একদিন ছিল ভ্যালেন্টাইনের

ভ্যালেন্টাইন (ফেব্রুয়ারী ২০১৯)

Jamal Uddin Ahmed
  • ৪৪
১. বৃহস্পতিবার রাত
: ঘুমাওনি?
: বা-রে; ঘুমালে কথা বলছি কীভাবে।
: বউ ঘুমিয়ে পড়েছে?
: হুম, সে তো বরাবরই দশটা।
: ওমা! কাল ছুটির দিন...
: সেদিন কি আর আছে! বাত-ব্যথা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
: জানো? টুকি না আরেকটা ঝামেলা বাঁধিয়েছে।
: আবার কী হল? ও না চলে আসার কথা। ওরতো পড়া শেষ হয়ে গেছে।
: এবার পাকি একটা জুটেছে। এখনকার মেয়েগুলা না কেমন – হ্যাণ্ডসাম ছেলে দেখলে মাথা ঠিক রাখতে পারেনা।
: কী যে বলি, তবে মন্দের ভাল হল। আগেরটা না অষ্ট্রেলিয়ান ছিল? এখন যদি বিয়ে করে ফেলে তবে বলা যাবে ‘ইহুদি-নাসারার’ সাথে চলে যায়নি।
: তুমি না মজা করছ। পাকি আমাদের শত্রু না? দেশের লোকজন কী বলবে; শত্রুদের সাথে আত্মীয়তা?
: দেশের লোকের কথা বাদ দাও। তুমি তাদের খাও না পরো? বাপমরা মেয়েকে একাই টেনে তুলেছ – আজ সে অষ্ট্রেলিয়ান ইউনিভার্সিটির একটা ডিগ্রির মালিক। তোমার গর্ব করা উচিৎ, রুমা।
: কিন্তু এসপার-ওসপার কিছু একটা না হওয়া পর্যন্ত টেনশনতো পিছু ছাড়ছে না।
: তোমারটা তবুও পজিটিভ। আমার বাঁদরটা নাকি বিয়ে করবেই না। দেশে ফিরছেই না। তো দেশে না এলে আমেরিকায়ই একটা কর! তা-ও করছেনা। জানিনা কী তার ইচ্ছা।
: করুক তাদের যা মন চায়। শোনো, কাল দেরি করো না; তোমারতো দেরি করার বদভ্যাস। কুয়াশার চাদরের আড়ালে যদি না-ই হারালাম......

২. বোটানিক্যালগার্ডেন

বোটানিক্যাল গার্ডেনের সবুজের ঢেউকেটেকেটেসে যখন বেড়ীবাঁধে এসে উঠল তখন রুমার হাতে কাগজের একটি ঠোঙা। ওতে দুটি গরম ভাপা পিঠা, সাথে পুদিনার চাটনি। ফসি আজকে আগেভাগেই এসে পড়েছে। রুমা আকর্ণ হাসি দিয়ে বলে, হাঁটতে হাঁটতেই শুরু কর, ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। ফসি যেমন ভাল করে রুমার এই আকর্ণ হাসি চেনে, তেমনি জানে এই শীতকালের অভিসারে আসার পথে রুমা রূপনগরের রাস্তা থেকে ভাপা নয়ত চিতই পিঠা নিয়ে আসবেই। প্রতিদিনতো আসা হয়না; সপ্তাহে কেবলএকদিন । কুয়াশা এমনই ঘন আজ যে গাড়িগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। দশহাত দূরের কাউকে চেনা যাচ্ছে না।

৩. আয় ল খাই
মধ্যপৌষের সকাল। ’আয় ল খাই’ রেস্তোরাঁ। জলের উপর বাঁশের খুঁটিগেঁড়ে গুটিকয়েক ছোট ছোট টঙঘর বানিয়ে সুন্দর ভাবে একটার সাথে আরেকটা বাঁশের পুল দিয়ে জুড়ে দেওয়া। কুয়াশার ক্যানভাসে বেড়িবাঁধ তথা টঙ্গি-আশুলিয়াগামী রাস্তা থেকে দূরবর্তী টঙঘরটি আবছা আবছা দেখা যায়; জলরঙে আঁকা শীত সকালের ছবি যেমনটি হয়।নিচের জলা ভূমির উপরও শিল্পীর তুলি ছোঁয়ানো হালকা সাদা প্রলেপ। জলাশয়টি কৃত্রিম; এই হাড় জমানো শীতেও মাছের খাবি খাওয়ার শব্দ প্রমাণ করে এখানে কেউ মাছের চাষকরেছে। তবে অবর্ণনীয় আনন্দের যা, তাহল প্রাকৃতিক আবহ সঙ্গীত – বিচিত্র পাখির কলতান। শালিকের নৃত্যগীতই বেশি প্রাণ কাড়া। বাঁশের তৈরি কারুময় পুল পথ পেরিয়ে শেষ দিকের টঙ ঘরের হিম শীতল চেয়ারে গিয়ে ইইইই আওয়াজ তুলে বসে তারা দুজন- ফসিউল ও রুমা।

রুমার মোবাইল ফোন থেকে মৃদু সুরে বাজছে, আপনি তাসভির কো আখোছে লাগা তাকেয়া হ্যায় ইক নাজার মে রেতা রাফভি তেরা যাতা কেয়াহ্যায়। ফসি এসবের কিছুই বোঝেনা। রুমাই বলে দেয়, পঙ্কজ উদাস। রুমা ভাল গান করে, গান বোঝে। বাসা থেকে বেরিয়েই ফোনে রেকর্ডকৃত এমপিথ্রি ছেড়ে দেয়। পুরো এক কিলোমিটার পথ গান শুনতে শুনতে হেঁটে আসে।

বেড়িবাঁধ-লাগোয়া সবগুলো ভাসমান ছোটবড় খাবার দোকানী এ দুজনকে চেনে। অনেকটা নিজের ঘরের মানুষের মত। ওরা জানে প্রতি শুক্রবার ভোরবেলা এই অবেলার জুটি এসে জুটবে এই শহুরে পল্লীতে। অবশ্য সকালের বোটানিক্যাল গার্ডেন আর তুরাগপারের শহর রক্ষা বাঁধ যা কার্যত একটি বাইপাস রোড তা বুড়োবুড়ি ছোড়াছুড়ির পদচারণায় এক মেলা মেলা ভাব ধারণ করে। ছুটির দিনে তাদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। রুমারাঅবাধেআয় ল খাই-এর মত অন্যান্য শৈল্পিক স্থাপনাতেও বসে সময় কাটায়। কেউ কিছু বলে না, সন্দেহ করার মত বয়স তারা অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছে। কর্মচারি ছোকরাগুলি বেশ বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে। মাঝে মাঝে রুমা ধমক দিয়ে দুয়েকটাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে কফি বানাতে বলে। ফসি অবশ্য গরম গরম পরটা আর টাটকা সব্জির ভাজি খেতে চাইলে রাস্তার উল্টাদিকের খাবার দোকানে আসতে হয়। ওটা আবার ভাসমান নয়। তবে খাওয়াদাওয়াটা মুখ্য নয়। দু’ঘন্টা সময় দুটি ইন্দ্রজালবেষ্টিত প্রাণী মুখোমুখি বসে কথা বলবে, হাসবে এবং কাঁদবে – তাঁরা জানে, লক্ষঘন্টার পার্থিব জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান এই সময়টুকুই।

৪. স্মৃতির কাঁটাগাছ

রুমার সাথে টিস্যুপেপার, ছোট্ট পানির বোতল এসব থাকে। ভাপাপিঠা শেষ হলে একটু করে পানি খায় দুজনই। এখন চাইলেই চা-কফি পাওয়া যাবেনা। ছোকরাগুলো তাদের গুনগুনানি শুনলেও ঘুমের ভান ধরে পড়ে থাকবে এটা তারা জানে। তাই দুজনই কথা বলতে থাকে কুটকুটখুটখুটকরে। কী এত কথা? তেমন কিছুই না - আটপৌরে: কার আত্মীয় বিদেশ থেকে এল, কোন কলিগের প্রমোশন হল, কোন আত্মীয়ের মেয়ে টেলিভিশনে গান গাইল, কোন অনুষ্ঠানে কোন শিল্পীকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল এ ধরণের আলাপই চলে বেশি। তবে এসব কথার মাঝখানে যখন হঠাৎ করে নিজেদের ব্যক্তিগত অতীত কখনও উঁকি মারে তখন আর কথা বেশিদূর এগোয় না। আবার দেখা করার আশা নিয়ে দুজনই নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যায়।

রোদ ওঠার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দুটি অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে বাঁশের পুল বেয়ে এসে তাদের পাশের টঙঘরে ঢুকল। তখন ফসি অস্বস্থি নিয়ে বলল, হয়ে গেছে! রুমা বলল, কী হয়েছে? ফসি তখন ফিসফিস করে রুমাকে জানাল যে ওই মেয়েটি তার অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং-এথাকে; পরিচিত। রুমা হাত ঘুরিয়ে বলল, ধুর রাখ, পরিচিত তাতে কী হয়েছে। ও যদি তোমাকে চিনতে পারে তবেতো তারই ভয় পাবার কথা। ফসি ভাবল, তাইতো।
: ফসি শোনো।
রুমার কথা শুনে ভ্যাবলার মত তাকায় ফসি। সে এখনও শংকামুক্ত হয়নি।
: আজ না ভ্যালেন্টাইন ডে! আমারও মনে ছিল না।
: তাই নাকি? ফসির মুখে কৃত্রিম হাসির রেখা দেখা যায়।
তারপর অতি স্বাভাবিকভাবে ফসির হাতের উপর নিজের হাতটি রাখে রুমা। ফসি কিছু বলে না। রুমাও আর কিছু বলে না। দুজনই অপলক তাকিয়ে থাকে দুজনের চোখের দিকে। অনেকক্ষণতো হবেই; কারণ ইতিমধ্যে রুমার চোখের কোণ গড়িয়ে দুফোঁটা অশ্রু টেবিলের উপর পড়ে গেছে।

৫. একদিন ভ্যালেন্টাইন এসেছিল

রুমা – কিউপিড আজ অনেকগুলো তির ছুঁড়েছে।
ফসি - হুম। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে কখন বিভীষণ ফিরে আসে যমদূত হয়ে।
রুমা – মানেটা কী?
ফসি – মানে হল, এইযে তুমি আমাকে চেপে ধরে রেখেছ, হঠাৎ যদি...
রুমা – আসুক, ভাইয়া আসলে বলব এই ভ্যালেন্টাইন ডে’তে কলিমা পড়িয়ে দাও আমাদের; আর লুকোচুরি খেলতে ভাল্লাগেনা।
ফসি – অ্যাই অ্যাই, এখনতো একেবারে চামড়া তুলে ফেললেদেখছি……

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান জামাল ভাই এবার উপভোগ্য লড়াই হবে।শুভকামনা সতত।
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
রুহুল আমীন রাজু গল্পটি লিখায় বেশ পরিশ্রম করা হয়েছে ... সার্থক লেখক। অনেক শুভ কামনা।আমার পাতায় 'চোখের জলভোজ' গল্পটি পড়ার আমন্ত্রণ রইল ।
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
ARJUN SARMA চিরকালীন, শুধু একদিন নয়! ভালো লাগলো
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
ধন্যবাদ, দাদা।
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
আপেল মাহমুদ ভালো লাগলো ভাইয়া।
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
Tahmina Alom Mollah লক্ষঘন্টার পার্থিব জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টা কি আসলেই মূল্য পায় বা আমরা বুঝি তার মূল্য? মূল্য না পেয়েও নিঃশেষ হয়ে যায় কত কত মূল্যবান সময় জীবনের বাঁকে!! হায়!! অন্তত আপনার সেই সব মূল্যবান সময়গুলো যেন মূল্য পাক। বয়ে চলুন অবিরত ...।  
ভালো লাগেনি ৩১ জানুয়ারী, ২০১৯
ধন্যবাদ, প্রিয় বোদ্ধা পাঠক।
ভালো লাগেনি ৩১ জানুয়ারী, ২০১৯

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ভ্যালেন্টাইন ভালবাসার একটা অজুহাত মাত্র। ভালবাসা সর্বদা ভাললাগার নেকাব ছিঁড়েই প্রতিভাত হয়। এই গল্পে বহতা ভালবাসার একটু টক-ঝাল ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

১৯ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৪৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী