ভালবাসার ডিজিট

ডিজিটাল ভালবাসা (নভেম্বর ২০২১)

Jamal Uddin Ahmed
  • 0
  • ৩১
১.
‘কী করেন?
‘একটু কাজ ছিল। কেমন আছ?
‘কী কাজ? কবিতা লেখেন?’
‘না, কবিতা নয়; দাপ্তরিক।’
‘দপ্তরের কাজ বাসায় কেন? সংসার আছে না? বউ-বাচ্চা আছে না? ওদের সময় দিতে হবে না?’
‘তা তো দিতেই হয়। ওরা অবশ্য শুয়ে পড়েছে। আমার কাজটা জরুরি। সকালে মিটিং আছে।’
‘আচ্ছা শোনেন, তোমার আগুনে পুড়ি কবিতাটা আমার খুব ভাল লেগেছে।’
‘তাই? থ্যাংক ইউ।’
‘লেখাটি অফ লাইনে কোনো কাগজে দিতে পারতেন।’
‘অফ লাইনের হ্যাপা অনেক, জান তো। আমার অন লাইন প্ল্যাটফর্মই ভাল।’
‘কেন? মাঝে মাঝে পেপারেও তো দেন দেখি।’
‘কদাচিৎ কেউ দয়া করে ছাপালে দিই বটে। তবে ওসব জায়গায়ও রাজনীতি আছে। আমার ভাল্লাগে না।’
‘আসলে আপনার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। অনলাইনে দেখে নক করলাম।’
‘কিন্তু আজকে যে আর সময় দিতে পারব না।’
‘কেন? ভাবী ডাকছে?’
‘না, তা নয়। কালকের মিটিং-এর প্রেজেন্টেশনটা পাওয়ার পয়েন্টে সাজাতে হবে।’
‘ধ্যাত, আপনার শুধু কাজ আর কাজ। একটু চুটিয়ে গল্পও করা যায় না।’

২.
‘সারাদিন ধরে মেসেঞ্জার বন্ধ কেন?’
‘রেহানা, আমি খুব ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব।’
‘সে তো জানি। মেসেঞ্জারটা অন করে তো দেখতে পারেন আমি কী লিখেছি।‘
‘ঠিক আছে, সময় করে দেখব। এখন আর ফোনে কথা বলতে পারব না।’
‘মাসুদ ভাই (ভ্যাঁ…), আমাকে অপমান করলেন?’
‘বুঝতে চেষ্টা কর, এখন অফিস আওয়ার।’
‘আপনি তো সব সময়ই বিজি।’
‘প্লিজ, পরে কথা বলি?’

৩.
‘ওই যে শেষ দুটি লাইন, তোমার আগুনে পুড়ি কবিতার।’
‘হ্যাঁ, কবিতাটি তোমার পচন হছে বলেছিলে।’
‘কী ভুলভাল লেখেন, বুঝি না।’
‘আমি তো গাড়ি। ঠিকমতো লিখে পারছি না।‘
‘ওহ গড। বাসায় গিয়েও তো ঠিকমত চ্যাট করতে পারবেন না। তখন বউ-বাচ্চা।’
‘তবে এক সময় ফ্রি হয় করব।‘
‘আপনি আর আমার জন্য ফ্রি হবেন। আপনি জানেন না আপনার সাথে কথা না বললে আমার কেমন লাগে?’
‘আচ্ছা, তাহল ভয়েস কল কর।’
‘নাহ, এখন ভয়েস কল করা যাবে না। অসুবিধা আছে।’
‘তবে অন্য সময়। আমার নামার সম হ্যয় গেছে।’
‘শিট!’

৪.
‘মাসুদ ভাই, বহুদিন ধরে একটা কথা বলব বলব করে বলতে পারছি না।’
‘তোমার লেখাপড়া কেমন চলছে?’
‘আরে আমি কি লেখাপড়ার কথা বলছি? কথা ডাইভার্ট করেন কেন?’
‘ডাইভার্ট না, হঠাৎ খেয়াল হল। তাই জিজ্ঞেস করলাম। হ্যাঁ, কি যেন বলতে পারছ না!’
‘ভাবী কোথায়? আপনি কী করছেন?’
‘ভাবী বাচ্চাদের ঘুম পাড়াচ্ছে। আমি এই ফাঁকে আল-জাজিরা দেখছি।’
‘ছ্যা, এখন কি আর কেউ নিউজ দেখে? টিভিই দেখে না।’
‘না, ওই আফগানিস্তানের হালচাল জানতে ইচ্ছে করে তো।’
‘বুঝতে পারছি, আপনিও ব্যাকডেটেড।’
‘ঠিকই বলেছ। আমি কবিতা লিখেও মডার্ন হতে পারলাম না।’
‘তাই তো দেখছি। আমি বলছিলাম কি, আপনার সাথে এতদিনের পরিচয়, কিন্তু একটা বার সামনে এলেন না।’
‘তা ঠিক। তবে আমরা তো সব সময়ই টাচে আছি। চ্যাট করছি। কখনও ভয়েসেও কথা বলছি।’
‘এটা একটা কথা হল, আমার কি আমার প্রিয় কবিকে সশরীরে দেখতে ইচ্ছে করে না?’
‘(হা-হা) হবে। এক সময় কোথাও না কোথাও দেখা হয়ে যাবে।’
‘আমি বলি কি, একটা প্ল্যান করেন। চলেন, একবার কক্সবাজার কিংবা সুন্দরবন ঘুরে আসি।’
‘কী সাংঘাতিক আইডিয়া! তুমি একটা পরপুরুষের সাথে ভ্রমণে যাবে! ওসব কথা বলো না; বিপদ হবে।’
‘কী? কী বললেন? আপনি পরপুরুষ? আমি কবেই আমার আত্মা আপনার কাছে বিকিয়ে বসে আছি।’
‘ঠিক আছে। এখন পাগলামি রাখ। এসব নিয়ে পরে কথা বলব। আমাকে বিছানায় যেতে হবে।’
‘আপনি জাহান্নামে যান। আপনার সাথে আর কথাই বলব না।’
‘ঠিক আছে। এখন মাথা ঠাণ্ডা করে ঘুমোও। পরে তোমার সাথে কথা বলব। বাই।’

৫.
‘পণ করেছিলাম আর নক করব না। কিন্তু শেষপর্যন্ত পারলাম না।’
‘কেন, পারলে না কেন?’
‘না পারলে খুশি হতেন? হবেনই তো। আপনি কঠিন মানুষ। আমার মনটা যে আপনার জন্য এত কাঁদে, আপনি কি একটুও বুঝেন না?’
‘(হা-হা) পাগল। একটা যোগ্য মানুষের জন্য মনটাকে কাঁদাও। আমি তো জংধরা মানুষ।’
‘মাসুদ ভাই, সত্যি করে বলুন তো আমাকে আপনার কেমন মনে হয়?’
‘কেন? খুব ভাল লাগে। তুমি আমার একনিষ্ঠ পাঠক। বলতে পার পাগলা ফ্যান।’
‘কী? আমাকে পাগল বললেন?’
‘আরে এ পাগল সে পাগল না, বুদ্দু।’
‘অথচ আপনার মধ্যে আমার জন্য একটুও সিম্প্যাথি দেখি না। আচ্ছা আমাকে কি আপনার একটুও ভাল লাগে না?’
‘রেহানা, সবই ঠিক আছে। কিন্তু আসলে আমাকে তো অনেক ঝামেলা মানে দায়িত্ব নিয়ে থাকতে হয়। কিন্তু ভেবো না আমি তোমাকে এড়িয়ে যাচ্ছি। তোমার সাথে কথা বলি; ভাল লাগে। তোমার চঞ্চলতাও ভাল লাগে। এ বয়সে চঞ্চল না হলে কি মানায়?’
‘কিন্তু আমি যে কেমন হয়ে যাচ্ছি মাসুদ ভাই। শুধু মনে হয় আপনার কাছে চলে আসি।’
‘(হা-হা) ঠিক আছে, তোমাকে একদিন ট্রিট দেব। রেস্তোরাঁয় বসে অনেকক্ষণ গল্প করব। ঠিক আছে?’
‘কবে? কবে ডাকবেন? কিন্তু…… না-না, রেস্তোরাঁয় হবে না। চলেন, বাইরে কোথাও যাই। অনেক দূরে।’
‘আমি সংসারী মানুষ। চাইলেই কি হুট করে যা ইচ্ছে তা করতে পারব? তার চেয়ে বরং…’
‘শোনেন, ভয়েস কল দিই?’
‘না। আমার লাঞ্চ আওয়ার শেষ। কাজে ডুব মারতে হবে।’
‘কী? কথা বলবেন না? আমার না ইচ্ছে হচ্ছে…’

৬.
‘আমার কবিতাটি পড়েছেন?’
‘কোন কবিতার কথা বলছ? কোথায় লিখেছ?’
‘কী? আমি যে কবিতাটি এত কষ্ট করে লিখে ই-মেইলে পাঠালাম – দেখে দেবার জন্য। আপনি দেখেন নি? ওহ মাই গড!’
‘ও হ্যাঁ, তুমি বলেছিলে। আমি না ই-মেইল খোলার সময় পাইনি।’
‘আমি বুঝতে পারছি, আপনি আমাকে অবজ্ঞা করেন, অবহেলা করেন, তাই না?’
‘ছিঃ, অবজ্ঞা করব কেন? তুমি তো বোঝোই, আমি খেটে খাওয়া সংসারী মানুষ; অনেক ব্যস্ত থাকি।’
‘আমার বেলায় আপনার যত ব্যস্ততা। আপনি জানেন না যে আপনার জন্য আমি কত অস্থির?’
‘রেহানা, আমি তোমাকে না বলেছি এ ধরণের কথা বলা ঠিক না, বিপদ হতে পারে।’
‘কীসের বিপদ? আপনি ভয় পেলেও আমি ভয় পাই না। যা সত্য তাই বলি।’
‘শোনো, আমরা লেখালেখি নিয়ে কথা বলি; সেটাই ভাল।’
‘তার মানে আপনি আমার ভাল লাগাকে গুরুত্ব দেন না। আচ্ছা বলুন তো আমার জন্য কি আপনার মনে একবারও দোলা জাগে না? একটা মেয়ে আপনার স্বপ্নে দিনরাত বিভোর হয়ে থাকে, আর আপনি নির্বিকার!’
‘রেহানা, তুমি আবার পাগলামি করছ। আমি তো বলেছি, তুমি খুব ভাল মেয়ে; তোমাকে আমার ভাল লাগে। তাই বলে এরকম করতে হবে? তোমার পড়াশোনা, ভবিষ্যৎ আরোও কত কি পড়ে রয়েছে।’
‘…(অফ লাইন)…’

৭.
‘শুক্রবার বিকেলে সংসদ ভবনের সামনে আসবেন?’
‘কেন?’
‘কেন মানে! বলছি তাই আসবেন। সেদিন তো অফিস নেই। আমি স্কাই ব্লু শাড়ি পরে চটপটির দোকানের পাশে থাকব। আপনি মেরুন কালারের জামা পরে আসবেন; পাঞ্জাবি হলেও চলবে।’
‘এসব কী বলছ?’
‘কী বলছ মানে? দাঁড়ান, ওই শাড়িপরা একটা ছবি পাঠাই। … আপনারটাও পাঠান।’
‘রেহানা শোনো, তোমার কবিতাটি আমি দেখেছি।’
‘আচ্ছা! বলুন বলুন, কেমন হয়েছে?’
‘আমার মনে হয়েছে একটি প্রেমপত্র তুমি কবিতায় সাজিয়ে লিখেছ।’
‘তাই তো। এটা তো আপনার জন্যই লিখেছি। কবিতার ধাঁচে লেখার চেষ্টা করেছি। আমার নিবেদনটা কেমন লাগল?’
‘না, ভাল, বেশ ভাল। চেষ্টা করলে আরোও ভাল লিখতে পারবে। একটা উপদেশ দিই: কবিতার জন্য জুতসই শব্দ খুঁজে নিবে, আর বানানের দিকে নজর দিতে হবে।’
‘বুজেছি। এখন আপনার উপদেশ রাখুন। শুক্রবারের কথা বলুন। আসছেন তো? কনফার্ম?’
‘শুক্রবারে বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাবার কথা।’
‘মিথ্যে কথা। ডাহা মিথ্যা। আপনি আমাকে অ্যাভয়েড করছেন, তাই বলুন।’
‘তুমি বিশ্বাস কর, সত্যি। ভীষণ সত্যি। বাচ্চারা অনেক দিন থেকে বলছে।’
‘তাই বলে এই শুক্রবারেই যেতে হবে?’
‘ওদের আগে থেকে বলে রেখেছি।’
‘তা বাচ্চাদের সাথে তাদের মা-ও যাচ্ছে না কি?’
‘হ্যাঁ, বাচ্চাদের সাথে তাদের মা যাবে না তা কী করে হয়।’
‘অর্থাৎ প্ল্যানটা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন, তাই না?’
‘শোনো, এত আপসেট হবার কিছু নেই। অন্য একদিন হঠাৎ করে আমাদের দেখা হয়ে যাবে।’
‘আমি সব বুঝি। আমাকে আপনি খুব সস্তা মেয়ে ভাবছেন। তাই এরকম তাচ্ছিল্য দেখাচ্ছেন। আপনি দেখা করতে চান না তা সরাসরি বলে দিলেই পারেন।’

৮.
‘সেদিন কথা বলতে বলতে লাইন কেটে দিলেন কেন? আর এখন তো আপনাকে অনলাইনে দেখাই যায় না। ব্যাপার কী?’
‘শোনো, আমরা যে অনেক আগডুম বাগডুম কথা বলি, এতে অনেক বড় সমস্যা তৈরি হয়ে গেছে।’
‘কী আগডুম বাগডুম? কী সমস্যা?’
‘আমার স্ত্রী আমাকে সন্দেহ করছে।’
‘কেন, সন্দেহ করবে কেন? আপনি কি আপনার ভক্তদের সাথে কথা বলতে পারেন না?’
‘তারও তো একই কথা, ভক্তদের সাথে কথা বলতে গিয়ে এত ফুসুর ফুসুর কেন?’
‘তারপর?’
‘তারপর আর কী। শাসিয়েছে। এত বড় শিল্পী-সাহিত্যিক হওয়ার দরকার নেই।’
‘তার মানে আপনি আমার সাথে কথা বলতে চান না?’
‘আরে পাগল। আমি কি তাই বলছি? তবে আমার মনে হয়, আমাদের সংযত হওয়া উচিৎ। শোনো, আমার লেখা তোমার ভাল লাগে জেনে আমি খুশি হয়েছি। সেই সূত্রেই আমাদের পরিচয় হয়েছে। তাছাড়া তোমার কথা শুনতে ভাল লাগে বলেই তোমার সাথে কথা বলি, চ্যাটিং করি। তবে অধিক ডালপালা গজালে তাতে ঝুঁকি বাড়ে। আমি মনে করি তুমি আমার একনিষ্ঠ পাঠক এবং বন্ধুও বটে। আমরা ব্যস্ত জগতের বাসিন্দা; আমার চাকরি, তোমার লেখাপড়া। মাঝেমধ্যে সময়-সুযোগে আমরা একে অন্যের খোঁজখবর নিতে পারি…………’
‘- লেকচার বন্ধ করুন। এই হচ্ছে আপনার মনের আসল চিত্র। আমার আবেগের, আমার ভালবাসার এই প্রতিদান দিলেন আপনি? আপনি এত নিষ্ঠুর, এত ভয়ঙ্কর! আপনার মনে কোনো ভালবাসা নেই। আপনি কীসের কবি?’
‘রেহানা, আমি নরম মনের মানুষ। কঠিন কথা বলতে পারি না। তাই আমি বাস্তবসম্মত কথাই সহজ করে বলেছি। আর হ্যাঁ, আমি অফিসে পৌঁছে গেছি। বাস থেকে নামব।’
‘আপনি বাসের নিচে চাপা পড়ে মারা যান!’
‘(হা-হা-হা) ভাল থেক। বাই।

৯.
‘আমি যে আপনাকে দুদিন থেকে নক করছি, আপনি কিছু বলছেন না কেন?’
‘আমি অনেক সমস্যায় আছি, রেহানা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কথা বলব।’
‘কী সমস্যা, আমাকে বলা যায় না?’
‘না, এসব ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক। তোমার সাথে শেয়ার করার মতো তেমন কিছু নয়।’
‘মানে, আমি আপনার কেউ না। আমাকে বলা যায় না। তাই তো?’
‘রেহানা, প্লিজ, আমার ছেলেটার ভীষণ জ্বর। বউও ক্ষেপে আছে আমার ওপর।’
‘কেন? বউ ক্ষেপে আছে কেন?’
‘বাদ দাও ওসব। আর শোনো, প্লিজ, পাগলামি করো না। আমি তোমাকে মেসেঞ্জারে ব্লক করছি আপাতত। আমার খুব অসুবিধা হচ্ছে।’
‘কী বললেন মাসুদ ভাই? আপনি আমাকে ব্লক করে দেবেন? আমি কি আপনার সুখ-দুঃখের সাথী হতে পারি না? আপনার খোঁজখবর নিতে পারি না?’
‘ঠিক আছে, এই তো জানলে আমার খবর। এখন আমাকে ছুটি দাও।’
‘একটা কথা বলি মাসুদ ভাই। আপনি জ্ঞানী মানুষ; আপনি আমার চেয়ে বেশি বোঝেন। সুখ-দুঃখ, ঝড়ঝাপটা জীবনেরই অংশ। এসব কারণে জীবন থেমে থাকে না। সুখ-দুঃখ যেমন বাস্তব, আপনার এবং আমার জীবনের প্রবহমান মিথস্ক্রিয়াও তেমন বাস্তব। প্লিজ, আমাকে আপনার পাশে রাখুন।’
‘রেহানা, তোমার সাথে আমি পরে কথা বলব।’


১০.
‘অনেকদিন পেরিয়ে গেল, কিন্তু আপনি আমাকে মেসেঞ্জারে ঢুকতে দিচ্ছেন না। তাই হোয়াটসঅ্যাপেই ঢুকে পড়লাম। বলুন তো কেন আপনি এরকম আচরণ করছেন?’
‘রেহানা, আমি একটা জরুরি কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি।’
‘তবে কি আমি চলে যাব? এতদিন পরে নেটে এলাম, ছোট্ট করে কি একটা মিষ্টি কথা বলা যায় না?’
‘আমি বলি কি, তুমি একটু সিরিয়াস হও; পড়াশোনায় মনোযোগ দাও। চ্যাটিং করে সময় নষ্ট করলে পরে পস্তাতে হবে।’
‘আমি কি আপনাকে উপদেশ দিতে বলেছি?’
‘ঠিক আছে, উপদেশ দেব না; আমাকে একটু কাজ করতে দাও। পরে কথা বলব।’
‘পরে কেন? এখন বলুন। একটু প্রাণজুড়ানো কথা বলুন।’
‘কিছু মনে করো না; তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি। আচ্ছা, তুমি সত্যি করে বল তো তুমি কি স্টুডেন্ট?’
‘(টিং) … একটা ছবি পাঠালাম। দেখুন তো, আমাকে কি স্টুডেন্ট মনে হয় না?’
‘দেখ, ছবিটবি পাঠাবে না। তোমার উদাসীনতায় তোমাকে স্টুডেন্ট বলে মনে হয় না।’
‘এসব ফালতু কথা বলে আমাকে এড়ানোর চেষ্টা করবেন না। আপনার পারিবারিক সমস্যা কেটে গেছে নিশ্চয়ই?’
‘না। সমস্যা আরোও বেড়েছে। এসব নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তুমি ভাল থেক…’
‘আপনি তো চান না আমি ভাল থাকি। আপনি আমার সাথে দুর্ব্যবহার করছেন।’
‘আমাকে যেতে হচ্ছে। তুমি আমাকে নক করার দরকার নেই। সময় হলে আমিই করব। ঠিক আছে?’

১১.
‘কী আশ্চর্য! আপনি আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন! আমি অভিভূত মাসুদ ভাই।’
‘হ্যাঁ, আমি তোমার সাথে ভয়েসে কথা বলতে চাই। বলতে পারবে?’
‘দাঁড়ান … হ্যাঁ, পারব। কী সৌভাগ্য আমার! … আমি কল দিচ্ছি।’
‘হেলো, হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছ?’
‘হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি, মাসুদ ভাই। আজ তো ছুটির দিন। বাসায় কেউ নেই? আচ্ছা, কী বলবেন বলুন ।’
‘খুবই সিরিয়াস। মনোযোগ দিয়ে শোনো। ছেলেমানুষি করতে করতে জটিল এক পরিস্থিতির মুখোমুখি আমি। এর একটি নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।’
‘কী হয়েছে মাসুদ ভাই?’
‘তোমার সম্বন্ধে জানতে চাই। তোমার বাসার ঠিকানা দাও; আমি আসব।’
‘না না, বাসায় কেন? অন্য কোথাও বসি।’
‘কেন নয়? তুমি আমার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছ, এত ভালবাস, তোমার বাসায় কেন আসতে পারব না?’
‘আমি আপনার জন্য কেন উতলা হয়েছি জানি না মাসুদ ভাই। কেন আপনাকে পেতে চাই তা-ও জানি না। কিন্তু আপনাকে যে বাসায় আনতে পারব না।’
‘কেন? কী সমস্যা? আসতে যদি না দাও তবে সত্য গোপন না করে তোমার প্রকৃত পরিচয় দাও। নয়তো আমি ঠিকই তোমার ঠিকানা খুঁজে বের করব।’
‘(ভ্যাঁ ভ্যাঁ………)’
‘শোনো রেহানা, কান্নাকাটিতে আমার মন গলবে না। আমার সত্য জানা চাই।’
‘মাসুদ ভাই, আমার বুকের ভেতর উত্তপ্ত মরুভূমি। আমি প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত…’
‘এসব কথা আমি শুনতে চাই না। তুমি যে তোমার আসল পরিচয় লুকিয়ে আমাকে এতদিন ধরে বিরক্ত করছ সে আমি বুঝতে পারছি। বল, তুমি কে? কী তোমার উদ্দেশ্য?’
‘(ভ্যাঁ…) বুঝতে পারছি, আজ আমাকে বলতেই হবে। মাসুদ ভাই, আমি স্টুডেন্ট নই, এটাই সত্য। মন-প্রাণ সঁপে দিয়ে যাকে আমি পালিয়ে বিয়ে করেছি সে আমার হাতছাড়া। ঘরে শাশুড়ি আর কাজের মেয়ে ছাড়া বাড়তি কেউ নেই। আমার সো-কল্ড স্বামী ব্যবসায়ী। কোনোদিন গভীর রাতে বাসায় ফেরে, কোনোদিন ফেরে না। আমি ফেরাতে ব্যর্থ; আমার শাশুড়িও হীনবল। শাশুড়ি আমার মাথায় শুধু হাত বোলায় আর কাঁদে। তার সাথে আমিও কাঁদি। এসবের মধ্যেই আমি আপনার মাঝে শীতল হাওয়া খুঁজে বেড়াই। কিন্তু পাই না। বলুন, আমি কী করব?’
‘তুমি শীতল হাওয়া খুঁজে বেড়াবে; তাই বলে আমার ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেবে?’
‘আগুন জ্বালাব কেন? আমি তো জানি, আপনাকে আমি দখল করতে পারব না; আপনিও আমার জন্য আপনার সংসার ভাঙবেন না। আমি একটু শান্তির জন্য আপনার কাছে পাগলপারা হয়ে ছুটে আসি, মাসুদ ভাই।’
‘রেহানা, তুমি তো জান না মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপে তুমি অঢেল জ্বালানি সরবরাহ করেছ। আমার স্ত্রী সবকিছু মনিটর করেছে। তোমার সাথে আমার ডিজিটাল যোগাযোগ ছাড়া আর কোনো সম্পর্কই নেই। অথচ আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আমার স্ত্রীর হাতে পড়া ইন্ধনই যথেষ্ট। অবশ্য এজন্য তুমি একাই দায়ী নও; আমিও অংশত দায়ী।’
‘(ভ্যাঁ……) স্যরি! স্যরি মাসুদ ভাই। আসলে আমি আপনাকে পেতে চেয়েছি ঠিকই, কিন্তু আপনার ক্ষতি করতে চাইনি।’
‘ক্ষতির বাকি থাকল কী? আমার স্ত্রী বাচ্চাদের নিয়ে ভোরবেলা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। ফোনও ধরছে না।’

১২.
‘আশা করি এ ক’দিনে আপনার ক্ষতি পূরণ হয়ে গিয়েছে। আপনি সুখী হোন, আপনার পরিবার শান্তিময় হোক। যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে আর কোনোদিন দেখতে তো পাবেনই না, আর ঠিকানা খুঁজে বের করলেও সেখানে আমার কোনো অস্তিত্ব দেখতে পাবেন না। বিদায়। - রেহানা’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী সুন্দর এবং সাবলীল প্রকাশ। খুব ভালো লাগল।
অনেক ধন্যবাদ।

১৯ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৬১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪