পৃথিবীতে অনেক অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে, যেখানে গেলে অতি বেদনাসিক্ত মনটাও শান্ত হয়ে যায়। আমিও দেশের ভিতর এমন অনেক জায়গায় গিয়েছি, ভালোও লেগেছে খুব। কিন্তু...............
কিন্তু ধানমন্ডি লেকের পাশে জাহাজ বাড়ির পাশ দিয়ে সন্ধ্যার পর নির্জন রাস্তায় হাটার চাইতে বেশি ভালো লাগা আর কোথাও পাইনি...............
হাতে সিগারেট, কানে হেডফোন। একটু নির্জন জায়গায় বসে তোমাকে ভাবা। মনে হয় তুমি জীবন্ত। মানে আমার পাশেই বসে আছো। তোমার সাথে কথা বলি। তোমার হাত ছুয়ে দেই, তোমার চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যাই আমি। সত্যি অসাধারন মূহুর্ত কাটে সেখানে। যদিও তুমি কল্পনায় আসো। তারপরেও ভালো।
প্রিয় চাকরীটা হটাত করে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। নতুন চাকরি খুজছি। রোজার মাস সামনে, তারপরেই ঈদ। আর রোজা, ঈদ মানে মধ্যবিত্ত পরিবারের বড়ছেলের জন্য একরকম অভিশাপ।কথাটা শুনে হয়তো অনেকেই ক্ষেপে যাবেন, কিন্তু যারা আমার মত পরিস্থিতিতে আছে তারা বুঝতে পারবেন। যাক এই কথায় আর না আসি।
রোজার আগে একবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। আচ্ছা আগে বলি আমি কে। আমি দুপুর, থাকি বসবাসের প্রায় অযোগ্য কিন্তু আমার প্রিয় শহর ঢাকায়। আমার গ্রামের বাড়ীও ঢাকা, তবে শহর থেকে একটু দূরে। মাসে দুই তিনবার বাড়ি আসা হয়। রোজার আগে এবার আসলাম, রোজার মধ্যে বা ঈদের আগে আর আসবো না। খরচ কমাতে হবে, সামনে ঈদ।
বাড়িতে নরমালি দিনে ঘুমাই আর বিকেল বা সন্ধ্যায় বের হই। আর এর মধ্যে দুই একবার নিকোটিনের সাথে ডেট দেওয়ার জন্য বাইরে বের হওয়া, এছাড়া বাসায়।
বাসা থেকে বের হয়ে বাজারের দিকে যাচ্চি নিকোটিন এর সাথে প্রেম করতে। হটাত পেছন থেকেঃ
সাইদঃ কাকা , কাকা দাড়াও।
আমিঃ কিরে কি হয়েছে?
সাইদঃ তোমার জন্য একটা গিফট আছে।
আমিঃ গিফট? আচ্ছা দে।
সাইদঃ আগে কিছু খাওয়াও।
আমিঃ আজব ব্যাপার তো, গিফট নিতে হইলে আবার কিছু খাওয়াইতে হয় নাকি?
সাইদঃ শুনো, তোমার রোদেলার তো মনে হয় বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। জন্ম নিবন্ধন করতে আসছিলো। তখন ছবি নিয়ে আসছিলো। এখন ৫০০ টাকা দাও আর ছবি নাও।
প্রায় ৯ বছর হয় মেয়েটিকে দেখি না। অথচ প্রতিটা মুহুর্ত, সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন-রাত সে আমার কল্পনায় আছে।
আমিঃ আমার কাছে এখন ৫০০ নাই
সাইদঃ আচ্ছা কাকা যা আছে দাও
পকেটে ৩০০টাকা ছিলো সেটি দিয়ে তার পাসপোর্ট সাইজের ছবিটি নিয়ে নিলাম। তারপর নিকোটিন এর সাথে সঙ্গম শেষ করে বাসায় ফিরে সোজা ছাদের চলে গেলাম। ট্রাউজারের পকেট থেকে ছবিটি বের করে অপলক দৃষ্টিতে রোদেলাকে দেখলাম। কি মায়া রোদেলার চোখে।
আমি তাকিয়ে আছি, হটাত কাদতে ইচ্ছে করলো। অনেকদিন রোদেলার কথা ভেবে কাদা হয় না। কিন্তু কান্নাও আসছে না। মনে পরে গেলো ছোটবেলার কথা।
আমি আর রোদেলা প্রাইমেরি স্কুলটা একই স্কুলে পরেছি। আমি যখন ক্লাস ফাইভে সে তখন ক্লাস থ্রি। অসম্ভব
কিউট একটা মেয়ে। আমরা বলি না কিউটের ডিব্বা, ওর ক্ষেত্রে কথাটি মনে হয় সত্যি। ও আসলেই একটা কিউটের ডিব্বা।
ছোট থেকেই আমার ওকে ভালো লাগতো। ওকে দেখতে ভালো লাগতো। একদিন স্কুলে যাচ্ছি, বাসা থেকে রাস্তায় উঠার পর খেয়াল করলাম আমার একটু সামনেই রোদেলা।ওর পিছু পিছু যাচ্ছি। সামনে একটা লোক এসে রোদেলার গাল টিপে ধরলো। কালো করে, মুটু, গন্ডার। রোদেলা ঝাড়া দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো। আমার মেজাজটা গেলো খারাপ হয়ে, আমার গ্রামের মেয়ে, আবার আমার আত্তীয়ও বটে তার সাথে এই গন্ডার লোকটা এমন করলো।(তখনো ভালোবাসাটা কি সেটা বুঝি না)
হয়তো দুই একদিন পরে কোন এক বিকেলে আমি আর কুয়াশা ব্রীজ দিয়ে হেটে যাচ্ছি, নিচে দেখি ঐ গন্ডারটা। ব্রীজ থেকে নেমে এসে একটা ইট নিয়ে এসে ব্রীজের উপর থেকে ইট ছুড়ে মেরে গন্ডারটার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলাম। ঘটনাটি আমি আর কুয়াশা ছাড়া আজই প্রথম আপনারা জানলেন।
ঘটনাটি মনে করে হাসতে লাগলাম। পাগলের মত একা একা হাসছি। ক্ষনিকেই আবার আমার হাসীটা বিলিন হয়ে গেলো। সাইদ বললো রোদেলার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু আমি রোদেলাকে ছাড়া বাচবো কি করে? অন্য কারো বউ হয়ে সে চলে যাবে? বুকের বা পাশে খুব কষ্ট হতে শুরু করলো। জানেন আমি এখনো রোদেলাকে নিজে প্রপোজ করতে পারিনি। অথচ ভালোবাসি প্রায় ৯ বছর। নিজে প্রপোজ করতে না পারলেও বন্ধুদের দিয়ে করিয়েছিলাম। নেগেটিভ রিপ্লে আসায় আর সামনে যাওয়া হয়নি। আর ওর আসে পাশে গেলেই আমার হাত-পা কাপাকাপি শুরু করে দেয়। বুক ধরফর ধরফর করে।
কিন্তু এবার তো সাহশ করে বলতেই হবে। কোণ এক কারনে রোদেলা আমাকে ঘৃনা করে। তার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ আমি। এর আগে এফবিতে কয়েকবার নক করেছিলাম। রিপ্লে তে এসেছিলো হেট ইউ হেট ইউ হেট ইউ হেট ইউ হেট ইউ হেট ইউ হেট ইউ।
আবার পিছু লাগা শুরু করলাম। নতুন একাউন্ট খুলে আবার রিকোয়েষ্ট পাঠানো শুরু করলাম, তার বান্ধবীদের দিয়ে অনুরোধ, অনুনয় বিনয় করে ফ্রেন্ড লিষ্টে জায়গা পেলাম। ম্যাসেজের পর ম্যাসেজ দিয়ে চ্যাটও শুরু করলাম। অনেকভাবে চেষ্টা করে অবশেষে বুঝাতে সক্ষম হলাম যে সে যে কারনে আমাকে ঘৃনা করে সেটা সম্পুর্ন ভূল।
রোদেলাঃ তাহলে আমি তোমাকে এতোদিন ভূল বুঝেছি?
দুপুরঃ হ্যা।
রোদেলাঃ এতোদিন তুমি কেনো বলোনি?
দুপুরঃ অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু তুমি সুজোগ দাওনি।
রোদেলাঃ যাই হোক এতোদিন পর তাহলে তোমার সাথে কথা হলো। আমার ভাবতেই অবাক লাগছে যে আমি তোমার সাথে কথা বলছি।
দুপুরঃ আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। একটু চিমটি কেটে দিবা?
রোদেলাঃ হাহাহাহাহাহহা
দুপুরঃ তুমি খুব সুন্দর করে হাসো। আচ্ছা তুমি হাসলে কেমন লাগে?
(রোদেলা তার হাসীমাখা অসাধারন একটা ছবি দেয়)
রোদেলাঃ দেখো কেমন লাগে।
দুপুরঃ মাথা ঘুরাচ্ছে।
রোদেলাঃ কেনো?
দুপুরঃ এতো সুন্দর মুখ, এই রকম মন ভোলানো হাসি দেখলে তো মাথা ঘুরাবেই তাই না?
রোদেলাঃ হাহাহাহাহা । আচ্ছা তোমার গার্লফ্রেন্ড কেমন আছে?
দুপুরঃ আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। তোমার?
রোদেলাঃ আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। তবে বয়ফ্রেন্ড আছে এবং সে খুব ভালো আছে।
দুপুরঃ মাশাল্লাহ।
রোদেলাঃ তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই কেনো?
দুপুরঃ আমার গার্লফ্রেন্ড হবে কে? গার্লফ্রেন্ড পেতে হলে সুন্দর, স্মার্ট হতে হয়।
রোদেলাঃ তুমি কম কিশে? তুমি তো অনেক কিউট।
দুপুরঃ হাহাহাহাহহাহা
রোদেলাঃ হাসো কেনো?
দুপুরঃ আচ্ছা তাহলে তুমি আমাকে এক্সেপ্ট করলে না কেনো?
রোদেলাঃ সত্যি কথা বলতে আমিও তোমাকে পছন্দ করতাম। কিন্তু সে সময়টা আমাদের পক্ষে ছিলো না।
দুপুরঃ হুম, আমার পোড়া কপাল।
রোদেলাঃ এইভাবে বলো কেনো। দেইখো তুমি আমার চেয়ে অনেক ভালো মেয়ে পাবা।
দুপুরঃ আমি তোমাকে কখনো সরাসরি প্রপোজ করিনি। আজ করি?
রোদেলাঃ দুপুর আমি এঙ্গেইজড।
দুপুরঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি। অনেক অনেক ভালোবাসি। সেই ছোট থেকেই।
রোদেলাঃ তুমি পাগল হয়ে গেছো।
দুপুরঃ অনেক আগে থেকে।
রোদেলাঃ আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে, আমি ঘুমাবো।
দুপুরঃ আমাদের কি আবার কথা হবে?
রোদেলাঃ জানিনা। তবে হতেও পারে।
দুপুরঃ আচ্ছা তুমি ঘুমাও। শুভ রাত্রী।
রোদেলাঃ শুভ রাত্রী।
সেদিন আর সারারাত আমার ঘুম হয়নি। স্বর্গীয় একটা সুখ অনুভব করছিলাম।
পরের দিন ভোরে উঠেই শুভ সকাল লিখে এসএমএস করি। তারপর রিপ্লে পাবার অপেক্ষা। সকাল গড়িয়ে দুপুর কিন্তু কোন রিপ্লে নেই। রাতে ঘুমানোর আগে আবার শুভ রাত্রী, এবার ও রিপ্লে নেই।
দুইদিন পর দুপুরের দিকে শুভ সকাল লিখে এস এম এস আসলো।
আমিঃ এখন শুভ সকাল?
রোদেলাঃ মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।
আমিঃ এতো দেরি করে যে?
রোদেলাঃ চাকরীটা ছেরে দিয়েছি। তাই এখন ফ্রি, দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে সমস্যা নাই।
আমিঃ নাস্তা করছো?
রোদেলাঃ এখনো সুয়ে আছি। উঠে ফ্রেস হয়ে রান্না করবো।
আমিঃ তাহলে তারাতারি উঠে রান্না করে খাও। অসুস্থ হয়ে পরবে।
রোদেলাঃ তুমি নাস্তা করছো?
আমিঃ আমি সকালে নাস্তা করি না। একেবারে লাঞ্চ করবো।
রোদেলাঃ নিজে নাস্তা করে না আবার আমাকে জ্ঞ্যান দিতে আসছে। যাও কিছু খেয়ে নাও। আর আমি ফ্রেশ হয়ে রান্না করি।
রোদেলা অফ লাইনে চলে যায়। আর আমি ভাবতে থাকি, আমি রোদেলার সাথে কথা বলছি। সেই রোদেলা যার জন্য আমি প্রায় ৯ বছর ধরে অপেক্ষা করছি। যদিও সে এখন অন্য কারো। তবুও ভালোবাসার মানুষের সাথে কথা বলার যে অমৃত সুখ সেটা হয়তো আমি এখন আপনাদের বুঝাতে পারবো না।
আমি ফেসবুক ওপেন করে বসে আছি, রোদেলা অনলাইনে আসলেই নক করবো কথা বলবো। কিন্তু তার আসার খবর নেই। রাত ১টার দিকে সেই নক দেয়। মন খারাপ তার। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তার মন ভালো করার। কিন্তু এই বিষয়টাতে আসলে আমি অনভিজ্ঞ।
আমিঃ আচ্ছা তোমার ছোট সময়ের কথা মনে আছে?
রোদেলাঃ সব মনে নেই। কিছু কিছু মনে আছে।
আমিঃ সকালে একসাথে পরতে যেতাম।জানো আমার সকালে উঠতে খুব কষ্ট হতো, কিন্তু তারপরেও তোমাকে দেখার জন্যই শুধু সকালে উঠে পরতে যেতাম।
রোদেলাঃ মনে আছে। তুমি দরজা দিয়ে ঢোকার সময় অনেক কিউট একটা হাসি দিতে। আমি প্রতিদিন তোমার হাসি দেখতাম।
আমিঃ কিহ! তুমি আমার হাসি দেখতে? আর আমি তখন হাসতে জানতাম নাকি?
রোদেলাঃ হাহাহাহাহা। হাসতে জানতে না মানে? সত্যিই তোমার হাসিটা অনেক সুন্দর, অনেক কিউট।
আমিঃ চাপা মাইরো না। জীবনে তো একবারও আমার দিকে ফিরেও তাকাও নাই।
রোদেলাঃ অনেক বার তাকিয়েছি। লুকিয়ে লুকিয়ে।
আমিঃ লুকিয়ে লুকিয়ে কেনো?
রোদেলাঃ সবাই ভাবতো তুমি আমি প্রেম করি, সেই ভয়ে। আর লজ্জাও লাগতো, কিন্তু বার বার দেখতে ইচ্ছে করতো।
আমিঃ আমাকে তোমার দেখতে ইচ্ছে করতো? ধন্য আমি।
রোদেলাঃ একটা কথা বলি?
আমিঃ অবশ্যই রুপকন্যা।
রোদেলাঃ নাহ থাক।
আমিঃ কেনো থাকবে?
রোদেলাঃ দুপুর আমি এঙ্গেইজড।
আমিঃ তো?
রোদেলাঃ ঘুম পাচ্ছে আমার। ঘুমাবো।
আমিঃ মন ভালো হয়েছে?
রোদেলাঃ অনেক অনেক। কিছুখনের জন্য সেই পিচ্চিকালে হারিয়ে গিয়েছিলাম।
আমিঃ ভালো লাগলো শুনে। যাও এখন ঘুমাও।
সেদিনের মত সে ঘুমিয়ে পরে। আমি কিছুখন বারান্দায় নিকোটিন সুখ নিয়ে বিছানার সাথে আলিঙ্গন করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পরি। তাকে স্বপ্ন দেখি। দেখি যে রোদেলা আর আমি রাস্তা দিয়ে হাটছি। রাস্তা পার হবার সময় ও আমার হাত ধরে, শক্ত করে ধরে। আমি অকৃত্রিম একটা সুখ, গভীর একটা ভালোবাসা অনুভব করি। হাহাহাহা, অল্প কিছুক্ষন পরেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় একটা ফোনে। ইউসুফ ফোন দিয়েছে।
আমিঃ হ্যালো দোস্ত, এতো সকালে যে?
ইউসুফঃ আরে পাঠা, এখন সকাল না। এখন সকাল ১১টা বাজে।
আমিঃ ওহ। অনেক রাতে ঘুমাইছি তো তাই।
ইউসুফঃ শোন, আগামী পরশু আমাদের অফিসে তুই একটা ইন্টারভিউ দিবি। ফরমাল ড্রেসে আসবি। আর সব ডকমেন্টের ফটোকপি নিয়ে আসবি।
আমিঃ কয়টায়?
ইউসুফঃ ঠিক ১১টায়। আমি তোকে অফিসের এড্রেস টেক্সট করে দিচ্ছি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
ইউসুফের সাথে কথা শেষ করে ম্যাসেঞ্জারে ঢুকি। রোদেলা শুভ সকাল লিখে টেক্সট করেছে। আমিও শুভ সকাল লিখে টেক্সট করি। কিন্তু সে এখন অনলাইনে নেই। এরপর বেশ কিছুখন অপেক্ষা করি। রিপ্লে না পেয়ে ঘুমিয়ে পরি। ঘুম ভাঙ্গে প্রায় ৩টায়। ঘুম ভাঙ্গার পরপরই ম্যাসেঞ্জারে ঢুকি। রোদেলার ম্যাসেজ।
কেমন আছো?
কোথায় তুমি?
নাস্তা করছো?
লাঞ্চ করছো?
কোথায় তুমি?
ধুর ভাললাগেনা।
ম্যাসেজ দেখে একটু মুচকি হাসি। তারপর রিপ্লে দেই যে ঘুমিয়ে ছিলাম, সরি। কিছিক্ষন অপেক্ষা তারপর তার খোজ খবর না পেয়ে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করি। এসে দেখি এখনো রিপ্লে নাই। ম্যাসেজ দেই ঃ ০১৯৫৬৩৭৩২৭৩ এটা আমার নাম্বার, অনলাইনে আসলে ফোন দিও।
ম্যাসেজ দিয়ে ঘুমিয়ে পরি আমি। ঘুম ভাঙ্গে আবার সন্ধ্যায়। বাইরে বের হই, ৩২ এ গিয়ে চা খাই, ফ্রেন্ডেসদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত ১১টার দিকে বাসায় ফিরি। বাসায় ফিরে পিসিতে বসি, টুকটাক মডেলিং প্র্যাকটিস আর গান শোনায়ু ব্যাস্ত। হটাত একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। বুঝতে পারি যে রোদেলার কল, কল কেটে দিয়ে ম্যাসেঞ্জারে আসি। এর পর শুরু হয় কথা। ম্যাসেজিং চলতে থাকে, তারপর অনেক রিকোয়েস্ট এর পর এক মিনিট ফোন কলে কথা বলার সুজোগ পাই। ওই পারের মিষ্টি হ্যালো কথাটি আমাকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। কিছুখন পর কেমন আছো, কি করছো এই সব বলে আমি নিজেই ফোন কেটে দেই। তারপর আবার ম্যাসেজিং। সারা রাত জেগে ম্যাসেজিং। এরপর দুই দিন এভাবে ম্যাসেজিং চলে, তারপর শুরু হয় ফোনে কথা বলা, রাত জেগে কথা বলা, একসাথে বেশ কিছুদিন ভোর হওয়ার সৌন্দর্য দেখেছি। একটা সময় সে স্বিকার করে সেও আমাকে পছন্দ করতো, ভালোবাসতো। ছোট বেলার সেই চিঠিটি সে আমার জন্যই লিখেছিলো।
আমি চাদকে ভালোবাসি, চাঁদ আমায় ভালোবাসে বলে। আমি সূর্যকে ভালোবাসি, সূর্য আমাকে ভালোবাসে বলে। আমি তোমায় ভালোবাসি তুমি আমায় ভালোবাসো বলে। চাঁদ যেমন সূর্যের আলোয় নিয়ে বেচে থাকে, তেমনি আমি তোমার ভালোবাসা নিয়ে বেচে থাকবো।
I Love You
(S+R)
চিঠিটি আমার হাতে পরেনি। ভূল ক্রমে সেটি তার মায়ের কাছ পর্যন্ত গিয়েছিলো। হয়তো সেই চিঠিটি তখন আমার হাতে আসলে গনেষ আজ অন্য কথা বলতো।
যাক সেই পুরোনো কথা। আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে চলে। আমাদের সম্পর্ক? কিশের সম্পর্ক আমাদের? আমি তাকে ভালোবাসি, সে এখন ভালোবাসে অন্যকাউকে, খুব শিঘ্রই তারা এক হবে। তাহলে আমাদের সম্পর্কটা কি? বন্ধুত্ব? আমি বন্ধুত্ব মানতে নারাজ, কারন যাকে ভালোবাসি তাকে বন্ধু মেনে নিতে পারছি না।
প্রথম দেখা। তার সাথে কথা ছিলো প্রথম স্যালারী পাওয়ার পর তাকে ফুসকা খাওয়াবো, রবিন্দ্র সরবরের চা আর গরুর চাপের সাথে লুচি খাওয়াবো।
আমি সরবরের পাশে লেকের ধারে বটতলায় বসে আছি। আমার হাতে একটা ব্যাগ। ব্যাগটা পাশে রেখে বসে আছি। কিছুক্ষন পরপর ব্যাগটা নাড়াচারা করছে। ব্যাগে কি আছে সেটা বলবো না, রোদেলার জন্য সারপ্রাইজ।ওকে বলবো বাসায় গিয়ে খুলতে। আমি ড্যাম শিউর ও খুব খুশি হবে।
বসে আছি, অপেক্ষায় আছি। অন্য সময় অপেক্ষা খুবই কষ্টদায়ক হলেও আজ তেমন কষ্ট লাগছে না। তবে কিছুটা ভয় ভয় লাগছে, ঘামছিও বটে। আচ্ছা এমন তো হয়নি যে রোদেলা এসেছিলো, আমাকে দূর থেকে দেখে ভয় পেয়ে চলে গেছে। হয়তো ভেবেছে তার মত এইরকম আহামরি একজন সুন্দরী কিভাবে এই রকম পিচ্চি একটা ক্ষ্যাত ছেলের পাশে বসবে, ভেবেহয়তো চলে গেছে।
কেমন আছো?
আমি দাঁড়িয়ে যাই, হাত পা মৃদ কাপছে, আর ঘামছিও মনে হয়। তার কথার উত্তর মুখ দিয়ে বের হচ্ছে হছে করে হচ্ছে না।
রোদেলাঃ কি হলো তোমার?
আমিঃ(আস্তে করে) ভালো আছো?
রোদেলাঃ (হালকা হেসে)তুমি আগে শক্ত হও। কাপছো তুমি।
আমি গিফটের প্যাকেটটা ওর কাছে এগিয়ে দেই। ও হাতে নিয়ে খুলতে যাবে আর তখনি
আমিঃ এই না, এখন খুলবে না। বাসায় গিয়ে খুলবে।
রোদেলাঃ কেনো?
আমিঃ এমনি।
এরপর ধিরে ধিরে স্বাভাবিক হই। অনেক অনেক কথা বলি। মুখে নেকাব ছিলো, খুব দেখতেও ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু সাহস করে বলতে পারছিলাম না। ঠিক তখন এক ফুসকাওয়ালা পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। আমি ডাক দিয়ে ফুসকা অর্ডার করি। আর ফুসকা খাওয়ার জন্য রোদেলা তার মুখ থেকে নেকাব খুলে আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে থাকি। পাক্কা ৯ বছরের বেশি পরে তাকে দেখলাম। ও মুখে নেকাব দিয়ে দেয়
রোদেলা ঃ এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমার লজ্জা লাগে।
আমিঃ ওহ সরি, আচ্ছা আর তাকাবো না। তুমি খুলে খাও।
নেকাব খুলে নেয়, আমি নিচ দিকে তাকিয়ে ফুসকা খাচ্ছি।
রোদেলাঃ আমি তাকাতে না করিনি, দেখতেও না করিনি। কিন্তু ঐভাবে তাকালে লজ্জা লাগে।
আমি মুচকি হেসে ওর দিকে তাকাই। রোদেলাও হাসে। ফুসকা খাওয়া শেষে গরুর চাপ খাই। মাঝে মাঝে অনেক কথা হয়। ছোট বেলার কথা, তার আর আমার কথা।
আমিঃ আচ্ছা রোদেলা তোমার মনে পরে?
রোদেলাঃ কি মনে পরবে?
আমিঃ স্কুল শেষে আমি তোমার পেছন পেছন আসতাম।
রোদেলাঃ হুম প্রায় মনে পরে। আমার ডাইরিতেও তোমার এই কথাগুলো লেখা আছে। আমি চাইতাম তুমি এসে আমার সাথে কথা বলো। কিন্তু বলতে না। তবে এটাও জানতাম তুমি আমার জন্যই আসতেছো।
আমিঃ হাহাহাহা। তুমিও তো পারতে আমার সাথে কথা বলতে। বলোনি।
রোদেলাঃ মেয়েরা চাইলেও অনেক কিছু পারে না।
আমিঃ আচ্ছা শুনো যেটা বলছিলাম। স্কুল শেষে তোমার পিছু পিছু আসছিলাম। তুমি আর তোমার বান্ধবী ছিলে। আমি পিছনে একা। হটাত বৃষ্টি। তোমাদের দুজনের হাতেই ছাতা ছিলো।আর আমি খালি হাতে ভিজে যাচ্ছিলাম। তুমি তোমার ছাতাটি তোমার বান্ধবীকে দিয়ে আমার কাছে পাঠিয়েছিলে। মনে আছে?
রোদেলাঃ নাহ মনে নেই।
আমিঃ আচ্ছা তোমার স্কুল লাইফের ঐ কালো রঙের ছাতাটি কি এখনো আছে?
রোদেলাঃ নাহ।
আমিঃ তোমার সবুজ বোরখাটা?
রোদেলাঃ নাহ নেই। কিন্তু কেনো?
আমি ঃ নিয়ে নিতাম তোমার কাছ থেকে। তারপর রেখে দিতাম।
রোদেলা ঃ আচ্ছা আমার যে ছোটবেলার কিছু জিনিষ তোমার কাছে রেখে দিয়েছো সেগুলা কি করবে?
আমিঃ তোমার গায়ে হলুদের দিন সব পুরিয়ে দিবো।
রোদেলাঃ কেনো? ওহ এর পর বুঝি আমাকে আর ভালোবাসবে না? তাহলে গায়ে হলুদের দিন কেনো, বিয়ের দিন পুরিয়ে। একটা দিন আমাকে বেশি ভালোবেসো।
আমিঃ বিয়ের দিন আমি থাকবো না।
রোদেলাঃ কোথায় যাবে তুমি?
আমিঃ জানিনা।
রোদেলাঃ তুমি আমার বিয়েতে অবশ্যই আসবে। আর ঐ যে একবার বলেছিলে যে আমাকে তুমি নীল শাড়ীতে স্বপ্নে দেখেছিলে, সেই রকম একটা নীল শাড়ী, নীল চুরী, নীল টিপ, আমাকে গিফট করবে বিয়েতে। আমি সেইগুলো পরে আবার তোমার বিয়েতে আসবো।
আমিঃ আহাহাহাহা । আমিতো বিয়েই করবো না। আর তোমার বিয়েতেও যাবো না। তবে এগুলা গিফট করবো।
রোদেলা ঃ বিয়ে করবে না কেনো? আমি তোমার জন্য মেয়ে পছন্দ করে দিবো। আমার পছন্দ করা মেয়েকেই তুমি বিয়ে করবে।
আমিঃ ততদিন হয়তো আমি বাচবো না।
রোদেলাঃ চুপ করো। (আমার শোনা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর বাক্য)
আমি চুপ করি, রোদেলাও চুপ। ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ওর চোখের পানি দেখে। ইচ্ছে করছে চিৎকার দিয়ে সরি বলি। কিন্তু
আমিঃ সরি রোদেলা।
রোদেলা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমি উঠি।
আমিঃ আচ্ছা আমি তোমাকে দিয়ে আসি।
রোদেলাঃ নাহ, আমি একাই যেতে পারবো।
আমিঃ এখান থেকে উত্তরা অনেক দূর, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমি আসি তোমার সাথে।
রোদেলা না বলে হাটা ধরে। একবার পিছন ফিরে বলেঃ “প্লিজ দয়া করে ঐধরনের কথা আমার সামনে আর কখনো বলবে না। আমার খুব কষ্ট হয়। কেন কষ্ট হয় সেটা তুমি বুঝবেনা।“ আবার হাটা ধরে। আমি কিছুক্ষন একা বসে থেকে তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে বাসার পথে হাটা দেই। আমি বুঝি, আমি বুঝি সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু এখন আর আমাদের সেই সুজোগ নেই। কিছু করার ও নেই।
বাসায় ফিরে আসি। সেদিন রাতে আর রোদেলার সাথে কথা হয়নি। সকালে ম্যাসেজে আমার দেওয়া গেফটের সাথে তার একটি কিউট মার্কা সেলফি পাঠিয়েছে, আর এত্তোগুলা থ্যাংকস। হাহাহাহহাহাহাহা
আবার কথা শুরু হয়। আমরা আরো কয়েকবার দেখা করি। ও আমাকে একটা একুরিয়াম গিফট করে, একটা ঘড়িও। আমাদের প্ল্যান করা হয় আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে বিয়ে দিয়ে আমরা বিয়াই বিয়াইন হবো, আর বৃদ্ধবয়েসে প্রেম করবো। রোদেলার একটা কথা আমার বেচে থাকার সম্বল জোগায়। কথা না, এটা ওয়াদা। ও আমার কাছে ওয়াদা করে মৃত্যুর পরের জীবনে ও আমার সঙ্গী হবে, এ জীবনেতো আর সম্ভব নয় কারন সে অলরেডী একজনের কাছে কমিটেড। এই ভরসা নিয়েই আমার জব চলতে থাকে, কথা চলতে থাকে লিখাও এখন টুকটাক। আর ঐদিকে রোদলার ও এমবিবিএস শেষ। ইন্টার্ন করছে। শেষ হলেই বিয়ে।
আমি খুব গভিরে চলে যাই। রোদেলার প্রতি দারুনভাবে উইক হয়ে পরি। আর যেহেতু তার বিয়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে তাই স্বাভাবিক ভাবেই সে তার হবু হাজব্যান্ডকে এখন আগের চেয়ে সময় দেওয়া বেশি শুরু করে। যেটা সহ্য করতে আমার পক্ষে খুব বেশি কষ্ট হচ্ছিলো। আমি ধিরে ধিরে মাদকাশক্ত হয়ে পরি। এর মাঝে যে এতো সুখ সেটা আগে জানা ছিলো না।
একদিন রোদেলা আমায় জানায় সামনের মাসের শুরুতে তার বিয়ে। তাই সে এখন থেকে কথা বলা বাদ দিতে চায়। আমিও তাতে সম্মতি জানাই। এর দুটো কারন, ১ঃ তার সাথে কথা বলার বা ফিরিয়ে আনার বা জোর করার কোন অধিকার আমার নেই। ২ঃ আমি চাই না তার কোন ক্ষতি হোক বা সুখের সময় পিছুটান থাকুক।
আমি রোদেলার জন্য গিফট কিনি। নীল শাড়ী, একগুচ্ছো নীল চুড়ি, নীল টিপ, একটা ডাইরি, এক বক্স কালার পেন্সিল, ইররেজার। এই সব কিছু নীল একটা মোড়কে মুড়িয়ে রোদেলার এক বান্ধবীর কাছে জমা দেই। সে বিয়ের দিন পৌছে দিবে। আর আমি তার সমস্ত স্মৃতি পুরিয়ে দিয়ে কিছুটা প্রশান্তির জন্য কক্সবাজার যাবো। সাথে আছে বন্ধুরা।
আগামীকাল বিয়ে আর আজ গায়ে হলুদ। আমি এখন আমার বাসার ছাদে। সামনে রোদেলার সকল স্মৃতি। কিছুক্ষন পরেই পুড়িয়ে ফেলবো সব। ওর ব্যাবহৃত টিস্যু, আমার উদ্যেশে লেখা ওর প্রেমপত্র, পত্রিকায় দেওয়ার জন্য ওর লেখা কবিতা, ওর একটা ওড়না, চকলেটের খালি প্যাকেট, আর আমি ওকে গিফট করার জন্য কিছু চকলেট, কলম, কিনেছিলাম সেগুলো।
কেরোসিন তেলে ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেই। আমার সামনে পুরে যাচ্ছে সব, আর আমার বুকের ভিতরটাও পুরে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে, চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে। কাদছি আমি কিন্তু চিৎকার করতে পারছি না।
হটাত খেয়াল করি নিচে কিছু একটা হয়েছে, কেউ চিৎকার করছে। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও নিচে নামতে হলো।
শিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখি রোদেলা হলুদ শাড়ী পরে।
হ্যা, ও চলে এসেছে, আমাকে ভালোবেসে সব ভয় উপেক্ষা করে সে চলে এসেছে। সুধুই আমার হয়ে চলে এসেছে। এক দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে। আমি এবার আর থামতে পারলাম না, চিৎকার করে কাদতে কাদতে বলতে থাকলাম ভালোবাসি ভালোবাসি সুধুই তোকে ভালোবাসি।
ইউসুফঃ কিরে মামা কি হয়েছে? কাদছিস কেনো? রোদেলাকে স্বপ্নে দেখছিলি নাকি?
ইউসুফের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায়। আর ভেঙ্গে যায় এতো মধুর একটা স্বপ্ন। রোদেলার সাথে দেখা, কথা বলা, একসাথে খাওয়া, আবার নাকি সে তার বিয়ে রেখে আমার কাছে চলে আসা। এগুলো ঘুমের ঔষধ খেয়ে ৮ ঘন্টার জার্নির ঘুমের স্বপ্নেই সম্ভব, আমার মত পোড়া কপালে রোদেলা নেই। স্বপ্নটা অনেকটা সিনেমার মতো হয়ে গেলো।
আজ সত্যিই রোদেলার বিয়ে আর সেই জন্যেই বন্ধুদের সাথে আমি কক্সবাজার। ওর জন্য আরেকজনের নামে গিফট পাঠিয়ে দিয়ে এসেছি, কিন্তু রোদেলা জানবে না। রোদেলার হয়তো আমার কথা মনেই নেই। এখনো হয়তো আমাকে ঠিক আগেই মতই ঘৃনা করে। হয়তো তার কাছে এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষটি আমি। এইভাবে কারো কাছে খারাপ মানুষ হয়ে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াটাই হয়তো ভালো। মৃত মানুষকে হয়তো রোদেলা আর ঘৃনা করবে না।
ইউসুফঃ দোস্ত চল চলে এসেছি।
আমিঃ হ্যা, চল নামি।
নীরবঃ আগে রুম বুক করে আসি।
মাহাদীঃ হুম ঘুম পাচ্ছে আমার।
আমিঃ তোরা রুমে গিয়ে ঘুমা। আমি বিচে যাবো।
আরিফঃ এখন রাত ৩টা বাজে। এই রাতে বিচে গিয়ে কি করবি তুই?
আমিঃ সাগরের ঢেউ এর শব্দ শুনবো।
নীরবঃ আচ্ছা ও যাক, ওর মন খারাপ। সাগরের কাছাকাছি গেলে হয়তো ভালো লাগবে।
মাহাদীঃ আচ্ছা তোর ব্যাগ দে। আমি নিয়ে যাই। তুই একটু পর আসিস।
আমিঃ নাহ। ব্যাগে একটা অক্টোবর এল আছে, এটা লাগবে।
আরিফঃ এলকহোল নিবি নে। কিন্তু সাগরে নামবি না ভূলেও।
আমিঃ আচ্ছা।
ওরা হোটেলের জন্য চলে যায়। আমি বিচে যাই। বালির উপর বসি। কিছুখন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকি। রোদেলার কথা মনে পরে। ছোট ওর সেই পাগল করা হাসীর কথা মনে পরে। স্কুল শেষে ওর পিছু পিছু আসার দৃশ্য আমার সামনে ভেষে আসে। আমি ব্যাগ থেকে বোতল টা বের করে গিলতে থাকি। কিছুখন পর ইচ্ছে করে পা টা একটু পানিতে ভিজিয়ে আনি। সামনে এগিয়ে যাই, খালি পায়ে পানিতে হাটি। আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। খেয়াল করি মাথাটা ঘুরছে, হাতপা অবশ হয়ে আসছে। পিছনে ফিরে যাবার আর কোন শক্তি নেই আমার। খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি পরশুদিন সকালে দেশের প্রায় অনেকগুলো পত্রিকায় ছাপা হবে অতিরিক্ত মদ্যপানের পর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে যুবকের পানিতে ডুবে মৃত্যু .......................................
( পুরো গল্পটিই কাল্পনিক, বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল নেই)