বিছানা কান্দির শীত সকাল

শীতের সকাল (জানুয়ারী ২০২৪)

Jamal Uddin Ahmed
  • 0
  • ৫৮
স্কুল মাস্টার মুহিত প্রায়ই স্কুল শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে ফরিদের সাথে হালকা আড্ডা দিয়ে যায়। গঞ্জের একমাত্র হার্ডওয়্যারের দোকানটির মালিক ফরিদ। কাটতি বেশ ভাল ।খদ্দেররা হিসেব করে দেখেছে, শহর থেকে মালামাল কিনে আনতে সব শুদ্ধ যে খরচ পড়ে প্রায় সে দামেই তারা তা ফরিদের দোকান থেকে পেয়ে যায়। তাহলে তারা সময় নষ্ট করে শহরে কেনই বা যাবে। তাছাড়া নিজের এলাকার দোকান হওয়াতে বাড়তি অনেক সুবিধাও পাওয়া যায়। মুহিত মাস্টারও বসে বসে চা খাওয়ার সময় অনেকবার দেখেছে ক্রেতাদের অনেকে রং, তারকাটা, পানিরকল, ইত্যাদি দোকানে ফিরিয়ে এনে পালটিয়ে অন্য জিনিস নিয়ে গেছে। কিংবা কখন ওকেউ প্রয়োজনের বেশি মালামাল কিনে নিয়ে গেলে উদ্বৃত্তটুকু ফরিদ রেখে দিয়ে ক্রেতার পয়সা ফেরত দিয়ে দিয়েছে। শহর থেকে মালামাল কিনে আনলে এসব সুবিধা পাওয়া যেত না।

শিক্ষকতার জন্য অল্পদিনেই মুহিত মাস্টারের একটা সম্মানজনক অবস্থান তৈরি হয়েছে। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীতো আছেই, তাদের বাবারাও মুহিতের সামনে পড়লে ভাল মন্দ কথা বলে, নিজের সন্তানের লেখাপড়ার খোঁজখবর নেয়। কেউ কেউ তাদের ছেলে মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্যও অনুরোধ করে। এমনকি তার সহপাঠী এবং বন্ধু ফরিদও তাকে আলাদা ভাবে খাতির করে। সে দোকান খোলার পরই মুহিতকে বলেছে, ‘মাস্টার, তুমি যত বড় পণ্ডিত হও না ক্যান ভুইলা যাইবা না তুমি আমার দোস্ত। ওইটাতো ঢাকা শহরের সাহেব অইয়া গেছে; ঈদ-পর্ব ছাড়া আর গেরামে আইবনা। কিন্তু আমরাতো কোথাও যামুনা। তুমি কিন্তু স্কুল শেষ কইরাই আমার দোকানে আইসা পড়বা। আড্ডা চলব।’ মুহিত এলাকার মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা আরম্ভ করার পর ফরিদ সাধারণত তারসাথে আর তুই-তোকারি করে কথা বলেনা। এটা মুহিত বুঝতে পারে এবং বিব্রতও হয়। তাই সে নিজেই তুই-তোকারির চর্চাটাকে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করে।

ওই ওইটা মানে রকিবুলের আসার কথা ছিল। এবার। এই শীতে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে বড়দিন, খ্রিষ্টীয় নববর্ষ এসব মিলিয়ে একসপ্তার ছুটির প্ল্যান করেছিল রকিবুল। হয়তোতা প্ল্যানেই আটকে গেছে; ছুটি মঞ্জুর হয়নি। নতুন চাকরি, তা-ও আবার সরকারি; জোরাজুরি করতে পারেনি। ফোন করলেই বলে, ‘দোস্ত, আরেকটু খাড়া, একটা ফাটা বাঁশের চিপায় আছি, আর কয়টা দিন।’ এখন ডিসেম্বর পেরিয়ে জানুয়ারির মাঝামাঝি। জানুয়ারির ভেতরে এলেও মন্দ হয়না। ইতিমধ্যে বিপুল বিক্রমে শীত ঝেঁকে বসেছে। ফরিদ আর মুহিব ঠিক করে রেখেছে রকিবুল এলেই তারা এবার বিছানা কান্দিতে বেড়াতে যাবে। চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলের আরও অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিছানা কান্দিতে তারা বেড়াতে যায়নি। অবশ্য রবিউল বলেছিল সিলেটের দিকে যেতে হলে তারা যেন ঢাকায় চলে আসে। কেননা, মানিকগঞ্জ থেকে তো উলটা পথে যাওয়া যাবেনা। কিন্তু মুহিব আর ফরিদের কথা হলো মানিকগঞ্জে কয়েক দিন নরক গুলজার করে তবে তারা বিছানাকান্দির উদ্দেশে রওয়ানা দেবে।

রকিবুলের ছুটি শেষ পর্যন্ত মঞ্জুর হয় জানুয়ারির মাঝামাঝি এসে, বসেরা ছুটি কাটিয়ে ফিরে এলে। তিন-চারদিনের আড্ডার পুরো সময়ই তারা কাটিয়েছে ফরিদের দোকানে। এছাড়া আর আড্ডা দেবার জায়গাই বা কোথায়? ফরিদকে সারাদিন দোকানে বসে থাকতে হয়; মুহিব স্কুলে। তবে সন্ধ্যায় জমে জমজমাট আড্ডা। গরম চায়ের সাথে পিঁয়াজু, পুরি, চিতই পিঠা, ভাপাপিঠা–যা মনচায়। ফাঁকে ফাঁকে বিয়ে শাদীর কথাও চলে।

ফরিদ বলে, ‘আমার বউতো কবেই ঠিক কইরা রাখছে বাবা-মা। খালি তোমরাই আমারে আটকাইয়া রাখছো।’

রকিবুল হেসে বলে, ‘ক্যান, আমরা কি তোর বাড়া ভাতে ছাই দিছি?’

ফরিদ বলে, ‘না, ছাই না। তয় আমি বলির পাঁঠা হমু আর তোমরা বইসা বইসা দেখবা তাতো অইব না।’

এবার মুহিব মুখ খোলে, ‘না দোস্ত, তুই আমাগো অপেক্ষায় না থাইকা কামটা করে ফেল। শীতের দিনে একটু ওম পাইবি।’

তারপর তিনজনই হো হো করে হেসে ওঠে।

শুধু ফরিদ না, রকিবুলের ওপর ওপরিবার থেকে চাপ আছে। ছুটিতে আসার পরদিনই অনানুষ্ঠানিক ভাবে একটি মেয়ে দেখানো হয়েছে তাকে। হয়তো বা এই সম্বন্ধ চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু মুহিবের কথা ভিন্ন। তার কিছু সমস্যা আছে। সে হুট করে বিয়ে শাদীর সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

রবিউল ট্রেনের টিকেট কেটেই নিয়ে এসেছিল। এদিকে বিছানাকান্দির উদ্দেশে যাত্রার আগের দিনই মুহিব জানিয়ে রেখেছে, সকালে তার বাড়িতে নাশতা করে তারা ঢাকার বাসে উঠবে এবং সেখান থেকে দুপুরের আন্তঃনগর ট্রেনে সিলেট। সিলেট থেকে ফিরে এসে রবিউল তার কর্মস্থল ঢাকাতেই থেকে যাবে। সেই মোতাবেক রকিবুল ও ফরিদ গাট্টি-বোঁচকা নিয়ে ভোর বেলা মুহিবের বাড়িতে উপস্থিত হয়।

মুহিবের পরিবার যে তত সচ্ছল নয় তা তাদের বাড়ি ঘরের অবয়ব দেখেই বোঝা যায়। পিতার অপমৃত্যু হলে দুই বোন ও মাকে নিয়ে মুহিব হতাশার অথৈ জলে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। সে ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিল না কিন্তু পিতৃ বিয়োগের ফলে তার পড়াশোনা ঝুঁকির মুখে পড়ে। তবে মাতুল দের আর্থিক সহায়তায় এবং উৎসাহে সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বি এস সি পাশ করে ফেলে এবং স্থানীয় মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে যায়। এতে সংসারের ভরণ পোষণের চাপ কমে যায় বটে। কিন্তু তার চেয়ে বড় আরও কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। শায়লাও রাহেলার লেখাপড়া এবং ক্রমানুসারে তাদের ভাই বোন তিনজনেরই বিয়ে। মা বলেছেন, শায়লার আর পড়াশোনার দরকার নেই; সে ইতিমধ্যে এইচ এস সি পাশ করে ফেলেছে। এখন যদি উপর ওয়ালা দয়াপরবশ হোন তবে একটা ভাল ছেলের হাতে তাকে তুলে দিতে পারলেই হয়। রাহেলা সবেমাত্র এস এস সি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। মায়ের ইচ্ছা, শায়লার বিয়েটা যেন আগে হয়ে যায়; মুহিব পুরুষ মানুষ, কিছুদিন পরে বিয়ে করলেও আসে যায়না। সরেজমিনে মুহিবের পরিবারের দৈন্যদশা প্রত্যক্ষ করে রবিউল বুকের ভেতর চাপা কষ্ট অনুভব করে।

বাড়ি ঘরে দারিদ্রের ছাপ থাকলেও ফরিদ ও রবিউলের আপ্যায় নেতাদের কমতি ছিলনা। মুহিবের মা নিজের ছেলের মতো করে তাদের আদর করে পিঠেপুলি, পরটা-সেমাই খাইয়েছেন। তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন। ভ্রমণ কালে সাবধানে থাকার কথা বলেছেন। হ্যাঁ, মায়ের সাথে শায়লাও রাহেলাও তাদের এটা-ওটা এগিয়ে দিয়েছে।

রকিবুল মুহিব ফরিদ ত্রয় সহপাঠীও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও তাদের মধ্যে পারিবারিক সংশ্লিষ্টতা তেমন ছিলনা বা হওয়ার প্রয়োজনও হয়নি। শায়লা বা রাহেলাকে ছোট বেলা কদাচিৎ দেখলেও ওদের কথার কিবুল খুব একটা মনেও রাখেনি। ফরিদ অবশ্য কখনও কখনও দেখেছে তবে সে তাদের কোনো রকমের ভাবনায় ধরে রাখেনি। কিন্তু মুহিবের বাড়িতে গিয়ে শায়লাকে দেখের বিউল চমকে ওঠে। তার কাছে মনে হয় সে যেন তাকে এই প্রথম দেখল। বেশ ভূষার কোনো ঔজ্জ্বল্য নেই, প্রসাধনীর প্রলেপ নেই, কিন্তু একহারা গড়নের উজ্জ্বল শ্যামলা শায়লাকে সতেজ প্রকৃতির মতো দেখাচ্ছিল। তাৎক্ষণিক ভাবে রবিউলের কিছু বলার না থাকলেও সে শায়লাকে লেখাপড়া সম্বন্ধে টুকটাক প্রশ্নকরেছে। বিব্রতকর প্রশ্ন হলেও শায়লা সহজভাবে উত্তরে জানিয়েছে যে ইন্টারমিডিয়েটের পর আর সে এগোয়নি।

ঢাকায় এসে বিকেল তিনটার কালনী এক্সপ্রেসে রওয়ানা হওয়ার আগে পর্যন্ত রকিবুল এক সুপ্তব্যাকুলতা নিয়ে ফরিদের সাথে একান্তে কথা বলতে চেয়েছে, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তাই ট্রেনে উঠে মুহিবকে অন্য যাত্রীর পাশে বসিয়ে রকিবুল ফরিদের পাশে বসে। রকিবুলের এরূপ সিটবণ্টন দেখে ফরিদ অল্প সন্দিগ্ধ হলেও মুহিব সানন্দে তা মেনে নেয়। অসুবিধা বলতে মাথা লম্বা করে ওদের একটু জোরে কথা বলতে হয়েছে তবে তা সারাক্ষণ নয়। গাড়ির ছন্দময় ঝাঁকুনিতে একটু ঝিমুনি এলে কেউ কেউ চোখ বন্ধ করেও আরাম বোধ করে। মুহিবও চোখ বুজে চুপ করে বসেছিল। এই সুযোগে রবিউল ফরিদের কানের কাছে মুখ নিয়ে তার দীর্ঘ সময় চেপে রাখা কথাটি বলার চেষ্টা করে। ঠিক তখনই রবিউলের ফোন বেজে ওঠে; মা ফোন করেছেন।

‘কিরে বাবা, সিলেটে পৌছাইগেছস?’

‘না, মামা। দেরিঅইব। একঘণ্টা আগে ট্রেনে উঠছি।’

‘জোরে ক। গাড়ির আওয়াজে কথা শোনা যায় না।’

রবিউল বলে, ‘মা, সিলেটে গিয়াই তোমারে ফোন দিমু।’

মা বলেন, ‘নানা। খাড়া। জরুরিকথা ।তোর বাপে ফোনে কথা কইতাছে, মেয়ের বাপের লগে। হেরা আমাগো মত জানতে চায়। তয়, আমরা হ কইয়া দিতাছি। তোর পছন্দ হইছে না?’

রবিউল হড়হড় করে বলে, ‘নামা। হইছে। তয় এত তাড়াহুড়া কইরো না। আমি সিলেটে যাইয়া লই। তারপর ধীরে সুস্থে তোমার লগে কথা কমু। ঠিকআছে?’

ছেলের উত্তর মায়ের পছন্দ হয়নি। তবুও তিনি বলেন, ‘আচ্ছাযা। গিয়াই ফোন দিস।’

ফরিদ মুচকি হেসে বলে, ‘কীরে, তুই রাজি না?’

রবিউল কিছু না বলে জানালার বাইরে আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর সেফরিদের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তোর সাথে আমার কথা আছে।’

ফরিদ বলে, ‘আমার লগে আবার কী কথা?’

রবিউল পাশের সিটে তাকিয়ে দেখে মুহিব হাবলার মতো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ গাড়ির ঝাঁকুনিতে হয়তো তন্দ্রাচ্ছন্নছিল। রবিউল তখন ফরিদের দিকে ফিরে বলে, ‘বলব, সিলেটে গিয়ে বলব।’

সচিবালয়ের একবড় সাহেবের পি ও হওয়ার সুবাদে সিলেটের সড়ক ও জনপথ বিভাগের রেস্টহাউসে থাকার ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছিল রবিউল। ট্রেন থেকে নেমেই তারা একটা সিএনজি অটোরিকশায় সোজা রেস্টহাউজে চলে যায়। তারপর তাড়া হুড়ো করে পাশের একটি রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে পড়ে। অবশ্য তাদের সিলেটে পৌঁছার সংবাদতারা ফোন করে বাড়িতে জানাতে ভোলেনা। রবিউলের মা দিনের বেলার কথার সূত্র ধরে ছেলের সাথে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলেন। রবিউল ক্লান্তির অজুহাতে রাতে আর কথা বলতে চায়নি।

জেলা প্রশাসনের পরিচিত এক কর্মচারী রবিউলের জন্য রেস্ট হাউজ, বিছানাকান্দির ট্রিপ এবং অন্যান্য যাবতীয় ব্যবস্থা করে রেখেছিল। সে অনুযায়ী রবিউলরা একটি ট্যুরিস্ট বাসের দলের সাথে সকাল সাড়ে আটটায় বিছানাকান্দির উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। রবিউলদের পরিকল্পনায় শুধু বিছানাকান্দিই ছিল। কিন্তু বাকি পর্যটকদের চাহিদানুযায়ী ফেরার পথে তারা রাতারগুলও দেখে আসবে। পরিকল্পনায় না থাকলেও রবিউলরা স্বচ্ছন্দেতা মেনে নিয়েছে।

পর্যটকদের হৈহুল্লোড়ে রবিউল গাড়িতে ফরিদের সাথে কথা বলার সুযোগই পায়নি। হাদার ঘাট নামক খেয়া ঘাটে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ও জটলা এড়ানো যায়নি। তবে নৌকাতে করে প্রকৃতির রূপ দেখে দেখে শেষ পর্যন্ত বিছানাকান্দিতে পৌঁছার পরপাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি ঝর্ণার স্ফটিক জলের ছোঁয়ায় সবার প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তাকে তাকে সাজানো পাহাড়ের গা কুয়াশার চাদরে ঢাকা। বর্ষা কালে সারি সারি পাহাড়ের সাথে মেঘেরা মিতালী করে–সে দৃশ্য শীত কালে দেখা যায়না। তবুও প্রাণের উচ্ছ্বাসে ছোট ছোট দলে কিংবা এককভাবে সবাই এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করে, জল ছিটায়, ছবি তোলে।

বিছানাকান্দির ঝর্নার জলের ওপর বিছানো শাদা পাথর সকাল বেলার রোদের ছোঁয়ায় চিকচিক করছে। পাথর আর জলের ওপর দিয়ে ছোটাছুটির ফাঁকে ফাঁকে যখন মুহিব মাস্টার মোবাইল ফোনে প্রকৃতির ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন রবিউল ফরিদের সাথে কথা বলার সুযোগ নেয়।

রবিউল ফরিদকে বলে, ‘দোস্ত, তুইতো বুঝস আমি এখন ইচ্ছা করলে অনেক ভাল পরিবারে বিয়া করতে পারুম। কিন্তু আমি মত পাল্টাইছি।’

ফরিদ ভ্যাবাচ্যাকার মতো বলে, ‘বুঝলাম না।’

‘দেখসনা মা ফোন কইরা কেমন কান ঝালাপালা কইরা ফালাইতাছে। ’রবিউল বলে, ‘হেরা মেয়েঠিক কইরা ফালাইছে। এখন আমার চূড়ান্ত মতের লাইগা অপেক্ষা।’

ফরিদ বলে, ‘তুই বইসা রইছস ক্যান। হ কইয়া দে।’

রবিউল বলে, ‘আমি সেই কথা নিয়াই তো তোর সাথে আলাপ করতে চাই। গতকাল থাইকা চেষ্টা করতাছি।’

‘আচ্ছা!’

রবিউল মুহিবের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে বলে, ‘কথাটা খুব সিরিয়াস। আমি স্থির সিদ্ধান্ত নিছি, মুহিবের ফ্যামিলির আপত্তি না থাকলে আমি শায়লাকে বিয়া করতে চাই।’

রবিউলের কথা শুনে ফরিদ শিউরে ওঠে। কিছুক্ষণ থেমে বলে, ‘তুই কি সত্যি কইতাছস? তোর মা-বাপ মানবো?’

রবিউল বলে, ‘মা-বাবাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। তুই শুধু ঘটকের কামটা কর।’

ফরিদ আবারও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, ‘হঠাৎ কইরা তোর এই সিদ্ধান্তের কারণ কী?’

রবিউল বলে, ‘মুহিব আমাগো বন্ধু না? তার পরিবারের অবস্থা আমরা জানিনা? তাছাড়া শায়লাকে দেখার পরই মনে হইছে এইরকম একটা মেয়েকে বউ হিসাবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এইটা প্রথম দর্শনের প্রেম নাকি অন্য কিছুতা কইতে পারুম না। তয় আমি তারে বিয়া করতে গেলে মুহিবের পরিবারের উপর কুনো চাপ পড়বনা এইটা তোরে কইতে পারি।’

রবিউলের কথা শেষ হলে তারা দুজন ঝর্ণার জলে পা ভিজিয়ে দুটি পাথরের ওপর চুপ করে বসে থাকে। ফরিদ এব্যাপারে কী কর্মপন্থা ঠিক করছে রবিউল তা জানতে পারছে না। তবে সে নিজে শাদা পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কল কলে জল তরঙ্গে দোদুল্যমান সাধারণ পোশাক পরিহিতা শায়লার সৌম্য ছবি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে। শায়লার হাসি মাখা মুখের ওপর শীত সকালের সূর্যের কিরণ যেন চিকচিক করছে।

হঠাৎ মুহিবের চিৎকারে ফরিদ ও রবিউলের ধ্যান ভঙ্গ ঘটে। মুহিব মোবাইলের ক্যামেরা তাদের দিকে তাক করে বলে, ‘অ্যাই, তোমরা কি এই খানে ঝিমাইতে আইছ। হাসো, হাসো, আমি ছবি তুলতাছি।’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Fahad Anwar চমৎকার।
ভালো লাগেনি ৯ জানুয়ারী, ২০২৪
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০২৪
Faisal Bipu এমাসে ভোট অফ?? দারুন লিখেছেন স্যার
ভালো লাগেনি ৪ জানুয়ারী, ২০২৪
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৫ জানুয়ারী, ২০২৪
জলধারা মোহনা সুন্দর গল্প। ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০২৪
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০২৪

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

রকিবুল হেসে বলে, ‘ক্যান, আমরা কি তোর বাড়া ভাতে ছাই দিছি?’

১৯ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্বাধীনতা”
কবিতার বিষয় "স্বাধীনতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারী,২০২৫