুরা টিকে গেলেন বটে। কিন্তু সেদিন থেকে আমরা স্বাধীনতার জারজ সন্তান হয়ে গেলাম। তারা নিজ নিজ দেশের সংবিধান রচনায় ব্যস্ত হলেন। আর আমরা সর্বদা শংকার মধ্যে থাকলাম।'
-'ঠিক, তারা গাইলেন দেশমাতার বন্দনা আর ‍আম‍াদের ধরে নিলেন বৈমাত্রেয় ভাই। তারা দেখলো উন্নত মাতৃভূমি গড়ার স্বপ্ন আর আমরা দেখলাম নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হবার চিত্র।'
-'আমরা হচ্ছি স্বাধীনতার জারজ সন্তান। স্বাধীনতা আমাদের জন্ম দিল বটে, কিন্তু আমরা কোনদিনই সংখ্যাগুরুদের মত হতে পারলাম না।'
-'আচ্ছা, ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হবার পরেও কেন দুই অঞ্চলে সংখ্যালঘু নামক হতভাগারা থেকে গেলো?'
-'আমি বুঝতে পারিনা। কেউ আমাকে বুঝিয়েও দেয়না। গো রক্ষকদের কথা তো বললামই। তুমি বল ভারতে মুসলিমদের চেয়ে গরুর দাম বেশি?
-'তা তো হবার কথা না।'
-'গো রক্ষকদের ভাব দেখে সেটাই মনে হচ্ছে।'
-'তোমার সাথে কথা বলে মনটা হাল্কা লাগছে। ভেবেছিলাম এখানে কাকার কাছে থেকে যাবো। যে কোন প্রকারের কাজ হোক করব। এখন মনে হচ্ছে এখানে থেকেই বা কি করবো? এখানকার অবস্থাও তো একই, তা তোমাকে দেখে বুঝলাম। স্থানীয় মুসলিম হওয়ার পরেও তোমাকে যারা কথা শোনাচ্ছে, আমাকেও তারাই একদিন 'বাংলাদেশি বহিরাগত হিন্দু' বলে অবজ্ঞা করবে।'
-'তা ঠিক, তোমার কথা না শুনলে আমিও বুঝতাম না। তাহলে আমাদের এখন কি করা উচিত?'
-'আমাদের এখন প্রতিবাদ করতে হবে। সরকার আমাদের সাথে আছে। এসব উঠতি দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধে এক হতে হবে। আমি দেশে যাব। তুমি কি করবে ফরিদ ভাই, পালিয়ে যাবে?
-'না, আমিও থাকবো। কিছু লোকের জন্য আমি পালিয়ে যাবনা। চাচার মত লোক আমাদের সাথে আছেন। আমি কালই বাড়ি যাবো। বাবাকে বলবো সাহস হারালে চলবে না। অসাম্প্রদায়িক ভারতের আমরাও জনগণ। আমরাও ভারতের আনুগত্য স্বীকার করেছি। আমরা কেন পালিয়ে যাবো?'


পরদিন আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম বাংলাদেশে যাবো। কাকা বললেন, কদিন থেকে যেতে। আমি থাকলাম।
৪ দিন পর। দুপুরবেলা কাকা খুব দ্রুতপায়ে বাহির থেকে ফিরলেন। কাকার কাছ থেকে শুনলাম, কয়েকজন দুর্বৃত্ত ফরিদ ভাইকে আক্রমণ করেছিলো। সে শারীরিকভাবে গুরুতর আহত হয়ে রাস্তায় পড়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর সে মারা গেছে। আমার মন ভেঙে গেল। তার এমন পরিণতিতে আমি কেঁদে উঠলাম। অজানা অচেনা ফরিদ ভাই এর প্রতি আমি এক টান অনুভব করতে লাগলাম। কাকা আমাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।
মারা যাবার আগে ফরিদ ভাই গোটা পাড়ায় জনমত গড়ে তুলেছিল। ফলে ফরিদ ভাই এর ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো। তার বন্ধুরা ফেসবুকে ঘটনাটা ছড়িয়ে দিল। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়তে পড়তে সাংবাদিক, সমাজকর্মী এমনকি পুলিশের ঊর্ধ্বতন ব্যাক্তিদের কাছে পৌঁছে গেল।
গোটা এলাকায় এখন পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছেন ফরিদের হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে। ফরিদ ভাই এর এভাবে চলে যাওয়া আমি মেনে নিতে পারলাম না। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। পাগলের মত চিৎকার করতে লাগলাম............
-------যুগে যুগে আমরা কি এভাবেই চলে যাব?--------
-------আমরা কি কেবল অসাম্প্রদায়িক দলের ভোটব্যাংক হয়ে থাকবো?--------
------কবে সংখ্যালঘু ডাকটা চলে যাবে?--------
------এ স্বাধীনতা চাইনা, যার ফলে সংখ্যালঘু সমস্যা তৈরি হয়----------
------হে দেশমাতা, তোমার স্বাধীন কোলে তোমার অনগ্রসর সন্তান কি স্থান পাবেনা?--------
------হে মাতা, তোমার দুর্বল সন্তানকে তুমি ভালবাসলে অন্য সন্তান কেন ঘৃণা করবে?------
------হে স্বাধীনতা, তুমি কেন আমাদের মত জারজ সন্তান প্রসব করলে?--------

(সমাপ্ত)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Miftahul Jannat চমৎকার গল্প, দারুন পরিবেশনা
Nargis Sultana ভাল লাগলো আবার কষ্ট পেলাম ফরিদের পরিণতিতে।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত গল্পের মধ্য দিয়ে একটি বাস্তব ঘটনার চিত্র । ভোট সহ শুভকামনা রইল ।
ফয়জুল মহী দারুণ অনুভুতি ,বেশ ভালো লাগলো ।
জুনায়েদ বি রাহমান অপ্রিয় বাস্তবতার চিত্র। উপস্থাপন ভালো হয়েছে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তানের স্বাধীনতার ফলে সৃষ্ট সংখ্যালঘুরা নিজ দেশে অবহেলিত, শঙ্কিত হয়ে বাস করে। এরা যেন স্বাধীনতার জারজ সন্তান...

১১ জুন - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ২০ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.৬৩

বিচারক স্কোরঃ ৩.০৩ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৬ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪