নদেয় এল বান

অশ্লীল (এপ্রিল ২০২০)

Jamal Uddin Ahmed
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৬৩
  • ৮৫

হাবাগোবা ধরণের বাবুলই বিদ্যে-বিচারে চারজনের শীর্ষে।  শুধু তাই নয়, গোবেচারা হলেও সে কিন্তু সুদর্শন।  ফকিরাপুলের ফালুমিয়ার মেস বাড়ির এক রুমের চার বাসিন্দা – বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বাবুল; দ্বিতীয় সারির দৈনিক পত্রিকার কম্পিউটার অপারেটর দুজন: বিল্লাল ও হাসমত; আদম ব্যবসায়ী অফিসের কেরানি মুহিব।
চারজনের মধ্যে বেকার বলতে গেলে একমাত্র বাবুলই।  তার জন্য বেকার অভিধা এজন্য যে সে তার অভীষ্ট চাকরি এখনও জোগাড় করতে পারেনি।  দ্বিতীয়বার বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এটাই শেষ ট্রায়াল।  আগের বার ভাইবা উৎরাতে পারেনি। উপরে কেউ না থাকলে সবক্ষেত্রে যে দশা হয়, বাবুলের বেলায়ও তাই।  লাকসাম রেলওয়ে জংশনের সহকারি ষ্টেশন মাস্টার বাবা মোটামুটি নিশ্চিত যে ছেলের এবারও কিছু হবে না।  সেজন্য ইউনিভার্সিটি থেকে পরিসংখ্যান নিয়ে পড়াশুনা শেষ করে বেরোবার আগেই ছেলেকে কোনোরকম এলএলবি’টা করে নিতে বলেছিলেন, যাতে অগত্যা চাঁদপুরে নিজেদের বাড়িতে বসবাস করে ল’ প্র্যাকটিস করতে পারে।  
বাবুল নিজেও বোঝে, আটপৌরে সংসার থেকে এসে একমাত্র দেবযোগ ছাড়া হাত-পা তেমন ছড়ানো যাবে না।  তাছাড়া সাদাসিধে গোছের হওয়াতে এতদিনে সে না কোনো শক্ত ভিত তৈরি করতে পেরেছে, না কোনো প্রেম-পিরিতি।  স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান পড়েছিল বলে দুটো টিউশনি করতে পেরেছে পুরোটা সময়; এতে বাপের উপর চাপটা কম পড়েছে।  না, এখনও সে টিউশনি ছাড়েনি; নিজের খরচটা টিউশনির টাকাতেই চালিয়ে নিচ্ছে।  এলএলবিও প্রায় শেষ পর্যায়ে; একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকে করছে।  এবারেও বিসিএসে ব্যর্থ হলে বাবার কথামত চাঁদপুরের কোর্টই হবে গন্তব্য। 
মেসের পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকলেও এক বছর সময়ে বাবুল পুরোপুরি অভিজ্ঞ হয়ে গেছে; আগের মত বেখাপ্পা লাগে না।  রুমমেটদের মধ্যে একমাত্র বিবাহিত মুহিব সপ্তাহান্তে পাগলের মত গ্রামের বাড়ি ছুটে গিয়ে আবার যখন রোববার ফিরে আসে সে দিনটি সবার জন্য হয়ে ওঠে রসময়।  বিল্লাল ও হাসমত দুজনই ঠোঁটকাটা। মুহিবকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ঝাঁঝরা করে ফেলে।  বেচার নাকাল হয়ে যতটুকু সম্ভব রাখঢাক করে রসের পাতিলের ঢাকনা একটুখানি আলগা করে।  এতেই সবাই হই হই করে হামলে পড়ে।  বাবুল স্বভাবগত কারণে তাদের সাথে টিউনিং করতে পারে না।  তবে তার অর্থ এই নয় যে সে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।  বিল্লাল যখন জিজ্ঞেস করে, ‘মুহিব ভাই, ভাবি কি আপনার চেয়ে বেশি এ্যাক্টিভ?’, কিংবা হাসমত যখন মুহিবকে বলে, ‘আপনি কি ঠিকমত রেসপন্ড করতে পারেন?’ তখন রানি ও তার মা মিনারা আন্টির ছায়া এসে বাবুলের রক্তে টোকা মেরে যায়। 
হাটখোলার হোসনে আরা ক্লাস নাইন থেকেই বাবুলের ছাত্রী।  সে এবার এইচএসসি ফাইন্যাল দেবে।  তার বাবা-মা বাবুলকে কিছুতেই ছাড়বে না।  সে তাদের গোবেট মেয়েকে এসএসসি পাশ করিয়েছে; তাই তাদের এক কথা, ‘যতদিন বাপু তোমার কিছু একটা না হচ্ছে, তোমাকে ছাড়ছি না।’ তাদের মনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকলেও থাকতে পারে; কিন্তু হোসনে আরার বাড়বাড়ন্ত শরীর কেন জানি বাবুলকে টানে না।  এর একটা কারণ হতে পারে তার সামনের দুটি উঁচু দাঁত; বেচারি দাঁতের কারণে স্যারের সাথে একটু হেসেও কথা বলতে পারে না। তাছাড়া আংশিক কারণ হিসেবে এটাও ভাবা যেতে পারে যে হোসনে আরার পশ্চাদ্দেশ আগাগোড়া সমতল হওয়াতে বাবুলের দৃষ্টি হোঁচট খেতে পারে না।  এসব কারণেই হয়ত সে সুবোধ ছাত্রীর মত পাঠ্যসূচিতেই মজে থাকে।  বাবুলও মাস শেষে ভাল একটা অ্যামাউন্ট আর প্রতিদিন মজার মজার নাস্তা পেয়েই সন্তুষ্ট।  
রানির ব্যাপারটা একটু অন্যরকম।  মেসে আসার পর বিল্লালই এই টিউশনিটা জুটিয়ে দিয়েছিল বাবুলকে। সাত্তার সাহেব তার বড়কর্তার লেখা নিয়ে প্রায়ই আসতেন বিল্লালের পত্রিকার সম্পাদক সাহেবের কাছে।  সেই সূত্রেই বিল্লালের সাথে তার পরিচয় ও সখ্য।  সাত্তার সাহেব একবার একজন ভাল হাউসটিউটরের সন্ধান চাইলে সে বাবুলকেই লাগিয়ে দেয় সেখানে।  বাবুলকে রানিদের বাসায় পাঠানোর সময় হাল্কা টিপ্পনী কাটতেও ভুলেনি বিল্লাল। বলেছিল, ‘যান বাবুল ভাই, ভাল ষ্টুডেন্ট পেলে মনটাও ভাল থাকবে। আপনিতো একদম নিরামিষ।’ দৃশ্যত বাবুল নিরামিষই।     
ফালু মিয়ার স্বামীত্যাগী মেয়ে জুলেখা যখন তাদের পঞ্চম তলার বাসা থেকে নূপুরের ঝনঝন এবং স্যাণ্ডেলের ঠকঠক আওয়াজ তুলে সিঁড়ি ভেঙ্গে নামতে থাকে তখন নিচের চারতলাভর্তি মেসের যুবকদের কান খাড়া হয়ে যায়।  তার হেলেদুলে চলা এবং কেলিয়ে কথা বলা দেখলে মনে হবে সবার সাথে তার অনেক দিনের সম্পর্ক।  নিচতলার সিঁড়ির পাশের রুমটি তাদের হওয়ার সুবাদে সুযোগ পেলেই বিল্লাল-হাসমত বিগলিত হয়ে জুলেখাকে প্রায় টেনে নিয়ে যায় তাদের রুমে।  হাসমত বলে, ‘দেখেন জুলেখা আপা, এই পাকা পেঁপেটি আপনার জন্যই এনেছি মতিঝিল থেকে।’ জুলেখা হেসে কুটিকুটি হয়ে গড়িয়ে পড়ে, ‘ইস্, নিজের লাইগ্যা আইনা এখন কেমুন মহব্বত দেখাইতেছেন!’ তখন বিল্লাল বলে, ‘না না, সে ঠিকই বলেছে জুলেখা আপা; আমিই হাসমতকে বলেছিলাম একটা ভাল পেঁপে আনার জন্য – আপনাকে নিয়ে একসাথে খাব, তাই।’  জুলেখা তার রাঙা ঠোঁট মোচড় দিয়ে বলে, ‘মিছা কথা!’ হাসমত মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, ‘কথা সত্যি।  আজকে পেঁপে খান। আরেকদিন কলা নিয়ে আসব; নরসিংদির অরিজিনাল সাগরকলা।’ এসব রসসিক্ত জম্পেশ আড্ডায় মুহিব যোগ দিলেও বাবুল মেনিমাছের মত বসে থাকে।  অথচ জুলেখার দৃষ্টি বারবার গিয়ে বাবুলের উপরই স্থির হয়।  কিন্তু না, জুলেখাকে সুলভ জেনেও অন্যদের মত বাবুল বাজতে পারে না।  জুলেখার গতিবিধি নিয়েও বরাবরই তার আগ্রহ জোলো।  
বাবুল যে মেয়েছেলে কম দেখেছে এমন নয়, কিন্তু ওই মেনিমুখো স্বভাবের জন্য কারুর সাথে মাখামাখি হয়ে ওঠেনি, প্রেমতো নয়ই।  ইউনিভার্সিটির ঢলঢলে মেয়েগুলে তার গা ঘেঁষে হনহন করে ছুটোছুটি করলে তার রক্তের একতারা টুংটাং করে উঠত বৈকি, কিন্তু এক পা বাড়িয়ে সামনে গিয়ে কারুর চোখের তারায় তার নিজের ছবি খোঁজার সাহস হয়নি।  আর তার চোখে চোখ রাখতে কেউ হুট করে দাঁড়ায়ওনি। মিতা নামের জুনিয়র মেয়েটির সাথে কালেভদ্রে দেখা হলে দু’চার কথা যা হত তা তাদের একই এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে।  মেয়েটি বাবুলের মত ভ্যাবলাকান্ত নয়, তারও ঘনিষ্টজন ছিল। বাবুলের অবশ্য এজন্য কোনো খেদ ছিল না। 
সরকারি কোয়ার্টার হলেও রানিদের বাসার জেল্লা রাজপ্রাসাদের মতই ঝলমলে।  তার এসএসসি পরীক্ষার ঠিক আগে আগেই বাবুল তাদের বাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয় এবং রানিকে জিপিএ ৪.৫ পাইয়ে পাশ করাতে গিয়েও সে প্রচুর খেটেছে।  তবে মিনারা আন্টি অর্থাৎ রানির মা আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন রানির পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও বাবুলকে বিরতি ছাড়াই চালিয়ে যেতে হবে – অন্তত বাবুলের চাকরিবাকরি না হওয়া পর্যন্ত।  বাবুল আপত্তি করেনি, কেননা পড়ালেও পাঁচ হাজার টাকা, না পড়ালেও পাঁচ হাজার টাকা।  বেকার জীবনে তা কম কীসে!
রানির পরীক্ষার সময়ে অতোটা দৃশ্যমান না হলেও পরবর্তীতে সুঠামদেহী মিনারা আন্টির আদর-আপ্যায়ন এতটাই বাড়তে থাকে যে বাবুলের সাথে বলতে গেলে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে যায়।  রানির লেখাপড়া শেষ হয়ে গেলেই মিনারা আন্টি ড্রইংরুমে নাস্তা সাজিয়ে বাবুলকে নিয়ে টিভি দেখতে বসে যান।  তারপর তিনি বিনোদন জগতের এন্তার গল্প জুড়ে দেন।  বলিউডের সালমান খান ঐশ্বরিয়া-ক্যাটরিনার সাথে এত মেশামিশির পরও কেন তারা স্থায়ী সম্পর্কে যায়নি এটা মিনারা আন্টির কাছে এক চরম রহস্যজনক ব্যাপার।  তারপর, সিংহপুরুষ জন আব্রাহামকে ছেড়ে বিপাশা বসু কোন এক মাজামরার সাথে গিয়ে ঘর বেঁধেছে এটা তিনি মেনে নিতে পারেননি।  বিনোদন জগত সম্মন্ধে বাবুলের গভীর কোনো জ্ঞান নেই।  যতটুকু বোঝে তা দিয়েই আন্টির সাথে তাল মিলিয়ে যায়। এমন আলাপচারিতা নিয়মিত হয়ে ওঠে। ক’দিন পর ঈদ এসে গেলে বাবুলের জন্য কেনা শার্টটি মিনারা আন্টি নিজ হাতেই তাকে পরিয়ে দেন। এসব দেখে বাবুলের মনে একটি প্রচ্ছন্ন ধারণা জন্মেছিল যে রানির ভবিষ্যতকে মাথায় রেখে হয়ত মিনারা আন্টি একটি ঐন্দ্রজালিক বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করছেন।  কিন্তু অচিরেই তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।  
এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে রানি ফুরফুরে হয়ে গেলে পড়ার টেবিলে বসে পড়াশোনার কথার পাশাপাশি বাবুলের সাথে সে অনেক গল্পগুজবও করত।  বাবুলকে সে এ-ও বলেছে, ‘স্যার আমি ডাক্তার হব; আমাকে ইন্টারমেডিয়েটের পুরো সময় কিন্তু পড়াতে হবে।’ এসব কথা অবশ্য গতের বাইরে নয়।  কিন্তু গল্পের পরিধি যতই বাড়তে লাগল ততই পরিস্থিতি জটিল হতে আরম্ভ করল।  তেলতেলে চেহারা আর টানটান শরীর নিয়ে ওড়নাটা গলার একপাশে দড়ির মত ফেলে রেখে স্যারের সামনে বসে সে একদিন জিজ্ঞেস করল, ‘স্যারের কি কোনো গার্লফ্রেণ্ড নেই?’ প্রশ্নটি অপ্রত্যাশিত না হলেও রানির কথায় বাবুলের ভেতরটা ছাঁৎ করে ওঠে। কারণ ক’দিন আগে প্রায় একই বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন মিনারা আন্টি।  তিনি অবশ্য কথাটা অন্যভাবে বলেছিলেন, ‘বুজেছ মাষ্টার, আমাদের সমাজটা কেমন কনজারভেটিভ, অথচ ভারতীয় চ্যানেলগুলো দেখলে বোঝা যায় ওরা কত অ্যাডভান্সড; তোমার বয়সের ছেলেমেয়েরা বয়ফ্রেণ্ড গার্লফ্রেণ্ডের সাথে কেমন হেসেখেলে বেড়াচ্ছে!’  
বাবুলের টিউশনির সময়টা এভাবে বরাদ্দ করা: শনি-সোম-বুধ হোসনে আরা এবং রবি-মঙ্গল-বৃহস্পতি রানির জন্য।  শুক্রবার একদম ফ্রি।  এদিন একটু লম্বা ঘুম, ভাল খাবার, কাপড়চোপড় ধোয়া এবং অতি অবশ্যই জুমার নামাজ – এসবেরই আয়োজন।  বিকেলে বিল্লাল ও হাসমতকে নিয়ে ফুটপাতে হাঁটাহাটি কিম্বা নয়াপল্টন অথবা বায়তুল মোকাররমের দিকে উইণ্ডোশপিং করতে যাওয়া।  নানান ঢং এবং ঢেউয়ের  তরুণী সন্দর্শন বাড়তি প্রাণ-সঞ্জীবনী আকর্ষণও বটে।  এই বহির্ভ্রমণকালীন বিল্লাল ও হাসমতের রসোক্তি বাবুলের মনে প্রণোদনা সঞ্চার করলেও হয়তোবা স্বভাবজাত কারণে সে সমানুপাতিক হারে সাড়া দিতে পারে না।  বরং তখন তার দৃষ্টির অদৃশ্য রেখা তড়িৎগতিতে  রানির পড়ার টেবিল এবং মিনারা আন্টির সোফা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।  এই বৈকল্যের একটি বস্তুগত প্রেক্ষাপটও ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছিল।  বাবুল তাই ইদানীং আতংকে থাকে এজন্য যে এই বিচ্ছুগুলো পাছে কোনোকিছু আন্দাজ করে ফেলে। রানিদের বাসা থেকে প্রায়শই রাতের খাবার না খেয়ে ফিরতে পারে না বলে বিল্লালের মৃদু খোঁচাও মাঝে মাঝে সহ্য করতে হয় বাবুলকে।  বিল্লাল বলে, ‘বাবুল ভাই টিউশন নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন; উকালতি আর বিসিএসের পড়া কখন পড়বেন?’ কিংবা ‘আচ্ছা বাবুল ভাই, সাত্তার সাহেবের মেয়েটা কি খুব সুন্দরী? – আমারতো দেখার সুযোগ হয়নি কোনোদিন।’  বাবুল বোঝে, বিল্লাল-হাসমতের মনে একটু খুঁতখুঁতানি আছে।  কিন্তু সে হাবাগোবা হলেও ধরা দেয় না কিংবা বলা যায় তার ধরা দেবার সাহস হয় না।  তাছাড়া সে এত সাহসী নয় যে লজ্জার পর্দা সরিয়ে দেখিয়ে দেবে মিনারা আন্টির ড্রেসিং টেবিল কিংবা দুইরুমের মাঝখানের প্যাসেজ যেখান থেকে রানি বাবুলকে বিদায় সম্ভাষণ জানায়।  
একদিন হুট করে বিশেষ প্রয়োজনে বাবুল তার বাড়িতে যায়। কিন্তু দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সে ফিরে না আসায় রুমমেটরা ভাবনায় পড়ে যায়।  সব চেয়ে বড় চিন্তার কারণ হল বাবুলকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।  আগেও যখন বাবুল বাড়িতে গিয়েছে সে নিজ থেকেই সেলফোনে দুয়েকবার রুমমেটদের কুশলাদি জেনেছে।  কিন্তু এবারের অন্তর্ধান সত্যিই রহস্যজনক।  দুদিন পর অফিস থেকে ফিরে এসে বিল্লাল একটি চিঠি পায়; পাশের রুমের একজন মেসমেট চিঠিখানি রেখেছিল।  সে একটু আশ্চর্যই হয়, ডিজিটাল যুগে এখনও মানুষ ডাকযোগে চিঠি পাঠায়! আরোও বিস্ময়ের ব্যাপার, চিঠির প্রেরক বাবুল। সে তাড়াতাড়ি খামটি খোলে:
‘প্রিয় বিল্লাল ভাই,
সালাম নিবেন।  আমার লাপাত্তা হয়ে যাবার কারণে নিশ্চয়ই দুঃশ্চিন্তায় আছেন।  দুশ্চিন্তারই কথা।  আপনি আমার আপন মানুষ; অনেক উপকার করেছেন। কিন্তু  আপনার উপকারের প্রতি আমি সুবিচার করতে পারিনি।  নিজেকে হালকা করার জন্য আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই।  প্লীজ কারোও সাথে শেয়ার করবেন না। 
আপনার জোগাড় করে দেয়া টিউশনি করতে গিয়ে অল্পদিনের মধ্যেই আমার মতিভ্রম ঘটে যায়।  খুব সহজেই মা-মেয়ে দুজনের মায়াজালে বন্দি হয়ে যাই। একদিন রানিকে পড়াতে গেলে মিনারা আন্টি ছাড়া বাসায় অন্য কেউ ছিল না।  তিনিও কোথাও যাবার জন্য সাজুগুজু করছিলেন। আমি বাসায় ঢুকলে তিনি দরজা বন্ধ করে বললেন, ‘তোমাকে বলা হয়নি আজকে আমার এক আত্মীয়ার গায়ে হলুদ।  রানি কাজের মেয়েকে নিয়ে চলে গেছে, আমিও যাবার জন্য রেডি হচ্ছি।’ তার বেডরুমের দিকে যেতে যেতে তিনি বললেন,‘এদিকে আসোতো একটু।’  তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে একটা টিপ্ আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘এটা ঠিকমত বসাওতো আমার কপালে।’  আমি তখন হতচকিত হয়েছি বটে, আবার একটু উত্তেজিতও বোধ করেছি।  টিপ বসাতে গিয়ে আমার আঙুল কাঁপছে দেখে চোখে ঠমক তুলে তিনি তার দু’হাতের আঙুল  দিয়ে আমার দু’গাল চিপে দিয়ে বললেন, ‘বোকা ছেলে, তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না!’  ধুকপুকানো বুক নিয়ে আমি আবার টিপ বসাতে গেলে তিনি আমাকে খপ করে জড়িয়ে ধরেন।  সেই থেকে শুরু।  এভাবে আরোও অনেকবার আমি তাকে টিপ পরিয়েছি।
এদিকে এসএসসি পরীক্ষার পর থেকেই রানি আমার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।  পড়ার টেবিলে বসলেই তার শারীরিক কসরৎ আরম্ভ হয়ে যেত।  কেউ সামনে না থাকলে ওড়নাটা তার বুকের উপর থাকতই না। সেও তার মায়ের মত মিডিয়ার ষ্টারদের নিয়ে কথা বলতে ভালবাসত – তার শখ সেও একদিন ক্যামেরার সামনে পারফরমেন্স করবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।  তো এরকম সময়েই  একদিন সে আমাকে দরজা খুলে বিদায় দিতে গিয়ে ‘স্যার’ বলে থমকে দাঁড়াল।  তারপর চোখ ঘোলা করে আমার চোখের দিকে ক’মুহুর্ত তাকিয়ে থাকল। আমি বোঝার আগেই সে আমার মাথা টান দিয়ে ধরে নারকীয় তৃষ্ণায় আমার ওষ্ঠাধর পেষণ করল।  স্বীকার করি, আমিও তাতে সাগ্রহে অংশ নিই।  এই অনুশীলন প্রায়ই চলতে থাকলেও একটা পরিণতির হাহাকার শীঘ্রই ব্যাকুলতা পেল।  
একদিন সকালে রানি ফোন করে বলল, ‘স্যার, আজ একটু আগে আসবেন – তিনটায়, বিকেলে আমরা বাইরে যাব।’  তার কথাকে আমি সত্য বলে ধরে নিয়ে ঠিক সময়েই রানিদের বাসায় পৌঁছে যাই।  তাদের বাসার দরজা খোলাই ছিল – আমাকে কলবেল টিপতে হয়নি।  রানি আমার অপেক্ষায়ই ছিল; আমি ঢুকতেই সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল, ‘চলুন, আজকে বেড়াতে যাব।’ আমি তার দিকে প্রশ্নবোধক চোখে তাকালে সে আবার বলল, ‘বাসায় কেউ নেই।  তাই আগে আসতে বলেছি।’  আমি ইতস্তত করে বললাম, ‘আমি যাই… খালি বাসা…আমাকে ডাকা ঠিক হয়নি।’  রানি গাল ফুলিয়ে বলল, ‘সত্যি করে বলেনতো, আমি কি দেখতে খুব খারাপ?’  আমি থতমত হয়ে বললাম, ‘কী যে বল, তুমিতো খুব সুন্দর মেয়ে।  কিন্তু…।’
তারপর সে আমার হাত চেপে ধরে বলল, ‘আপনি কি এখনও বোঝেন না যে আমি আপনাকে ভালবাসি?’ তারপর সে আমাকে টেনে তার রুমের দিকে নিতে নিতে বলল, ‘ঠিক আছে, আজকে পড়ানোর দরকার নেই, গল্প করব।’ কিন্তু তার রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই সে বাঘিনীর মত আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।  আমি অনেক ভয় পেয়েছি, কিন্তু আপত্তি করিনি।  ভয়টা ছিল নৈতিকতার।  
এতসব কথা আমার না বললেও চলত।  কিন্তু যেহেতু টিউশনিটা আপনিই আমাকে জোগাড় করে দিয়েছিলেন, এজন্য হয়ত আপনাকেও কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে, তাই আমি আমার অপরাধবোধ থেকে বিষয়টি আপনাকে জানিয়ে রাখছি। সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি হল, মিনারা আন্টি যে মুহুর্তে জানলেন যে আমি তার মেয়ের সাথেও সম্পর্ক রাখছি ততক্ষণে রানি প্রেগনেন্ট হয়ে পড়েছে।  এখন আপনিই বলুন এ পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে তাদের সামনে দাঁড়াই? 
আমার আর মেসে ফিরে আসা হবে না।  প্লীজ, আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
ইতি
বাবুল’

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী লেখা পড়ে ভালো লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ।

১৯ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৫৯ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৬৩

বিচারক স্কোরঃ ১.৬৩ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪