উত্তর-পূব কোণের দশ বাই বার ফুট কক্ষটি রাহিলের। বোটানিক্যাল গার্ডেনের-লাগোয়া পল্লবী দ্বিতীয় পর্বের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং-এর চতুর্থ তলার বারশ’ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি ক’মাস আগে ভাড়া নিয়েছেন রাহিলের বাবা – তিনি কাজ করেন একটি বায়িং হাউসে। আফতাব নগরে থাকাকালে মা একটা কিণ্ডারগার্টেনে বাচ্চাদের পড়াতেন। নতুন বাসায় আসার ধকল এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি – কিছুদিন পর হয়ত কিছু একটা করার কথা ভাবতে পারেন। বাবা-মা’র মাস্টার বেডটি পূব-দক্ষিণে হলেও দেয়ালের ওপাশে অন্য ফ্ল্যাট থাকায় দখ্নে হাওয়ার সাথে তাঁদের দেখা হয় না, তবে পূবদিকে জানালা-দরজাসহ এক চিলতে বারান্দা থাকায় মোটামুটি হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারেন। পশ্চিম-দক্ষিণের কক্ষের সাথেও বারান্দা নামের যৎসামান্য জায়গা আছে। কক্ষটি রাহিলের ছোটবোন নিপার জন্য বরাদ্দ হওয়ার ফলে ওই ক্ষুদে-বারান্দার দখলদারিও তার। ওখানে মানিপ্ল্যান্ট, মাধবীলতা আরোও কী সব গাছগাছালি লাগিয়ে সে একটা উদ্যান তৈরি করে ফেলেছে। ওই কক্ষে তার সাথে মাদুর বিছিয়ে তার ছাত্রী-কাম-গৃহকর্মসহকারী পিচ্চি সায়রাও থাকে। অনাথ মেয়ে সায়রাকে ভাগ্যগুণে মেলানো গিয়েছে – নিপা পণ করেছে ওকে বিদ্বান বানিয়েই ছাড়বে। তার ইন্টার ফাইন্যাল হয়ে গেলেই এবার সে সায়রাকে পিএসসি’র জন্য রেডি করবে। নিপার কক্ষের উত্তর দিক জুড়ে রয়েছে বাসার অন্যান্য অনুষঙ্গ, যেমন – ড্রইং-কাম-ডাইনিং, কিচেন, কমন বাথ, ইত্যাদি।
আদরে-শাসনে সায়রা এখন পাকা হয়ে উঠেছে। রাহিলের বাবা রাত করে যখন বাসায় ফেরেন তখন অন্যরা এগিয়ে আসার আগেই সায়রা দরজা খুলে তাঁর ব্যাগটা হাত থেকে নিয়ে দাঁতের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে হাসিমুখ করে বলবেই, ‘নানা, শরীলটা ভালা?’ ‘আজকেও জ্যাম ছিল রাস্তায়?’ ‘পানি খাইবেন না চা খাইবেন?’ সায়রার অভ্যর্থনায় নানার ক্লান্তি অনেকটা হালকা হয়ে যায়। তবে মাঝে মাঝে নানী ধমক লাগান, ‘হয়েছে! আর মুরব্বিয়ানা লাগবে না, প্লেটগুলো নিয়ে আয় টেবিলে।’
এ বাসায় আসার পরপরই রাহিলের কক্ষের জানালায় দাঁড়িয়ে সায়রা প্রায়ই গ্রাম দেখত – গ্রামে অনেক গাছ-গাছালি, নানা রঙের পাখি। একদিন বলে, ‘দেখছেন মামা, কত সুন্দর গ্রাম; চলেন ঘুইরা আসি। ’
রাহিল ধমক লাগায়, ‘অ্যাই, বকবক করিস না, এটা গ্রাম না, এটা শহর।’
সায়রা চোখ ছোট করে মামার দিকে তাকায়। রাহিলের জানালা থেকে কোনাকুনি তাকালে দালানের ফাঁক দিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের উত্তর অংশটা দেখা যায়; ওটাকে সে গ্রাম মনে করেছে। সে বলে, ‘তাইলে ওইটা কী?’
রাহিল বিরক্ত হয়ে পড়ার টেবিল থেকে মাথা উঁচিয়ে জানালা দিয়ে তাকায়। উত্তর পাশের দুটো প্লটে এখনও দালান উঠেনি। একটাতে টিনশেড করে কারা যেন থাকে, পরেরটা একেবারে ফাঁকা। এর পাশেই একটি তিনতলা বাড়ি। আগে খেয়াল করেনি, ওই বাড়ির ছাদের ওপর গোলাপসহ নানা রকম ফুলের বাগান। বাগানে সুন্দর দেহবল্লরীর একটি মেয়ে – নিপার বয়সী। মুহুর্তে রাহিলের শরীরে এক ঝলক বিদ্যুৎ খেলে যায়। সারাক্ষণ ম্যাঁও ম্যাঁও করা সায়রাকে ইচ্ছা থাকলেও আর বকা দেয় না। বরং আস্তে করে জিজ্ঞেস করে, ওই মেয়েটির কথা বলছিস?’
সায়রা দাঁতের ফাঁকে আঙুল পুরে খিক করে হেসে ওঠে, ‘ধুরো মামা, ওই যে দেখেন, ওই গেরামটা…’
এর পর থেকে সায়রার দেখানো গ্রামের দিকে তাকানো রাহিলের নৈমিত্তিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসায় থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রাম-ফুল-পাখির দিকে নজর দেবেই। তবে যতই লুকাক, নিপার নজর সে এড়াতে পারেনি। একদিন কদবেলের কাঠি চুষতে চুষতে রাহিলের কক্ষে এসে কোমরে হাত রেখে গুরুজনের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বলে, ‘লাভ নেই ভাইয়া।’
রাহিল থতমত হয়ে বলে, ‘কী…?’
‘বড়লোকের মেয়ে, বাবা প্রাইভেট ব্যাংকের বড় কর্তা, এ-লেভেল দিয়েছে, পুরো বাড়ি নিয়ে তারা থাকে, নিজেদের বাড়ি।’
রাহিল জানে সে ধরা পড়ে গেছে। তারপরও ভান করে, ‘কার কথা বলছিস, কী বলছিস…?
নিপা এবার রাহিলের বেডের ওপর বসে। বলে, ‘শোনো, চৈতির সাথে আমার আলাপ-পরিচয় হয়েছে। সেদিন বিকালে আমি আর সায়রা ‘গেরাম’ দেখতে গিয়েছিলাম। তখন সে তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল। তার দিকে তাকাতেই সে যেচে কথা বলেছে। ’
রাহিল উৎসাহ দেখিয়ে বলে, ‘মেয়েটির নাম চৈতি নাকি?’
‘তাহলে বুঝে গেছ কার কথা বলছি?’ নিপা ঠোঁট বাঁকায়, ‘আমরা ভাইবারে প্রায়ই কথা বলি। তুমি যে পর্দার ফাঁক দিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাক তা সে জানে। তবে বলি কি, ফুল-পাখি দেখে সময় নষ্ট না করাই ভাল। ’
‘মানে কী?’
‘মানে পাখি উড়ে যাবে।’ নিপা জানায়, ‘তার ভাই লণ্ডনে পড়ে; সেও যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ’
রাহিলের বুকে প্রচণ্ড এক ধাক্কা লাগে। নিপার কাছে ধরা পড়ে লজ্জাও পায়। সে নির্বিকারভাবে বলে, ‘তাই?’
তারপর তুরাগে জল গড়িয়েছে অনেক। সায়রা এসে বকবক করলেও রাহিল জানালায় দাঁড়িয়ে আর গেরাম দেখে না। নিপার গোয়েন্দাগিরিও নিষ্ফল । নিপা ধরে নিয়েছে তার ভাষণে ভাই সাইজ হয়ে গেছে। হয়ত পড়াশোনার চাপ থাকতে পারে। তাছাড়া পড়াশোনার বাইরেওতো তার অনেক ব্যস্ততা আছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়েছে বলে কীসব প্রতিষ্ঠানের সাথে এখন রক্ত সংগ্রহ করে বেড়ায়।
রাহিল যে ইদানীং চৈতির সাথে হোয়াটসআপে চ্যাটিং করে সে কথা নিপা জানে না। সেও যে একদিন হাঁটতে হাঁটতে চৈতির মুখোমুখি পড়ে যায় এবং চৈতিই তাকে চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করে ‘আপনি নিপার ভাই না?’ একথা নিপাকে কেউ বলে না; না রাহিল, না চৈতি। সেদিন আরোও দু’চার কথা বলার পর চৈতিই রাহিলকে জানায় সে এ-লেভেল পরীক্ষা দিয়েছে; বাইরে যাবার ইচ্ছা আছে। রাহিলের সাথে কিছু একাডেমিক কথা বলতে চায়, আপত্তি না থাকলে রাহিল যদি তার ফোন নম্বরটি তাকে দেয়।
বলা বাহুল্য, সেদিন চৈতির কথোপকথনে কোনো জড়তা না থাকলেও রাহিলের অবস্থা লেজেগোবরে হয়ে গিয়েছিল। সাধারণ দু’চারটি কথা বলতে গিয়েও তোতলাতে হয়েছে। চৈতি ফোন নম্বর চাইলে তার বুকটা ছ্যাৎ করে উঠেছিল। নিজের নম্বরটা বলতে গিয়ে যখন দুইবার ভুল করে বসে তখন চৈতিই বলে, ‘দেন দেন, আপনার মোবাইলটা দেন।’ তারপর রাহিলের ফোন থেকে সে তার নিজের নম্বরে কল করে। পরে বলে, ‘আমার নম্বরটা সেভ করে নেন, নইলে কল গেলেতো চিনবেন না। আমার নাম চৈতি। ’ রাহিল ঢোক গিলে বলে, ‘আচ্ছা।’
রাহিল বাসায় গিয়ে ‘চঞ্চল’ নাম দিয়ে চৈতির নম্বর সেভ করে। সাথে সাথে টুং করে মোবাইলে চৈতির হোয়াটসআপ আইডি ভেসে উঠে। চৈতির সাথে পরিচিত হওয়ার উত্তেজনা শেষ হওয়ার আগেই ওইদিন রাত এগারটায় হোয়াটসআপে চৈতির বার্তা চলে আসে, ‘হেলো, ঘুমিয়ে পড়েছেন নাকি?’
রাহিল আক্ষরিক অর্থে কেঁপে ওঠে। সে কাঁপা কাঁপা আঙুলে লেখে, ‘না ঘুমাই নি।’
‘স্যরি, বিরক্ত করছি। কেমন আছেন?’
‘ভাল।’ রাহিল লেখে, ‘আপনি কেমন আছেন?’
‘আরে! আপনি আপনি করছেন কেন? আমিতো নিপার বয়সী।’
রাহিল আবার কেঁপে ওঠে, ‘ঠিক আছে। কী করতে পারি?’
‘তেমন কিছু না। টেস্ট করে দেখছি হোয়াটসআপে আপনার সাথে কথা বলা যায় কিনা।’
‘যায়, যাবে; আমাদের ওয়াই-ফাই আছে…’ রাহিল আর কোনো কথা খুঁজে পায় না।
চৈতি তখন বলে, ‘ঠিক আছে, ঘুমান। অন্য সময় কথা বলব।’ বলেই লাইন কেটে দেয়। সেদিন রাতে আর রাহিলের ঘুম হয়নি।
এতদিনে অবশ্য সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। রাহিলের কাঁপুনি নেই বললেই চলে। দু’তিন দিন পরপর দীর্ঘক্ষণ চ্যাটিং করে চৈতির সাথে। তিন দিন ভয়েস কলেও কথা বলেছে তারা। তবে যোগাযোগ হয় একমুখী, চৈতিই নক করে। রাহিলের ভীতি আর সংকোচ পুরোপুরি কাটেনি। তাছাড়া রসায়নটাও এমন হয়ে উঠেনি যে ইচ্ছে করলেই চৈতিকে কল দেয়া যায়। কথাবার্তা যা হয়েছে বলতে গেলে তা মাথামুণ্ডু ছাড়া। কখনও একাডেমিক, কখনও দেশ-বিদেশ নিয়ে, কখনও হলিউড বলিউডের সিনেমা, আবার কখনও দেশের অপরাজনীতি আর নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে। ফাঁকে ফাঁকে চৈতিই জেনে নিয়েছে রাহিলের ফিউচার প্ল্যান, বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা আছে কিনা, ইত্যাদি। আলাপের বিষয় যা-ই হোক না কেন চৈতি ইতিমধ্যেই রাহিলের একটি আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
ফেসবুকের ব্লাড ডোনারস গ্রুপের বিজ্ঞাপন দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল রাহিলের। প্লাটিলেট নেমে গিয়ে হেমোরেজিক পর্যায়ে চলে গেছে রুগির অবস্থা। বি-নিগেটিভ রক্তের জন্য আকুতি। সে আর বসে থাকতে পারেনা। শেষবারের মত চার মাস আগে দিয়েছিল রক্ত; এখন নিশ্চয়ই দিতে পারবে সে। রাহিল ফোন করে হাসপাতালের ঠিকানা জেনে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
চৈতি বলেছিল সে কখনও রক্ত দেয়নি, তার ভয় করে। রাহিল অভয় দিয়ে বলেছিল, ‘ভয়ের কিছু নেই; তোমার আঠার প্লাস বয়স, দিতে পারবে। একবার আমার সাতে চলো, দেখবে কত সহজ।’ সে থাকলে হয়ত বলা যেত। কিন্তু ক’দিন থেকে সে লাপাত্তা। নিশ্চয়ই মালয়েশিয়ায় গেছে। বলেছিল খুব শিগগিরই তারা মালয়েশিয়া বেড়াতে যাবে। তবে দেশে থাকলেই কি সে রাহিলের সাথে বাইরে যেত? অবশ্য চৈতি একবার বলেছিল, ‘একদিন চলেন বাইরে কোথাও খেয়ে আসি; তবে টিএসসিতে যেতে বলবেন না।’ রাহিল উত্তেজিত হয়ে বলেছিল, ‘ঠিক আছে, তোমার পছন্দমত জায়গায় নিয়ে যেও।’ সে ভরসায় হয়ত সে আজ বলতে পারত, ‘চল, স্কয়ার হাসপাতালে যাই; ব্লাড কীভাবে দিতে হয় দেখে আসবে।’ কিন্তু তা আর হল কই?
রাহিলের রক্তদান পদ্ধতি ভালভাবে জানা আছে। সে অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হল যে সত্যিই রুগির অবস্থা সংকটাপন্ন। অনুসন্ধানের মেয়েটি বলল, ‘একটু দাঁড়ান, রুগির লোকজনকে ডেকে আনি…’
রাহিল ত্রস্ত হয়ে বলল, ‘ডাকাডাকি পরে করুন, এখন তাড়াতাড়ি ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ব্যবস্থাটা করে দিন। ম্যাচিংট্যাচিং করতে সময় লাগবে।’
রাহিলের রক্ত দেয়া শেষ হলে সে উঠে দাঁড়ায়। নার্স রক্তের ব্যাগটি সিল করে ছুটে বেরিয়ে যায়। ল্যাবে আরোও ডোনার অপেক্ষমান। নার্স টেকনিশিয়ান ব্যতিব্যস্ত লোকজন নিয়ে। রাহিল তার সাথে করে নিয়ে যাওয়া বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি খায়। এখন তাকে কিছু সময় বিশ্রাম নিতে হবে। ঠিক তখনই হন্তদন্ত হয়ে দুতিন জন নারী-পুরুষ ল্যাবে ঢোকে। পুরুষ ভদ্রলোক এদিক ওদিক তাকিয়ে কোনো ব্যাপারে নিশ্চিত হতে না পেরে টেকনিশিয়ানের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকান। টেকনিশিয়ান রাহিলকে দেখিয়ে বলল, ‘ইনি এইমাত্র আপনার মেয়ের জন্য রক্ত দিয়েছেন।’
ভদ্রলোককে এমনিতেই উদ্ভ্রান্ত দেখাচ্ছে। ব্লাড ডোনারকে কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাবেন তা হয়ত খুঁজে না পেয়ে ভ্যাবাচ্যাকার মত রাহিলকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর ‘তোমার ঋণ শোধ করতে পারব না বাবা, তবে আমার মেয়ের জন্য দোয়া কর। ও ফিরে আসতে পারবে কিনা জানিনা’ বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।
রাহিল সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘ভেঙ্গে পড়বেন না আঙ্কেল; সব ঠিক হয়ে যাবে। ’ সাথে সাথে এও বলল, ‘আচ্ছা, ব্লাড যতটুকু দরকার সব পেয়েছেন?’
একজন ভদ্রমহিলা তখন বললেন, ‘আর কতটুকুর দরকার জানি না, তবে আরোও দুজন রক্তদাতা পাওয়া গেছে, সম্ভবত পথে আছে। ’ তাঁর চোখ দুটিও ভেজা।
‘আমার ফোন নম্বরটি রাখুন।’ রাহিল বলল, ‘প্রয়োজন হলে ফোন দেবেন; আমার এখন বাসায় যাওয়া দরকার।’
ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার বাসা কোথায়, বাবা?’
‘মিরপুর।’
ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা সমস্বরে বললেন, ‘মিরপুর?’ ভদ্রমহিলা বললেন, ‘মিরপুর, কোথায়?’
রাহিল বলল, ‘আমরা ভাড়া থাকি, পল্লবী দ্বিতীয় পর্ব, রূপনগরে।’
‘কী আশ্চর্য! আরে আমার বাসাতো ওখানেই। ’ ভদ্রলোক খুবই উতলা হয়ে বললেন, ‘খুবই ভাল হল বাবা। আমি বলতে গেলে একা মানুষ, ছেলেটা দেশে থাকলে সাহস পেতাম। এখন মেয়েটার যে কী হয় আল্লাহ্ই জানে, আইসিইউ’তে আছে।’
রাহিলের হঠাৎ মনে হ্ল সে ওই ভদ্রলোককে কোথাও দেখেছে এবং সেই সাথে অন্য যে আশংকাটি তার মস্তিষ্কে ঠাঁই করে নিতে চাইছে তাকে সে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে চেষ্টা করল।
ভদ্রলোক তার গাড়ি দিয়ে রাহিলকে বাসায় পৌঁছানোর কথাটা বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় একটি লোক ভয়ঙ্কর গতিতে ছুটে এসে চিৎকার করে বলল, ‘মামা, মামী, তাড়াতাড়ি আসেন… চৈতি নাকি কেমন করছে!’