‘বারো মাসে বারো ফুলরে
ফুইট্টা থাকে ডালেরে
এই পথে আইসে নাগর
পড়তি সন্ধ্যা কালেরে…।’
হাই ভল্যুমে মাথা খারাপ-করা লোক গীতি ছেড়েছে মিলন। মিলন আমার বন্ধু। ওই স্কুল বেলা থেকেই আমাদের গলায় গলায় ভাব। তবে মিলনের বুদ্ধি বরাবরই ধারালো। অবশ্য লেখাপড়ায় দুজনই ডাব্বা মারা গোছের ছিলাম যদিও শেষ পর্যন্ত টেনেটুনে, হামাগুড়ি দিয়ে চলনসই একটা পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছি। সময়ের আবর্তনে পরিস্থিতিও পাল্টেছে। মিলনের ক্ষেত্রে কথাটা অধিক প্রযোজ্য। তার ক্ষুরধার বুদ্ধির জোরে সে এখন আগের মিলন নেই। তার টয়োটা অ্যালিয়নে করে আমরা তিনশ’ফুটধরে পূর্বাচলের দিকে যাচ্ছি। ড্রাইভার সে রাখতে পারতো, কিন্তু রাখেনি। সে বলে, নিজে ড্রাইভ করার মজাই আলাদা। এই যে মাথা গরম-করা গানের সাথে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে সে গাড়ি চালাচ্ছে, ড্রাইভার থাকলে কিসে এমন আনন্দ পেত? পেতনা।
আমি জিজ্ঞেস করি, ‘এত উদ্ভট গান তুই কই পাস?’
মিলন বলে, ‘আরে শালা, গানের তুই কী বুঝস? তুই সেই খেতই রইয়া গেলি।’ তারপর সে উচ্চস্বরের অডিও’র সাথে কণ্ঠ মেলায়, ‘দেখা না দিলে বন্ধু কথা কইওনা।’
আমি বলি, ‘এই একটা গান ডজন খানেক শিল্পী গাইছে।’
মিলন বলে, ‘অসুবিধা কী? এক জনের কণ্ঠে একরকম।’ আমাকে বোকা বানানোর জন্য সে আবার জিজ্ঞেস করে, ‘ভিডিয়ো দেখছস?’
‘না।’
‘তাইলে মজার ভিন্নতা বুঝবি কেমনে?’, মিলন বলে।
হঠাৎ মিলনের ফোন বেজেওঠে। ওপাশে যে কথা বলছে সে মিলনের ঘনিষ্ঠ কেউ, তা মিলনের প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা যাচ্ছে। গাড়ির গতি কিছুটা কমিয়ে বাঁ হাতে ফোন নিয়ে সে কথা বলছে:
- এটা কী বলছ তুমি!
- তুমি না কনফার্ম করেছ তোমার বান্ধবীকে নিয়ে আসবে। আমরা সারা বিকেল খোলা হাওয়ায় আড্ডা দেবো। তাছাড়া আমি আমার বন্ধুকে সারপ্রাইজ দেবো বলে নিয়ে এসেছি।
- তোমার দুলাভাই হার্ট ফাউন্ডেশনে গেছে তো কী হয়েছে? আমার হার্টের কথা তুমি ভাবলে না?
- না, না। এটা ঠিক কর’নি, দোলা। ঠিক আছে। আমি তো তোমার দুলাভাইয়ের জন্য কিছু করতে পারব না। রাখি। পরে কথা হবে।
মিলন রাগ করে ফোন কেটে দিলে আমি তার কথার মাথা মুণ্ডু বোঝার চেষ্টা করি। সে গজগজ করতে থাকলে আমি আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘কার সাথে কথা কই লি?’
‘এইটা জাইনা তোর লাভ কী?’, মিলন রেগে জবাব দেয়।
ততোক্ষণে আমরা বালু ব্রিজ পাড়ি দিয়ে ফেলেছি। মিলন একটু এগিয়ে গিয়ে নিলাবাজারের পাশে একটি রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামায়। আমি চুপ করে আছি। মিলন ফোঁস ফোঁস করে বলে, ‘নাম! তুই একটা কুফা।’আমি তার কথা না বুঝেই চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে পড়ি।
রেস্টুরেন্টে বসে নান আর শিক কাবাব চিবোতে চিবোতে আমি মিলনের হাব ভাব লক্ষ করি। সে তেমন কিছু বলছে না। আমিই শেষ পর্যন্ত কোল্ড ড্রিংক্স দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলি, ‘মাথা ঠাণ্ডা হইলে এখন বলতো, কার সাথে রাগা রাগি করলি? মুন্নী?’
মিলন আর আগের মতো না চেঁচিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে, ‘আরে ধুর, ওইটা না; ওইটা একটা পল্টিবাজ। খেয়াল করস নাই আমি যে কইলাম “দোলা”?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ।’ আমার মনে পড়ে মিলন ফোনে কথা বলার শেষ দিকে দোলা নাম উচ্চারণ করেছিল। সাথে সাথে তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘দোলার কথা আমারে কস নাইতো। ওইটা আবার কে?’
‘তোরে সব কথা কওয়ার সময় কই? তোর সাথে দেখা হইলে যতটুকু বলা যায় ততোটুকু বলি।’ তার পর মিলন দাঁত কেলিয়ে বলে, ‘দোলার বান্ধবীটাও সুন্দর। ও যদি আসতো তোর সাথে লিঙ্ক কইরা দিতাম। কিন্তু দোলা-ই প্ল্যানটা মাটি কইরা দিল।’
এতক্ষণে রহস্যের জট খোলায় আমি একটু স্বস্তি পেলাম। এটাও বুঝতে পারলাম মিলনতার গার্লফ্রেণ্ড পালটিয়েছে। এ পর্যন্ত ক’টা পালটাল আমি বলতে পারবনা। আমি মুন্নী, আইভি এবং রেক্সোনার কথা জানি। সদ্য বিগত মুন্নীতো বেশ মিষ্টি মেয়েছিল। কী পল্টিবাজী করল কে জানে।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সিগ্রেট টানার ফাঁকে ফাঁকে মিলন তার বিজনেস পার্টনারদের সাথে কথা বলে। তারপর আবার গজরাতে গজরাতে বলে, ‘আজকের দিনটাই বরবাদ হইয়া গেল; চল ডেরায় ফিরি।’
গাড়িতে উঠতে যাব অমনি মিলনের কাছে অপরিচিত নম্বর থেকে একটি কল আসে। অপরিচিত কল অনেকেই ধরে না। মিলন ওস্বাভাবিক ভাবে কলটি কেটে দেয়। কিন্তু পরমুহূর্তে আবার একই নম্বর থেকে কল এলে সে বিরক্ত হয়। তবে আমি তাকে কলটি রিসিভ করতে বলি।
মিলন হেলো বলতেই অপর প্রান্ত থেকে ঝড়ো গতিতে‘ মিলন ভাইয়া, শোনেন, আমি জবা, জবা বলছি…’আওয়াজ শোনা গেল।
মিলন ক্ষোভের সাথে বলে, ‘ও, তুমি জবা? কেন, কী হয়েছে?’
জবা বলে, ‘বিশ্বাস করুন ভাইয়া, দোলা না খুব টেনশনে আছে…।‘
‘হ্যাঁ জানি তো। দোলা দুলাভাইকে নিয়ে খুব টেনশনে আছে’, মিলনের শ্লেষাত্মক উত্তর।
‘জানেন, আমার আসার খুব ইচ্ছা ছিল।’ জবা বলে, ‘কিন্তু দোলার বাসায় পৌঁছেই দেখি ভয়ঙ্কর অবস্থা। দোলার দুলাভাইয়ের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ওরা সবাই হাসপাতালে। কী হয় কে জানে।’
মিলন জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি আমার নম্বর পেলে কোথায়?’
জবা জানায়, ‘দোলার কাছ থেকে নিয়েছি।’
‘ঠিক আছে, পরে কথা হবে। আজকের প্ল্যানতো ভেস্তে গেল।’ মিলন ‘বাই’ বলে জবার সাথে কথা শেষ করে।
মিলনের কথা শেষ হলে কী হবে, আমার বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে যায়। ইস্, এ-ই তাহলে সেই সুন্দরী! মিলনের গার্লফ্রেন্ডের বান্ধবী। আমার কপালটাই পোড়া। এই ঠেলাগাড়ি মার্কা জীবনে প্রেমটেম কিছুই তো হলনা। দুয়েক বার চেষ্টা করিনি এমন নয়। কলেজে পড়াকালীন সময়ে চামেলির সাথে যা-ও একটু ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম, শালার কোথা থেকে এক ভিলেন এসে ছোঁমেরে তাকে নিয়ে গেল। আসলে প্রতিযোগিতায় ওই কাউট্টা শফিকই জিতে গেল। তারপর বুড়িগঙ্গায় জলতো কম গড়াল না। আজ মিলনের দোলা যদি আসতে পারত তাহলে হয়তো আমারও একটা গতি হত।
মিলন রাজা বাজারে একটি ছোট ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে। ব্যাচেলরদের জন্য বাসা ভাড়া পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে তার এক বিজনেসপার্টনারের কল্যাণে। বিজনেস পার্টনার ওই ফ্ল্যাটটির মালিক। বিল্ডিংয়ের সবাই জানে মিলন ফ্ল্যাট মালিকের কাজিন। খাওয়া-দাওয়া প্রায়ই সে বাইরে সেরে নেয়। তবে মর্জিনা খালা প্রতিদিন সকালে এসে মিলনের ঘরদোর পরিষ্কার করে, কাপড় ধোয়, নাশতা তৈরি করে এবং কোনো দিন যদি তার বাইরে যাবার তাড়া না থাকে তবে দুপুরের খাবারও রান্না করে দিয়ে যায়। মর্জিনা খালা ছোটা কাজের ঝি।
আমি কয়েক বার মিলনকে বলেছি, ‘মালতো কম কামাস না, বিয়া করতে তোর অসুবিধা কী?’
সে বলে, ‘মাল দুই হাতে কামাই, এইটা তো তুই জানসই। তবে মাল কামাইলেই বিয়া করতে হইব এইটা কোনো যুক্তির কথা না। বিয়া যখন ইচ্ছা করতে পারুম, এত তাড়া কীসের? তুইতো আর জীবনের স্বাদ পাইলি না। আমি টাকা কামাইয়া নিয়া আইসা তোর ব্যাংকে জমা রাখি। যখন দরকার তুই গুনে গুনে দিবি। হাহাহা।’
মিলনের কথা সত্য। আমি যে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার সে ব্যাংকেই তাকে দিয়ে একটা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছি। ওপর মহলে হাত আছে এমন বড় চাঁইদের সাথে সখ্য গড়ে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে সে সাপ্লাইয়ের কাজ করে। কীভাবে একশ’ টাকার জিনিসের জন্য এক হাজার টাকার বিল করতে হয় এবং সে টাকা কী ভাবে ভাগ বাটোয়ারা হয় এসব গল্প সে কয়েক বার আমাকে শুনিয়েছে। আমার সে সব কাজ করার যোগ্যতা নেই, সাহসও নেই। আমি পেটে-ভাতে চলার মত একটা চাকরি করি। সে বড় বড় অংকের চেক আমার ব্যাংকে জমা দেয় এবং টাকা তুলতে গেলে আমিই তাকে টাকা গুনে দিই এ কথাই ঠিক।
শুক্রবার সকালে ফোন দেয় মিলন, ‘চলে আয়, দুপুরে আমার সাথে ডাইল-ভাত খাইবি।’
আমি বলি, ‘নারে, আজকে জুমার নামাজ আছে।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে, নামাজ পইড়া নিস আশে পাশের মসজিদে।’মিলন বলে, ‘কিন্তু খাইবি আমার সাথে।’
অগত্যা আমি আমার মোহাম্মদপুরের মেস থেকে ফার্মগেটে চলে যাই। সেখানে জুমার নামাজ শেষ করে মিলনের রাজা বাজারের ফ্ল্যাটে পৌঁছাই। মিলন নামাজ পড়েছে কিনা তা জানিনা, তবে সে আমার পৌঁছানোর অল্প আগেই বাইরে থেকে ফিরেছে তা বুঝতে পারি। তার ডাইনিং টেবিলের ওপর রসুই ঘরের চার প্যাকেট কাচ্চি বিরিয়ানি দেখতে পাই। বিরিয়ানির গন্ধে আমার নাড়ি ভুঁড়ি মোচড় দিতে আরম্ভ করে। আমি হাত দিয়ে প্যাকেটের ওম অনুভব করি।
মিলন আমার হাব ভাব লক্ষ করে আড় চোখে তাকিয়ে বলে, ‘একটু সবুর কর, টেবিলের পাশে ঘুর ঘুর করিস না; বস।’
আমি মিলনের ফোঁড়নে কান না দিয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘মেহমান আছে নাকি রে, চাইর প্যাকেট ক্যান?’
মিলন বলে, ‘ধৈর্য ধর, মেহমান তো আছেই। মেহমান আসলেই এক সাথে খাব।’সে আবার বলে, ‘আর শোন, চাইর প্যাকেট না, পাঁচ প্যাকেট আনছি। এক প্যাকেট দারোয়ান চাচারে দিছি। বুঝসনা এই সব লোকদের হাতে রাখতে হয়?’বলে, মিলন চোখ টিপ মারে।
আমার বুঝতে বাকি থাকে না যে মিলনের বিশেষ মেহমান আছে। তবে এ বিষয়ে আমি আর তাকে ঘাঁটাতে যাই না। আমি মনে মনে বলি মেহমান যত তাড়াতাড়ি আসে ততোই ভাল, কারণ খিদেয় আমার পেট চোঁ-চোঁ করছে।
হঠাৎ কল বেল বেজে উঠলে মিলন লাফ দিয়ে উঠে গিয়ে দরজা খোলে। কিন্তু দরজা খুলেই সে কিছু না বলে হা করে থমকে দাঁড়ায়। আমি তার বেডরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছি বলে বাইরের মেহমানদের দেখতে পাচ্ছি না।
তখনই এক নারী কণ্ঠ স্থবিরতা ভেঙ্গে বলে, ‘বুঝেছি, ওকে চিনতে পারছো না। বলব, তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য ওকে ধরে নিয়ে এসেছি।’
মিলন তখন দরজা থেকে সরে দাঁড়ালে দুটি মেয়ে এবং একটি ছেলে ঘরে ঢোকে। আমি তাদের কাউকে চিনিনা। তবে ধারণা করছি এর মধ্যে একটি অবশ্যই দোলা হবে। একই সাথে এ ভাবনাটাও মাথায় খেলে যায়, তবে কি অন্য মেয়েটি জবা!
ড্রয়িং-কাম-ডাইনিং রুমের গদি-আঁটা চেয়ারে খিল খিল করে মেয়ে দুটি বসে গেলে ও ছেলেটি ইতস্তত করতে থাকে। মিলন তখন বলে, ‘আরে বসুন না, বসুন।’ বলে সে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে একটি মেয়ের দিকে তাকায়। আমি তখন ধরে নিই ওই মেয়েটিই দোলা হবে।
তখন ওই মেয়েটি–যে আসলেই দোলা– বলে, ‘ও পিয়াস, জবার বন্ধু। তুমিতো জানতে না, তাই পরিচয় করার জন্যই নিয়ে এলাম।’
আমার বুকটা ধক করে ওঠে। আমি এক ধরণের আকুলতা নিয়ে জবার দিকে তাকাই। সত্যি মেয়েটি সুন্দর; টানা টানা চোখ, খাড়া নাক, ঠোঁট দুটি মোটাও না চিকন ওনা, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। মিলন নিশ্চয়ই জানত না যে দোলার বান্ধবী জবার কোনো বন্ধু আছে, নইলে সে দিন জবাকে নিয়ে সে এত কথা আমাকে বলত না। দোলার কথা শুনে মিলনের উজ্জ্বল মুখটাও মুহূর্তের মধ্যে ফস করে নিভে যায়। সে খুব সতর্কতার সাথে আমার চেহারা জরিপ করে নেয়। পরক্ষণেই সে আবার স্বাভাবিক উচ্চারণে বলে, ‘ও আচ্ছা!’
জবাই তখন হড়হড় করে বলতে থাকে, ‘আরে মিলন ভাই, আপনাকে সারপ্রাইজ দেব বলে আমি আর দোলা প্ল্যান করে পিয়াসকে ধরে নিয়ে এসেছি। ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। আমরা একই ফার্মে চাকরি করি।’
মিলন বলে, ‘আচ্ছা! তাহলেতো ভাল বন্ধুই, তাই না?’
দোলা তখন মুচকি হাসি দিয়ে বলে, ‘ঘনিষ্ঠ!’
আমি ওদের কাউকেই আগে দেখিনি। জবার সাথে আমার কখনও পরিচয় হয়নি, প্রেমতো দূরের কথা। তাহলে আমার এত খারাপ লাগছে কেন? আমার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ পেটে মোচড় দিলেও এখন খিদে টের পাচ্ছি না।
মিলন হয়তো আমার অবস্থা অনুভব করতে পারছে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমাকে দেখিয়ে হুট করে বলে, ‘আর হ্যাঁ, ও হচ্ছে কামরান, আমার বাল্য কালের বন্ধু, ব্যাংকে চাকরি করে।’
তখন জবার বন্ধু পিয়াস আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘নাইস টু মিট ইউ।’
আমিও তার দিকে ক্যাবলার মতো তাকিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিই। অন্তরে যতই জ্বলুনি থাক, আমার এছাড়া যে করার আর কিছুই নেই।
মিলন হয়তো পরিস্থিতি আরও হালকা করার জন্য গাঝাড়া দিয়ে বলে, ‘পরে গল্প করা যাবে। এখন চল, আমরা এইচার প্যাকেটকে পাঁচটা প্লেটে ভাগ করে নিই, আরেক প্যাকেট আনতে গেলে দেরি হয়ে যাবে।’
দোলা বলে, ‘না-না, কোনো দরকার নেই। ভাল ভাবেই হয়ে যাবে।’
মিলন পাক ঘর থেকে পাঁচটি প্লেট নিয়ে আসে এবং ফ্রিজ থেকে কোল্ড ড্রিংক্সের বোতল বের করে। তারপর তার মোবাইল ফোনটিতে কী যেন করে। কয়েক সেকেন্ড পরই তার ফোনে বেজে ওঠে:
‘যদি দেখার ইচ্ছা হয়
তোমার নিঠুর মনে লয়
কালিন্দীর ওঘাটে আইস দুপুরের সময়।
আমি জল ভরিবার ছল করিয়া
দেখব নয়ন ভরিয়া……।’