শেষ চিঠি

বাবারা এমনই হয় (জুন ২০১৯)

Umme Habiba
  • 0
  • 0
  • ৪৪
২৫ এ চৈত্রের বৃষ্টিস্নাত সকাল।ঝমঝমে বৃষ্টির মধ্যে শহরের পশ্চিমপাশের মানসিক হাসপাতালের আধভেজা বেলকনিতে পড়ে আছে একটি নিথর প্রাণহীন দেহ।হাতের শিরা উচকে পড়া রক্তে রঙিন হয়ে আছে মেঝে।সাদা শার্টের নিচটাও রঙিন হয়ে আছে ভালোবাসার রঙিন অথচ কঠিন আলাপনে।দখিনা বাতাস থেকে থেকে এসে ছিটকা জলের ফোটা লাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছে মুখে।বৃষ্টির ধারায় চুইয়ে চোখে পড়া ফোঁটা ফোঁটা জলই যেন ঐ প্রাণহীনের শেষ কান্না,সুখের কান্না....
ধবধবে সাদা জামাটাও বৃষ্টির পানিতে ভিজে আছে এখন।ভিজে জামার পকেটে দেখা যায় ভাজ করা কাগজ।কাগজটা যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে...চাইবেই তো!যতই হোক--ওটা একজন বাবার লেখা শেষ চিঠি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সাংবাদিক সহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়ো হয়ে গেল।চিঠি টিও বের করা হল পকেটের চুপসানো ভাজ থেকে।
তারপর বাতাসে ভাসল চিঠির নিরাকার কন্ঠস্বর-
মা,
জানিনা তোর পর্যন্ত এই কালো ছাপার কাগজখানি পৌঁছবে কিনা।যদি ভাগ্যের কড়া নড়ে পৌঁছে ই যায়,তবে হয়তো কিছুটা ভার কমবে আমার থেকে,যদিও আমি অতি স্বার্থপর অযোগ্য, অবদানের শূন্য খাতা ধরা এক আনাড়ি বাবা,তবুও বাবা তো!আর ভূমিকা করতে চাচ্ছি না,যে রচনার আদৌ নেই কোনো উপসংহার,নেই কোনো তাৎপর্য তার আবার ভূমিকা!
তখন আমার ২৫ বছর বয়স।আর তোর মা ১৯।আমি আর তোর মা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম।আমার ছোটখাটো একটা কেরানী র চাকরি,আর তোর মা কলেজে পড়ত সবে। কোনোমতে দিন চলে যায়। বেশ সুখেই কাটছিল,যদিও অভাব কখনো দরজা ছাড়েনি আমাদের।তোর মা আমাকে অনেক ভালোবাসতো,হয়তো সবথেকে বেশি!আর আমি?তোর মা ছিল আমার ঐ ঘর্মাক্ত বিকেল,ভ্রু কুচকানো ভোর,ক্লান্ত দুপুর আর চিন্তারেখায় ঢাকা রাত্রি ছাড়িয়ে অন্য আলোর এক পৃথিবী।আমাদের এই ভালোবাসার এক অন্যরূপ পেল,যখন তুই তোর মায়ের গর্ভে এলি।সে কি আনন্দ!মনে হচ্ছিল এই প্রথম ভালোবাসাকে এত কাছ থেকে দেখছি!কিন্তু নিয়তি হয়তো বেশিদিন আলো সহ্য করতে পারে না।সেও অন্ধকার চায়।সেও চায় তার খেলায় আমরা কখনো কাঁদি,কখনো হাসি,কখনো ভয় পেয়ে যাই।
দিনটি ছিল চৈত্রের প্রথম দিন।আমাকে মিথ্যা অপবাদে ফাঁসিয়ে দেয়া হল।তারপর আমার ৫ বছরের জেল হল।তোর মা খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করে কোনোমতে বেঁচে ছিল হয়তো তোকে জন্ম দেয়ার জন্য।তোর জন্মের সাথে সাথেই তোর ও মারা যায়।তারপর ঐ পাশেরই এক নিঃসন্তান দম্পতি তোকে নিতে চায়।আমিও এটা শুনে খুব একটা মায়া না করেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।আমার শুধু একটাই বাসনা ছিল -তুই ভালো থাকবি।আমাদের ভাঙা স্বপ্নগুলো ওদের মাধ্যমে হলেও পূরণ করতে চেয়েছি শুধু! কি করতাম আমি আর জেলে বসে!
তারপর পাঁচ বছরের একেকটা ভয়াল দিন পেরিয়ে একদিন বেরিয়ে এলাম।মনে হচ্ছিল কত শতাব্দি পর দেখছি সবুজের বুকে আলো,সাথে ব্যস্ত নগরী,তবুও শূন্যতা। তোর ঠিকানা জোগাড় করলাম বেশ ঝামেলার মধ্যে দিয়েই।তারপর থেকে প্রতিদিন আমি ঐ(তুই যে বাড়িতে থাকতি/আজও থাকিস)বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়াতাম,কখন তোকে দেখব,কখন তুই বেলকনিতে একটু ছায়া ফেলবি বা কখন বের হবি,কখন স্কুলে যাবি সেই মুহূর্ত টার জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। যখনই তোকে দেখতে পেতাম তখনই যেন পরানটা একটু ঠান্ডা হত। কাজ ছিল না কোনো,করতেও যেতাম না দূরে,তোকে দেখতে পাবনা বলে।কি আর আছে আমার!যা আছে তাও যদি আড়াল করে দি নিজ স্বার্থে তাহলে কি বা জবাব দিতাম নিজের কাছে! কয়েকদিন কেটে গেল।তারপর একদিন তোর ঐ বাসার পাশেই মফিজের দোকানে কাজ পেলাম। যা হোক,নিজের খাওয়াটা চলে যেত।
তোকে দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা করত খুব। মনে হত-একবার ছুঁয়ে দিলে আমার সব দুঃখ, সব গ্লানি কিছুটা হলেও কমবে।
এভাবে আরো বছর ছয়েক পার হল। হটাৎ দুই তিনদিন টানা তোকে দেখতে পেলাম না। মনটা খুব কু ডাকছিল। তারপর জানতে পারলাম তোকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার জীবনে এই একটা খবর আবারো যেন আমাকে জেলখানার অনুভূতি ফিরিয়ে দিল। আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। তোকে না দেখে থাকার কষ্টে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। কাজ ছেড়ে দিলাম। পথে পথে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। একপর্যায়ে লোকে ধরে আমাকে মানসিক হাসপাতালে দিয়ে দিল।
মা,এখন তুই অনেক বড় হয়েছিস,ঠিক যেমন আমি আর তোর মা চেয়েছিলাম। তুই আজ একজন বড় শিল্পী। হটাৎ যখন আজকে দেখলাম নিউজে বড় এক্সিডেন্ট এ তুই তোর দুটো চোখ হারিয়েছিস,ঠিক তখনই যেন মনে হল আমার সময় এসেছে তোকে ছুঁয়ে দেখার,সময় এসেছে তোর সাথে থাকার।আমি তোকে আমার চোখদুটো দিয়ে গেলাম। এবার অনন্ত আমাকে তোকে তোর জীবনের অংশ করে নে। মাফ করে দে আমাকে!একটু ছোঁয়ার সুযোগ দে।
জানিস মা,আজকে এই স্বেচ্ছামৃত্যুতে আমার যে সুখ তা আমি আমার সারাজীবনেও পাইনি...ভালো থাকিস,আমার চোখে বিশ্ব দেখিস,আমার আলোয় অনন্ত জীবনের কিছুটা রাঙাস!বাবা হিসেবে এটা যে আমার দায়িত্ব!

আর এখানেই শেষ হয়ে একজন বাবার চিঠি।নিরবে বয়ে বেরানো কিছু আর্ত চিৎকার ,সাথে তাজা অথচ অন্তিম গ্লানিতে ঢাকা এক বিমূর্ত জীবন। ঠিক এভাবেই হয়তো কিছু সম্পর্ক, কিছু ভালোবাসাকে প্রকৃতি নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। না হলে তার মূল্য কোথায়??
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

সন্তানের প্রতি একজন বাবার প্রকৃত আকর্ষণ কিছুটা হলেও এই গল্পে ফুটে উঠেছে।

১৮ মে - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪