গোসাই পাড়ার নকুল বাবুর বাড়ির বিড়াল মহাশয়ের ভীষণ মন খারাপ। মন খারাপের কারন অনুসন্ধান করতে গল্পের শুরুতেই সময় নষ্ট করব না। অদুরে আমরা বিড়াল মহাশয়ের নিজ জবানে তার দুঃখের কথা শুনব।
ভাদ্র মাসের দুপুরবেলা। সূর্যদেবতার বিশ্রাম নেই। এরকমই এক সময়ে বিড়াল মহাশয় সামনের দুই পা সম্মুখে সমান্তরালে এলিয়ে দিয়ে তার মাঝখানে মুখ লুকিয়ে নাসিকার নিম্নভাগের দুই প্রান্ত দিয়ে ধনুকের ন্যায় গোফের যে চুল দুটি দুই প্রান্ত দিয়ে চলে গেছে তাকেই পর্যবেক্ষন করতে করতে ঈশ্বরের কাছে কয়েক পৃষ্ঠা অভিযোগ লিখে ফেললেন। বস্তুত, নিজের জীবনের প্রতি বিড়াল মহাশয়ের তীব্র আক্ষেপ জন্ম নিয়েছে, তাই তিনি সকাল বিকাল ঈশ্বরকে অভিশাপ দেন। তিনি মনে করেন ইচ্ছা করলেই তো ঈশ্বর তার জীবন চকচকে করে দিতে পারেন। কিন্তু কেন ঈশ্বর বিড়াল মহাশয়ের আরজি শুনেন না তা তিনি বুঝতে পারেন না, হয়তো ঈশ্বর ভাল বুঝেন।
এবার আসি ঈশ্বরের কাছে। তিনি কিছুদিন ধরে বিড়াল মহাশাহেবের জন্য সত্যি বিচলিত, চিন্তিত। এই প্রেক্ষিতে তিনি স্বর্গের দুতকে তলব করলেন।
-- দেখো তো বাপু বিড়ালের কেন মন খারাপ, আমার কাছে তার কিসের এত অভিযোগ?
দুত আর বিলম্ব করার সময় পেলেন না। ঈশ্বরের হুকুম বলে কথা। দুত যখন বিড়াল মহাশয়ের কাছে হাজির হলো তখন তিনি তার কাল্পনিক অভিযোগ দিয়ে পৃষ্ঠার এ-পিঠ ও-পিঠ লাঙ্গল চাষ দিতে ব্যস্ত।
-- কী হে, বিড়াল ভাইয়া, কীসের এত মন খারাপ তোমার? তোমার জন্য ঈশ্বর আমাকে এই ভরদুপুরে মর্ত্যধামে পাঠালেন। তোমার অভিযোগ আমাকে বল, আমি লিপিবদ্ধ করে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে যাব। দুতের কথা শুনে বিড়াল মহাশয় বললেন,-- মিয়াও।
অভিযোগপত্র লেখা শেষ হলে দুত তা নিয়ে স্বর্গলোকে ঈশ্বরের কাছে পেশ করলেন। ঈশ্বর দেখলেন দুত যেটাকে অভিযোগপত্র বলছেন সেখানে বিড়ালের অভিযোগ হলঃ
মিয়াও...... মিয়াও... মিয়াও...।
ঈশ্বর বুঝলেন একটু বোকামি হয়ে গেছে। তিনি ঈশ্বর তাই তিনি বিড়ালের মনের কথা বুঝতে পারেন কিন্তু দুত বেচারা তো গো-বেচারা সে কী করে বুঝবে বিড়ালের মিয়াও কথার মর্মার্থ। আর কোন উপায় না দেখে তিনি স্থির করলেন তিনি নিজেই মর্ত্যলোকে যাবেন।
সেদিন সন্ধ্যা বেলা পৃথিবীর আলো নিভিয়ে ঈশ্বর মর্ত্যলোকের পথে যাত্রা করলেন। মর্ত্যধামে পৌছে তিনি বিড়াল মহাশয়কে গৃহস্ত বাড়ির ভাঙা প্রাচীরের ওপরে পেলেন । সেখানেই তিনি আলোচনা শুরু করলেন।
-- কী ব্যপার বল দিকি বাপু, তুমি আমার ঐশ্বরিক কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছো কেন? বল তোমার কীসের এত অভিযোগ আমার কাছে? বিড়াল মহাশয় বলল,-- মিয়াও। অতঃপর ঈশ্বর বিড়াল মহাশয়ের মিয়াও ভাষার অনুবাদ করতে শুরু করলেন; অনুবাদ করে তিনি যা পেলেন তা হলঃ
-- পরমেশ্বর, আমার ভগবান আপনি। আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে বিড়াল রুপে সৃষ্টি করেছেন মানুষের তৈরি সমাজে। পরমেশ্বর, মানুষ বড় নির্দয়, তারা খাওয়ার সময় মাংস, হাড় কোনও বাছ বিচার করে না। আপনার দেওয়া পাকস্থলি দিয়ে তারা সব কিছু হজম করতে পারে। পরমেশ্বর আপনি আমাদের একটি স্বতন্ত্র সামাজিক মর্যাদা দিয়েছেন কিন্তু তারা এত নির্দয় যে সেটা তারা বেমালুম ভুলে গেছে।
-- তারা তোমার প্রতি নির্দয় হয় না কি?
-- হ্যা পরমেশ্বর, আজ সকালের কথায় ধরুন না কেন। গৃহস্তের বড় ছেলের ৬ মাসের বাচ্চাটির খাবার দুধ নষ্ট হয়েছে, আপনি সাক্ষি তাতে নিশ্চয় আমার কোনো হাত ছিল না। কিন্তু গিন্নি আমাকে কাছে পেয়ে সব ঝাল ঝাড়লেন আমার ওপর।
-- আচ্ছা বুঝলাম, তা তুমি কী সমাধান প্রত্যাশা করছো?
-- পরমেশ্বর আপনি আমাকে বিড়ালের জীবন থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে মানুষ বানিয়ে দিন। তারপর মানুষদের আমি আপনার প্রকৃত শিক্ষা দেব।
-- না না, তুমি পুর্ব জন্মে ব্যাঘ্র ছিলে। তোমার নিজের কৃত কর্মের জন্য বিড়াল বানানো হয়েছে। আবার তুমি কী অপকর্ম করবে তা তো আমি বুঝছি না।
-- তবে পরমেশ্বর আপনি আমাকে এই পৃথিবী থেকে মুক্তি দিন। আমাকে স্বর্গে নিয়ে চলুন।
-- সেটাও সম্ভব নয়। মর্ত্যলোকের মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি তোমার। তবে, যেহেতু আমি মর্ত্যলোকে এসেছি তোমার অভিযোগ শুনতে তোমাকে আমি নিরাশ করতে পারি না। তোমাকে আমি পরের জন্মে মানুষ রূপেই সৃষ্টি করব।
এই ঘটনার এক সপ্তাহ পরের কথা। সেদিন নকুল বাবুর বড় মেয়ের বিবাহের মহা আয়জন চলছিল। বড় মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ভোজন আয়োজনের কম করেননি নকুল বাবু। বিড়াল মহাশয়েরও সেদিন দিন খারাপ যায়নি। রাত সেই শোধ নিল সুদে-আসলে । বদ হজমের কারণে বিড়াল মহাশয়ের মৃত্যু হল সেদিন রাতে।
আজ নকুল বাবুর বড় মেয়ের প্রথম সন্তান মুক্তির ৬ষ্ঠ জন্মবার্ষিকী। গত ৬ বছরে মুক্তি ঘুণাক্ষরেও অনুধাবন করতে পারেনি যে, সে পুর্ব জন্মে বিড়াল ছিল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
অলিক যদি কপাল হয় আর কপাল যদি ভাগ্য হয় তবে আমি বলব ভাগ্য মাঝে মাঝে সৃষ্টির সাথে হাসি তামাসা করেন বৈ কি। সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
০৩ জুন - ২০১৮
গল্প/কবিতা:
৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।