স্মৃতিচারণ

কাঠখোট্টা (মে ২০১৮)

আসিফ রহমান
  • ১২৯
'যে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজ কথা বলতে এসেছি ,কখনও ভাবিনি যে এই অবস্থায় আমাকে কথা বলতে হবে'... এই পর্যন্ত বলে কবি আদিত্য গজেন হল ঘরের সিলিংয়ের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। গজেনের ইচ্ছা চোখে পানি জমলে দুইএক ফোঁটা অশ্রুপাত করে পরবর্তী কথা শুরু করবেন। কিন্তু কোনভাবেই চোখে পানি জমছে না।শোকের কথাবার্তা বিনা অশ্রুপাতে জমে নাকি!হাল ছেড়ে দিয়ে কবি গজেন কিছুটা কাঁপা কাঁপা গলায় আবার শুরু করলেন- 'আমি জানি আজ এই হল ঘরে যারা বসে রয়েছেন তাদের সবারই অন্তর আজ বেদনায় পরিপূর্ণ। আমাদের প্রিয় কবি অর্ণব আতাহার অকালে চলে গেছেন আমাদের রেখে। আজকের স্মরণ সভায় আমরা কবি আতাহারের....'
এই পর্যন্ত বলে গজেন চুপ করে রইলেন । পান্জাবীর পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছার ভান করলেন।এরপর আবার হলঘরের সিলিংয়ের দিকে উদাস ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলেন। তার এই চোখ মোছার ঘটনা সামনে বসে থাকা দর্শকদের মন আর্দ্র করতে পেরেছে কি? কাউকে তো চোখ মুছতে দেখা যাচ্ছে না । গজেন বিরক্ত হলেন এবং কন্ঠস্বর আগের চেয়েও বাষ্পরুদ্ধ করে বললেন-' আতাহারের প্রথম কবিতার বই "আয়রে ঘুঘু" প্রকাশ পাওয়ার পর সে তার বইয়ের এক কপি আমাকে দিয়েছিল। তখন আমার তৃতীয় কবিতার বই 'ছাল ও ডাল' প্রকাশিত হয়। সেই বইয়ের একটি কবিতা তাকে আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলাম। তাঁর স্মরণে কবিতাটি এখন আবৃত্তি করছি-
"আর খাব না চা,আমায় নিয়ে যা
গা করছে কুটকুট ,কোথায় পাব বিস্কুট
ব্যাথা করছে দাঁত,কাঁপছে কেন খাট
.........."
কবি গজেন কাঁপা কাঁপা গলায় পঞ্চাশ লাইনের কবিতাটি আবৃত্তি করে চোখ মুছে আতাহারের স্মরণে আরেকটি কবিতা শুরু করলেন আবেগঘন কন্ঠে
" আর কোথায় তোমাকে পাব
মরিচ ভর্তা খাব
চাটনি খাব যখন
দাড়ি কামাব তখন ......"
এই কবিতাটা উনচল্লিশ লাইনের ।পঁচিশ লাইনের পরেই উপস্থাপক এসে কবি গজেনের কাছে চিরকুট দিয়ে গেলেন -' বস্ একটু সংক্ষেপ করেন।আরও অনেকেই আছে'
কবি গজেন আবৃত্তি থামিয়ে আতাহার সাহিত্য কর্ম বলতে বলতে নিজের প্রত্যেকটি বইয়ের নামও বলে ফেললেন ।এরপর নাক চুলকালেন। কান চুলকালেন এবং আর একবার ট্রাই করলেন চোখে পানি আনা যায় কিনা। এই পর্যায়ে উপস্থাপক এসে আবারও চিরকুট দিয়ে গেলেন ।লেখা - 'একটু তাড়াতাড়ি '
গজেন গম্ভীর ভঙ্গিতে চাদর বাম কাঁধ থেকে ডান কাঁধে নিলেন।বললেন -' আতাহার নেই।ভাবতেই পারছি না । হে কবি তুমি তোমার কবিতার মাধ্যমে বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে।'
গজেন এতক্ষণে খেয়াল করলেন আতাহারের কোন কবিতা পাঠ করা হয়নি। তাঁর কোন কবিতা পাঠ না করলে কেমন জানি দেখায় ।
'আতাহারের যে কবিতা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে তা থেকে কিছু অংশ আবৃত্তি করছি-
' টুগটুগ ঝুকঝুক টুগটুগ ঝুকঝুক
মুরগী করে কুক কুক কুক
বুকবুক ঝুকঝুক বুকবুক ঝুকঝুক
বুড়া কাশে খুক খুক খুক'
গজেনের চোখ দিয়ে এবার পানি গড়াতে লাগল। শালার একটা পোকা মনে হয় ঢুকে গেছে। উপস্থাপক এবার গজেনের কানে কানে এসে বলল-
'বস অনেকেই তো বাকি আছে এখনও ।আপনি একাই যদি এতক্ষণ.....'
উপস্থাপক কথা শেষ করতে পারল না তার আগেই গজেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল-
'টাকা কি কম দিছি নাকি! শখ মিটায়া যদি দুই একটা কবিতা না কই তাহলে টাকা দিয়া লাভ ......'
গজেনের খেয়াল হল হলরুমের সব দর্শক তার কথা শুনছে। শুনছে শুনুক। কবি আদিত্য গজেন আগের কবিতার রেশ ধরে টেনে টেনে বলতে লাগলেন-
' বুড়া কাশে খুক খুক খুক....
সমস্ত দর্শক ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কবি আদিত্য গজেনের আবৃত্তি শুনছেন ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মৌমিতা পুষ্প দূর হোক স্বার্থপরতা, রিক্ততা। গল্পটি বেশ ভাল লেগেছে। আপনার জন্য ভোট রইল।
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া গকতে স্বাগতম আপনাকে। ভালো লাগল গল্পটি। ভোট রইল।
মৌরি হক দোলা কবি আদিত্য গজেনের চরিত্রটি বেশ সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে.......খুব ভালো লাগল......শুভকামনা রইল.....

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

-একটি স্মৃতিচারণের মাধ্যমে মনের কাঠখোট্টা পরিবেশ ফুটে উঠেছে। মূলত একটি স্বার্থপরতার উদাহরণ আমি দেখাতে চেয়েছি যেখানে নিজের শো-অফের জন্য জনৈক কবির মৃত্যু পরবতী আলোচানা বেছে নেয়া হয়েছে। কাঠখোট্টা বিষয়টাকে হৃদয়ের রিক্ততার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। আমরা নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে আমাদের অন্তর যে কাঠখোট্টা হয়ে যায় তা আমি আমার এই গল্প 'স্মৃতিচারণ' এ তুলে ধরেছি। ধন্যবাদ।

২৪ এপ্রিল - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪