সিসিফাসের শ্রম

মুক্তিযুদ্ধ (ডিসেম্বর ২০২৫)

Lubna Negar
  • 0
  • 0
  • ৩৩
সাফল্য পায় যেন এই মহা জাগরণ
বেঙ্গল রেনেসাঁয় ফ্রেঞ্চ রেভুলিউসন ।
বাস্তিল মনে আছে, শুনে রাখ বৈরী
মানুষের হাতে হয় গিলোটিন তৈরী ।
নমিতার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয় ধ্রুব। মেয়েটা আজ পরেছে শর্ট টাইস এবং ঢোলা টপস । তার বুকের বেশ কিছু অংশ দৃশ্যমান । ষোল বছরের স্বাস্থ্যবতী তরুণীটি নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয় । কিন্তু ধ্রুব নিঃস্পৃহ থাকে। কল কল সুরে কথা বলে নমিতা, হাসপাতাল থেকে কবে ছাড়া পেলেন স্যার? আপনি তো ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। আপনার গুলিবিদ্ধ হবার খবরটা পাড়ায় ছড়িয়ে পরতে সময় লাগে নি। আমরা খুব অনুপ্রাণিত হয়েছি । জানেন স্যার, আগস্ট মাসের ২ তারিখে আমি আমার ফেসবুকের প্রোফাইল লাল বর্ণ করেছিলাম।
সপ্তাহ দুয়েক আগে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষ পূরণ হয়েছে । বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে সংসদ ভবন এলাকায় জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। তবে মুখ্য সমন্বয়কদের মধ্যে ছয় জন অনুপস্থিত ছিলেন। মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারে , তারা তখন চট্টগ্রামে ছিলেন। ঐ দিন ধ্রুব বাড়ি থেকে বের হয় নাই। ফোন বন্ধ করে রেখেছিল । কম্পিউটারের সামনেও বসে নাই। সন্ধ্যার সময় গত এক বছর আগের অনাদরে পরে থাকা প্রতিযোগিতার সাধারণ জ্ঞানের বই ও বিসিএস গাইড দুটো ধুলো ঝেড়ে টেবিলের উপর রেখেছে। আজ একই ভাবে নিরৎসুক কণ্ঠে নমিতা কে প্রশ্ন করে,
তোমার কলেজে সমাপনি পরীক্ষার তারিখ দিয়েছে ? ইংরেজি গ্রামার বই টা নিয়ে এস। ভয়েস করার আগে টেন্স ভাল করে শিখতে হবে।
নিজের কথার মধ্যে বাঁধা পেয়ে নমিতা একটু থমেকে যায় । তবে সে ফের কথা বলা শুরু করে , জানেন স্যার, বছর দুয়েক আগে আমি জীবন থেকে নেয়া সিনেমা টা টেলিভিশনে দেখেছিলাম। আনোয়ার হোসেনের অভিনয় অসাধারন। নিবেদিত প্রাণ বিপ্লবী । জুলাই অভ্যুত্থানের ডকুমেন্টগুলোর সাথে মিলে যায়। নমিতার জগৎ স্মার্টফোনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর মুভিস্টারদের স্ক্যান্ডাল পড়ার মধ্যে সীমিত । দুই বছর আগে ধ্রুব যখন নমিতা কে প্রাইভেট পড়াতে আসে তখন সে বুঝতে পারে মেয়েটা লেখাপড়ায় ভীষণ দুর্বল এবং অমনোযোগী । এক সপ্তাহ পর নমিতা বলেছিল, তার জীবনের লক্ষ্য মডেল হওয়া। সেই নমিতার মুখে রাজনীতির কথা শোনা কিছুটা আশ্চর্যজনক । তবে ধ্রুব তেমন অবাক হল না। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল তরুণ প্রজন্ম । ধ্রুব কে নির্বাক থাকতে দেখে নমিতা প্রশ্ন করে, কি ভাবছেন, স্যার?
ধ্রুব বলে, আনোয়ার হোসেনের সিরাজউদ্দৌলা সিনেমা টা দেখেছ? নমিতা বলে, না। ধ্রুব বলে, আনোয়ার হোসেন অভিনীত সবচেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র হল সিরাজউদ্দৌলা । শেষ বয়সে তিনি নিদারুন অর্থকষ্টে পড়েন । অর্থাভাবে তাকে সিনেমায় বাড়ির খানসামা , ভৃত্য প্রভৃতি ভূমিকায় অভিনয় করতে হয় । ধ্রুব অনেকটা আপন মনে বলে, আমার মনটা যদি সিরাজ সাজে ভাগ্য মীরজাফর । নমিতার উৎফুল্ল ভাবটা কমে আসে, স্যার শুধু নেতিবাচক কথা বলেন। মন খারাপ হয়ে যায় ।
নমিতাদের বাড়ি থেকে ফেরার পথে দেড় বছর আগের কথা ধ্রুবর মনে পড়ে । তার ক্লাসমেট রাজিব টিউশনি টা যোগার করে দিয়েছিল । নমিতার মা একটা প্রকল্পে চাকরি করেন । নমিতা শারীরিক প্রতিবন্ধী । রাজিব বলেছিল, তুই কিছু টাকা কম নে । তবে চিন্তা করিস না । রেট পুষিয়ে যাবে । ধ্রুব প্রথমে কথাতার অর্থ বুঝতে পারেনি । কিন্তু সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে নমিতার পোশাক এবং গায়ে ঢলে পরা ভাব দেখে বিষয় টা তার কাছে পরিস্কার হয় । বিতৃষ্ণা লেগেছিল ধ্রুবর । পনের দিন যেতেই সে সিধান্ত নেয় ,নমিতা কে আর পড়াবে না ।
সিধান্ত টা মোবাইল ফোনে নয় সরাসরি নমিতার মা কে জানাতে চেয়েছিল ধ্রুব। তাই এক বিকালে সে নমিতাদের বাড়ি যায় । নমিতারা বনশ্রীতে একটা ভাড়া বাসায় থাকে। বাড়িটা তিন তলা। নিচ তলায় তিনটা রুম। প্রত্যেক রুমে একটা পরিবার সাবলেট থাকে। নমিতারা সেই তিন পরিবারের মধ্যে একটা । ওদের বাড়ির এজমালি দরাজা খোলা । বেল বাজাতে গিয়ে থমকে যায় ধ্রুব। ভিতরে নমিতা আর তার মায়ের মধ্যে তুমুল বাক বিতণ্ডা চলছে। নমিতা ক্রদ্ধ অথচ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলছে, ঐ টপস পরে স্যারের সামনে আমি বুক দেখাতে পারব না। হিস হিস করে ওঠে মা, আধ ধামরি নুলো । তুই কি মনে করিস তোকে জজ ব্যারিস্টার এসে বিয়ে করবে? তোর কোন ভবিষ্যৎ নেই। আমি মরলে তোকে বেশ্যাগিরি করে খেতে হবে। ধ্রুবর মতো কোন ছেলে যদি তোকে বিয়ে করে তবে অন্তত একটা সংসার হবে। সতীপনা দেখিয়ে ভাত জোটে না।
ধ্রুব সেইদিন নমিতাদের বাড়ির সামনে থেকে নীরবে চলে এসেছিল। এই বিষয়ে সে কারো সাথে কথা বলেনি। দারিদ্র্য শুধু মানুষ কে বিপন্ন করে না , চরম অধঃপতন ঘটায় । ধ্রুব টিউশনি ছাড়ে নাই।
আজ রবিবার । ধ্রুবর সকালে ক্লাস ছিল। তবে ক্লাসটা সে মিস করেছে। এখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে বাসে ওঠে । তমাদির সাথে কথা হয়েছে । ওরা সবাই ক্যাম্পাসে আছে। এখনো গেলে স্যারের লেকচার এবং কবি শেলীর উপর দেয়া ফটোকপি পাওয়া যাবে। ধ্রুব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। বাসে সে বেশ অন্যমনস্ক ছিল। তার ঘোর কাটল সাইন্স ল্যাবরেটরির সামনে এসে। বিশাল যানজট । হট্টগোলের শব্দ শোনা যাচ্ছে । অচিরেই জানা গেল , দুই কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। রাস্তা বন্ধ। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। ধ্রুব জানালার পাশের সীটে বসে ছিল। খোলা জানালা দিয়ে রিক্সাচালক আর মোটর সাইকেল আরোহীদের মধ্যে কথা বার্তা শুনে বুঝল, সংঘর্ষের কারণ হল, এক কলেজের ছাত্রের গায়ে অন্য কলেজের ছাত্র থুথু ফেলেছে। এক বৃদ্ধ রিক্সাচালক মন্তব্য করেন, মানুষ আন্দোলন করবো ঠিক আছে। কিন্তু কথায় কথায় রাস্তা বন্ধ করবো কেন ? আরেক জন মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, বেশি স্বাধীনতা পেলে যা হয়। বৃদ্ধ রিক্সাচালকের যাত্রী একজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক । তিনি বলেন, কারো জন্য স্বাধীনতা কারো জন্য ঘোড়ার ডিম । সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের আয় কতটা বেড়েছে ? বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম আগুনের মতো । শিক্ষা বা চিকিৎসার কথা বাদ দিলাম। পূর্বের শাসনামল থেকে বর্তমান অবস্থার পার্থক্য কতটুকু ? পাশের মোটরসাইকেল আরোহী শঙ্কিত ভাবে বলে, চুপ থাকেন ভাই। এইসব কথা বললে আপনা কে ফ্যাসিবাদের দোসর বানিয়ে ট্যাগ দেয়া হবে। দেশে মব জাস্টিসের কথা ভুলে গেলেন?
ক্যাম্পাসে পৌছেঁ তমাদি কে ধ্রুব ফোন করে। তমাদি বলে, আমরা টিএসসির সামনে আছি। সোজা গোলচত্ত্বরে চলে আয়। ধ্রুব গিয়ে আড় চোখে তাকায়। তমাদির পাশে নিশি বসে আছে। নিশি ধ্রুবর ক্লাসমেট । সে আজ পড়েছে মেরুন পাড়ের অফ হোয়াইট রঙের সিল্কের শাড়ী । চুলগুলো খোলা । কানের পাশে গোলাপ ফুল । নিশির সাথে ধ্রুবর তিন বছর ধরে প্রেম চলছে। প্রথম বর্ষে পরিচয় পর্ব শেষ হবার পর ধ্রুব নিশি কে প্রশ্ন করেছিল, তোমার নাম কে রেখেছে? নিশি চোখ বড় বড় করে ধ্রুবর দিকে তাকিয়েছিল । ধ্রুব সেটা লক্ষ্য না করে বলেছিল, এরকম একটা উচ্ছল, প্রাণবন্ত মেয়ের নাম হওয়া উচিত জ্যোৎস্না । কথাটা শুনে নিশি একটু হাসে। কারো বেফাঁস কথা শুনে মানুষ যেমন হাসে। ধ্রুব কিছুটা অপ্রতিভ হয়েছিল । তারুণ্যের কল্পনার রঙ্গিন মুহূর্ত যতই লাগামহীন হোক , ধ্রুব এক সময় বুঝতে পারে, নিশি তাকে হাতে রেখেছে । ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার পাত্র না পাওয়া গেলে ধ্রুবর গলায় বরমাল্য জুটবে । নিশির বাবা সরকারি কর্মকর্তা । বাস্তব বুদ্ধি তার আছে।
নিশির মাধ্যমে তমাদির সাথে ধ্রুবর পরিচয়। উচ্চবিত্ত এবং স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত ঘরের এই ছেলে মেয়ে গুলো সাহিত্য , আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এমন কি দেশ ও সমাজ নিয়ে কথা বলে। তমাদি ধ্রুব কে প্রশ্ন করে, তোর আসতে দেরী হল? কোন সভায় গিয়েছিলি ? ধ্রুব বলে, সমাবেশ এড়িয়ে আসতে দেরী হল। দুই দলের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছে। ধ্রুবর কণ্ঠে অসন্তোষ টের পেয়ে তমাদি বলে, কেন? তোরা তো অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিস । বিজয়ী হয়েছিস । ধ্রুব বলে, আমরা একটা স্বৈরতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। জনগনের মাঝে ক্ষোভ ছিল। তারাও অংশ নিয়েছে। সরকার পরিবর্তন হয়েছে । ব্যাস ঐ পর্যন্ত। তমাদি টিপ্পনী কেটে বলে, তুই নিজেকে সুবিধা বঞ্চিত মনে করছিস? সচিবালয়ে ঘোরাফেরা কর। কিছু জুটে যেতে পারে।
নিশি বরাবরই রাজনীতি নিয়ে কথা বলে কম। বিষয়টা তার অপছন্দ। এখন প্রসঙ্গ পরিবর্তন করার জন্য বলল , মার্কজের নিঃসঙ্গতার একশ বছর বইটা পড়লাম । দারুণ লেগেছে। ধ্রুব বলে, আধুনিকতা বা উত্তর আধুনকতা মতাদর্শ গুলো পোস্ট ইনডাস্ট্রিয়াল দেশ ও সমাজের জন্য প্রযোজ্য । আমাদের বাংলাদেশের উ ৎপাদন পদ্ধতি পুঁজিবাদী নাকি আধা সামন্তবাদি আধা ঔপোনেবেশিক সে বিষয়ে বিতর্ক আছে। তাছাড়া এই মতাদর্শ গুলো পুঁজিবাদ কে বৈধতা দেয়। ভুরু কুচকে তমাদি বলে, সব আলোচনায় ঘুরে ফিরে মার্ক্সের কাছে যেতে হবে?
ধ্রুব বলে, কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন, তোমার পায়ে যদি জুতো না থাকে তবে তুমি নাগরিক অধিকার দিয়ে কি করবে? আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের জাতিগত বৈষম্য ,রাষ্ট্র ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা , এবং ২৫ শে মার্চ রাতে হানাদার বাহিনীর বর্বর আক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু সবকিছুর মূলে গণ মানুষের দাবী ছিল আর্থিক মুক্তি। সেই মুক্তি আসে নাই বলে, ৭৫ সালে ক্ষমতার পট পরিবর্তন ঘটেছে । নব্বই সালে গণ আন্দোলন হয়েছে । আর ২০২৪ সালে ঘটেছে গণ অভ্যুত্থান।
ধ্রুব যখন বাড়ি ফিরল তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে দেখে শুভ্র ড্রয়িং রুমে বসে আছে। শুভ্র ধ্রুবর বড় ভাই। পাশে ভাবী বসে আছে। ভাবীর মাথায় হিজাব। তিনি উৎফুল্ল ভাবে মা কে বলছেন, নারীদের ঘরের বাইরে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করার বিষয়টা আমি সমর্থন করি। বাব্বা সংসার সামলে চাকরি করা ভীষণ কঠিন । ধ্রুবর মনে পরে ভাবী বিয়ের আগে শাহবাগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। রাতের পর রাত বাইরে থেকে রাজনীতি করেছেন। বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে ইতিহাস বদলে যায় । স্বাধীনতার ঘোষক বা বয়ান সব বদলে যায় । সেক্ষেত্রে মানুষের মতাদর্শ পরিবর্তন হওয়া সাধারন বিষয় ।
বাবার মুখে আনন্দের ছাপ। শুভ্র বাড়ি আসলে তিনি খুশি হন। বড় ছেলের আগমন মানে কিছু আর্থিক প্রাপ্তি। বাবা একটা বেসরকারি কলেজের প্রফেসর ছিলেন। নব্বই দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন । শৈশবে ধ্রুব কে বাবা নিজের লেখা কবিতার চারটে লাইন আবৃত্তি করে শোনাতেন ,
জ্বলে ওঠে যদি আমাদের দেখে
স্বৈরাচারের ভুরু
একটি মিছিল শেষ হবে
আরেকটি হবে শুরু ।
কোন প্রকাশক বাবার লেখা কবিতাগুলো ছাপাতে রাজি হয়নি। তারা বলেছে পাঠকের কাছে এইসব কবিতার চাহিদা নাই। তবে টাকা দিলে তারা বই প্রকাশ করবে। বাবা টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করতে সম্মত হন নাই। সেই পিতা আজ টাকার জন্য ছেলের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে আছেন। ধ্রুবর মনে পড়ল , বাবা এখনো পেনশন পান নাই।
ধ্রুব হাত মুখ ধুয়ে সোফায় বসতেই বড় ভাই জিজ্ঞাসা করে, সারা দিন কোথায় ছিলি? ধ্রুব বলে, সকালে টিউশনি করতে গিয়েছিলাম । পরে ক্যাম্পাসে যাই । শুভ্র বলে, তোর অনার্স তো শেষ । রেজাল্টও হয়ে যাবে। সচিবালয়ে আমার কয়েক জন পরিচিত লোক আছে। সময় অনুকূল থাকতে থাকতে একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ধ্রুব নিরুত্তর। শুভ্র আবার বলে, সরকার পরিবর্তন হবার সাথে সাথে চেতনার ধরন পাল্টে যায় । আমরা চাকরিজীবী । আমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী সিধান্ত নিতে হবে।
ধ্রুব আস্তে আস্তে বলে, আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। বি সি এস পরীক্ষা দেব । তদবির করে চাকরি পাবার জন্য আমরা আন্দোলন করি নাই । রেগে ওঠে শুভ্র । ক্রদ্ধ কণ্ঠে বলে, আদর্শ ? তুই আমাকে নীতিকথা শেখাতে চাস? এই দেশে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রিক্সাচালক পর্যন্ত সবাই ঘুষ খায়। বাবা তো নব্বই দশকে আন্দোলন করেছে। স্বৈরাচার নিপাত যাক বলে শ্লোগান দিয়েছে । আজ তাকে প্রতিদিন টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে হয়। দাদার কথা মনে আছে? মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শেষ বয়েসে অসুস্থ অবস্থায় বলতেন, পাকিস্থান লড়কে লেঙ্গে এনেছিলাম। কিছু হল না। বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি রক্ত দিয়ে । কিছু পাই নাই। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বা ভাতা কিচ্ছু তার জোটে নাই। কারন, চুয়াত্তর সালে দুর্ভিক্ষের সময় তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবি রফিক আজাদের কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন, ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাব। মানুষ প্রতিবাদ করে। রাস্তায় নামে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম শেষ হয়ে যায় । কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তন হয় না। সবকিছু হয়ে যায় সিসিফাসের শ্রম ।

ছোট চাচা, সিসিফাসের শ্রম কি জিনিস? চমকে উঠে তাকায় ধ্রুব। ওর ঘরে টেবিলের পাশে শান্তনু দাঁড়িয়ে আছে। শান্তনুর বয়স দশ বছর। শুভ্র মিতু দম্পতির একমাত্র ছেলে। ড্রয়িং রুমে যখন ওরা কথা বলছিল তখন শান্তনু দাদির সাথে পাশের ঘরে ছিল। ওকে কখনো রাজনীতি বা এই ধরনের আলোচনায় থাকতে দেয়া হয় না। মিতু সবসময় কড়া নজর রাখে। শান্তনুর প্রশ্ন শুনে ধ্রুব একটু চুপ থেকে বলে, সিসিফাস হল গ্রিক পুরাণের চরিত্র। সে প্রতিদিন একটা প্রকাণ্ড পাথর পরিশ্রম করে পাহাড়ের চুড়ায় তুলে নিয়ে যাবার চেষ্টা করত। সন্ধ্যাবেলা কাজে ছিল বিরতি। সকালে এসে দেখত পাথর খণ্ড পূর্বের স্থানে অর্থাৎ নিচে পড়ে আছে। সে আবার পাথর টা উপরে তোলার চেষ্টা করত। অনন্ত কাল ধরে সিসিফাস কাজ টা করে চলেছে। পাথর খণ্ড উপরে তোলার প্রচেষ্টা হল বিপ্লব। আর পাহাড়ের চুড়ায় পোঁছানো হল মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা তথা মুক্তি প্রাপ্তি।
শান্তনু গম্ভীরভাবে প্রশ্ন করে, বড় দাদু, দাদাজান, তুমি তোমরা সবাই পণ্ড শ্রম করেছ? ধ্রুব শান্তনু কে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলে, বাবা নব্বই দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ তাদের অনুপ্রেরণার উৎস ছিল। আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ায় করেছি তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে। বিদ্রোহের পন্থা ভুল হতে পারে। উদ্দেশ্য চিরকাল মহৎ। মনে রাখিস, যত দিন ফেরাউনের দাপুটে অস্তিত্ত্ব থাকবে ততদিন মুসা আসবে। তোদের প্রজন্মকেও হয়ত ভিন্ন প্রেক্ষাপটে মানুষের মুক্তির জন্য লড়তে হবে। আমরা সেই যাত্রাপথ কিছুটা সুগম করে দিলাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

সাফল্য পায় যেন এই মহা জাগরণ বেঙ্গল রেনেসাঁয় ফ্রেঞ্চ রেভুলিউসন ।

০৩ মার্চ - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ৪০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ভূমিকম্প”
কবিতার বিষয় "ভূমিকম্প”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৫