আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে আসিফ। লাল রঙের জমিনে বুকের কাছটায় সাদা এম্ব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবী পড়েছে সে। ওকে মানিয়েছে বেশ। ফর্সা ছেলেকে যেকোন রঙেই মানায়। লাল হলে তো কথায়ই নেই। নিজের রূপের কথা ভেবে আহ্লাদিত হয় আসিফ। ‘ছেলেদের রূপ নয়, গুণই আসল’ কথাটা সে বিশ্বাস করে না। কারণ তার কোন গুণ না থাকা সত্ত্বেও শিল্পপতি বাবার অঢেল সম্পত্তি আর বাহ্যিক সৌন্দর্য্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষেত্র পার করে আসতে পেরেছে সে।
.
আয়নায় নিজেকে দেখছে তখনই রিনরিনে কণ্ঠে মহুয়া বলল, ‘একটু সরো না প্লিজ। আমাকেও একটু দেখতে দাও।’ পেছন ফিরে ওকে দেখে অবাক হয়ে গেল আসিফ। এতো সুন্দর লাগছে মহুয়াকে! মহুয়া এমনিতেই অনেক বেশি সুন্দর। ফর্সা চেহারা, লম্বাটে চোখ, বাঁশির মতো নাক, চিকন চিবুক, সবমিলিয়ে নজরকাড়ার মতো চেহারা ওর। আর ফিগার তো একেবারে নায়িকার মতো। লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, গলায় কানে লাল মুক্তোর মালা আর দুল, হাত ভর্তি লাল চুড়ি, লম্বা বেনীতে বেলি ফুলের মালা। মনে হচ্ছে ফুল বাগানে ঘুরতে আসা কোন পরী, ভুল করে ওর ঘরে ঢুকে পড়েছে।
.
-কী দেখছো হাঁ করে!
রিনরিনে কণ্ঠটা আবারও শুনে ধ্যান ভাঙলো আসিফের। হেসে বলল,
-তুমি সামনে থাকলে আর কোনদিকে কি চোখ যায়? বিশ্বাস করো তোমাকে নিয়ে বাইরে যেতে একদমই ইচ্ছে করছে না। আমার এতো সুন্দরী বউকে কেউ লোলুপ দৃষ্টিতে দেখলে আমার ভালো লাগবে না।
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে ফেলে।
-এসব আবার কী কথা! লোলুপ দৃষ্টিতে কেন দেখবে।
আসিফ ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে
বলল,
-তোমাকে দেখতেই এত সুন্দর লাগছে! তুমি আমার বউ না হয়ে অন্য কারো বউ হলে তো আমি দেখা মাত্রই তুলে নিয়ে যেতাম।
.
কথাটা শুনে মহুয়ার কান লাল হয়ে গেল। ধাক্কা দিয়ে আসিফকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
-তুমি না মাঝে মাঝে ভীষণ বাজে বকো। এখন চলো, দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
আসিফ আর মহুয়া বেরিয়ে পড়ল। গন্তব্য টিএসসি চত্বর। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য উৎসব হচ্ছে সেখানে।
.
আসিফুর রহমান আসিফ। বাবা আমজাদুর রহমান। আমজাদুর রহমান বহু কষ্টে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়িয়েছেন। আজ তিনি দেশের অন্যতম শিল্পপতিদের একজন। নিজের প্রথম বয়সটা দুঃখ, কষ্ট আর ভোগান্তিতে কেটেছে বলে ছেলেকে এ সব কিছুর স্পর্শের বাইরে রেখেছিলেন। আসিফ বড় হয়েছে আরাম, আয়েশ আর ভোগ বিলাশে। যখন যেটা চেয়েছে সেটাই পেয়েছে। মহুয়াও এরকমই আসিফের ‘চাহিবামাত্র পাওয়া’ গুলোর একটি। ওকে দেখামাত্র আসিফ বাবাকে গিয়ে বলেছে, ‘আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।’ ক্ষমতার বলে কয়েকদিনের মধ্যেই মহুয়া আসিফের স্ত্রী হয়ে ঘরে আসে। ওর বাবা চাপোষা সরকারী কর্মচারী, বাঁধা দেয়ার সামর্থ্য তার ছিল না।
.
আসিফ মহুয়াকে নিয়ে অনেক সুখে আছে। কিন্তু এটাও কি অন্য সবকিছুর মতো আসিফের ক্ষণিকের মোহ! সে একবারও ব্যাপারটা ভেবে দেখেনি। বিয়ের এখন তিনমাস চলছে। সে তো খুশিই আছে, মহুয়ার মনের কথা কিন্তু সে একবারও জানতে চায়নি। মহুয়া বিয়েতে রাজি ছিল কিনা, এখন আসিফের স্ত্রী হয়ে সে সুখি কিনা এসব কিছু আসিফের কাছে মুখ্য নয়। সে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে, এটাই ওর গর্বের বিষয়।
.
প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝে ওদের রিক্সাটা একটু একটু করে এগোচ্ছে। চলেই এসেছে প্রায়, আরেকটু সামনে গিয়ে রিক্সা থেকে নেমে পড়বে। আসিফ মহুয়াকে নিয়ে মোবাইলে সেলফি তুলছে। দু’তিনটা ছবি ফেসবুকে আপলোডও করে ফেলেছে। সবাইকে দেখাতে হবে তো ওরা কতো সুন্দর ‘কাপল’। স্ট্যাটাস, চেক ইন এসবে ব্যস্ত তখনই মহুয়ার আর্তনাদ শুনলো সে। মোবাইল থেকে চোখ তুলে ওর দিকে তাকালো। হাতের পার্সটা বুকের সাথে শক্ত করে চেপে আছে, চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে। ব্যাপারটা কী বোঝার জন্য মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো। দুটো ছেলে মহুয়ার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। দাঁত বের করে হাসছে। আসিফ দেখল, ছেলেদুটো বারবার মহুয়ার বুকে হাত দেয়ার চেষ্টা করছে। একারণেই ও পার্সটাকে বুকের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। এসব দেখে আসিফের মাথায় রক্ত উঠে গেল। একজনের হাত ধরে ফেলে চেঁচিয়ে উঠল সে, ‘কী? কী হচ্ছে এসব!’
.
তখনই কোত্থেকে আরও চার পাঁচজন এসে রিক্সাটাকে ঘিরে ধরল। দু’একজন মহুয়ার শরীরে হাত দেয়ার চেষ্টা করছে। বাকিরা আসিফের হাত পা চেপে ধরেছে। ফলে আসিফ একটুও নড়তে পারছে না। মহুয়া ভয়ে রিক্সার আরও ভেতরে সিঁটিয়ে গেল। কিন্তু কোন লাভ হলো না। এদিকে রিক্সাটাও একদম থেমে গেছে। চালক নিষ্ক্রিয়ভাবে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। একপর্যায়ে ছেলেগুলো মহুয়াকে রিক্সা থেকে নামিয়ে ফেলল। ওর চিৎকার, কান্না আর বাঁচার আকুতি আশেপাশের পথচারীদের কানেই যাচ্ছে না যেন। আসিফ হাত পা ছোঁড়ার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। শুধু বৃথা আষ্ফালন করে বলতে লাগল,
-কুত্তার বাচ্চারা আমাকে ছাড়।
ওদের মধ্যেই একজন বলল,
-ছাড়ব তো। আগে তোমার মালটাকে খাইয়া শ্যাষ করি তারপর।
আসিফের কানে কথাটা চপেটাঘাতের মতো লাগলো। কী বলছে এরা! আরেকবার সর্বোচ্চ শক্তিতে ও নড়তে চাইল। কিন্তু তারচেয়ে দ্বিগুন শক্তিতে ছেলেগুলো ওকে রিক্সা থেকে মাটিতে ফেলে দিল।
.
উপুর্যূপরী আসিফের মুখে ও মাথায় লাথি মারছে ছেলেগুলো। ওর রক্তে নকশা করা পিচঢালা রাস্তা লাল হয়ে যাচ্ছে। মাথায় ভোঁতা যন্ত্রণা হচ্ছে আসিফের। তারপরও মহুয়ার জন্য দুশ্চিন্তা হচ্ছে। খুব কষ্টে একটু করে মাথাটা তুলে দেখার চেষ্টা করলো। কয়েকটা ছেলে এরইমধ্যে মহুয়ার শাড়ি খুলে ফেলেছে। ছেঁড়া ব্লাউজ উন্মুক্ত করে দিয়েছে ওর অন্তর্বাস। চোখে ঝাপসা দেখছে আসিফ। ওটা কি মহুয়া নয়! ছেলেগুলোর মধ্যে একজনকে হুবহু আসিফের নিজের মতোই মনে হচ্ছে। যে চেহারা নিয়ে গর্ব করে সে চেহারাই ওর দিকে তাকিয়ে যেন বিদ্রুপের হাসি হাসছে।
.
হঠাৎ খুব জোরে শক্ত কিছুর আঘাত পেল ও মাথায়। বুঝতে পারলো কপাল ফেঁটে গরম রক্ত গড়িয়ে পড়ছে চোখের ওপর। চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু ও একদৃষ্টিতে প্রায় বিবস্ত্র মহুয়ার দিকে চেয়ে আছে। মহুয়ার মতো কিন্তু যেন মহুয়া না। ধর্ষণকারী সবার চেহারা কেমন যেন বদলে গেছে। সবাই যেন আসিফের খুব পরিচিত। একসাথে অনেক কিছু মনে আসছে ওর, ঠিক ফ্লাশব্যাকের মতো। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে মন বলছে, ‘ও কি বেঁচে থাকবে? বেঁচে থাকলেও ওর চোখ কি ঠিক থাকবে? ওকি আয়নাতে নিজের চেহারা আবার দেখতে পাবে? মহুয়ার মিষ্টি চেহারাটা কি আর কখনো দেখতে পাবে?
.
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে আসিফ। চোখে ব্যান্ডেজ। পহেলা বৈশাখের দূর্ঘটনাটার আজ তৃতীয় দিন। ইন্সপেক্টর রাশেদ খান আসিফের সামনে বসে আছে। কর্তব্যরত ডাক্তার রুটিন চেকআপ করে বেরিয়ে গেলে রাশেদ খান কথা তুলল,
-কেমন আছেন আসিফ?
আসিফ নিস্পৃহ কণ্ঠে বলল,
-কেমন আছি জানতে চাওয়াটা হাস্যকর ইন্সপেক্টর। প্লিজ কাজের কথা বলে চলে যান।
রাশেদ খান বললেন,
-আই এম সরি। বুঝতে পারছি আপনার মানসিক অবস্থা। কিন্তু আপনার বাবা বলছেন আপনি নাকি মামলা করতে চাচ্ছেন না। স্ট্রেঞ্জ! আমি আপনার মুখ থেকেই শুনতে এসেছি, কথাটা কি ঠিক?
.
আসিফ জবাব দিল,
-হ্যাঁ ঠিকই বলেছে বাবা। আমি মামলা করতে চাই না। তাছাড়া আমি ওদের কাউকেই চিনি না। কার নামে মামলা করব!
-আপনার চিনতে হবে না। আমাদের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ আছে। আমরা কয়েকজনকে শণাক্ত করেছি। সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। তারপরও আমরা খুঁজে বের করে ফেলব। আপনি শুধু মামলা করে স্বীকারোক্তি দিন।
আসিফ বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর শান্ত কণ্ঠে বলল,
-ওদের কাউকে পেলে গ্রেফতার করবেন না। ছেড়ে দেবেন। আমার কোন অভিযোগ নেই।
.
রাশেদ খান খুব অবাক হলো কথাগুলো শুনে। সাথেই সাথেই জিজ্ঞেস করলো,
-ছেড়ে দেব! আর অভিযোগ নেই কেন আপনার! আপনার স্ত্রীকে তো ওরা…
-শুনুন, আমি অজ্ঞান হওয়ার পর ওরাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমার বাবাকে ফোন করে। তারপর বাবার কাছে একটা চিঠি রেখে যায়।
-চিঠি!
ইন্সপেক্টর রাশেদ বুঝতে পারে এটা স্বাভাবিক কোন ঘটনা না। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে গূঢ় কোন রহস্য। তাই আসিফের উদ্দেশ্যে বলে,
-আপনি আমাকে সব খুলে বলুন। না হলে .
আমি এই কেসের কোন গতি করতে পারছি না। পাবলিক আমাদের দিকে চেয়ে আছে। এরকম একটা ঘটনার বিচার তারা অতি দ্রুত দেখতে চায়।
আসিফ বুঝতে পারছে না কোথা থেকে শুরু করবে। ঘটনার শুরুটা হয়েছিল তিন বছর আগে।
.
সেদিনও নববর্ষ ছিল। আসিফ ও তার কয়েকটা বন্ধু টিএসসিতে ‘ফান’ করছিল। এই ফানটা হলো ভীড়ের মাঝে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া। সুযোগ বুঝে স্পর্শকাতর গোপন অঙ্গগুলো ছুঁয়ে দেয়া। প্রথমে কিছুক্ষণ এটা করেই মজা পাচ্ছিলো তারা। কিন্তু পরে নেশার মতো হয়ে যায়। একটা সময় মনে হয় এভাবে আর হবে না। বেশি কিছু করতে হবে। তখন তারা চারপাশে উপযুক্ত শিকার খুঁজছিল। পেয়েও গেল অল্প সময়ের মধ্যে।
.
রিক্সা করে একটা দম্পতি টিএসসিতে ঢুকছিল। দেখেই মনে হচ্ছিল নতুন বিবাহিত তারা। মেয়েটার মুখে লাজুক আভা, ছেলেটার চোখে মুখে মুগ্ধতা। ওরা এই মেয়েটাকেই টার্গেট করে। প্রথমে দুজন রিক্সার পাশে গিয়ে মেয়েটাকে স্পর্শ করতে চায়। ছেলেটা বাঁধা দিতে চাইলে বাকিরা এসে ওকে ধরে রাখে। তারপর মাটিতে ফেলে মারতে থাকে। ওদিকে মেয়েটাকে নিয়ে আসিফ ও কয়েকজন মেতে উঠেছে বুনো উল্লাসে। এত ভীড়ের মধ্যে পথচারীরা চাইলেও কিছু করতে পারছিল না। তারমধ্যে কয়েকজন আবার ওদের সাথে যোগ দিয়েছে। চিৎকার-চেঁচামেচি, ধাক্কাধাক্কি এসবের মধ্যে মেয়েটার আর্তচিৎকার চাপা পড়ে গিয়েছিল। ছেলেটাও একসময় জ্ঞান হারায়। আসিফরা ঐ ভীড়েই মেয়েটার সর্বস্ব কেড়ে নিতে পেরেছিল। কোন অসুবিধা হয়নি। পরে অবশ্য মামলা হয়েছিল। কিন্তু আসিফের বাবার ক্ষমতার দাপটে সেটাও কয়েকদিনে নিষ্পত্তি হয়ে যায়। মিডিয়া, জনতা কিছুদিন শোরগোল করলেও একসময় চুপ হয়ে যায়।
.
-কী হলো মিঃ আসিফ? চুপ করে আছেন যে?
আসিফ এতকিছু বলতে পারে না। শুধু বলে,
-চিঠিতে লেখা ছিল, ‘নিজের প্রিয়তম স্ত্রীকে চোখের সামনে অপদস্ত করলে, বেআব্রু করলে, সম্ভ্রমহানি করলে কেমন লাগে! অনুভূতিটা তোর জানা ছিল না। এজন্যই এই নাটকের আয়োজন। আর বাকিটা পাপের শাস্তি। মহুয়া নামে কেউ নেই। ও একটা পতিতা, এ নাটকের ভাড়া করা অভিনেত্রী।’
.
রাশেদ খানের কণ্ঠে চরম অবিশ্বাস আর বিস্ময় ফুটে উঠল।
-আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
আসিফ বলল,
-আমি আপনাকে আপাতত এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। আমাকে একটু একা থাকতে দিন।
.
এমন সময় ডাক্তার রুমে প্রবেশ করল। রাশেদকে বলল পরে আবার আসতে। এখন রোগীর বিশ্রাম দরকার। রাশেদ আসিফকে বলল,
-আবার দেখা হবে। পরে যখন আসবো তখন আশা করি সব খুলে বলবেন।
রাশেদ বেরিয়ে গেল। আসিফ চোখের ব্যান্ডেজ ছুঁয়ে দেখছে। ভাবছে, চিরতরে অন্ধ হয়ে গেলেই ভালো হবে। এই মুখ সে আর কখনো আয়নাতে দেখতে চায় না।
.
রাশেদ কেবিন থেকে বেরোতেই আমজাদুর রহমানের সাথে দেখা হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
-আসামীদের কখন গ্রেফতার করবেন ইন্সপেক্টর?
জবাবে সে বলল,
-আপনার ছেলে তো চায় না কারও শাস্তি হোক। মনে হয় অপরাধীরা মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াক এই দৃশ্যে সে অভ্যস্ত।
আমজাদুর রহমান রেগে গিয়ে বললেন,
-তুমি তোমার কাজ করে যাও। সেটাই তোমার জন্য ভালো হবে।
রাশেদ হেসে বলল,
-তা তো অবশ্যই। এখন আসি। পরে আবার দেখা হবে।
.
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাশেদ মোবাইল কানে দিল। ওপাশের জনকে বলল,
-ও মামলা করতে চাচ্ছে না। উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। মনে হচ্ছে আত্ম-অনুশোচনায় ভুগছে। আসিফ ছাড়া অন্য কারো বোঝার সাধ্য নেই এটা একটা পরিকল্পিত ঘটনা। চিন্তার কিছু নেই।
.
ফোনটা কেটে দিল রাশেদ। মনে হচ্ছে বুকের ওপর থেকে অনেক বড় একটা বোঝা নেমে গেছে। গত তিন বছর ধরে আত্মগ্লানি কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল ওকে। সেদিন কিছু করতে পারেনি। ইচ্ছে থাকলেও সাধ্য ছিল না। সেদিনের সেই ভিকটিম মেয়েটি হাসপাতালেই মারা গিয়েছিল। ওর স্বামী বেঁচে আছে, তবে মৃত মানুষের মতো। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে আজীবনের জন্য। তার সাহায্য নিয়েই রাশেদ এ সবকিছু করেছে। হ্যা রাশেদই এই নাটকটির পরিচালক। মহুয়া একজন পতিতা। তাকে তিনমাসের জন্য ভাড়া করতে কোন কষ্টই হয়নি। পুলিশকে এমনিতেই ওরা সমীহ করে চলে। মহুয়ার তথাকথিত বাবাও একজন সাধারণ মানুষ, এ নাটকের আরেক অভিনেতা। ছেলেগুলো সব নাট্যদলের। সেদিন ওরা মহুয়াকে ধর্ষণ করেনি। শুধু অভিনয় করেছিল। কম কষ্ট হয়নি রাশেদের সব ঠিকঠাক ভাবে বাস্তবায়ন করতে। এখন শুধু সিসিটিভি ফুটেজটা নষ্ট করতে হবে। তারপর একদিন এমনিতেই সব চুপ হয়ে যাবে। নাটকের শেষদৃশ্য ভেবে রাশেদ হাসলো। হাসিটা এ সমাজ ব্যবস্থার প্রতি বিদ্রুপের হাসি।
~সমাপ্ত~