ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে কাঁপছিল মিতা। দীর্ঘক্ষণ অন্ধকার রাত পার করে এইমাত্র একটু আলোর দেখা মিললো ওয়াশ রুমে! সে দেখলে তার পুরো শরীরটা। দেখলো নিজের প্রিয় দেহ। একসময় এই শরীরটা নিয়ে বেশ অহংকার ছিল তার। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের দেহ নিজে দেখেই অন্য ধরণের এক শিহরণ অনুভব করতো সে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম শারীরিক গঠনের নারীদের মিথগুলো তাকে স্বপ্নের জগতে নিয়ে যেত। প্রায়শই নিজেকে তাদের সমকক্ষ মনে করে ফ্যান্টাসিতে ডুবে যেত মিতা। সে ফিসফিস করে বলতো, ডায়না ইজ ব্যাক! ইটস্ নাট মিতা, ইটস্ ডায়না, প্রিন্সেস ডায়না!
এখন তার ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে। আশেপাশের কাছের মানুষজন আর খোঁজ নেয় না! বিশাল ফ্লাটে একাই কাটে দিনকাল। একাকীত্বের যন্ত্রণা সইতে না-পেরে সোশ্যাল মাধ্যম থেকে খুঁজে নিয়েছিল এক যুবককে। গত রাত তার সাথে আড্ডা দিয়েছে। স্যাডিস্ট যুবক। ভোর রাতে চলে যায়। এরপর দীর্ঘক্ষণ ওয়াশ রুমে কাটায় মিতা। বারবার গোসল করে। কেমন যেন অসস্তি লেগেই আছে। কোনভাবেই কাটছে না! রাতে তার দেহে ঐ যুবকের দাতের কামড়, নখের আঁচর বেশ যন্ত্রণা দিচ্ছে। মনে বাড়াচ্ছে বিরক্তি। সকালের আলো ওয়াশ রুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে পৌঁছে পড়েছে তার গায়। কিছুটা ভালো লাগে। তখন বের হয়। কিন্তু শরীরের পালপিটিশন কমে না। বয়স হয়েছে। পঞ্চাশ কম কথা নয়!
বিছানায় শুয়ে পড়ে মিতা। মস্তিষ্কজুড়ে ভেসে ওঠে অতীতের স্মৃতির ফোল্ডারসমূহ। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিল সে। ছিল রাজকন্যার মত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ। ব্যবসায়ী বাবা মেয়ের উচ্ছশৃঙ্খল জীবনযাপন দেখে পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে একজন বোকাসোকা তবে শিক্ষিত ছেলের সাথে মিতাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। মিতা এটি মেনে নিতে পারে নি। মাস পেরোতে না পেরোতে সে ডিভোর্স দিয়ে দেয় ছেলেটিকে। ডিভোর্স লেটার পেয়ে মনোজ মিতাকে কিছু না-বলেই দু-তিন দিন পরে হঠাৎ একসময় চুপচাপ চলে যায় আর ফিরে আসে নি! মিতার বাবা এ ঘটনায় প্রচন্ড কষ্ট পায়। কয়েক মাস পরে ছেড়ে যান পৃথিবী। শুরু হয় মায়ের সাথে মেয়ের সংগ্রামী জীবন। তবে মিতা ছিল ডোন্ট কেয়ার টাইপের। সময়ের গতিতে সময় এগিয়ে যায়! মিতার গ্রাজুয়েশন শেষ। সে জব শুরু করে একটি প্রাইভেট কোম্পানির রিলেশনশীপ ম্যানেজার হিসেবে। তার মাও মিতার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেয়। এরপর ঘরে বসে থাকতে থাকতে বার্ধক্যজনিত কারণে একদিন বিদায় নেন। এসব স্মৃতির সিন্দুক আজ মিতার মাথায় শুধুই ঘুরপাক খাচ্ছে। ঘুরপাক খাচ্ছে তার মা তাকে কতবার দ্বিতীয় বিয়ে করতে বলেছে সেসব। দৈহিক সৌন্দর্য্য আর শারীরিক শক্তির জন্য তখন কোন কিছুই পাত্তা দেয় নি মিতা। তবে আজ কেন অসহ্য নিঃসঙ্গতা তাকে ঘিরে ধরেছে। কেন? বয়স বেড়ে গেলে কী সব নারীই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে!
মিতার আজ মনোজের কথাও মনে পড়ছে। কোথায় আছে সে। আদৌ বেঁচে আছে! ভাবছে, ইস্, বিয়ের পরে একবার যদি আমি মনোজদের দেশের বাড়ি যেতাম তবে হয়তো তাকে খুঁজে পেতাম! কতো ভালোবাসতো সে মিতাকে জানার চেষ্টাও করি নি- আফসোস! আবার ভাবে, মনোজ কী আর বিয়ে না-করে আছে? হয়তো অনেক সুখেই আছে তাই আমার আর খোঁজ রাখেন নি! ফিসফিস করে মিতা বলে ওঠে, মনোজ আই আম সরি! আমি তোমার সাথে ইনজাস্টিস করেছি!
বিছানায় শুয়ে এসব ভাবতে ভাবতে মিতার চোখে ঘুম চলে আসে। ক্লান্তির ঘুম! ঘুমের মাঝে শিয়াল, শকুন, কুকুরের রূপে ভেসে ওঠে এক একজন পুরুষ- যারা তার দেহই ভোগ করেছে, কেউ ভালোবাসেনি! ভেসে ওঠে মিতার নিজের মুখটিও! মুখে লাবণ্য নেই, হাসি নেই! আছে শুধু দেহ নিয়ে অহংকার করা এক কামুক নারীর অবয়ব! মন অশান্ত থাকলে ঘুম হয় না! মিতা জেগে ওঠে বারবার, কিন্তু ক্লান্তি তাকে জড় পদার্থের মতো বানিয়ে ফেলেছে আজ! ক্লান্তির ঘুমে, অসার মিতা ফিসফিস করে বলে, মনোজ, "এই দেহ তোমার! শুধুই তোমার!" শব্দগুলো হয়তো ফ্যানের বাতাসে মিশে ঘরেই ঘুরপাক খায় শুধু! প্রাকৃতিক হিমেল হাওয়া কামনার কবিতা শোনে না, সে বয়ে বেড়ায়- প্রেম! পবিত্র প্রেম! পৌঁছে দেয় ভালোবাসার মানুষের কাছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
ভালোবাসার গল্প
২৪ অক্টোবর - ২০১৮
গল্প/কবিতা:
২৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।