শোধ

ভৌতিক (ডিসেম্বর ২০১৮)

রঙ পেন্সিল
  • 0
  • ৭৪৫
মমির মত ছোট্ট মেয়েটি ঠিক রেললাইনের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে রক্ত চক্ষু মেলে তাকিয়ে আছে বজলুর দিকে। কিন্তু বজলু এখনো মেয়েটিকে দেখতে পায়নি। ওর পুরো মনযোগ বাম হাতে ধরা বড়শিটার দিকে, ডান হাতের নাগালের মধ্যের বড়শিটার ফাৎনা অনেকক্ষন হলো স্থির হয়ে আছে। এবারে নিশ্চিত কোন বড় মাছ টোপ গিলেছে। বড়শিতে একটা বোয়াল উঠলে বেশ হত। এই ভর শীতে বোয়াল মাছের পেটি যা লাগেনা! বেশি করে ঝাল দিয়ে ঝোলঝোল করে রাধতে পারলে তো কথাই নেই! আর সংগে যদি ক্ষেতের কিছু কচি মটরশুঁটি দেয়া যায়না! উফ! দুই তিন বেলা শুধু এই মাছ দিয়েই অনায়াসে পেট পুরে ভাত খাওয়া যায়।
বড়শিটার ওজন বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এবার বাছাধন টোপ মনে হয় ভালো মতই গিলেছে। ওর হাতের মধ্যে বড়শিটা শরীর মুচড়িয়ে নেমে যেতে চায় শান্ত নিস্তরঙ্গ খালের পানিতে। বজলু গায়ের জোরে বড়শি উঠিয়ে খাল পাড়ের বাবলা গাছটার দিকে মাছটা ফেলতে চায় কিন্তু কপালটা আজ ওর খারাপ ই বলতে হবে। মাছটা উঠেও এসেছিল ঠিকই কিন্তু শুন্যে থাকতেই বড়শি খুলে আবার ঝপাৎ করে খালের পানিতে পড়ে যায়। ও মনে মনে মাছটার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে গুটানো বড়শি দু’টা আর কয়েকটা টেংরা,পুটি,বেলে মাছ জিইয়ে রাখা দুমড়ানো টিনের বালতিটা নিয়ে বাড়ির পথ ধরে। আর ঠিক তখনি ও মেয়েটিকে দেখতে পায়। এই ভর দুপুরে কাদায় মোড়ানো মেয়েটির ভাবলেশহীন মুখ আর রক্তজবার মত টকটকে লাল চোখের দিকে তাকিয়ে ওর বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। কোন বাড়ির মেয়ে? এই শীতের মধ্যেও কেমন উলঙ্গ হয়ে শুধু চোখদুটি বাদে সারা গায়ে কাদা মেখে দাঁড়িয়ে আছে! বজলু হাত ইশারায় মেয়েটিকে কাছে ডাকে। কত আর বয়স হবে,এই বছর পাঁচেকের মতই হবে হয়তো। কিন্তু মেয়েটির মধ্যে নড়াচড়ার বিন্দুমাত্র ও আভাস পাওয়া যায়না। গাছের গুঁড়ির মত নিশ্চল দাঁড়িয়ে একইভাবে চেয়ে আছে বজলুর চোখের দিকে। কেমন সাপের মত সম্মোহিতের দৃষ্টি। মধ্যদুপুরের এই শুনশান খাল পাড়ে বজলুর একটু ভয় ভয় ই লাগে। ও দ্রুত পা চালিয়ে রেল লাইনটা পার হয়ে নেমে যায় সদ্য ফসল তোলা জনশূন্য ধু-ধু মাঠটাতে। তারপর ঝোপঝাড় আর আগাছায় ভরা জংগলটা পেরিয়ে সোজা এসে বাড়িতে ঢোকে। উঠানের উপর খেলায়রত বজলুর দুই শিশু কন্যা দুলিয়া আর ময়না পিতাকে দেখে দৌড়ে আসে। বড় মেয়েটি বাপের হাতের বালতিতে উঁকি দিয়ে দেখেই বলে, “বড় মাছ পাও নাই, আব্বা? ”
“নারে মা,মাছ গুলান সব চালাক অইয়া গ্যাছে,পানির তলে গিয়া পলাইয়া থাকে,বড়শির আদার খাইতেও আহে না।”
“তাইলে তুমি জাল লইয়া গ্যালা না ক্যান?”
এরইমধ্যে শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বজলুর বৌ শেফালি ঘরের লাগোয়া রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মেয়ের কথার উত্তর ও ই দেয়। “ছেঁড়া জাল দিয়া কি মাছ উঠে?”


গোসল শেষে উঠানের দড়িতে ভেজা লুঙ্গিটা মেলে কেবল ঘরে গিয়ে চৌকির উপর বসে সরিষার তেলের ছোট্ট শিশিটা হাতে নিয়েছে এরমধ্যেই শেফালি ডাক দেয় “খাইতে আহেন,ভাত বাড়ছি”।
শীতল পাটিতে দুই মেয়েকে দুই পাশে বসিয়ে খেতে বসে বজলু। পোষা বিড়ালটাও নিজের জন্য বরাদ্দ টিনের থালাটার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে ঘন ঘন তাকায়। বজলু এক মুঠো ভাত থালাটাতে ছড়িয়ে দেয়। মুলাশাক ভাজি দিয়ে নিজের থালার ভাত মাখতে মাখতেই চোখের কোনে ছোট্ট একজোড়া কাদা মাখা পা দেখতে পায়। ও চমকে মুখ তুলে দেখে চৌকাঠের পাশে সেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। “কান্ডডা দ্যাখছো,এক্কেবারে পিছে পিছে চইল্যা আইছে” ও ভাবে। বৌকে বলে, “মাইয়াডা কেডা? লাজ শরম নাই,ল্যাংডা অইয়া ঘুইরা বেড়াইতাছে।” শেফালি অবাক হয়ে বলে, “কার কতা কন আফনে?”
“তোমার পিছে চাইয়া দ্যাহো।” শেফালি প্রচন্ড কৌতুহলে মুখ ঘুরিয়ে নিজের পেছন পাশটা দেখে বলে, “কই,কাউরেই তো দেহি না।” মায়ের দেখাদেখি মেয়ে দুটিও বলে, “কারে দ্যাখছো তুমি আব্বা? কেউ তো নাই।”
বজলুর প্রচন্ড রাগ হয়ে যায়। মা আর মেয়েরা মিলে কি মশকরা শুরু করেছে তার সাথে! জলজ্যান্ত মেয়েটা এখনো মূর্তির মত নির্বিকার মুখে দাঁড়িয়ে আছে অথচ এরা কেউ দেখতেই পাচ্ছেনা তা কি করে হয়! ও উঠে গিয়ে মেয়েটিকে দেখিয়ে বলে, “এই যে দ্যাহো।” শেফালি এবার ভয় পায়। “কারে দেহাইতেছেন আমি কিন্তুক কিচ্ছু বুঝতাছি না,আমিতো কাউরেই দেহিনা।”
“মশকারা করতাছো আমার লগে?”
“খোদার কসম কইতাছি ঐহানে কেউ নাই। আফনে ভাত খাইতে বহেন।” শেফালির বুকের মধ্যে ধড়াস করে ওঠে। কি দেখলো মানুষটা!
বজলুর মনের মধ্যে এবার একটা চাপা ভয়ের শিহরণ বয়ে যায়। ও এবার শক্ত হাতে মেয়েটিকে ধরে বের করে দিতে চায় কিন্তু কোথায় কি! হাতে তো মেয়েটির শরীরের স্পর্শটুকুও পাওয়া যায়না। ওর হৃদপিন্ডের উপর যেন শত শত হাতুড়ির বাড়ি পরে। চোখ উল্টিয়ে ওখানেই ও অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। মেয়ে দুটি আব্বা বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আসে।


আজ হাটের দিন। কিছু শাক সবজি হাটে নিয়ে বিক্রির কথা ছিলো বজলুর কিন্তু জ্ঞান ফিরে এলেও শরীরটা ওর আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। তবু ও ওঠার চেষ্টা করে কিন্তু মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠায় আবার শুয়ে পড়তে বাধ্য হয়। শেফালি অবশ্য খুব করিৎকর্মা মেয়ে। এতক্ষনে হয়তো দেবরকে দিয়ে ক্ষেতের শাকসবজি আনিয়ে হাটে পাঠিয়ে দিয়েছে। বড় ভালো মেয়ে শেফালি! বজলু ভাবে।
পাশের ঘর থেকে বজলুর মা এসে ছেলের মাথায় হাত রেখে বলেন, “তোরে কত দিন কইছি ভর দুফুরে একলা একলা বন বাদাড়ে ঘুইরা বেড়াইবি না,ঐ সময় খারাপ বাতাস চলাফিরা করে। তুই তো আমার কতা হুনোইস ই না।” ও কিছু না বলে মায়ের মমতাভরা শীর্ণ হাতখানির উপর নিজের হাতটা রাখে। সেই বাচ্চা মেয়েটি আবার এসে শূণ্যে ভর করে দাড়িয়েছে। দুই পা বেয়ে অবিরাম টপটপ করে তাজা লাল রক্ত ঝরছে কিন্তু সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই মেয়েটির। সরাসরি ওর চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে। সেই সাপের মতই ঠান্ডা দৃষ্টি। ও বৃদ্ধা মাকে জড়িয়ে ধরে ভীত সন্ত্রস্ত শিশুর মত মায়ের কোলে মুখ লুকোয়।


বজলু যেখানেই যায় ছায়ার মত সংগে যায় উলঙ্গ মেয়েটি। বড় হুযুরের কাছ থেকে পানি পড়া আনিয়েও খেয়ে দেখেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তাবিজ কবজে ওর পেটানো শরীরটা প্রায় ভরেই গেছে তবু ফলাফল শূণ্যের ঘরেই বন্দি। গত সপ্তাহখানেক ধরেই নির্ঘুম রাত কাটে ওর। চোখ বুজলেও বন্ধ চোখের পাতায় এসে দাঁড়ায় মেয়েটি। কি বিভৎস চেহারা শিশুটির! আর সেই সংগে তীব্র ঝাঁঝালো দুর্গন্ধ। বমির ভাব ঠেকাতে ঠেকাতে ও ভীষণ আতংকে চিৎকার করে চোখ মেলে তাকায়। মেয়েটির তাতে এতটুকু স্থানচ্যুতি ঘটেনা।

দুলিয়া আর ময়না পিতার ভয়ংকর মেজাজের ভয়ে খুব একটা কাছে আসেনা। দূরে দূরে থেকে সব কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। গ্রামের মানুষ ইতিমধ্যেই কানাকানি শুরু করে দিয়েছে ওকে নিয়ে। জিনের আছরে বদ্ধ পাগল হয়ে গেছে বজলু।
ঘুম নেই,খাওয়া নেই এমনকি গোসল করার সাহস ও হয়না ওর। পুকুরঘাটে গেলেও আরেক বিপদ। মেয়েটি এসে পানির উপর দাঁড়ায়,সাথে করে আনে দমবন্ধ করা মাংসপঁচা দুর্গন্ধ। বজলু পাগলের মত পুকুরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছোটাছুটি করে কিন্তু অতিপ্রাকৃত সত্তাটি ঠিক একই ভঙ্গিতে চেয়ে থাকে ওর দিকে। কথা নেই,বার্তা নেই,শুধুই চেয়ে থাকা।
আজকাল বাড়ির বাইরেও বের হয়না ও। বের হয়ে যাবেই বা কোথায়! বজলুর সমস্ত দৃষ্টিপথটাই ঘিরে থাকে মেয়েটা। ছায়াসংগীর ভয়ে মাঝেমাঝে খাটের তলায় ও গিয়ে লুকায় তবু অবস্থার একচুল নড়চড় হয়না। কখনো কখনো গায়ের জ্বালা মেটাতে বিকট স্বরে চেঁচিয়ে বাড়ির সকলের মনে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। মাঝেমাঝে হাতের কাছে যা থাকে তাই ছুড়ে মারে মেয়েটির দিকে। বাতাসের সাথে মিলিত হয়ে ভারী বস্তুগুলো নিচে আছড়ে পড়ে কখনোবা ঠক করে ওঠে,কখনোবা ভেংগে যায় ঠিকই কিন্তু মেয়েটির বাতাসের মত শরীরে কম্পনের অনুভূতিটুকুও জাগায় না,এতটুকু চোখের পাতাও কাঁপায় না।

শুক্রবারের এক সকালে শেফালির অনুরোধে গ্রামের মসজিদের তরুন ইমাম সাহেব আসেন বজলুর কাছে। বজলু ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। ওর টকটকে লাল চোখের প্রতিটা শিরা উপশিরাই ইমাম সাহেবের চোখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অভয় দেয়ার ভঙ্গিতে তিনি ওর হাতে হাত রাখেন। ও নিষ্পাপ শিশুর মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। “হুজুর,আমারে বাচাঁন। আমি….।” কান্নার স্রোতে ওর বাকি কথা গুলো ভেসে যায়।
ইমাম সাহেব আগ্রহভরে ওর সমস্যার কথা শোনেন। তারপর শান্ত ভঙ্গিতে বলেন, “আল্লাহর কাছে প্রান খুলে তওবা করেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে অনেক বড় গোনাহগারকেও তিনি ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ ছাড়া কেউ কাউকে বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে না। ”
“হুযুর,আফনে আমার মাথায় হাত রাইখ্যা একটু দোয়া কইরা দ্যান। আল্লায় যেন আমারে মাপ করে।” তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বজলু মৃগী রোগীর মত ঝাঁকি খেতে খেতে বলতে থাকে “ও আল্লা,আল্লাগো,আমারে মাপ কইরা দ্যাও আল্লা,মাবুদ গো….”
ইমাম সাহেব হতভম্বের মত বসে থাকেন।


সময়ের সাথে সাথে মেয়েটি আরো বেশি কাছে এসে পড়েছে বজলুর। আগে শেফালি যখন ওকে ভাত মুখে তুলে খাওয়াতো তখন মেয়েটি শেফালির পাশে দড়িয়েই পলকহীন চোখে বিড়ালের মত জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে থাকতো কিন্তু এখন ধবধবে সাদা ভাতের উপর নির্দ্বিধায় ঐ পঁচা গলা দু'পা তুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে একই ভাবে চেয়ে থাকে। বজলু মুহূর্তকাল সময় নষ্ট না করে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ভাতের থালাটা ছুড়ে মারে। আর খাওয়া হয়না ওর।

প্রায় একমাসের মত কেটে যায়। হাড্ডিসার শরীরে কোটরাগত চোখ দিয়ে বজলু এখন শুধু চেয়েই থাকে। কারো কথার উত্তর ও বিশেষ দেয়না। মনে চাইলে হঠাৎ হঠাৎ নিজের সাথে কথা বলে,কখনওবা মেয়েটির সাথেও কথা বলে, “মা মাগো, ক্যান আমারে শাস্তি দিতাছো? ” কিন্তু কাদায় গড়া মূর্তির মত মেয়েটির ঠোটের কোনায় এক চিলতে অশরীরী ক্রুর হাসি চোখের নিমিষে ফুটে উঠেই কাদার পুরু স্তরের মাঝে হারিয়ে যায়। সেদিকে তাকিয়ে আরো ক্ষেপে যায় ও। নিষ্ফল আষ্ফালন করতে করতে করতে সর্বশক্তিতে নিজের হাত পা কামড়ানো শুরু করে।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে অনেকক্ষণ। শেফালি ঘুমে ঢুলুঢুলু দুই মেয়ে দুলিয়া আর ময়নাকে কেবল খেতে বসিয়েছে এমনি সময় বজলু বহুদিন পর ওর ঘর থেকে বেরিয়ে মেয়ে দু'টির পাশে এসে দাঁড়ায়। দুলিয়া আর ময়নার ঘুম মুহূর্তেই ছুটে যায়। ওরা পিতার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকায়। সন্ধ্যা থেকেই বজলু ছায়াসংগি মেয়েটিকে আর দেখতে পাচ্ছেনা,গা গুলিয়ে ওঠা গন্ধটাও আর নেই। ময়নার একপাশে বসতে বসতে বলে, “বেশি কইরা ভাত দ্যাও বৌ,কতদিন পেট ভইরা খাই নাই।” আজ এতদিন পরে স্বামীকে সুস্থ ভাবে কথা বলতে দেখে শেফালির খুশিতে চোখে পানি এসে যায়। ও কাঁপা কাঁপা হাতে নতুন আলু দিয়ে রাধা শিং মাছের ঝোল বেশি করে স্বামীর পাতে তুলে দেয়। ভাত মাখাতে মাখাতেই বজলুর চারপাশটা হঠাৎ শিউলি ফুলের তাজা ঘ্রানে ভরে যায়। ও জোরে শ্বাস টানে। আহ! কি আশ্চর্য রকমের মায়াময় সুবাস! কতদিন পর আজ প্রানভরে নিশ্বাস নিতে পারছে! কিন্তু আচমকা তীব্র ভয়ে সারা শরীর অবশ হয়ে যায় ওর। বিদ্যুৎ গতিতে একটি দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সব কিছু দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যায়।
সাত বছর আগে এমন ই এক মন কেমন করা ফুলের গন্ধে চারদিক একেবারে টইটম্বুর ছিলো। হেমন্তের শিশির ভেজা পথটা পেরিয়ে, ডাবের পানির মত ঘোলাটে এক সকালে পাশের বাড়ির এক ছোট্ট মেয়ে ছোট ছোট পা ফেলে এই বাড়ির উঠানে এসেছিলো রাতে ঝরে পড়া শিউলিফুল কুড়াতে। শেফালি মেয়ে দুটিকে নিয়ে বাপের বাড়ি থাকার সুবাদে ঘর খালিই ছিলো। সেই সুজোগে বজলু আরো ফুল দেয়ার লোভ দেখিয়ে ঘরে ডেকে নেয় মেয়েটিকে। সশব্দে লাগানো দরজার কবাটের শব্দে গোটা বাড়িটাই কেঁপে উঠেছিল সেদিন। ঘন্টাখানেক পরে রক্তাক্ত মৃত মেয়েটিকে পাশের ডোবার কাদার মধ্যে নিয়ে পুঁতে রাখে ও।
দুদিন পরে ভেসে ওঠা মৃত শিশুটির শোকাতুর পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে সবার আগে বজলুই এগিয়ে যায়।

হ্যা মেয়েটি আবার এসে ওর মাথার ভেতর দাঁড়িয়েছে। তবে এবারে ভৌতিক রূপে নয়। খালি পায়ের লাল ফ্রক পড়া মেয়েটির ছোট্ট কচি দুহাত ভরা তাজা শিউলি ফুলে।
বজলুর ইচ্ছে করে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার দিতে, “মা…মাগো আমারে মাপ কইর‍্যা দ্যাও……ও দুলি..ও ময়না আমারে বাঁচা মা…।” কিন্তু একটা অদৃশ্য হাতের হিংস্র থাবা ওর সমস্ত শরীর চেপে ধরে। অসহ্য যন্ত্রনার মাঝে সাঁতার কাটতে কাটতে ভাতভর্তি থালার উপর গড়িয়ে পড়ে শরীর বেঁকেচুরে গোঙাতে থাকে ও। মৃত্যুর আগে ওর চোখদুটো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসে,দাঁতে দাঁত লেগে কেটে ঝুলে যায় রক্তাক্ত জিহ্বা, হা করা মুখ দিয়ে অবিরাম ফেনা ভাঙতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে ওর কুৎসিত মুখের চারপাশ ভরে যায় মাছিতে।
অতি প্রিয়জনেরাও বজলুর বিভৎস লাশ দেখে আতংকে শিউরে ওঠে।







আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জসিম উদ্দিন আহমেদ খারাপের পরিনাম খারাপ হয়ে থাকে। a siner never goes unpunished. দারুণ লাগল।
ঠিক বলেছেন। পাপ বাপকেও ছাড়েনা। ধন্যবাদ ভাই
ভালো লাগেনি ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত .........ঠিক কথা - সীমাহীন ভয়ের থাবা অপরাধীকে সমস্ত দিক থেকে গ্রাস করে .... । ভাল লাগল । ভোট বন্ধ রয়েছে , অনেক শুভকামনা রইল ।
ধন্যবাদ দাদা।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গোপনে সংঘটিত নিজের ভয়াবহ কৃতকর্ম যদি একদিন হঠাৎ করেই চোখের সামনে ভৌতিক রূপে ঝুলে থাকে,দৈনন্দিন জীবনের সাথে যদি ছায়ার মত লেপ্টে যায় তবে যে সীমাহীন ভয়ের থাবা অপরাধীর সমস্ত অস্তিত্বকে গ্রাস করে ফেলে সেটা নিয়েই আজকের এই ভৌতিক গল্প।

০৩ আগষ্ট - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী