গৃহদাহ

উষ্ণতা (জানুয়ারী ২০১৯)

মাহমুদুল হাসান
  • 0
  • ৪৫

ছেলের আশায় আশায় জাকির দম্পতির একে একে দশটি মেয়ে জন্ম নিল। মা বাপের মতই মেয়েগুলিও হয়েছে সুন্দরি এবং মেধাবী, সবাই লেখাপড়া করছে। জাকির খাদ্য বিভাগের বড় কর্মকর্তা, ময়মনসিংহ শহরে ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে বাসা। এজন্য সে মেয়েদেরকে বাইরে না পাঠিয়ে ময়মনসিংহেই ভর্তি করেছে। বড় মেয়ে জাকিরা আনন্দ মোহন কলেজে রসায়নে অনার্স করছে, মেজ মেয়ে কৃষি ভার্সিটিতে আর তৃতীয় মেয়ে ইন্টারে পড়ে। বড় তিন মেয়ে বিয়ের লায়েক। বাকিগুলোও একটার পর একটা বড় হয়ে উঠছে আর জাকির দম্পতির মাথায় যেনো একের পর এক হিমালয় চেপে আসছে। গিন্নি তাড়া দিল আর কর্তা বড় মেয়ের বিয়ের জন্য তৎপর হল। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের বলে বেড়াতে লাগল, ‘আল্লাহর রহমতে আমার মেয়েগুলি লক্ষী, যেমন সুন্দরী তেমনি মেধাবী ও শান্তশিষ্ট। একেকটা যেন সোনার প্রতিমা, ছেলেটেলে দেইখেন।
সবাই কম বেশি মনোযোগ দিল, আলাপ-আলোচনা চলতে লাগলো। কিন্তু পাত্রপক্ষ যখনই শুনে দশ মেয়ে তখনই তারা সন্তুষ্ট হয়ে যায়, আর অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। কেউ কেউ না জেনে আসে কিন্তু মহল্লায় এসে যখন শুনে দশ মেয়ে তখন আর বাসায় গিয়ে জাকিরের ডাইনিং টেবিলের খরচটা বাড়াতে তাদের মন সায় দেয় না। কোন কোন পাত্রপক্ষ কারো কান মন্ত্রণা না নিয়ে সরাসরি বাসায় ঢুকে কিন্তু পঙ্গপাল দেখে তারা পালানোর পথ খুঁজে।
কেউ কেউ হাসিমুখে খাওয়া-দাওয়া করে গুমরাহ মুখে বলে ‘ঠিক আছে বেয়াই বা বিয়ান সাহেব, আপনার তো সবকিছুই ভালো মেয়েরাও সুন্দরী শিক্ষিতা, এমন মেয়ে দেখে অপছন্দের কিছু নাই। আমরা বাসায় গিয়ে পরামর্শ করে আপনাকে সিদ্ধান্ত জানাব’ বলে তারা এত দ্রুততার সাথে দৌড়ে বেরিয়ে যায় যেন এই বুঝি পঙ্গপাল আক্রমণ করলো। তখন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জাকিরের বিশ্বাসটাও দৌড়ের উপর ওঠে। তবুও তো ধন্য আশা কুহকিনী- নিরাশ হতে নেই। সে আশায় বুক বাঁধে কিন্তু আশার সময় পেরিয়ে যায়, সিদ্ধান্ত আসে না। অবশেষে সে লাজ্ব- লজ্জার মাথা খেয়ে মহামূল্যবান সিদ্ধান্তটা জানার জন্য ঘটক পাঠায়।
ঘটক সিদ্ধান্ত নিয়ে আসে পঙ্গপালের ভিড়ে কেউ আসতে রাজি নয়। জাকির দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, প্রতিটা দীর্ঘশ্বাসে তার হৃদপিণ্ড থেকে এক কেজি করে রক্ত শুকিয়ে যেতে থাকে, ত্বক কুঁচকে আসে, দৈনিক দশটা করে চুল পাকতে থাকে, সে বার্ধক্যের দিকে এগোতে থাকে। এভাবে কয়েকদিন পরপর বিয়ের আলাপ হয়, জোরা লাগে আর ভাঙ্গে। এরকম জোড়া ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে চলতে লাগলো কিন্তু কোনটাই আর বাজলো না। এখানে এলেই ছেলের বাবা- মায়েরা হঠাৎ সচেতন হয়ে যায়, ছেলের মত অমূল্য সম্পদ জন্মদানের গৌরবটা যেন তারা সহসা উপলব্ধি করতে পারে। আর সেই অমূল্য সম্পদ তারা যেনতেন জায়গায় বিকোতে রাজি নয়।
দেখতে দেখতে মেয়েগুলি লাউ ডগার মত বেড়ে উঠছে, কলমি লতার মত লতিয়ে উঠছে। এখন জোবেদা বেগমের সামনে প্রায় আধা ডজন যুবতী মেয়ে ঘুরে বেড়ায়। জোবেদা এদের প্রতি তাকায় আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, ধীরে ধীরে তার মাথা জ্বলন্ত উনুনের মতো উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকে। সময় গড়াতে থাকে কিন্তু কোনো পাত্র শিকার তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এক সময় জোবেদা বেগমের মাথা সত্যি সত্যি গ্যাস চুল্লিতে পরিণত হল, সে নেছারাল স্বভাব-প্রকৃতি হারিয়ে ফেলল, সব সময় উত্তপ্ত হয়ে থাকে। কারণে অকারণে মেয়েদেরকে মারে গালাগালি করে ‘পোড়ার মুখিরা মরতে পারিস না, যম তোদেরকে চোখে দেখে না, ছেলেরাও তোদেরকে চোখে দেখে না যমও দেখেনা এখন কোথায় যাবি, নদীতে ডুবে মর গিয়ে।
বেচারা জাকিরের ওপরও সে শুধু শুধুই হম্বিতম্বি করে, গালাগাল করে, মেয়েদের বিয়ে না হওয়ার রাগটা স্বামীর উপর ঢালে। কিন্তু জাকির এখন একেবারে মাটি হয়ে গেছে। সে জানে স্ত্রীর ভেতরের বাষ্পটা তার ওপর আর মেয়েদের উপর বাষ্পায়িত করতে পারছে বলে রক্ষে, নয়তো কবেই পাগল হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যেত। এজন্য সে বউকে কিচ্ছু না বলে মাটির মত সয়ে যায়।
ইদানিং একান্ত অপারগ হয়ে জোবেদা বেগম একটা নতুন গালি আমদানি করেছে। কথায় কথায় মেয়েদেরকে মারে আর গালি দেয়, ‘আজকালকার মেয়েরা কত চালাক কত টেলেন্ট, মা-বাপের দুর্ভোগ পোহাতে হয় না নিজেরাই পছন্দ টসন্দ করে বিয়ে করে সংসার পাতে। শিক্ষিতা মেয়েরা মা বাপের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে না। কিন্তু এই পোড়ারমুখীরা এমনই অথর্ব যে একটা লাইন টাইন পর্যন্ত করার মুরোদ নাই। মরন ছাড়া এগুলির হাত থেকে বাচার উপায় নাই। মায়ের কথা শুনে মেয়েরা কষ্ট পায়, নীরবে-নিভৃতে চোখের জল ফেলে। জাকিরা বুঝে কতটা অপারগ হয়ে মা এমন অশ্লিল কথা বলতে পারে- যে মা কোনদিন ছেলেদের সাথে মুখের কথাটাও বলতে দিত না। প্রেমের কথা শুনলে ঘৃণায় ছিটিয়ে উঠত, আজ সেই কিনা প্রেমের উপদেশ দিচ্ছে।
জাকিরা মায়ের অসহায়ত্বটা বুঝতে পারে, মায়ের কষ্টে সে কাঁদে, একান্ত অসহায় বোধ করে। নিজের জন্য সে চিন্তা করে না, বিয়ের প্রতি তার বিতৃষ্ণা ধরে গেছে। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চিরকুমারী থাকবে, একটা চাকরি বাকরি করে জীবন চালাবে কিন্তু বাবা-মা? তারা তো এটা মানবে না, বিশেষত নয়টি ছোট বোন তার ওপরই এদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তার বিয়ে না হলে বাকীগুলিরও বিয়ে হবে না। কাজেই তার বিয়ে হতেই হবে, আর নিজের চিন্তা নিজেই করতে হবে। পথে-ঘাটে প্রেম প্রেম খেলা করে পাত্র শিকার করতে হবে। এবার সে চেষ্টায় নামল কিন্তু কী করে সম্ভব? সে হলো ভয়ংকর লাজুক, আজীবন ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে, জীবনে প্রেম তো দূরের কথা কোন ছেলের সাথে ঠিকমত কথাও বলেনি। কিন্তু পিছালে তো চলবে না, একটা কিছু করতেই হবে। সে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে মাঠে নামল।

কিছুদিন পর জাকিরা কলেজ থেকে এসে হাসিমুখে মাকে বলল ‘আম্মা কাল দু’জন মহিলা আসবে। সন্তানের জীবনের প্রথম উপার্জন মায়ের হাতে দিলে মা যেমন প্রফুল্ল হয়- জোবেদা বেগমের মনটাও তেমনি প্রফুল্ল হয়ে উঠল, আনন্দে তার মুখটা চকচক করছে। সে বুঝতে পারছে এটা তার মেয়ের প্রথম কৃতিত্ব। তবুও জিজ্ঞেস করল ‘তোকে দেখতে? – হু। - ছেলে কি করে? - আনন্দমোহন কলেজ থেকে গণিতে মাষ্টার্স করেছে’ বলে লজ্জিত ও গৌরবময় ভঙ্গিতে সে চলে গেল।
মা ব্যস্ত হয়ে উঠল, প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করাল, বাসা সাফ সুতরোর দিকে মনোযোগ দিল, বিছানাপত্র পরিষ্কার করল। আগের ভুল সে আর করতে রাজি নয়। পরদিন সময়মতো প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম মেয়েকে পরিবেশনার জন্য রেখে বাকিগুলোকে এক রুমে ঢোকাল। পিচ্চিগুলিকে বড় মেয়েদের জিম্মায় দিয়ে বলল ‘সাবধান থাকবি, এরা যেন কান্নাকাটি না করে আওয়াজ না করে, মেহমানরা যেন তোদেরকে কোন ভাবেই টের না পায়। তারপর বাকি তিন বোন নতুন দামি জমকালো পোশাক পড়ে রেডি হয়ে বসে থাকল।
দুপুর নাগাদ ছেলের মা রাহেলা খাতুন ও ছোট বোন রিজিয়া খাতুন বাসায় এসে উপস্থিত হল। বাসা দেখে রাহেলা খাতুনের পছন্দ হলো না, প্রাচীন আমলের একতলা বাড়ি, অনেকগুলি রুম। তিনি মনে করেছিলেন চৌদ্দ তলা বাসা হবে, তার ছেলে সবটা না হলেও অন্তত অর্ধেকটার মালিক হবে। কিন্তু এই ভাঙাচোরা বাসা দেখে তার মন ভেঙ্গে গেল। জোবেদা বেগম তাদেরকে সবকিছু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখাতে লাগল। বাসা দেখানোর কাজ শেষ করে বাইরে নিয়ে গিয়ে বলল ‘ওই যে বাউন্ডারি পর্যন্ত সবটা আমাদের জমি। রাহেলা খাতুনের চোখ এবার কপালে উঠল ‘এ বিশাল এরিয়া সবটা আপনাদের? ‘হাঁ আল্লাহর রহমতে আমাদের’ জোবেদা হাসিমুখে উত্তর দিল। সাথে সাথে রাহেলা অংকটা কষে ফেলল ‘দেখা যাচ্ছে তিনটা মেয়ে। তাহলে আমার ছেলে এই বিশাল জমিটার তিন ভাগের একভাগ পাবে। তখন আর শশুরের বাসার দরকার কি, ছেলে নিজেই এখানে বাসা টাসা করে ভাড়া টারা দিতে পারবে, রাজার হালে তার জীবনটা কেটে যাবে।
মেয়েও সুন্দরী ও শিক্ষিতা, বিশাল সম্পদও পাওয়া যাচ্ছে। নিশ্চয়ই তার ছেলে ভাগ্যবান। সহসা তার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল, আনন্দাতিশয্যে প্রগলভতা শুরু করল ‘আরে বিয়াইন শুনেন, আজকালকার ছেলেমেয়েরা কত আধুনিক আর কত পাকা, তারা মা-বাপের ওপর কোন চাপ দেয় না, নিজেরা নিজেরাই পছন্দ করে নেয়। আসলে তারা তো শিক্ষিত বুদ্ধিমান আধুনিক ও ট্যালেন্ট, তাদের রুচিও উন্নত। আমরা হলাম ভাই ওল্ড মডেলের প্রাচীন মানুষ, আমাদের রুচিও ওল্ড। তাই আমাদের রুচির সাথে তাদের রুচি মিলবে কেন? এজন্যই ভাই, আমি তাদের পছন্দকে সম্মান করি, আমাদের উচিত তাদের পছন্দের স্বীকৃতি দেয়া, আপনি কি বলেন? প্রশ্নটা সে প্রতিপক্ষের দিকে ছুঁড়ে দিল বিয়ে সম্পর্কে তাদের মতামত জানার জন্য।
জুবেদা বেগম বললো ‘ঠিকই বলেছেন বিয়াইন, তাদের পছন্দের স্বীকৃতি না দিলে পরবর্তীতে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে তারা অভিবাবকদের দোষারোপ করবে। রাহেলা খাতুন বুঝল প্রতিপক্ষের সম্মতি আছে। সে আনন্দে আরো আত্মহারা হয়ে গেল, অবিরত হাসছে আর এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে। রিজিয়া উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে, কখন জানি থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে আর তার মায়ের আসল চেহারাটাও প্রকাশ পেয়ে যায়। তাই সে মাকে তাড়া দিল ‘মা দেখলেই তো আর কত এবার চল। কিন্তু মা অতি আনন্দে হাসতে হাসতে রুমে রুমে ঘুরে ফিরে দেখতে লাগল।
তবে বন্ধ দরজার কাছে যেতেই জুবেদা বেগমের দম আটকে গেল, তাড়াতাড়ি রাহেলার হাত ধরে বলল ‘বেয়াইন চলেন তো আগে চারটে ডাল ভাত মুখে দিয়ে তারপর দেখাশোনা করেন’ বলে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। রাহেলা খাতুন যেতে যেতে বলল, আরে খাবোই তো, সবে তো মাত্র শুরু, প্রতিদিন আসব প্রতিদিন খাব, খেয়ে খেয়ে আপনাকে ফতুর করে তুলব। তারপর হাসতে হাসতে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসল। আইটেম দেখে বুঝল তার বেয়াই আসলেই বড় লোক এবং ভদ্রলোক। আত্মীয়তা হলে আশ মিটিয়ে খাওয়া যাবে। তারা খাওয়া শুরু করল।
ওদিকে পিচ্চিগুলি অনেকক্ষণ ধরে একই রুমে আবদ্ধ থেকে তাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে, গুনগুনিয়ে কান্না শুরু করল। বড়রা থামাতে চায় কিন্তু বাচ্চাগুলি আরো জোরে কাঁদে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমটাতে হৈ চৈ ও কান্নার রুল পড়ে গেল। শব্দ পেয়ে রাহেলা খাতুন সন্ধিগ্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করল ‘কান্নার আওয়াজ আসে কোত্থেকে, বিয়াই আপনার কয় পোলাপান? জাকির ভাবল পোলাপানের সংখ্যা সম্পর্কে এমনিতেই মিথ্যে বলা যায় না, তার ওপর ছেলে মেয়ে পরস্পরকে পসন্দ করে, বুঝা যাচ্ছে বিয়ে পাকাপাকি, ছেলের মাও সম্মত। কাজেই এখন আর সত্য বলতে কোনো সমস্যা নাই।
সে কৌতুকের সুরে বলল ‘আরে বিয়াইন আল্লায় যারে দেয় ছাপ্পর মাইর্যা দেয়, আল্লাহ আমারে আদর কইর্যাআ দশটা জান্নাত দিছেন। রাহেলা মাত্র লোকমাটা মুখে দিতে যাচ্ছে কিন্তু দিল না, মুখটা হা করেই রইলো, কিছুক্ষণ বজ্রাহতের ন্যায় হতভম্ব হয়ে বসে রইল। তারপর সম্বিত ফিরে পেয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বলল ‘তার মানে দশটা মেয়ে? জাকির নিজের বোকামির কারনে ততোধিক হতভম্ব হয়ে রাহেলার মুখের দিকে বিষন্ন হয়ে তাকিয়ে রইল। নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য ঠোঁট কামড়াল কিন্তু কোন উত্তর দিল না। জোবেদা ক্রোধে বিস্ফারিত চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে।
দেরিতে ঘুম থেকে উঠে জরুরি কাজের জন্য মানুষ যেভাবে লাফিয়ে উঠে রাহেলাও তেমনি লাফিয়ে উঠে হাত ধুতে ধুতে বলল ‘সর্বনাশ আমার তো খেয়ালই ছিল না, বাসায় জরুরি কাজ আছে এখনই না গেলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে’ বলে সে মেয়েকে তাড়া দিল। কিন্তু মেয়ে গম্ভীরভাবে নতমুখী হয়ে খেয়েই যাচ্ছে, মেয়ের বোকামি দেখে মায়ের পিত্তি জ্বলে গেল। প্রচন্ড রাগে গৃহস্বামীর অগোচরে মেয়ের পাঁজরে গুতা মেরে বলল ‘তাড়াতাড়ি উঠ। মেয়ে বুঝলো এখন না উঠলে কপালে দুঃখ আছে। তারপর রাহেলা মেয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল ‘আসি বিয়াইন পরে আলাপ হবে, সময়মতো আসবো ইনশাল্লাহ। তারা বেড়িয়ে গেলে জুবেদা আর উঠতে পারল না, চেয়ারের উপর তার দেহটা গড়িয়ে পড়ল। জাকির হোসেন কোন রকমে টলতে টলতে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ল। মেয়েরা নিজ নিজ রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগল। ওদিকে পঙ্গপাল দীর্ঘসময় পর মুক্তি পেয়ে বাসাটা মাথায় তুলে নিল।
রিকশায় যেতে যেতে মেয়ে মাকে বলল ‘আম্মা কাজটা কিন্তু ভালো হয়নি, মেয়েটা সুন্দরী ও শিক্ষিতা। অবস্থা ব্যবস্থাও ভালো, লোকগুলোও ভালো। এছাড়া তারা তো একে অন্যকে পছন্দ করে, কাজটা হলেই তো ভালো হতো। ঢাস করে মেয়ের গালে এক চড় মেরে রাহেলা চেঁচিয়ে উঠল ‘আসলে তোরা ভাই বোন দুইটাই বাপের মতো ভ্যাবলা আঁতেল হয়েছিস। এখন আমি বুঝতে পারছি তোদের সব কিছুই জানা, তিনজন মিলে ষড়যন্ত্র করে আমাকে এখানে পাঠিয়েছিস। আজ বাসায় যাই তোদের বিচার না করলে আমার মনের খেদ মিটবে না। তোদের তিন বাপ বেটা বেটিকে যদি আমি বাসা থেকে বের করে না দেই তাহলে আমি লইত্যা (লতিফ) তালুকদারের মেয়ে না।
মেয়ে মুচকি হেসে বললো ‘ঠিকই তো, তুমি কোন তালুকদারের মেয়ে না। মা রক্ত চোখে মেয়ের দিকে তাকাল। মেয়ে ভড়কে গিয়ে বললো ‘না মানে আমি বলতে চাচ্ছি তুমি তো আমার মেয়ে। এবার মায়ের রাগ পানি হলো, তারপর শান্ত গলায় বলল ‘আরে বোকা শুন ঐ লোকের দশটা মেয়ে আর এই মেয়েটাই বড়। ওকে বিয়ে করানোর অর্থ হলো রাসেলকে এই পরিবারে বিক্রি করে দেয়া। নয়টি শালির দেখাশুনা, বিয়ে-শাদী নাইয়র ইত্যাদি সকল দায়িত্ব আমার ছেলেকে পালন করতে হবে। তারপর মরা পর্যন্ত বুড়া বুড়িকে টানতে হবে। তখন আমার ছেলের জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে, জীবনে না পারবে সুখের মুখ দেখতে আর না পারবে উন্নতি করতে। সবকিছু শালীদের পেছনে ঢালতে হবে। ভাবতেও অবাক লাগে, জেনে শুনে আমার ছেলে এমন বুকামি কাজ কি করে করতে পারে, আর তুই ও তোর বাপ এটা কি করে মেনে নিলি? তাও আবার আমার কাছে গোপন করে আমাকেই আসতে বাধ্য করলি। ঠিক আছে আগে বাসায় যাই তারপর হবে বিচার।
রাহেলা বেগম এমনিতেই উষ্ণ স্বভাবের মানুষ। তার উপর বাপের জমিতে বাসা করার সুবাদে তার মেজাজ সর্বদা সপ্তমে থাকে। তার দাপটে স্বামী ও সন্তানরা সর্বদা তটস্ত থাকে। মায়ের কড়া শাসনে ছেলে মেয়ে দুজন ক্রমে ক্রমে মায়ের কাছ থেকে দূরে সরতে থাকে আর বাপের ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। এক সময় দেখা গেল একই ছাদের নিচে বিপরীতমুখী দুইটা পক্ষ তৈরি হয়ে গেল। বাপ বেটা বেটি মিলে এক পক্ষ, আর গৃহকর্ত্রী একা এক পক্ষ। কিন্তু একা হলে কি হবে তার দোর্দণ্ড প্রতাপ আর অহংকারের সামনে প্রতিপক্ষরা নিরেট জি হুজুরী মুসাহেবে পরিণত হলো। কথায় কথায় তিনি স্বামী সন্তানকে তার কোমরের জোর স্মরণ করিয়ে দেন- বাসাটা তার জমিটা তার বাপের।
নিতান্ত অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে বাপ বেটা বেটির জোট গড়ে ওঠে। কর্ত্রির উষ্ণতা থেকে বাঁচতে একান্ত অসহায় হয়ে কর্তা বেটা বেটির আশ্রয় গ্রহণ করে, আবার বেটা বেটিও মায়ের দাবানল থেকে বাঁচতে বাপের ডানার নিচে আশ্রয় নেয়। প্রথমত যদিও অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে তাদের জোটটা গড়ে উঠেছিল কিন্তু কালে তারা বন্ধুতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এখন তারা শুধু বাপ বেটা বেটি নয়, নিরেট বন্ধু, খেলার সাথী আড্ডার সাথী।

মাকে কন্যা দেখতে বিদায় করে দিয়ে রাসেল বাপকে জড়িয়ে ধরে একটা চুম্বন করে চেঁচিয়ে উঠলো ‘ওমঃ আব্বা, যা একখান কাজ করলা এক্বেবারে সহোদর বাপের মতো কাজটা করলা। তোমাকে একখান পুরস্কার দিতে হবে। রফিক সাব বলল ‘দুঃ বোকা, তুই তো দেখছি তোর মায়ের চেয়েও বোকা। বাপ কখনো সহোদর আর পরোদর হয় নাকি? বাপ হয় সৎ অথবা---- সে চিন্তা করল কিন্তু পরিভাষাটা খুঁজে পেল না। ছেলেকে প্রশ্ন করল, আচ্ছা মায়ের সতীন যদি সৎ মা হয় আর বাপের সতীন যদি সৎ বাপ হয় তাহলে আসল মা বাপকে কি বলা হবে? ছেলে বলল, ‘কেন, অসৎ মা অসৎ বাপ। এবার বাপ শিক্ষিত ছেলের যথার্থ উত্তর শুনে গর্ব বোধ করল। তারপর বলল, তাহলে আমি তোর কোন ধরনের বাপ? - আরে দুঃ তুমি বাপ হতে চাও কোন দুঃখে, তুমি আমার বন্ধু।
বাপ বলল ‘আচ্ছা যা ঠিক আছে তোর মা যখন বাসায় থাকে তখন আমরা বাপ বেটা কিন্তু বাসায় না থাকলে বন্ধু। এখন বল কি পুরস্কার দিবি? - তাই তো ভাবছি কি পুরস্কারটা দেয়া যায়। - আরে শুন এত ভাবতে হবে না, তোর শ্বশুরের বাসা তো ব্রহ্মপুত্র নদীর কিনারে, আমাকে প্রতিদিন তোর শাশুড়িকে নিয়ে নদীর ধারে একটু হাঁটাহাঁটির সুযোগ দিস, আর কোন পুরস্কার দিতে হবে না। - না না বুড়া বয়সে এসব ভালো নয়, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তা ছাড়া লোকে মন্দ বলবে, তার উপর আম্মার বাঁশ তো আছেই। বাপ চেঁচিয়ে উঠলো ‘আরে রাখ তোর বুড়া, আমি কি বুড়া হয়ে গেছে নাকি? একটা বিয়ে করিয়ে দেখ তোর মত ছেলে কয়টা জন্মাতে পারি। এভাবে বাপ বেটা আড্ডায় মেতে উঠল। হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে এক সময় বাপ উঠে গিয়ে নিজ হাতে কফি বানিয়ে এনে এক কাপ ছেলেকে দিল আরেক কাপ নিজে নিল।
তারপর আবার আলাপে মশগুল হল। বাপ বলল, ‘কিন্তু তোর মা যখন শুনতে পারবে মেয়েরা দশ বোন তখন তার মুখের অবস্থাটা নিশ্চয় দেখার মত হবে’ বলে সে অট্টহাসি দিয়ে উঠলো কিন্তু হাসির মধ্যেই তার মুখটা আটকে গেল, চেহারাটা বিকৃত হয়ে গেল। কারন সেই মুখটা তার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে, দাঁত খিঁচিয়ে আছে। রফিক সাব হা করা মুখটা বন্ধ করে লাফিয়ে উঠে দরজার দিকে দৌড়ল। রাহেলা খাতুন খপ করে তার জামা ধরে বলল ‘মুখটা না দেখে আগেই যাচ্ছো কোথায়? ‘আরে ছাড় কাপড় নষ্ট হয়ে গেলো তো’ বলে সে জামা ফসকে বাথরুমের দিকে দৌড় দিল।
এবার রাহেলা ছেলের উপর হামলে পড়ল ‘হারামজাদা আক্বেলের ঢেকি, খাইয়ে-দাইয়ে সিয়ান করছি, শিক্ষিত বানাইছি দশ বোনের গোলামী করার জন্য, রাম ছাগল কোথাকার বাপের মতো গাধা হইছস? আমি না থাকলে তোর বাপের গাছ তলায়ও ঠাই হত না, কুরা খেয়েও দিন পার করতে পারতো না। তিন টাকা মাইনের কেরানি রাজ প্রাসাদে থাকার ভাগ্য জুটত না। আসল কথা না জানিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র করে পাঠালি কেন, যেখানে দশটা ধেমরি চেমড়ি আছে সেখানে কোন আক্কেলে আমাকে পাঠালি’ বলে ছেলেকে উত্তম-মধ্যম শুরু করল।
রফিক সাব বাথরুমে দাঁড়িয়ে কাঁপছে আর কান খাড়া করে শুনছে। গ্রাম অঞ্চলের মেয়েরা ঢেকিতে চিড়া কুটলে যেমন ধুপ ধুপ শব্দ হয় তেমনি শব্দ আর ছেলের চিৎকার ভেসে আসছে ‘ও বাবা গো বাঁচাও, ও আব্বা গো বাচাও, গেলাম গো মরলাম গো-- রফিক সাব দৌড়ে এসে স্ত্রীর হাত ধরে বলল ‘আরে আরে ছেলেটাকে মেরে ফেলবে নাকি, ও বিয়ে না করতে চাইলে এত জোরাজুরির কি দরকার, আমি তো আছিই আমাকে করাও।
রাহেলা থমকে দাঁড়াল, অগ্নিদৃষ্টি হানল, তারপর খপ করে এক হাতে বাপের গর্দান অন্য হাতে ছেলের গর্দান ধরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল, বের হও এখনই আমার বাসা থেকে বের হও, এটা কারো পিন্ডির কামাই না এটা আমার বাপের বাসা, বাপ আমাকে লেখাপড়া করে দিয়ে গেছেন। আমার বাসায় কোন ভ্যাবলা চ্যাবলার জায়গা নাই। এখন থেকে বাইরে থাকতে হবে, ব্যাংকে কাজ করে বাপ বেটা হোটেলে খেয়ে ফুটপাতে পড়ে থাকবে’ বলে ঘাড় ধরে জোরে ধাক্কা মেরে এগিয়ে দিয়ে হনহন করে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।
ছেলে করুন দৃষ্টিতে বাপের মুখের দিকে তাকাল। বাপ বলল ‘কি আর করা যাবে মহারানী ভিক্টোরিয়ার হুকুম তো আর অমান্য করতে পারবি না, চল দেখি ভাগ্যের সন্ধানে নামি। তারা বাইরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। রিজিয়া আগেই জানে আজ বাসায় ভানু মতির খেল জমবে, তাই সে নিজের রুমে গিয়ে শ্রুতি বাইরে পাঠিয়ে দৃষ্টি বইয়ের পাতায় গেথে দিয়ে চুপটি মেরে বসে রইল। বাপ বেটা গেইটের কাছে যাবার আগেই রাহেলা দৌড়ে গিয়ে গেইটে তালা লাগিয়ে বললো ‘কোথাও যাওয়া যাবে না। বাইরে গিয়ে আমার বদনাম করার জন্য আর কেলেঙ্কারি করার জন্য? সারাজীবন ওই বারান্দায় পড়ে থাকতে হবে’ বলে ঝংকার মেরে চলে গেল।
আসলে এটা তার কমন নিয়ম, মান-অভিমানের সময় সে এই বুলিটা আওড়ায়। যদিও বাপ ব্যাটাকে কোনদিন বাইরেও রাত কাটাতে হয়নি আর তারা কোন বদনাম বা কেলেঙ্কারিও করেনি। ছেলে বাপের মুখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ‘আব্বা ঘরেও জায়গা নাই বাইরেও জায়গা নাই এখন তো দেখছি স্বর্গে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই। বাপ বলল ‘দূঃ বোকা এ বয়সে এখনি স্বর্গে যাবি কেন, বয়স হলে তো যাবিই আপাতত স্বর্গের চিন্তা বাদ দিয়ে মর্তের চিন্তা কর। চল বারান্দায় গিয়ে বসি।
তারপর দুটো চেয়ার টেনে নিয়ে গিয়ে তারা বারান্দার এক কোনায় বসে আলাপে লিপ্ত হল। বাপ বলল ‘আসলে কি জানিস তুইও তোর মায়ের মতো গর্ধভ, নইলে দশটা মেয়ের ঘরে তাও আবার বড় মেয়ের সাথে প্রেম করতে যাবি কোন দুঃখে, বোকা না হলে কেউ একপাল পেত্নীর বুঝা বহন করতে যায়? আমার মত বুদ্ধিমান হতে পারলি না, এই যে দেখ লইত্যা তালুকদারের মতো বড় লোকের মেয়ের সাথে প্রেম করেছিলাম বলেই তো আজ এত সুন্দর বাসায় থাকতে পারছিস। নইলে আমার মত তিন টাকার ব্যাংক কেরানির পক্ষে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে এত দামি জায়গা কিনে বাসা করা কি সম্ভব ছিল?
ছেলে রেগে উঠল ‘তুমিও আম্মার বড়াই শুনে শুনে আবার মিছা কথা শুরু করলে, আমার নানা কোন তালুকদারও ছিলেন না বড়লোকও ছিলেন না সাধারণ মানুষ ছিলেন। তাঁর দুইটা মাত্র মেয়ে, বাড়ীটা ছোট খালাকে দিয়ে গেছেন আর এই জায়গাটা আম্মাকে দিয়ে গেছেন, এটুকুই ছিল তার সম্পদ। আর তুমি কোন প্রেম টেম করনি দাদা তোমাকে বিয়ে করিয়ে ছিলেন। বাপ গলা টেনে বললো ‘না মানে প্রেমটা ঠিকই হয়েছিল তবে বিয়ের পর, এই আর কি। আচ্ছা বাদ দে, এখন বল দুনিয়াতে এত মেয়ে থাকতে তুই কন্যা কারখানায় প্রেম করতে গেলি কেন?
ছেলে হেসে বলল ‘তুমিতো দেখছি আম্মার চেয়েও বোকা। তুমি তো জানোই যে মেয়েদের দেখলে আমার হাঁটু কাঁপে শরীর ঘেমে যায় গলা শুকিয়ে যায় পেটে পানি না থাকলেও পেশাবের বেগ বেড়ে যায়। একবার মনে আছে গ্রন্থমেলায় গেলাম, তখন ঐশ্বরিয়া মার্কা ইয়া পেল্লায় চেন্নাই সুন্দরী একটা মেয়েকে দেখিয়ে তুমি বললে ‘দেখত মেয়েটাকে চোখে বাজে কিনা? আমি দেখলাম চোখেও বাজল। তখন আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললে ‘যা লাইন লাগা গিয়ে তাহলে তোদের মাধ্যমে আমি মেয়েটার মা পর্যন্ত পৌঁছতে পারব, তখন বাপ বেটা দুজনেরই একটা গতি হবে, তার মাও নিশ্চয় সুন্দরী হবে।
তারপর আমাকে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দিলে আর সাথে সাথে শুরু হল আমার হাঁটুর কাঁপুনি, প্যান্ট ভিজে যেতে লাগল। তুমি আমার হাঁটু চেপে ধরে বললে ‘আরে রাখ রাখ কি করিস কি করিস কাপড় নষ্ট করিস না, তোর আর প্রেম করতে হবে না যা করার আমিই করব, চল বাসায় চল। এই হলো আমার অবস্থা, তাহলে আমি প্রেম করেছি এ কথা বল কেমনে? বাপ বিস্মিত সুরে বলল ‘তাহলে প্রেমটা হলো কি করে? ছেলে বলল ‘তুমি তো জানোই গণিতের মত একটা কাঠ খোট্টা বিষয় নিয়ে পড়ে থেকে আমি দুনিয়ার কিছুই জানতাম না বুঝতাম না। ছেলে- মেয়েরা একসাথে আড্ডা মারে, প্রেম করে আরো কত কিছু করে কিন্তু আমি আমার মত একাকি পরে থাকতাম। কোন ছেলে বা মেয়ের কাছেও ঘেষতাম না। আমার লজ্জা লাগতো ভয়ও পেতাম।
ঐ মেয়েটাও ছিল আমার মতই, কোন ছেলে তো দূরের কথা মেয়েদের আড্ডায়ও যেত না। ওকে দেখতাম কয়েকটা বোরকাওয়ালী মেয়ের সাথে আনাগোনা করত। হঠাৎ একদিন সে আমাকে বলল ‘রাসেল ভাইয়া আপনিও বুঝি আমার মত লাজুক, আমারও এসব আড্ডা ফাড্ডা ঘোরাফেরা ভাল্লাগেনা। আপনারও বন্ধু নাই আমারও বন্ধু নাই চলেন অবসর সময়টা আমরা আলাপ করে কাটাই। এরপর থেকে মেয়েটাই উপযাচক হয়ে আমার সাথে কথা বলতো, যা বলার সেই বলতো আমার মুখে কথা ফুটত না, আমি শুধু ভ্যাবলার মত গলা টানতাম। মাঝে মাঝে সে আমাকে এটা ওটা কিনে খাওয়াত কিন্তু নিজে খেত না। বুঝতাম মেয়েটা হয় হিসাবি নয়তো দরিদ্র ঘরের সন্তান। নিজের হাত খরচার টাকা থেকে সে আমাকে খাওয়াত।
ততদিনে আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে এসেছি মেয়েদের সম্পর্কে আমার আড়ষ্টতা কেটে যাচ্ছে। একদিন তাকে বললাম ‘চলো না নদীর ধারে ঘুরতে যাই। সে লজ্জিত ভাবে বলল ‘এখন না বিয়ের পরে। এরপর থেকে সে আমাকে বিয়ের জন্য তাগাদা দিতে লাগলো আর আমিও এসে তোমাকে বলতাম। তারপর যা করার তো তুমিই করলে। আসলে কি জানো মেয়েটা খুবই ভালো, ওর জন্য আমার মনটা পোড়ায়।
বাপ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো, কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসে থেকে বললো, কি করবি বল এই মেয়ের সাথে তো তোর বিয়ের কোন উপায় দেখছি না। এই বিয়ে তোর মা তো মেনে নিবেই না, এমনকি আমরা চাইলেও নিশ্চিত জানিস তোকে আর আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে এবং মেয়েটাও এই বাসায় এসে থাকতে পারবে না। কাজেই অগত্যা এই মেয়ের চিন্তা বাদ দে।
রাসেল বাপের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে বাইরে তাকায়, ঘনান্ধকার, সেই আঁধারের পর্দা ভেদ করে তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা করুন ও বিষন্ন মুখ- যেখানে অসহায়ত্বের মিনতি ঝরে পড়ছে। তার চোখ থেকে দু'ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। জীবনে তার কোন আশা- আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়নি, মায়ের উষ্ণতায় তার স্বপ্নের মুকুলগুলি বরফের মত গলে গলে নিঃশেষ হয়ে যায়।
সমাপ্ত

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

প্রকৃতির উষ্ণতাকে মানুষ বৈদ্যুতিক পাখা এয়ারকন্ডিশন ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছে। মস্তিষ্কের উষ্ণতার জন্য পাবনা গেলেই সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু ব্যক্তি, পরিবার ও স্বভাবের উষ্ণতার কোন প্রতিষেধক নাই। যেমন জাকির দম্পতির দশটি মেয়ের বিয়ে শাদী ও আনুষঙ্গিক চাপে তাদের সংসার এতটাই উষ্ণ হয়ে উঠেছে যে, তাদের শান্তি উবে গেছে ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আবার রাহেলা খাতুনের উষ্ণ দাবানলে তার স্বামী- সন্তান অহর্নিশ দগ্ধ হচ্ছে। কাজেই গল্পটি উদ্দিষ্ট বিষয় ‘উষ্ণতা’ এর সাথে সামঞ্জস্যশীল।

১৪ ডিসেম্বর - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪