আজকের সকালটা চমৎকার। শীত বিদায় নেয়ার পথে। জানলা দিয়ে বাইরে দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। সবুজ আর লালের ছড়াছড়ি সবখানে। কৃষ্ণচূড়া গাছটা ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। বেশ ভালো রকমের এক কাপ কফি খেয়ে আজকের দিনটা শুরু করতে যাচ্ছি। অবশ্য আমার প্রতিদিনই প্রায় একরকম। মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ, অসুস্থ আর হতাশায় পর্যুদস্ত কিছু মানুষ নিয়ে আমার দিন শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। মাঝে ঘণ্টা খানেকের বিরতি নিই, দুপুরের খাবার খাই, রিপোর্ট দেখি, আর অন্যান্য টুকটাক কাজ করি। এ সময় চেষ্টা থাকে মস্তিষ্ককে একটু বিশ্রাম দেবার। প্রতিদিনকার নিয়ম মতো রোগী দেখা শুরু করলাম সকাল দশটা থেকে। একজনকে প্রায় বিশ মিনিটের মতো সময় দিই। কিন্তু তাদের যা সমস্যা, বিশ মিনিট পর্যাপ্ত নয়। ছয় নম্বর রোগীর পালা যখন আসলো তখন দুপুর দেড়টা। এটাই এখনকার মতো শেষ রোগী। বিরতি দিয়ে আবার দুপুর তিনটা থেকে দেখা শুরু করব। কম্পাউন্ডার ছেলেটা গলা উঁচিয়ে ডাকলো, 'রুবিনা আলী কে? ভেতরে যান।' নামটা শুনে বুকের মধ্যে কীসের যেন খোঁচা লাগলো। মুহূর্তের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিলাম। রুবিনা আলী শুধু একজনের নাম হবে এমন তো নয়। অন্তত কয়েকশ রুবিনা আলী থাকতে পারে পুরো দেশে। স্লাইড ডোর খুলে মধ্যবয়স্কা একজন মহিলা প্রবেশ করলেন। সাইকিয়াট্রিস হওয়ার কারণে প্রথমেই আমাকে রোগীকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। খুঁটিনাটি সবকিছুই। এরপর রোগীর সমস্যার কথা শুনে সেই সমস্যা এবং আমার চোখের দেখা পর্যবেক্ষণকে মনে মনে পর্যালোচনা করতে হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য রোগীর মতো এই রোগিনীকেও ভালোভাবে দেখতে শুরু করলাম। বয়স বত্রিশ, কিন্তু চেহারা আর ভঙ্গুর শরীর দেখে মনে হচ্ছে বয়স অনেক বেশি। হয়তো সংসারের জন্য অনেক খাটতে হয় তাকে। মুখ আর হাতের চামড়া কুঁচকে গেছে। কপালের সামনে চার পাঁচটা সাদা চুল আর কপালের ডানপাশে একটা মাঝারী তিল। তিলটা আমাকে আরও একবার বুকে খোঁচা দিল। আমি এবারও পাত্তা দিলাম না। সরাসরি রোগিনীর চোখে চোখ রেখে বললাম, 'আপনার সমস্যার কথা বিস্তারিতভাবে বলতে শুরু করুন। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। খুঁটিনাটি সবকিছুই বলবেন।'
ভদ্রমহিলা কিছুটা সময় নিয়ে শুরু করলেন, 'আমি, আমার স্বামী রাশেদ আর দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখের সংসার আমাদের। আমার স্বামীর নীল চোখের মণি খুব পছন্দ। আমার চোখের মণি নীল নয়। অন্য সাধারণ দশজন মানুষের মতোই কালো। এটা নিয়ে অবশ্য আমার বা ওর মন খারাপ হয়নি কখনো। আমি চাইতাম আমার স্বামীর বুক চওড়া হবে। সেই বুকে আমি গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকবো। ওর বুক চওড়া না। এটা নিয়েও আমাদের মন খারাপ হয়নি। আমরা মেনে নিয়েছি আমরা দুজন দুজনকে যেভাবে পেয়েছি সেভাবেই। ভালোবাসাও আছে আমাদের মধ্যে। বিয়ে দশ বছরে কখনো কোন বড় ঝামেলা হয়নি আমাদের। সব ঠিকঠাকভাবে চলছিল। মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই সমস্যার সুত্রপাত।' মহিলা থামলেন। আমি নোট করে যাচ্ছি।
.
এরমধ্যে তিনি শাড়ির আঁচল নিয়ে কপালের ঘাম মুছলেন। ঢেকে রাখা গ্লাস থেকে কয়েক চুমুক দিয়ে পানি খেলেন। তারপর আবার শুরু করলেন। আমাদের বিল্ডিং এর ঠিক সামনাসামনি আরেকটা বিল্ডিং। আমরা চারতলায় থাকি। ঐ বিল্ডিং এর চারতলার বারান্দা আর আমার বেডরুমের জানালা ঠিক মুখোমুখি। দুরত্ব মাত্র হাত তিনেক। সব স্পষ্ট দেখা যায়। ঐ বাসাটাতে নতুন ভাড়াটিয়া আসলো। কতো ভাড়াটিয়া আসে যায়, আমাদের কী তাতে! কিন্তু সমস্যা হলো ঐ বাসার বউটার চোখের মণিদুটো নীল। তিনহাত দূর থেকেও ওর নীলচে চোখদুটো চকমক করে। আমি অতো কিছু খেয়াল করি না। আমার সে সময় কোথায়! একদিন রাশেদ এসেই বলল, 'জানো পাশের বিল্ডিং এ চারতলার যে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে সেই ভদ্রলোকের স্ত্রীর চোখ নীল।' আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, 'তুমি জানলে কী করে?' ও সৌৎসাহে বলল, 'গেটে ঢোকার সময় দেখা হলো। কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে বলল। বেশ মিশুক দুজন। আমাদের একদিন সময় করে ওদের বাসায় যেতে বলেছে। আমিও বলেছি আমাদের বাসায় আসতে।' আমি চুপ করে ছিলাম। কাণে বিপদের অশনী সংকেত বাজছিল। সংসারের নানা কাজে ঘটনাটা ভুলে যেতে আমার সময় লাগেনি। কিন্তু কয়দিন পরই ছুটির দিন বিকেলে দুজনে আমাদের বাসায় এলো। সেদিন গল্প-গুজবে, আড্ডায় সন্ধ্যাটা ভালো কাটতে পারতো। কিন্তু আমি নীলিমাকে দেখে জ্বলে, পুড়ে মরছিলাম। ও হ্যাঁ, মেয়েটির নাম নীলিমা। সবাই স্বাভাবিকভাবে গল্প করছিল। কিন্তু আমি ছটফট করছিলাম। নীলিমার চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না, ওর সামনে থাকতে পারছিলাম না। কাজের বাহানায় সরে আসলেও বেশিক্ষণ ওদের আড়ালেও থাকতে পারছিলাম না। রাশেদ একেবারে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিল। সন্দেহ করার মতো কিছুই চোখে পড়েনি। কিন্তু তারপরও আমার মনে কেমন যেন অনুভব হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল রাশেদকে আমি হারিয়ে ফেলব এবং নীলিমার কারণই সেটা হবে। না, নীলিমার কারনে নয়। ওর ঐ নীল চোখ জোড়াই আমার রাশেদ আমার কাছ থেক কেড়ে নেবে। অথচ এমন মনে করার যৌক্তিক কোন কারণই ছিল না। সেদিনের মতো ওরা বিদায় নিয়েছিল। রাশেদ আমার অস্থিরতা বুঝতে পেরেছিল। সেদিন রাতে ও আমাকে আরও বেশি ভালোবাসায় ভাসিয়েছিল। আর এতেই আমি আরো বেশি সন্দেহ করতে শুরু করলাম। কারণে অকারণে ঐ বাসায় নজর রাখতাম। রাশেদের মোবাইল ওর অজান্তে চেক করে দেখতাম। সন্দেহজনক কিছুই পেতাম না। কিন্তু আমি যেন আশা করে বসেছিলাম ওকে রঙিন হাতে ধরব। একারণে প্রতিবার মনঃক্ষুণ্ণ হতাম। এভাবে দিনের পর দিন যেতে লাগলো। নীলিমার প্রতি আমার হিংসা বাড়ছে, রাশেদের প্রতি সন্দেহ বাড়ছে। নীলিমার ঐ নীল চোখদুটো প্রায়ই উপড়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়। আর ইচ্ছে করে রাশেদকে শাস্তি দিই। ওকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি। তারপর টুকরো টুকরো করে কেটে কোথাও ফেলে আসি। কিন্তু কেন করব এসব? রাশেদের কোন দোষ নেই। ও এখনও আগের মতো আছে। নীলিমাও ওর নিজের সংসার করে যাচ্ছে। সন্দেহ করার মতো কিছু নেই, কোন প্রমাণও নেই। এদিকে আমি দিনদিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
.
রুবিনা আলী তার কথা শেষ করলেন। বেচারীকে খুব অসহায় লাগছে। বুঝতে পারছি তিনি কীসের মধ্য দিয়ে প্রতিটা দিন কাটাচ্ছেন। আমি তাকে বললাম, 'আপনার কথা থেকেই বোঝা যাচ্ছে আপনার স্বামী ভালো মনের মানুষ। আপনি তাকে সব খুলে বলুন। আর বলুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসাটা যেন চেঞ্জ করার ব্যবস্থা করেন। এটাই সবচেয়ে ভালো হবে। নীলিমার আশেপাশে না থাকলে সমস্যাটা অনেকাংশে কমে আসবে। কিন্তু আপনার অসুখটা যেহেতু সন্দেহ করা, আর নীলিমার কাছ থেকে দূরে গেলেও সন্দেহ করার অবকাশ থেকেই যায় সেজন্য আমি আপনাকে কিছু ঔষুধ আর পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলো মেনে চললে আশা করছি আপনার সমস্যাটা ধীরে ধীরে চলে যাবে।'
রুবিনা আলী আমার চোখে চোখ রাখলেন। তার চোখদুটো নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছে। যেন মৃত মানুষের চোখ। আমার কথাগুলোর জবাবে তিনি বললেন, 'কোন লাভ নেই ডাক্তার আপা।'
আমি বললাম, 'আহা! হতাশ হওয়ার মতো কিছু হয়নি। বাসাটা পাল্টে ফেলুন, রাশেদের সাথে সবকিছু শেয়ার করুন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে।'
রুবিনা আলী এখনও আমার চোখের দিকে চেয়ে আছেন। আমিও কেন যে ওভাবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি জানি না। প্রায় সাথে সাথেই তার উত্তর পেলাম। থেমে থেমে বললেন, আজ সকাল সাতটায় আমি নীলিমার বাসায় গিয়েছি। যখন দুধওয়ালা এসেছিল দুধ দিতে। ওর স্বামী অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে গেছে জানতাম। আমিও সেই সুযোগে ওর বাসায় ঢুকে পড়ি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওর সাথে গল্প করতে করতে ওর চায়ে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে দিয়েছি। যখন ও ঘুমের কোলে ঢলে পড়লো তখন আমি কাটা চামচ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ওর নীল চোখ দুটো নষ্ট করে দিয়েছি।'
কথাগুলো শুনে আমি ঘামতে শুরু করলাম। কোনভাবে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম, 'আপনি তো কাজ করে ফেলেছেন। এখন আমার কাছে কেন এসেছেন?'
তিনি জবাব দিলেন, 'কনফেশন করতে।'
'নীলিমার কী অবস্থা এখন?' আমি জানতে চাইলাম। জবাবে ছোট্ট করে তিনি বললেন, 'হাসপাতালে।'
আমি কী বলব ঠিক বুঝতে পারছি না। ভদ্রমহিলা অঘটন ঘটিয়ে আমার কাছে কেন এসেছেন। এখন তো পুলিশের কাজ। নীলিমার স্বামী নিশ্চয়ই 'এটেম্পট টু মার্ডারের' মামলা করবে। আমি তাকে পরামর্শ দেয়ার ভঙ্গীতে বললাম, 'আপনি পুলিশের কাছে গিয়ে কনফেস করুন। আমার মনে হয় তখন সাজা কম হবে আপনার। ওরা তো মামলা অবশ্যই করবে।'
রুবিনা আলী বললেন, 'পুলিশের কাছে আমি না আপনি যাবেন।'
আমি অবাক হয়ে বললাম, 'আমি যাব? কেন?'
তিনি শীতল কণ্ঠে বললেন, 'কারণ এতক্ষণ আমি যা বললাম তা আপনার সাথেই ঘটেছে, সতেরো বছর আগে। আপনিই নীলিমার সুন্দর চোখদুটো নষ্ট করে দিয়েছেন। আপনার কারণেই সে চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে।'
আমার ধৈর্য্যের সব বাঁধ ভেঙে গেছে। চিৎকার করে বললাম, 'কী যা তা বলছেন আপনি? আপনি তো দেখছি পুরোপুরি মানসিক রোগী হয়ে গেছেন।'
তিনি উল্টো হেসে বললেন, 'আমি মানসিক রোগী নই। বরং আপনিই গত সতেরো বছর ধরে মানসিক রোগী। একইসাথে ডিমেনশিয়া ও ডোমেনিক সিজোফ্রেনিয়াতে ভুগছেন আপনি।'
আমি রেগে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। চিৎকার করে বলতে লাগলাম, 'হয়েছে। অনেক হয়েছে। আপনি একটা বদ্ধ উন্মাদ। এক্ষুণি বেরিয়ে যান এখান থেকে। বেরোন বলছি।
প্রতি উত্তরে তিনি অট্টহাসি হাসতে লাগলেন। আমি সে হাসি সহ্য করতে পারছি না। দুহাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ক্রমাগত একই কথাগুলো চেঁচিয়ে বলে যাচ্ছি। আমার চিৎকার শুনেই হয়তো আমার সহকারী সাহেদা আর মোরশেদ রুমে ঢুকে পড়লো।
দুজনে একসাথে বলে উঠলো, 'ম্যাডাম কী হয়েছে আপনার?'
আমি ঐ অবস্থাতেই বললাম, 'এই পাগলীটাকে এক্ষুণি বের করো এখান থেকে।'
সাথে সাথেই ওদের বিস্ময়ভরা কণ্ঠে শুনতে পেলাম, 'কাকে বের করব ম্যাডাম? এখানে তো কেউ নেই।'
আমি ওদের চেয়েও বেশি অবাক হয়ে গেলাম। চোখ খুলে দেখলাম আসলেই রুমে ওরা দুজন আর আমি ছাড়া কেউই নেই। রোগীর জন্য নির্দিষ্ট আসনটা সম্পূর্ণ খালি। ধাতস্থ হতে সময় লাগলো আমার। নিজেকেই বিড়বিড় করে প্রশ্ন করলাম, 'কী হচ্ছিলো এতক্ষণ আমার সাথে।!'
সাহেদা আমাকে ধরে ধরে আমার চেয়ারটাতে বসিয়ে দিল। মোরশেদ পানি এগিয়ে দিল। ঘড়িতে দেখলাম দুপুর তিনটা বাজে। আমার বিশ্রাম নেবার সময়টা চলে গেছে। মোরশেদকে জিজ্ঞেস করলাম, 'আজ কয়টা রোগী দেখেছি আমি?'
সে জবাব দিল, 'ম্যাডাম পাঁচটা দেখেছেন।'
'কয়টা পর্যন্ত?'
'দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ম্যাডাম।'
তারমানে দেড়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত আমি এই বিশ্রি কল্পনার মধ্যে ছিলাম! ক্লান্ত স্বরে দুজনকে বললাম, 'আজকে আর রোগী দেখতে পারবো না। অপেক্ষমান রোগীদেরকে বলো আমি অসুস্থ। আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।'
মোরশেদ মাথা নিচু করে বলল, 'ম্যাডাম গতকালই আপনি এটা বলেছিলেন। তাই আজ আমরা বিকেলে কোন রোগীর সিরিয়াল নিইনি।'
আমি শুধু বললাম, 'ওহ!' হাতের ইশারায় চলে যেতে বললাম ওদেরকে। ওরা যেতেই আমি আবারো একা হয়ে গেলাম। তারপর ধীরপায়ে উঠে ওয়াশরুমে গেলাম। আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম নিজেকে। কপালের ডানপাশে তিলটা! আমি, আমিই ডাঃ রুবিনা আলী। বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সাইকো থেরাপিস্ট, এমবিবিএস, এফসিপিএস (লন্ডন)। অথচ গত সতেরো বছর ধরে আমি নিজেই ডিমেনশিয়া ও ডোমেনিক সিজোনেফ্রিয়াতে ভুগছি। নির্দিষ্ট একটা দিনে আমার এই রোগটা দেখা যায়। নীলিমার চোখ নষ্ট করে দেয়ার দিন ছিল সেটা। প্রতিবছর এই দিনে নীলিমাকে ওর নীল চোখসহ দেখতে পাই, কখনো আমার মতোই কেউ এসে আমার সামনে আমার কৃত অপরাধের বর্ণনা দিয়ে যায়। শুধু এই একটা দিন, কয়েকটা ঘণ্টা। তারপর আমি সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ, ডাঃ রুবিনা আলী!
নীলিমা বা ওর স্বামী কেউই আমার বিরুদ্ধে মামলা করেনি। সব রাশেদের কৃতিত্ব। আমাকে যে ও ভীষণ ভালোবাসে! আমি জানিনা ওরা এখন কোথায়। শুধু জানি নীলিমা চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঐ ঘটনার পর রাশেদ আমাকে অনেক দূরে নিয়ে যায়। আমার আগে থেকেই মনোবিজ্ঞানে এমবিবিএস করা ছিল। বাচ্চা দুটো আর সংসারের কারনে প্রাকটিস করা হয়নি। রাশেদ আমাকে সাহায্য করে পড়ালেখা আবার শুরু করতে। আমরা স্বপরিবারে লন্ডন চলে যাই। সেখানে আমি এফসিপিএস কমপ্লিট করি। তারপর দেশে এসে কিছুদিন সরকারী হাসপাতালে তারপর নিজেই চেম্বার খুলে রোগী দেখা শুরু করি। সব ভুলে থাকতে পারি আমি। রাশেদ, আমার বাচ্চাদুটোর ভালোবাসা সব দুঃসহ স্মৃতি ভুলিয়ে দেয়। শুধু বছরের একটা দিন আমি নীলিমার নীল চোখ আর অন্ধ নীলিমাকে যেন আবার নতুন করে দেখি। জানি না কতদিন আর এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে আমাকে। হয়তো আমৃত্যু পর্যন্ত!
~সমাপ্ত~