বৃষ্টিস্নান

বৃষ্টি ভেজা (জুলাই ২০২২)

Jamal Uddin Ahmed
  • 0
  • 0
  • ৩৫
কাঁঠালের গন্ধে ঘুম ভেঙ্গে যায় রাবিতার। কী ম-ম গন্ধ! এ ক’দিনের ঘামচুবানো গরমের পর পাগলা হাওয়ার তাড়া খাওয়া বৃষ্টি উপচে পড়ায় ঢাকার পাড়া-মহল্লায় নাতিশীতোষ্ণ বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। রাবিতা তার বেডের পাশের জানালাটি একটু ফাঁক করে ঠাণ্ডা হাওয়ার সাথে বৃষ্টির মৃদু ছাট মাখতে মাখতে কখন যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল তা বুঝতেই পারেনি। হতে পারে বৃষ্টির দিনে পেটে ভুনা খিচুড়ি একটু বেশিই পড়ে গিয়েছিল। তাই এক ঘুমেই সন্ধ্যা। তবে সাধারণত দিনের বেলা সে ঘুমায় না; এমন কি ছুটির দিনেও। আজও দুপুরে খাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে শুয়ে মেসেঞ্জারে রাব্বীর সাথে সে খুনসুটি করছিল।

চোখ কচলাতে কচলাতে একটু জোরে আওয়াজ করে রাবিতা মাকে জিজ্ঞেস করে, ‘কাঁঠাল কই পাইলা, মা?’

মা মাগরিবের নামাজের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। মেয়ের গলা শুনে বললেন, ‘ঘুম ভাঙছে তোর? নামাজ-কালামের তো টান নাই। উঠ, উইঠ্যা নামাজ পড়।’

রাবিতা বিছানা ছেড়ে সোজা ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে প্লেটভর্তি রসালো কাঁঠাল দেখে বলে, ‘খুব মিষ্টি গন্ধ তো, কিনছো নাকি, মা?’

‘না’, রাবিতার মায়ের উত্তর, ‘উপর তলার ভাড়াইট্যা পাঠাইছে।’

রাবিতাদের পাঁচতলা দালানের তৃতীয় তলায় রাবিতারা নিজে থাকে বাকি চারটা ফ্লোর ভাড়া দেয়া। রাবিতার বাবা হারুন সাহেব অল্প বয়সে হার্টফেল করে মারা যাবার আগে এই বিল্ডিংটা করে গিয়েছিলেন বলে তাদের পথে বসতে হয়নি। তবে দুঃখ-যন্ত্রণার বোঝাটি সরাসরি মায়ের ঘাড়ের ওপর পড়ে যায়। ওই বয়সেও মা বিয়ে করতে পারতেন। তিনি মাত্র দশ বছরের দাম্পত্য জীবন পেয়েছিলেন। কিন্তু ছোট দুটি সন্তান - রায়হান ও রাবিতাকে ফেলে রেখে তিনি নিজের সুখের সন্ধানে আর যাননি।

হঠাৎ করে সংসার সমুদ্রে পড়ে প্রথম ক’বছর মা অমানুষিক কষ্ট করেছেন। অর্থকষ্ট তেমন না হলেও একটা স্থাপনার সার্বিক ব্যবস্থাপনা একজন আনাড়ি মেয়েমানুষের জন্য যে কত বড় ধকল শুধু ভুক্তভোগীরাই তা জানে। তবে রাবিতার মামা ছয়মাস ধরে তার মাকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে অফিস-আদালতে গিয়ে বাড়ি সংক্রান্ত সব কাগজপত্র ঠিকঠাক করে দিয়েছিলেন বলেই রক্ষা। নইলে ঢাকা শহরে বিধবা-অনাথরা নিজেদের সম্পদ ধরে রাখতে পারবে তা ভাবাই যায় না। তবুও ভাড়াটেদের সাথে লেনদেন, দালানের রক্ষণাবেক্ষণ, ট্যাক্সের ঝামেলা, ব্যাংকে যাওয়া আসা, ইত্যাদি রয়েই যায়। সর্বোপরি সন্তানদের লেখাপড়ার সামগ্রিক ঝামেলা। রায়হানের বেলা ততটা না হলেও রাবিতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত মাকে মেয়ের পিছু পিছু ছুটতে হয়েছে সবসময়। এখন আর মেয়ের পেছনে ছুটতে না হলেও ছেলে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যাবার পর মায়ের আবার সাংসারিক ঝামেলা বেড়েছে। ছেলে একটু বড় হওয়ার পর মা অনেকটা রেহাই পেয়েছিলেন। এখন গ্রামের দূরাত্মীয় রফিককে বাসায় নিয়ে এলেও সব কাজ তাকে দিয়ে হয় না। তাকে আবার স্কুলেও যেতে হয়। লেখাপড়া করানোর শর্তেই তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।

সন্ধ্যায় বৃষ্টির তোড় আরোও বেড়ে যায়। কাঁঠাল রাবিতার খুব পছন্দ। আজকের কাঁঠালটি খুবই সুস্বাদু; রাব্বীর দাদার বাড়ি মাধবপুর থেকে এসেছে। সে মুড়ি দিয়ে গপগপ করে বেশ কয়েকটি কোয়া খেয়ে ফেলে। রফিক পাশ দিয়ে যাবার সময় দাঁত কেলিয়ে বলে, ‘আপা, সব খাইয়া ফেইলেন না; আম্মার জন্য রাইখেন।’

রাবিতা কপট ধমক দিয়ে বলে, ‘বান্দর, ঘুরঘুর করতেছস, নিজে খাইবি কইতে পারস না? যা একটা বাটি নিয়ে আয়।’

মা তখনও জায়নামাজে বসে তসবিহ জপছিলেন। তিনি ওদের কথা শুনতে পেয়ে আদেশের সুরে বলেন, ‘রফিক, কাঁঠাল খাইয়া তাড়াতাড়ি পড়তে বস।’

গ্রামের স্কুল থেকে ষষ্ট শ্রেণি পাশ করে ফেললেও মোহাম্মদপুর স্কুলে ক্লাস সিক্সেই ভর্তি করানো গেছে রফিককে। রাবিতাই ষ্টীমরোলার চালিয়ে তাকে শহরের স্কুলের জন্য মানানসই করে তুলছে।

চতুর্থ তলার ভাড়াটে রাব্বী তার মাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছে প্রায় ছয় মাস আগে। চট্টগ্রামে নিজের বাড়ি ফেলে মা ঢাকায় আসতে চাননি। কিন্তু ছেলের পীড়াপীড়িতে এই ভাড়া বাসায় এসে উঠেছেন; ছেলে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকায় বসে নাকি প্রস্তুতি নিতে সুবিধা বেশি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পাশ করা রাব্বী বাবার ব্যবসায়ে যেতে অনিচ্ছুক। সে বলেছে, ‘তোমাদের মেয়ে, মেয়ে জামাইরা আছে, ওদের ডেকে বসিয়ে দাও; ওরা তো এক পায়ে খাড়া।’

ভাড়াটে হিসেবে একই দালানে বাস করলে মালিকের পরিবারের সাথে যোগাযোগ থাকা খুবই স্বাভাবিক। তাছাড়া তা যদি হয় উপর-নিচ তলার ব্যাপার। সঙ্গত কারণে রাব্বীর মা আর রাবিতার মায়ের মধ্যে ভাব হয়ে যায় খুব সহজেই। তাই শুধু আম-কাঁঠালই না, আরোও অনেক টুকটাক কিছু দুই পরিবারের মধ্যে লেনদেন হয়। তবে একটা ব্যাপারে দুই মা-ই খুব সচেতন। তাদের ছেলে-মেয়ে দুটির ওপর নিজ দায়িত্বে তারা কড়া নজর রাখেন। ভাড়া সংক্রান্ত বা অন্য কোনো সমস্যায় মহিলারাই দু’জন দুজনের সাথে কথা বলেন।

আজ আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে, যেন থামবার নাম নেই। রাবিতা রফিকের দুটি অংক বুঝিয়ে দিয়ে বাকিগুলো ঠিকমত করার নির্দেশ দিয়ে বারান্দায় চলে আসে। তাজমহল রোডের স্বাভাবিক ব্যস্ততা নেই। তবুও বৃষ্টি উপেক্ষা করে দু’চারটা রিক্সা-অটোরিকশা আসা-যাওয়া করছে। রাবিতা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিধারার শিহরণ অনুভব করে। মাঝে মাঝে শিশুদের মতো পুরো মুখে জল মাখে। ছোটবেলা থেকে বৃষ্টি খুবই পছন্দ রাবিতার। বৃষ্টিতে ভেজার জন্য আগে প্রায়ই ছুটে যেত ছাদে। রায়হানও তার সাথে যোগ দিত মাঝে মাঝে; তবে সব সময় না। মায়ের জন্য এখন আর সেই ছেলেমানুষি করতে পারে না। একটু বড় হতে না হতেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যায়। তবুও মাঝে মাঝে মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে এখনও ভিজতে ছুটে যায় সে। আজকের এই সন্ধ্যায় বৃষ্টির রুপালি ধারায় গা ভেজাতে তার খুব ইচ্ছে করছে।

‘বাচ্চাদের মতো পানি লইয়া খেলা করস?’

রাবিতা চমকে উঠে দেখে মা এসে দাঁড়িয়েছেন পেছনে। সে আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলে, ‘মা, একটু ছাদে গিয়া ভিজে আসি?’

মা ঠোঁট বাঁকা করে বলেন, ‘ঢং কত! অসুখ বান্দানোর শখ অইছে?’

‘আরে, এখন তো অন্ধকার। আমি ভিজলেও কেউ দেখব না’, রাবিতা বলে।

মা মুখ ঝামটা দিয়ে বলেন, ‘চুপ কর। টেবিলে চা রাখছি। ভিতরে আয়।’

রাবিতা এক ঝটকায় রফিকের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘অংক শেষ?’

রফিক বলে, ‘আর একটা আছে, আপা।’

রাবিতা ধমক লাগায়, ‘তাড়াতাড়ি শেষ কর; আমি চা খাইয়া আসতেছি।’ বলে, ডাইনিং টেবিল থেকে চায়ের কাপ নিয়ে সে তার রুমে চলে যায়।

চা খেতে খেতে মোবাইল ফোন টিপে ইউ-টিউবে জয়তী চক্রবর্তীর গাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীত গহন ঘন ছাইল গগণ ঘনাইয়া… ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে খাটের ওপর বসে থাকে রাবিতা। তার মনটা আজ কেমন কেমন করছে। রাব্বীর কথা খুব মনে পড়ছে। রাব্বী বিকেলে বেরোনোর আগে মেসেঞ্জারে টেপাটেপি করেছে দুজন; এখনও সে ফেরেনি নিশ্চয়। আর ফিরলেও কাকভেজা হয়ে ফিরেছে। কাল তার বাবা আকমল সাহেব আমেরিকা থেকে ফিরবেন বলে একটু ব্যস্ততাও আছে তাদের বাসায়।

মায়েরা চোখ খোলা রাখলে কী হবে? তাদের দৃষ্টি আর কতদূর যাবে? সিঁড়িতে, রাস্তায়, দোকানে, টিএসসিতে ওদের কতবার দেখাদেখি, চোখাচোখি, বাৎচিত হওয়ার পর এখন যে ওরা হৃদয়ের একদম কাছাকাছি এসে পড়েছে সেকথা রাবিতা ও রাব্বীর মা’রা অনুমান করতে পেরেছেন কি না তা এখনও বুঝা যাচ্ছে না।

প্রথম দেখাতেই যে তারা জেরবার হয়ে গিয়েছিল, এমনটি নয়; সম্পর্কটা ঘন হয়েছে গত দু’মাসে। এ সময়ে অন্তত চারবার তারা দু’জন একসাথে ঘুরেছে, রেস্তোঁরায় খাওয়া-দাওয়াও করেছে এবং অনেক অনেক গল্প করেছে। রাবিতা খাবারের বিল দিতে চাইলেও রাব্বী তাকে থামিয়ে দিয়েছে।

সেদিন মেঘলা আকাশ মাথায় নিয়ে রিক্সায় করে বাসায় ফিরছিল তারা। বৃষ্টি না থাকলেও শিশিরের মতো কিছু কণা ঝরছিল অবশ্য। রাব্বী রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে, ‘পলিথিন আছে, মামা?’

রিকশাওয়ালা বলে, ‘কুনু চিন্তা নাই মামা, ফেরেস পলিথিন আছে।’

রাব্বী বলে, ‘যাক বাঁচা গেল। বৃষ্টি এলে হুড নামিয়ে পলিথিন জড়িয়ে বসতে পারব।

‘না বাবা, হুডের নিচে আমি বসতে পারব না; আমি রিক্সা থেকে নেমে যাব’, বলে, রাবিতা কপট হাসে।

রাব্বী তৎক্ষণাৎ বলে, ‘ওহ্‌, আমি ভুলেই যাই যে তুমি পরনারী।’

তারপর দুজন হেসে ওঠে।

রাবিতা একটু পর বলে, ‘এই যে আপনি বিসিএসের নাম করে ঢাকায় এসে প্রেম করছেন, বাসায় যদি জানে, অবস্থা কী হবে ভেবেছেন?’

রাব্বী রেগে গিয়ে বলে, ‘তোমাকে না কতবার বলেছি আপনি আপনি করবে না!’

‘বাসার হ্যাপা তো আছেই, আপনার মানে তোমার বাবা যখন আমেরিকা থেকে ফিরে এসে দেখবেন যে ছেলে ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে, তখন?’

রাব্বীর বাবা আকমল সাহেব ব্যবসার কাজে যখন বাইরে যান তখন লম্বা সময় বাইরে থাকেন। ইউরোপ আমেরিকার বায়ারদের সাথে তার পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। বিরাট অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির মালিক তিনি। বেশ ক’টি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড কোম্পানি তার ক্লায়েন্ট। প্রায় তিন মাস আগে ইউরোপ হয়ে আমেরিকা যাবার আগে তিনি ঢাকায় এসে দু’তিনদিন থেকে গিয়েছেন। বাড়িওয়ালার সাথে তার কথা বলার বা দেখা করার কোনো উপলক্ষ হয়নি। তবে ইতিমধ্যে রাব্বীর কাছ থেকে তার পরিবারের সবকিছু জানা হয়ে গিয়েছে রাবিতার। রাব্বীর বড় বোন থাকে ফ্লোরিডায়, ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে বছরখানেক আগে, চট্টগ্রামেই। রাবিতার ভাইয়ের কথা রাব্বী তার মায়ের কাছ থেকে আগেই শুনেছে।

রাব্বী বলে, ‘বাবা তোমাকে দেখলে ছেলের বউ করার জন্য পাগল হয়ে যাবেন।’

রাবিতা রাব্বীর পায়ে কিল মেরে বলে, ‘তুমি পাগল!’

‘আমার পাগলামির কিছু নেই।’ রাব্বী বলে, ‘যা সত্য তাই বললাম। কী সৌভাগ্য আমার, তোমার মতো সুন্দরীর ভাড়াটে হতে পেরেছি।’

রাবিতা খিলখিল করে হেসে উঠে দেখে রিক্সা শিয়া মসজিদের সামনে চলে এসেছে। সে তখন হড়বড় করে রিকশাওয়ালাকে বলে, ‘মামা! থাম!’

একটু আগেভাগে থামতেই হবে। রাব্বীও তাই রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ে। রিক্সার ভাড়া দিতে দিতে রাবিতার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে সে বলে, ‘বৃষ্টিতে আজ ভিজতে পারলাম না।’

রাবিতাও চোখ মটকায়। তারপর ‘আমার একটু কাজ আছে’ বলে দ্রুত বাসার দিকে হেঁটে চলে যায়।

চোখ বন্ধ করে গান শুনতে শুনতে রাবিতার সেদিনের কথা মনে পড়লে তার ঠোঁটে একটু টুকরো লাজরাঙ্গা হাসি খেলা করে। সেদিন যদি বৃষ্টি এসে যেত তাহলে কী যে হত! কিন্তু আজ কেন তার উলটো ভাবনা হচ্ছে? সে ভাবছে, আজ যদি রাব্বীকে নিয়ে ছাদের ওপর বৃষ্টিস্নান করতে পারত! পাখির ডানার মতো দু’হাত মেলে দিয়ে তাকে বলত, ‘বৃষ্টিতে ভেজার সাধ মিটল তো?’

বৃষ্টি তখনও থামেনি। হঠাৎ রাবিতার মনে এক দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল। সে রাব্বীকে টেক্সট করল, ‘তুমি এখনও কি বাইরে?’

‘ভিজে জবজবে হয়ে একটু আগে ঘরে ঢুকেছি’, রাব্বী লিখল।

রাবিতা আগপাছ না ভেবে সাথে সাথে লিখল, ‘আমি ছাদে বৃষ্টিতে ভিজতে যাচ্ছি।’ মেসেজ পাঠানোর পর তার বুকটা ধক করে উঠল। হায় হায়, কী দুঃসাহস! সে দৌড়ে এসে রফিকের অংক দেখতে বসে গেল। ওদিকে তার স্মার্টফোনে টুং টুং করে মেসেজ আসছে; কিন্তু সে খুলে দেখছে না। সে রফিককে বলল, ‘গুড, অংক ঠিক আছে। এখন ইংলিশ গ্রামার বের করে টেন্‌স দেখ।’

রফিককে বসিয়ে রেখে রাবিতা কায়দা করে দেখে নিল মা বাতি নিভিয়ে ইউটিউব থেকে কোন এক হুজুরের ওয়াজ শুনছেন। সে তখন চুপ করে দরজা খুলে ভোঁ দৌড়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে চারতলা পাঁচতলা ফেলে ছাদের আটকানো দরজার সামনে গিয়ে হাঁপাতে থাকে। সিঁড়ির দরজার সামনে কোনো বাতি নেই। অন্ধকারে খুব সাবধানে লোহার তৈরি দরজার ছিটকিনি খুলে যখন সে ছাদে দাঁড়াল তখন আর মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে না। তবুও যেটুকু আছে তাতেই সে কানামাছি ভোঁ ভোঁ-র মতো ঘুরে ঘুরে বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করতে লাগল।

মিনিট পাঁচেক পর সম্বিৎ ফিরে এলে রাবিতা ভাবল, হায় হায় কী সব্বোনাশ! মা যতি ডেকে না পায়! সে আবার সিঁড়িমুখো হয়ে দৌড় দিতে গিয়েই ভূত দেখার মতো ভয় পেয়ে থমকে দাঁড়াল। আবছা আলোতেও সে স্পষ্ট বুঝতে পারল দরজায় রাব্বী দাঁড়িয়ে। রাব্বী আস্তে করে বলল, ‘ভয় পেয়ো না, আমি ভূত নই। আমি তোমার সাথে ভিজতে এসেছি।’

রাবিতার ধুকপুকানি এত বেড়ে গেছে যে সে রাব্বীকে সে প্রায় ধাক্কা দিয়ে বলে, ‘প্লিজ, আমি যাই, মা কেটে ফেলবে।’

রাব্বী দরজা না ছেড়ে বলে, ‘আরে একটু দাঁড়াও না, চল, এক মিনিট, মাত্র এক মিনিট ভিজি।’ তারপর সে রাবিতার দু’হাত খপ করে ধরে তাকে খোলা আকাশের নিচে নিয়ে আসে।

রাবিতা জোরাজুরি করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে; ভয়ে মুখ দিয়েও কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না।

রাব্বী রাবিতার দু’হাত টেনে নিয়ে আকাশের দিকে তুলে ধরে বলে, ‘দেখ, বেহেশতের ঝর্ণার জল কেমন করে ঝরছে!’

রাবিতার স্বর্গের দিকে তাকাবার ফুরসৎ নেই। তবে রাব্বীর চেহারায় তার দৃষ্টি কয়েক মুহূর্তের জন্য আটকে যায়। দূর থেকে বিচ্ছুরিত সড়কবাতির মৃদু আলো পড়ে রাব্বীর বৃষ্টিভেজা মুখ চকচক করছে। রাবিতা ভাঙ্গা গলায় বলে, ‘আমি যাই।’

রাব্বী তাদের আকাশে তোলা যুথবদ্ধ হাত নামিয়ে বলে, ‘যাবে?’

রাবিতা রাব্বীর চোখের দিকে তাকায় বটে, কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না।

রাব্বীও আর কিছু না বলে রাবিতার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এভাবে তারা কতক্ষণ ছিল তার হিসেব কেউ রাখেনি। তবে এক ঝটকায় যখন রাবিতা ছুটে পালায় তখন হয়তো তারা বুঝতে পারে নিজেদের অজান্তেই দুজন দুজনের আলিঙ্গনে বাঁধা ছিল; তাদের ওষ্ঠাধরও তখন হয়তো নিজেদের ভৌগলিক সীমারেখা অতিক্রম করেছিল।

রাবিতা চতুর্থ তলা পেরিয়ে যাবার সময় দেখে রাব্বীর মা দরজা খুলে যমদূতের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। সে থতমত হয়ে বলে, ‘স্লামালেকুম, আন্টি।’

রাব্বীর মা বলেন, ‘ওয়ালাইকুম, কেমন আছ মা? এ তো দেখি ভিজে একাকার!’

রাবিতার ছেড়ে দে মা অবস্থা। সে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে নামতে নামতে ব্যাকরণ গুবলেট করে বলে, ‘ছাদে… বৃষ্টিতে ভিজতে…।’

রাব্বীর মা’র আন্দাজ পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি যেন ছেলের অবস্থান নিশ্চিত হয়েই হাঁক পাড়েন, ‘রাব্বী, বাসায় আয়…।’

আকমল সাহেব দু’দিনের বেশি ঢাকায় থাকতে পারবেন না; তাকে চট্টগ্রাম যেতেই হবে। তাই যাবার আগের দিন সন্ধ্যায় বাড়িওয়ালার সাথে একটু পরিচিত হতে চান – এভাবেই রাবিতার মাকে বলা হয়েছে। এবং কথানুযায়ী রাব্বীর মা-বাবা দুজনই রাবিতাদের অর্থাৎ বাড়িওয়ালার বাসায় গিয়ে হাজির হন। হাতে করে স্বামীর আনা একটি ফ্র্যাগরেন্স ও একটি বডি লোশন নিয়ে আসতে ভুলেননি রাব্বীর মা।

চা-নাশতা খেতে খেতে টুকটাক খোশগল্প করার সময় রাবিতাও বার-দুয়েক এসে মাকে মেহমানদারিতে সাহায্য করে গিয়েছে। আকমল সাহেব ব্যবসা ছাড়া অন্য কিছু মাথায় ঠাঁই না দিলেও বাকপটুতায় কম যান না। গুছিয়ে কথা বলতে পারেন খুব। রাবিতাকে অনুসন্ধানী চোখে পরখ করার সাথে সাথে ‘মা-মনি কেমন আছ’, ‘কী পড়ছ’, ‘পড়াশোনা শেষ করে কী করবে ভাবছ’ এই গোছের কিছু কথাবার্তা তিনি বলেন।

‘এখন কী করব?’ ছাদ থেকে ফিরে এসে রাবিতার পাঠানো এ প্রশ্নের উত্তরে রব্বীর টেক্সট ছিল, ‘কিছুই করবে না, চুপ করে থাক। মা আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করেননি।’ আজ দুপুরেও রাবিতা জিজ্ঞেস করেছিল, ‘ঘরের অবস্থা কেমন?’ উত্তরে রাব্বী বলেছে, 'একদম স্বাভাবিক।' তারপরও রাব্বীর মা-বাবা তাদের বাসায় আসার কথা শুনে উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিল রাবিতা। যদিও কনের মতো সাজেনি, তবুও সুন্দর জামা-কাপড় পরে সে পরিপাটি হয়েছে। আর কিছু না হলেও গণ্যমান্য গেস্ট আসবে বাসায়।

কথার ধারাবাহিকতায় আকমল সাহেব বলেন, ‘দেখুন ভাবী, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ্‌ ভাইকে পছন্দ করে তুলে নিলেও আপনাকে সসম্মানে চলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এই আমার কথাই ধরুন না, দেশে সবে গার্মেন্টসের ব্যবসা শুরু হয়েছে, মানুষ তেমন চিনতও না বুঝতও না। আমি তখন চাকরি করার জন্যই ঢাকায় একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতাম। এ চাকরির কোনো দাম ছিল না বাজারে। কেউ সাহস করে মেয়েও দিত না।’ তারপর হা-হা করে হেসে উঠে তিনি আবার বলেন, ‘আপনাদের দোয়ায় আমি এখন একটি মাল্টিপারপাস গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির মালিক; দুই হাজার লোক কাজ করে আমার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।’

কিছুক্ষণের গল্পগুজবে রাবিতার মা’রও আড়ষ্টতা অনেক কেটে গেছে। আকমল সাহেব কথা বলার সময় তিনি কয়েকবার সরাসরি তার দিকে তাকিয়েছেন। ভদ্রলোকের শরীরটা মেদবহুলই বলা যায়। অসুখ-বিসুখ আছে কি না কে জানে। মাথার তালুতে চুল নেই বললেই চলে। মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা তাকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন করে তুলেছে। আকমল সাহেবের কথা শেষ হলে রাবিতার মা বলেন, ‘আমারও এক মামাতো ভাই একসময় গার্মেন্টসে চাকরি করতো।’

‘তাই নাকি?’ আকমল সাহেব বলেন, ‘তা, এখন কি গার্মেন্টস সেক্টরে তিনি নেই?’

রাবিতার মা বলেন, ‘না, পরে সে আমেরিকা চলে যায়, ওপি ওয়ানে।’

আকমল সাহেব বলেন, ‘ইন্টারেস্টিং! আমার সাথের অনেকেই বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।’

এসময় রাবিতার মাকে একটু অন্যমনস্ক দেখায়।

রাব্বীর মা পুরো সময় ধরে তেমন কিছু বলেননি। তিনি এ মুহূর্তে স্বামীর দিকে ঘুরে আস্তে করে বলেন, ‘চল, এখন বাসায় যাওয়া যাক।’

‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই’ বলতে বলতে আকমল সাহেব গাত্রোত্থান করেন। তারপর রাবিতার মায়ের দিকে তাকিয়ে কণ্ঠস্বর নামিয়ে বলেন, ‘তবে আপনার কাছে একটা জিনিস আমার চাওয়ার ছিল, ভাবী।’

রাবিতার মা চমকে উঠে বলেন, ‘কী ভাই?’

আকমল সাহেব তার স্ত্রীর দিকে অনুমতি চাওয়ার ভঙ্গিতে তাকালে তিনি মাথা নেড়ে সম্মতি দেন। তখন আকমল সাহেব একটু কেশে নিয়ে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আপনি রিফিউজ করবেন না। আপনার মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি ওকে আমার ঘরে নিতে চাই।’ রাবিতার মা কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে তিনি বলেন, ‘আমি শেষ করে নিই। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ্‌ আমাকে যা দিয়েছেন, আমার ছেলে যদি কিছু না-ও করে তবে তা দিয়ে হেসেখেলে তাদের জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।’

রাবিতার মা আবার কিছু বলতে চাইলে রাব্বীর মা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন থেকে বিষয়টা নিয়ে আমি ভাবছি, শুধু রাব্বীর বাপের অপেক্ষায় ছিলাম। আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না, ভাবী।’

তারপরও রাবিতার মা জোর করে বলেন, ‘আমার মেয়ের সাথে একবার কথা বলব না, ভাবী?’

রাব্বীর মা বলেন, ‘একবার না আপনি একশ’ বার বলুন, তবে মেয়েটি আমাদের।’

স্ত্রীর কৌশলী কথা শুনে আকমল সাহেব হা-হা করে হেসে ওঠেন।

মেয়েকে এক সময় বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এভাবে হুট করে একটা ঘটনা ঘটে যাবে রাবিতার মা ভাবেননি। আর ওই ছেলেটাকে কয়েকবার দেখলেও সালাম বিনিময় ছাড়া তেমন কোনো কথা হয়নি তার সাথে। তবে ওরা যে ফেলনা লোক নয় ইতিমধ্যে এই প্রতীতি তার জন্মেছে। ভয় ছিল মেয়ে যদি বেঁকে বসে; বলা তো যায় না, এ যুগের মেয়ে। যাক, মেয়েটা পড়ালেখা শেষ হয়নি বলে মৃদু আপত্তি করেছে মাত্র। মা তিরস্কারের সুরে রাবিতাকে বলেছেন, ‘পড়ালেখা তোর আটকে থাকবে না; চুপ করে থাক।’

ঘুমানোর সময় রাবিতার মায়ের বুকটা হাহাকার কর ওঠে। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলে যে তিনি একা হয়ে যাবেন। ছেলে লেখাপড়া শেষ করে কবে দেশে ফিরবে, নাকি জার্মানিতেই অবশেষে সেটেল করবে, কে জানে। আজ তিনি রাবিতার বাবার অনুপস্থিতি খুবই অনুভব করছেন। আপনা আপনি দুচোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রুও গড়িয়ে পড়ে।

সন্ধ্যায় আকমল সাহেবের একটা কথাও রাবিতার মায়ের মনে খচ করে বিঁধেছে। প্রায় ভুলে যাওয়া একটি ঘটনা তাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। গার্মেন্টসে কাজ করা তার মামাতো ভাই আউয়াল যখন তার এক সহকর্মী ও বন্ধুর জন্য প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল, তখন তার বাবা অর্থাৎ রাবিতার নানা মুখের ওপর ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। গার্মেন্টসে কাজ করা ছেলের বর্তমানই কী আর ভবিষ্যৎই কী? ওই ছেলেটার সাথে রাবিতার মায়ের দুয়েকবার দেখা হলেও তেমন বেশি কথাবার্তা হয়নি। তিনি তখন ইডেনের ছাত্রী ছিলেন। তার বান্ধবী মরিয়মের সাথে আউয়াল ভাইয়ের লটরপটর চলছিল। তার মাধ্যমেই মরিয়মের সাথে আউয়াল ভাইয়ের যোগাযোগ হত। মাঝে মাঝে আউয়াল ভাইয়ের সাথে তার বন্ধুও নিউমার্কেটে আসত। ছেলেটার নামও রাবিতার মা ভুলে গিয়েছেন। পারিবারিক প্রত্যাখ্যান রাবিতার মায়ের মনে তেমন রেখাপাত করেনি, কেননা ছেলেটির সাথে তার কোনো দহরম মহরম ছিল না। কিন্তু আকমল সাহেব যেভাবে তখনকার দিনের গার্মেন্টস কর্মীর বাজারমূল্য নিয়ে কথাটা বললেন তাতে তার মনে হয়েছিল তিনিই ছিলেন সেই ছেলেটি। তারপর আকমল সাহেবকে ভালভাবে নিরীক্ষণ করলেও রাবিতার মা তাকে তার আবছা স্মৃতির পাণিপ্রার্থীর সাথে মেলাতে পারেননি।

এসব হাবিজাবি ভাবতে গিয়ে রাবিতার মায়ের চোখে ঘুমও আসছে না। হঠাৎ তার মনে হল, এমনও হতে পারে, সময়ের ধুলো জমে সেদিনকার ভদ্রলোকটি আজকের এই থলথলে আকমল সাহেবে পরিণত হয়েছেন। হয়তো আকমল সাহেবই সেদিনকার সেই লোক যিনি তাকে বিয়ে করার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলেন। এবং তিনি তাকে চিনে ফেলেছেন – নইলে পুরনো প্রসঙ্গ টানবেন কেন? আকমল সাহেবের শারীরিক পরিবর্তন প্রভূত পরিমাণ হলেও বয়সের ভার ছাড়া রাবিতার মায়ের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

সকালের ফ্লাইট ধরার জন্য আকমল সাহেব সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে রাবিতাদের ডোরবেল চাপেন। লাগেজ নিয়ে রাব্বী ও তার মা-ও নিচে নামছেন। রাবিতার মা দরজা খুলতেই আকমল সাহেব হৈ হৈ করে উঠলেন, ‘যাচ্ছি ভাবী, আসসালামু আলাইকুম, খুব শীগগিরই ফিরব।’

মায়ের পিছন থেকে রাব্বীও একটু লাজুক ভঙ্গিতে বলল, ‘স্লামালেকুম আন্টি।’

রাবিতার মা রাব্বীর মুখের দিকে তাকিয়ে সালামের জবাব দিতে দিতে আকমল সাহেবের উদ্দেশে হাত নাড়লেন।

রাব্বীর মা বললেন, ‘দোয়া করবেন।’

রাবিতার মা ‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই’ বলতে বলতে দরজা ভেজিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন। রাবিতাকে ফ্রিজের আড়ালে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে কিছু বলতে গিয়েও না বলে নিজের রুমের দিকে চলে যান। তিনি ভাবেন, সন্তানের আনন্দেই মা-বাবার সুখ। আকমল সাহেব যে-ই হোন না কেন, তাকে নিয়ে আর তিনি গবেষণা করবেন না; অতীতকে খোঁড়াখুঁড়ি করে তিনি আর রক্তাক্ত করতে চান না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

১৯ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৬৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ভালবাসা”
কবিতার বিষয় "ভালবাসা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারী,২০২৫