কৃপণ বিবেক ও আত্মার বিয়োগ

কৃপণ (নভেম্বর ২০১৮)

শাফায়াত আহমাদ
  • 0
  • ৩৩
কিভাবে গড়লো সে এত টাকার পাহাড়? এত প্রাচুর্যের মালিক সে কিভাবে হলো? এ যেনো আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ! উপমা যেনো বাস্তব নিপুনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটালো। আমাদের চারপাশে অনেক লোক দেখি মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী। আসলে তারা লোক চক্ষুর আড়ালে হয়ে উঠেছেন কোটি টাকার মালিক।

জান্নাতপুর উপজেলার দহলিজ ইউনিয়নের বাসিন্দা সোহরাব শেখ। ৩৬ বছর বয়স। দেখতে শ্যাম বর্ণের,সুঠামী,অতি চতুর,সুকৌশলী। তীক্ষ্ণহীনভাবে তাকাতেই চোখে পড়বে মাথায় নেই চুল। মানে তো সবাই জানি।(টাক!!)। যেনো ক্রিকেট গ্রাউন্ড। যাই হোক মুখ্য বিষয় সেটা না।

চলুন কাজের কথায় যাওয়া যাক।

বিয়ের পর শ্বশুড়বাড়ি থেকে পাওয়া সম্মানীর(যৌতুক) টাকাগুলো দিয়ে অতি যত্নে স্থানীয় “সৌরভ মেমোরিয়াল ক্লিনিকে”র পাশে রাস্তার বিপরীতে সুন্দর লোকেশনে করে ফেল্লেন স্ত্রীর নামে “রুপা ফার্মেসী”।
পাশে দুটি ফার্মেসীও আছে। নতুন দোকান বলে ফার্মেসি টি কেউ চিনতোনা। কোনোমতে চলছিল তার ফার্মেসীর ব্যবসা। ৬ মাস চলে গেলো কালের গহ্বরে। এর মধ্যে সোহরাব শেখ গুছিয়ে ফেলেছেন প্রায় সব। হয়েছেন পরিচিত। ক্লিনিকের নামকরা এমবিবিএস ডাক্তার সাহেবরাও এখন “রূপা ফার্মেসী”র নাম ছাড়া অন্য কোনো নাম জানেন না। এ সবই সোহরাব শেখের মেহনতের ফসল।
যাই হোক,
তার রুযি রোজগার বৃদ্ধির ব্যবস্থা সে তো করবেই। এখন আর তার কষ্ট করা লাগেনা। সুন্দর নির্মল বায়ু শনশন করে বইছে তার সংসারে। জোয়ার এসেছে জীবনে। টাকা কিছুটা হয়েছে তার,তবে বেশিনা।

এই সুযোগে নড়বড়ে ঘরদ্বোরগুলো ঠিক করেছেন তিনি। এভবেই চলছে, চলে যাচ্ছে সেকেন্ড, ঘন্টা, মাস সাথে দুটি বছর। দুবছর পর রূপার কোলজুড়ে এলো সোহরাবের ফুটফুটে সন্তান। নাম আদমিন।
প্রিয় পাঠক, আমি মূল গল্প এখনো শুরু করিনি। এতক্ষণ ভূমিকা পড়ছিলেন আপনি। কি? একরাগ রাগ নিয়ে গড়গড় শুরু করে দিলেন? থাক।রাগ এবার কমিয়ে আনুন। আমি আর ভূমিকায় আটকিয়ে থাকছিনা। লেখক হিসেবে পাঁকা হাত না হওয়ায় আজ আপনাকে এই জলজ্যান্ত হ্যারেজমেন্ট করতে পারলাম। তা না হলে তো গল্পটাই হিট হয়ে যেতো।

যাহ! “রূপা ফার্মেসি”র গল্প বলছিলাম তাই নাহ?। আমি কিন্তু ভুলেই গেছিলাম।
চলুন আবার গল্প শুরু করি................

ফার্মেসির রূপ গুন আর সৌন্দর্য্য এখন বহুগুনে জৌলুসময়। ৫ বছরের চুক্তি হলো স্থানীয় এক ঔষধ ফ্যাক্টরীর। চুক্তি অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছর ওই ফ্যাক্টরী থেকে সব বিভাগের ঔষুধ নিবে “রূপা ফার্মেসি।” এমনিভাবে জান্নাতপুর সদরে সব দোকানের সাথে চুক্তি গড়ে তোলে স্থানীয় “একতা ফার্মাসিউটিক্যাল।”
প্রথম ছয় মাস সরবরাহ করে অত্যান্ত উন্নমানের সব ঔষধ। স্বল্প লাভে বিক্রি করায় কোম্পানীর নাম ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্রই। ইতোমধ্যে তারা গোটা উপজেলার ডাক্তারদের কিনে ফেললো। ডাক্তাররা তাদের প্রেসক্রিপশনে ৯৬ ভাগ ঔষধ লিখতো “একতা ফার্মাসিউটিক্যালের।” বিনিময়ে পেতো অযুত সম্মানী। এভাবে উপোরী কামাই হলে কে না খুশি হয় বলুন? আপনিও কি হতেন নাহ!?

কিছুদিন যেতে না যেতেই কোম্পানী তাদের সুনামের অপব্যবহার করে বাজারে ছাড়তে শুরু করলো ভেজাল, ডেট ওভার সব ঔষধ, অন্যান্য সামগ্রী। এ কর্মকাণ্ড তারা চালিয়ে যেতে থাকে দ্বেদার্সে। কেউ কিচ্ছু বলছে না। বলবেও না কেউ। সবাই জানে “একতা”র ঔষধ গুনে-মানে সেরা।
আর ডাক্তাররা?
তারাতো ঔষধ কোম্পানির কেনা গোলাম। তাদের সাথে যোগ দিলেন আদমিনের বাবা। “রূপা ফার্মেসী”র সোহরাব শেখ। নকল ঔষধের ব্যবসায় সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে। চলছে নকল ঔষধের প্রতিযোগিতাপূর্ন ব্যবসা।

সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য সোহরাব শেখ ভেজাল ঔষধের কারিশমায় রাতারাতি কোটি টাকার মলিক বনে গেলেন। সবাই তাকে সম্মান দেয়। বাড়িতে উঠছে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ৪ তলা বিল্ডিং। কিনেছেন নোহা প্রাইভেট কার। রাফ ইউজের জন্য একটা পালসার কিনেছেন সম্প্রতি। ভাবা যায়? এই এক ফার্মেসিতেই করেছেন বাড়ি গাড়ি। জেলা সদরে কিনেছেন প্লট!

একদিন গাড়িতে যাচ্ছিলেন পূর্বপাড়ায়। সালিশ আছে। সেটা মিমাংসা করতে। ইশ! দেখুনতো কেমন ভুলোমন আমার। বলতেই ভুলে গেছি।সোহরাব শেখ এবার স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন। তাই এগুলোকে বিচার সালিশের প্রাকটিস বলতে পারেন।

৪ঠা মে ইউপি নির্বাচনের দিন চলে এসেছে। সোহরাব শেখের ফিল্ড খুব ভালো। তিনিই সম্ভবত চেয়াম্যান হবেন। টাকার কেরামতি বলতে পারেন। সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহন প্রায় শেষের দিকে।

বিকাল ৪ টা ৪১ মিনিট।
স্ত্রীর ফোন আসলো। আদমিন খুবই অসুস্থ। প্রচন্ড পেটের বেদনায় বিছানায় ছটফট করছে। ফোনের ওপাশ থেকে কথাগুলো শোনা মাত্রই মলিন বদনে বাড়ি ফিরে দেখেন তার স্ত্রী আদমিনকে “সৌরভ মেমোরিয়াল ক্লিনিকে” ইতমধ্যে ভর্তি করিয়েছেন।

গেলেন হাসপাতালে। ডাক্তাররা এখন তাঁকে চেয়ারম্যান সাহেব বলে ডাকেন। বাচ্চার জন্য প্রেসক্রিপশন লিখলেন নামীদামী ডাক্তার ঔষধগুলো নির্দেশনামতো খাওয়াতে বললেন। ঔষধ নেওয়ার জন্য দ্রুতগতিতে হেঁটে ঐতিহ্যবাহী “রূপা ফার্মেসি” খুললেন। ঔষধ নিলেন ছেলের জন্য। হাই এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়ালেন।

এদিকে নির্বাচনে ভোটগননা শুরু হয়ে গিয়েছে। ঔষধ কিছুটা খাওয়াইয়ে পাশে বাকিগুলো রেখে আবার ছুটলেন ভোটকেন্দ্রে। দুদিকের টেনশনে তিনিই ভুলেই গিয়েছিলেন তার খাওয়ানো ঔষধগুলো ছিলো চুক্তিবদ্ধ “একতা ফার্মাসিউটিক্যালের”। যা হবার তাই হলো। ভেজাল ঔষধ তিনি তার ছেলেকে খাওয়াইছেন।

তিনি যখন ভোটগননাকেন্দ্রে ছিলেন আদমিন তখন ভেজাল ঔষধের বিষক্রিয়ায় ছটফটরত। ক্লিনিক থেকে ট্রান্সফার করা হলো উপজেলা সদরে। ভোটকেন্দ্র থেকে সোহরাব শেখ সদরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। কিছুদূর যেতে না যেতেই ফোন আসলো তার একমাত্র আদরের ধন আদমিন পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। আত্মার বিয়োগে শোকে তিনি মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার।

ফোন রাখতেই ফোন আসলো নির্বাচন অফিস থেকে। তিনি বেসরকারিভবে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ভেবে পাচ্ছেন না কি বলবেন প্রতিউত্তরে। জয়ী হয়েছেন বটে কিন্তু হেরেছেন বিবেকের কাছে।

তিনি এই মুহুর্তে কি করবেন কিছু বুঝতে পারছেন না। টাকার জোরে ছিনিয়ে নেওয়া বিজয়ের আনন্দে হাসবেন? নাকি সিন্ডিকেট করে ভেজাল সরবারহ করা ঔষধ নিজের সন্তানের বিয়োগের কারন হয়েছে সেজন্য কাঁদবেন?

প্রিয় পাঠক একটু ভাবার চেষ্টা করুন তার মনের অবস্থা কি?
আসুন আমরা ভেজাল ঔষধকে না বলি। শুধু ভেজাল ঔষধ নয় প্রত্যেকটি ভেজালের বিরুদ্ধে হৃদয় থেকে না বলতে শিখবো। কাছের মানুষগুলোকেও শিখাবো। সোনার বাংলা হয়ে উঠবে নিরাপদ,প্রতিটা শিশুর জন্য বাসযোগ্য। প্রকৃতি হয়ে উঠবে রূপযৌবনা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হুসাইন ভালো লিখেছেন।ভোট রইলো।
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব প্রিয় কবি/লেখক. অাপনাদের জন্য নতুন ওয়েব সাইট www.kobitagolpo.com তৈরি করা হয়েছে নতুন অাঙিকে। এখানে বর্তমান প্রতিযোগীতার জন্য নির্ধারিত “বাবা-মা” শিরোনামে লেখা জমা দেয়ার জন্য অামন্ত্রণ করা হচ্ছে। অাগ্রহীগণ ২৫ নভেম্বরের মধ্যে www.kobitagolpo.com এ লিখা জমা দিন। প্রতিযোগীতায় সেরা নির্বাচিত ৬ জনকে সম্মাননা দেয়া হবে।।।
Arshad Beeg যুগোপযোগী গল্প
রঙ পেন্সিল গল্পটা বেশ শিক্ষণীয়। ভাল লিখেছেন। শুভকামনা রইলো

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ভেজালের সাথে যুক্ত হয়ে, হয়েছেন কোটিপতি। কিন্তু সেই ভেজালের হাত থেকে নিজের ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না। সবাইকে ভেজালের বিরুদ্ধে রুখে দ্বাড়াতে বলা হয়েছে।

২৩ অক্টোবর - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪