চৌধুরিবাড়ির ঘাটলা

ছোটবেলা (জানুয়ারী ২০২৫)

Jamal Uddin Ahmed
  • 0
  • 0
  • ১৫
সেদিন হয়তো অমাবস্যাই ছিল। চরাচর নিকষ কালো। তবে চৌধুরিবাড়ির আয়ত পুকুরের জলে অসংখ্য রুপালি বিন্দু চকচক করে কাঁপছিল। জনমনুষ্যির কোনো সাড়াশব্দ না থাকলেও পুকুরপাড়ের কলাবনে আচমকা বাদুড়ের ডানা ঝাপটানোর আওয়াজে ভড়কে যাচ্ছিলাম। মাঝরাতের অজগাঁয়ে ভয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠার কথা। ভুলু মামা সাথে ছিল বলে ততটা ঘাবড়ে যাইনি। অবশ্য দক্ষিণপাড়ার হেকমত মামাও সেদিন আমাদের সাথে ছিল। হেকমত মামা ভুলু মামার দূরাত্মীয় ও বন্ধু। স্কুলপালানো হেকমত বাপের সাথে গেরস্থালি কাজেই ব্যস্ত থাকে। তবে একটু অবসর পেলেই সে ধাই ধাই করে আমাদের কাছে ছুটে আসে। চৌধুরিবাড়ির পুকুরপাড়ই আমাদের অপারেশন স্থল। ভুলু মামা বলেছে, পুরো অভিযানে টু-শব্দটি করা যাবে না।

ছোট নানার ছোট ছেলে ভুলু মামা আমার চেয়ে চার বছরের বড়। চটপটে, সুদর্শন হলেও লেখাপড়া তার মাথায় ঠাঁই করে নিতে পারেনি। অনেক টেনে হিঁচড়ে সে দশম শ্রেণিতে উঠলে আমরা একসাথে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। মামা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছিল, কিন্তু তার কোনো বিকারই ঘটেনি। তাতে অবশ্য আমাদের হৃদ্যতায় কোনো চিড় ধরেনি। সেই নেংটাকাল থেকে আমি যেমন তার ন্যাওটা ছিলাম তা অনন্তকাল পর্যন্ত থকেছি।

ভুলু মামা আমার ওস্তাদ। নানাবাড়িতে যত অভিযান-অঘটন ঘটিয়েছি সবগুলোর পুরোভাগে ভুলু মামা। সেবার অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে যেদিন নানাবাড়ি গিয়েছি সেদিনই ভুলু মামা কানে কানে নতুন অভিযানের কথা আমাকে জানিয়ে যায়। প্রকল্পটা সে আগেই তৈরি করে আমার অপেক্ষায় ছিল। তবে আমাকে সাথে নিয়ে মধ্যরাতের এমনতরো প্রকল্প সে আগে কখনও নেয়নি। তাই আমার মধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজনা ও উদ্বেগ ছিল।

হেকমত মামা পায়ে পেঁচানোর দড়ি ও একখান দা সাথেই নিয়ে এসেছিল। গাছ বাওয়াতে সে বেশ দক্ষ। গ্রামের আম-জাম-লিচু-নারকেল পাড়তে হলে হেকমতের ডাক পড়ে। একবার অবশ্য বৃষ্টি-ভেজা কাঁঠাল গাছের ডাল থেকে পড়ে গিয়ে তার হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল। সে হাতটি জোড়া লাগলেও কনুইটা ঈষৎ বাঁকা রয়ে গিয়েছে।

ভুলু মামা কান খাড়া করে সবদিক আঁচ করে হেকমত মামাকে হুকুম করে, ‘আল্লার নাম নিয়া বুকে থুথু দিয়া উইঠা পড়।’

হেকমত পাকা গাছির মতো দড়ির মাথায় গিটঠু দিয়ে কেমন করে তার পায়ের পাতায় তা পেঁচিয়ে নেয়। পরনের লুঙ্গি মালকোঁচা মেরে ছোট দা খানি কোমরে গুজে নেয়। তারপর দুহাতে নারকেল গাছ আঁকড়ে ধরে সে যখন লাফ দিয়ে গাছে উঠতে যাবে অমনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার মতো হয়ে সে উলটোদিকে ব্যাঙের মতো লাফ দিয়ে ভুলু মামাকে জড়িয়ে ধরে। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেও ভুলু মামা চাপা গলায় তাকে ধমক দিয়ে বলে, ‘কী হইছে?’

হেকমত মামা কিছু বলতে পারে না। অন্ধকারে তার বিস্ফোরিত চোখের আয়তন মাপা যাচ্ছে না, তবে তার থরহরি অবস্থা দেখে সন্দেহ করা যায় যে কোনো মহাবিপদ ঘনায়মান। সে তার তর্জনী দিয়ে পুকুরের উত্তর পাড়ের দিকে ইশারা করে।

ভুলু মামা হেকমতের এই অবস্থা দেখে ধরেই নেয় আজ নির্ঘাত হাতেনাতে ধরা পড়তে হবে। সে ঝটিতি তার ঘাড় ফিরিয়ে হেকমতের নিশানার দিকে তাকায়। কিন্তু তেমন কিছু দেখতে পায় না। ভুলু মামা আবার জিজ্ঞেস করে, ‘কী দেখছস? আমি তো কিছু দেখি না।’

হেকমত মামা আবার একই দিকে অঙুলি নির্দেশ করলে ভুলু মামা তার দৃষ্টি জুম করে তাকিয়ে দেখে দুটি ছোট্ট আলোর বিন্দু জ্বলজ্বল করছে। ভুলু মামা বিচক্ষণ মানুষ। সে মুহূর্তে বুঝে যায় মানুষ-টানুষ কেউ নয়, ওটা কোনো বন্য প্রাণী।

ভুলু মামা অনুচ্চ গলায় ধমক দিয়ে বলে, ‘যত সব ভীতুর আণ্ডা। শিয়াল-টিয়াল হইব হয়তো। হের লাইগা ভয় পাওয়ার কী আছে?’ তারপর সে পায়ের নিচ থেকে মাটির ঢেলা নিয়ে ওদিকে ছুঁড়ে মারে। প্রাণীটি তখন সুড়সুড় করে পুব পাড়ের দিকে হেঁটে যায়।

হেকমত মামা বলে, ‘শিয়াল হইলে তো খবর আছে; এখনই হুক্কাহুয়া করবো। তারপর?’

ভুলু মামা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে, ‘মনে হয় না শিয়াল। খাটাশ হইতে পারে।’ তারপর হেকমতকে ধাক্কা দিয়ে বলে, ‘যা যা, উঠ, এত ভয় করিস না।’

আমি এতক্ষণ ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে বসেছিলাম। হেকমত মামা আবার গাছে উঠতে উদ্যত হলে আমি বললাম, ‘অ্যাই চলো চলো, ফিরে যাই। ডাব চুরির দরকার নাই; আমার ভয় করতেছে।’

ভুলু মামা তখন আমাকে ধমক দিয়ে বলে, ‘তুই চুপ কইরা বইসা থাক, কথা কইস না।’

আমার মনে পড়ে যায় আগের বছরের এক সন্ধ্যায় আবুল মিয়ার পেয়ারা বাগানের অভিযানের কথা। কাঁচা বাঁশের ফালি হাতে নিয়ে আবুল মিয়া ধর ধর করে ছুটে আসলে সেদিন ভুলু মামা আমার কাঁধে বন্দুক রেখে ঘটনাটা সামাল দেয়ায় রক্ষা পেয়েছিলাম। ভুলু মামা আবুল মিয়াকে বলেছিল, ‘পথ হারাইয়া আমার ভাগিনা আপনার বাগানে আইসা ঢুইকা পড়ছে। তারে সারা গেরামে খুইজ্যা বেড়াইছি। পরে আইসা দেখি সে এইখানে।’ আমার কাতর মুখ দেখে আবুল মিয়া হয়তো অন্য কিছু না ভেবে আমাদের চলে আসতে দেয়। এরপর আমি তওবা করেছিলাম যে আর কোনোদিন ভুলু মামার অভিযানের সাথি হবো না। কিন্তু সেই কথা কি আর মনে থাকে।

নারকেল গাছটি বেশি লম্বা নয়। তবুও হাত-পনরর কম হবে না। হেকমত মামা গাছের প্রায় মাঝামাঝি ওঠার পরই উত্তর পাড়ের জারুল গাছ থেকে হঠাৎ হু-হু-হু জলদগম্ভীর আওয়াজ শোনা যায়। অমনি হেকমত সড়াৎ করে কয়েক হাত নিচে নেমে পড়ে।

হেকমতের এই কাণ্ড দেখে ভুলু মামা খেপে গিয়ে বলে, ‘অ্যাই তোর সমস্যা কী? পেঁচার ডাক শুইনা তুই হার্টফেল করবি?’

হেকমত মামা কী ভেবে ভয় পেয়েছিল কে জানে। তবে পরক্ষণে আবার উঠতে থাকে। হুতোম পেঁচা কিন্তু তার মুখ বন্ধ করেনি। মুহূর্ত-কয়েক বিরতি দিয়ে দিয়ে সে একই সুরে হু-হু-হু করে যায়।

আমি নানাবাড়ি এলেই যে শুধু ভুলু মামা নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয় এমন নয়, তার এবং হেকমত মামার আরও অনেক কীর্তি আছে। তা অবশ্য পরে জেনেছি। যেমন, কোনো এক শবে-বরাতের রাত্রে উৎসবের আনন্দ নিয়ে ছন্দে ছন্দে জিকির করতে করতে এবং বিরতি দিয়ে আতশবাজি ফুটাতে ফুটাতে তারা গ্রামময় ঘুরে বেড়াচ্ছিল । ল্যাংড়া টুনুর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের নাকে পাকা কাঁঠালের গন্ধ ভেসে আসে। ভুলু মামার ততটা খেয়াল না হলেও হেকমত মামা বলে, ‘খাড়া!’

ভুলু মামা বলে, ‘কী হইছে?’

হেকমত চুপি চুপি বলে, ‘জোরে আওয়াজ করিস না; দ্যাখ বাড়ির লোকজন ঘুমাইয়া পড়ছে কি না।’

ভুলু মামা বুঝে ফেলে তার বন্ধু কোনো একটা ফন্দি আঁটছে। ‘ঘটনা কী হেইডা ক।’

‘তোর নাকে কি কাঠলের গন্ধ লাগে না? ল্যাংড়াদের লালী গাছের কাঠল খুব সুস্বাদু।’ হেকমত বলে, ‘আমি গাছে উঠুম; তুই নিচে পাহারা দেয়।’

ভুলু মামা এদিক ওদিক তাকিয়ে বাড়ির লোকদের সাড়াশব্দ না পেয়ে বলে, ‘শবে বরাতের রাইত; বিসমিল্লা বইলা উইঠা পড়।’

তারপর নাকি হেকমত মামা কাঁঠালটা মোচড় দিয়ে ছিঁড়লেও সামলাতে পারেনি; ধপাস করে নিচে পড়ে যায়। ল্যাংড়া টুনুর বউ তখন বাড়িতে বাতি নিভিয়ে একা একা নফল নামাজ পড়ছিল। বাচ্চারা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে আর তার স্বামীও নেকী হাসিলের জন্য কোন মাজার নাকি মসজিদে চলে গিয়েছে। রাতের শব্দ স্পষ্টভাবে শোনা যায়। টুনুর বউ আচমকা ধপাস শব্দ শুনে ভয় না পেয়ে বরং হাতে লাঠি নিয়ে হৈ হৈ করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ভুলু মামা তৎক্ষণাৎ পড়িমরি করে কেটে পড়লেও হেকমত ধরা পড়ে যায়। পবিত্র রজনীতে কাঁঠাল চুরির অপরাধে হেকমত মামার বাবা নাকি পরদিন তাকে বেশ উত্তম-মধ্যম দিয়েছিলেন। এরা অবশ্য নীতিবান চোর। একজন ধরা পড়লেও অন্যদের নাম বলে না। সেই সুবাদেই ভুলু মামা সে যাত্রা বেঁচে গিয়েছিল।

হেকমত মামা নারকেল গাছে ওঠার পর তাদের বর্ণিত কাঁঠাল চুরির ঘটনাটি আমার মনে পড়ে যায়। কাঁঠাল চুরির ঘটনার মতো কিছু যদি ডাব চুরির বেলায়ও ঘটে সেই আশঙ্কায় আমার বুক ধুকপুক করতে থাকে। ইতিমধ্যে বাদুড়ের ডানা ঝাপটানো, খাটাশের চোখ রাঙ্গানোর মতো ঘটনা মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। আমি উশখুশ করতে করতে ভুলু মামাকে বলেই ফেলি, ‘আমার ভয় করতেছে।’

ভুলু মামা ধমক দিয়ে বলে, ‘তোরে না চুপ কইরা বইসা থাকতে কইছি।’

আমি আর কিছু না বলে নারকেল গাছের মাথার দিকে তাকাই। অন্ধকারে হেকমতকে দেখা না গেলেও সড়সড় শব্দ শুনতে পাই। নিশ্চয়ই সে ডাবের কাঁদি কেটে বাঁধাছাঁদার কাজ করছে।

ভুলু মামাকেও তখন একটু উত্তেজিত মনে হলো। সে একবার ডানদিকে যায়, একবার বামদিকে যায়, আরেকবার ঘাড় ঘুরিয়ে চৌধুরিবাড়ির অন্দরের দিকে তাকায়। কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে দেখে ওপরদিকে তাকিয়ে হেকমতকে ঝাড়ি দেয়, ‘অ্যাই, তাড়াতাড়ি কর।’

হেকমত তো বসে থাকার জন্য গাছে উঠেনি। সে-ও নিশ্চয় হন্তদন্ত হয়ে ডাবের কাঁদিতে দড়ি বেঁধে দা দিয়ে পোচ মারছে। কাঁদি বেশি বড় হলে তার জন্য সামলানোও মুশকিল। পাতার গোড়ার অংশে দড়ি পেঁচিয়ে কৌশলে ধীরে ধীরে কাঁদি নামাতে হয়।

হেকমত মামা হেকমত করে হয়তো মূল কাজটা করে ফেলেছিল; শুধু কাঁদি নামানো বাকি। তখনই পুকুরের পুব পাড় থেকে হুক্কাহুয়া বলে এক গগনবিদারী রব ওঠে। ওই প্রাণীটি তাহলে শিয়াল ছিল। শিয়ালের চিৎকার শোনার সাথে সাথেই হেকমত দড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। রক্ষে! ডাবের কাঁদিটা সরাসরি ভুলু মামার মাথায় পড়েনি, তবে তা তার কাঁধ ঘেঁষে ধড়াস করে পায়ের পাতার ওপর গিয়ে পড়ে। চিৎকার করার পরিবেশ থাকলে হয়ত ভুলু মামা গলা ফাটিয়ে আর্তনাদ করে উঠতো; কিন্তু তা আর পারলো কই? সে তার বিস্ফোরণোন্মুখ মরণ-চিৎকারকে এক গোঙানির মধ্যে বন্দী করে মাটিতে বসে পড়ে।

হেকমত মামা গিরগিটির মতো তরতর করে গাছ থেকে নেমেই হয়তো দৌড় দেবার কথা ভেবেছিল। কিন্তু ভুলু মামার এ অবস্থা দেখে সে পালিয়ে যাবার সাহস পায়নি। সে ভুলু মামার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে বলে, ‘উঠ, বইসা রইলে চলবো?’ ভুলু মামার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে সে মাথা নুইয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘ব্যথা পাইছস, দোস্ত?’

এবার রাগ সামলাতে না পেরে ভুলু মামা তার চোটমুক্ত পা’টি তুলে হেকমতের পাছায় জোরসে একটা লাথি বসিয়ে বলে, ‘তোর কি মনে হয় খুউউব আরাম পাইছি?’

আমি তখন বলি, ‘পা ভাঙ্গে নাই তো মামা? হাটতে পারবা?’

হেকমত মামা ইতিউতি তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে, ‘তোরা চেঁচামেচি করিস না, চৌধুরিবাড়ির লোকজন বাইর অইয়া পড়লে হাতকড়া লাগাইয়া দিবো।’

চৌধুরিবাড়ির কুকুরটা কয়েকদিন আগে মারা গেছে। এই খবরটা হেকমতই জোগাড় করেছিল। সেজন্যই ভুলু মামা এই অভিযানের পরিকল্পনা করেছিল। কুকুরটি বেঁচে থাকলে এদিকে পা বাড়ানো যেত না।

ভুলু মামা আমার হাত ধরে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর হেকমত মামার উদ্দেশে বলে, ‘এত পণ্ডিতি করিস না, কান্দি মাথায় ল। তাড়াতাড়ি কাইটা পড়ি।’

পাঁচটা ডাবের কাঁদি বয়ে নেয়া একজনের পক্ষে কষ্টকর। হেকমত বলে, ‘আমি একলা পারুম না, তুইও ধর।’

ডাব হাতের নাগালে এসে যাওয়ায় আমার উত্তেজনা ও উৎসাহ বেড়ে যায়। আমি বলি, ‘আমিও ধরি?’

ভুলু মামা দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলে, ‘তোর ওস্তাদির দরকার নাই। তুই চুপ কইরা আমাগো পিছনে পিছনে আয়।’

ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে ঘাটলার পাশের নারকেল গাছ থেকে ডাব পেড়ে নিয়ে আমরা প্রকৃত চোরের মতো পা টিপে টিপে চৌধুরিবাড়ির উত্তর দিকে হাঁটতে থাকি। বাড়ির উত্তর সীমানায় একটি শুষ্কপ্রায় নালা আছে। তার কিছুদূর পর পাটক্ষেত। ওখানে বসেই আমরা ডাব-নারকেল সাবাড় করবো। তারপর বাড়ি যাব।

ভুলু মামা আর হেকমত মামা ডাবের কাঁদি চ্যাংদোলা করে নিয়ে সাবধানে নালা পাড়ি দেয়। নালার পাড়ের লতা-গুল্মের মাঝে অসংখ্য বাতি জ্বলছে আর নিভছে। আমার বুকটা প্রথমে ধক করে উঠলেও পরে বুঝলাম শিয়াল-টিয়াল কিছু না, ওগুলো জোনাকি পোকা। আমি জোনাকির আলোকসজ্জা দেখতে দেখতে যেই না নালাতে নেমেছি অমনি পেছন দিক থেকে কে একজন খপ করে আমার ডানহাতটা ধরে ফেলে। আমি তখন ভীতিবিহ্বল হয়ে মাগো বলে চিৎকার দিয়ে উঠি। বুঝতে পারি, আমার গলার স্বর বিকৃত হয়ে বের হয়েছে।

ভুলু মামারা আমার হাত-দশেক সামনে হাঁটছিল। আমার আকস্মিক চিৎকারে তারা হোঁচট খেয়ে হাতের কাঁদি ফেলে দিয়ে থমকে দাঁড়ায়। আমার দিকে এগিয়ে না এসে বরং স্বস্থান থেকেই ভুলু মামা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘কী হইছে রে?’

আমি উত্তর দেবার আগেই ফকফকে এক বিশাল আলোর চক্র ভুলু মামা ও হেকমত মামাকে ঘিরে ফেলে। তীব্র আলোর দীপ্তিতে তাদের চোখ বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তারা দৌড় লাগাতে পারতো। কিন্তু তাদের পা যেন মাটিতে আঠার মতো লেগে থাকে।

এরপরই আমার হাত ধরে রাখা লোকটির মুখ থেকে শ্লেষোক্তি বেরিয়ে আসে, ‘আচ্ছা, তাইলে তোমরাই আমার রাইতের মেহমান!’

হেকমত মামা চৌধুরিবাড়ির চাকর-বাকরদের চেনে। সে স্পষ্ট বুঝতে পারে ও হচ্ছে চৌধুরিদের রাখাল মানিক। উপস্থিত বিপর্যয়ে হেকমত সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলে। তারপর বোকার মতো বলে, ‘তুমি মানিক ভাই না?’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

সেদিন হয়তো অমাবস্যাই ছিল। চরাচর নিকষ কালো। তবে চৌধুরিবাড়ির আয়ত পুকুরের জলে অসংখ্য রুপালি বিন্দু চকচক করে কাঁপছিল।

১৯ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৬৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ভালবাসা”
কবিতার বিষয় "ভালবাসা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারী,২০২৫