এই পতাকা আমার, আমার আত্মার

আমার দেশ আমার অহংকার (ডিসেম্বর ২০২০)

মুহম্মদ মাসুদ
  • ১৯৬
একটি শোক সংবাদ! একটি শোক সংবাদ! উত্তর পাড়ার…।

শেষরাত্রি। ফজরের আজানের খুব কাছাকাছি। মিনিট কয়েক দূরত্ব। হয়তো তার-ও একটু কাছাকাছি। সত্যি! এই সময়টায় মৃত্যুর সংবাদ কলিজা অবধি গেঁথে যায়। আফসোস হয় কেউ একজন ফজরের নামাজ আদায় করতে পারলো না।

ঘুমের ঘোরে তখন হুঁশ বেহুঁশে অজ্ঞান অবচেতন হয়ে ঘুমিয়ে আছি। নানামুখী স্বপ্নের অংশগ্রহনে সংক্ষিপ্ত পদার্পণ এবং হেলে-দুলে জার্সি পরে মাঠে খেললেও আজানের মিষ্টি শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। মাকে ডাক দিয়ে বললাম – মা, উঠেছ কি?

– হ, উঠছি।

– আব্বায়?

– হ, তোর বাপ জানেও উঠছে।

– কিছু শুনেছ?

– হ, সেইজন্য তোর বাপ জানে তাড়াতাড়ি গেলো।

মসজিদের কাছাকাছি যেতেই কান্নার শব্দ কানে এসে ভিড় করলো। পরিচিত কন্ঠস্বর। এ কন্ঠস্বরের রিংটোনে পরিত্যক্ত কলিজার সবটুকুই শুকিয়ে গেলো নিমেষেই। আত্মাটা ছাঁইছুঁই ছাঁইছুঁই করতে লাগলো।

মমিন চাচা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। হাউমাউ করে কান্না। পিতৃশোকের কান্না। এ কান্না জীবন ঝড়ের কান্না। যে কান্নার অশ্রুবর্ষণে কোন ছলচাতুরী নেই। অহংকার নেই। আছে নির্ভেজাল ভালবাসা।

ইমাম সাহেব মমিন চাচাকে অনেক বোঝালেন। বললেন, সবাইকেই যেতে হবে। আমরা আলাদা আলাদা এসেছি আলাদা ভাবেই খোদার কাছে চলে যাবো।

পাখি পোষার শখ ছিলো দাদুর। খুবই শখ ছিলো। বিশেষ করে ময়না টিয়াপাখি। কেননা, পাখিদুটো মিষ্টি করে কথা বলতে পারে। যা শেখানো যায় তাই বলে। বিশেষ করে ময়না পাখি। সে রোজরোজ পাঁচ ওয়াক্ত বলে উঠতো – আজান দিয়েছে, আজান দিয়েছে।

পাখির খাঁচায় কোন পাখি নেই। সেই আদুরে ময়না টিয়াপাখিও নেই। খাঁচাগুলো খাঁচার জায়গায় এখনো স্বাক্ষরিত দেখে মমিন চাচাকে জিজ্ঞেস করলাম – চাচা পাখিগুলো কোথায়?

মমিন চাচা বললো, ‘ আব্বা বলেছিল, তিনি মরে গেলে যেন পাখিগুলো ছেড়ে দেই। যদি রাতে মরে যায় তবে যেন ফজরের নামাজের আগে ছেড়ে দেই।’

এরপরে কি পাখিগুলো চোখে পড়েছে?

না। আর চোখে পড়েনি। তবে টিনের চালে খাবার দিয়ে রেখেছি।

প্রাইমারী স্কুল মাঠে স্বাধীনতার গান বাজছে। আজ স্বাধীনতা দিবস। ২৬ শে মার্চ মনে করতেই কলিজার মধ্যে একটা অচেনা ধকল শরীরটাকে শিহরিত করলো। স্মরণ হলো দাদু যদি বেঁচে থাকতো এতোক্ষণে নিশ্চয়ই স্কুল মাঠে পৌঁছে যেতো।

পতাকা পতপত করে উড়ছে। লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা উড়ছে। কিন্তু কদমগাছ তলায় মুঞ্জিল দাদু বসে নেই। এইতো প্রতিদিনই, যখন লাল সবুজের পতাকা পতপত করে উড়তো। সেই শব্দটি দাদু কান পেতে শুনতো। দাদুকে জিজ্ঞেস করতাম – এ শব্দে কি পাও? দাদু বলতো মুক্তিযুদ্ধের ডাক শুনতে পাই। মুক্তিযোদ্ধার পায়ের শব্দ পাই। বিজয়ের ধ্বনি শুনতে পাই। গোলাবারুদের আওয়াজ শুনতে পাই।

কদমগাছটি আজ কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কত-শত কাহিনী, কত-শত ঘটনার সূত্রপাতের স্বাক্ষী সে। দাদুর মুখে শুনেছি এই কদমগাছ তলায় নসু মিয়াকেও গুলি করে হত্যা করেছে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। যে ছিলো সত্যিকারের সাহসী যোদ্ধা, বীরপুরুষ।

স্কুল মাঠে সবাই তখন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইছে। মনপ্রাণ উজাড় করে গাইছে – “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।” হঠাৎই একটি ময়নাপাখি এসে পতাকার বাঁশের খুঁটিতে বসে পাখা নাড়াতে শুরু করলো। আর হঠাৎ করে জাতীয় সংগীত গাওয়া বন্ধ হয়ে যেতেই ময়নাপাখি গাইতে শুরু করলো, ‘ চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস…।’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Dipok Kumar Bhadra খুব সুন্দর।
শফিক নহোর অনেক সুন্দর গল্প । ভীষণ ভাল লেগেছে ।
ভালো লাগেনি ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০
ভালোবাসা রইলো!
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০
ফয়জুল মহী অমিয় শব্দের সমাহারে সুশোভিত প্রকাশ। হৃদয় ছোঁয়া লেখনী।❤️
ধন্যবাদ প্রিয়!
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

আমার দেশ আমার অহংকার ; আমার লাল সবুজের পতাকা, আমার আত্মা।

৩০ মে - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ৪৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪