ঝুপড়িকথন

কাঠখোট্টা (মে ২০১৮)

Jamal Uddin Ahmed
  • ১৩
  • ৪৮
হাসি...
নিরুত্তর।
হাসি...
নিরুত্তর।
এ মাগি মইরা গেছস নি?
পলিথিন-ঢাকা ঝুপড়ির ভেতর থেকে নিচুস্বরের কঁকানির শব্দ শোনা যায়, উঁ।
আওয়াজ কানে যায় না?
বোলের ঢাকনাটা উঠাও – ভাত, ভর্তা, শাক, মাছভাজা সব একসাথে রাইখা দিছি।

ডিজিটাল নির্মেদ কথাবার্তা শেষ। বৈশ্যা অর্থাৎ বশির পলিব্যানারের আগলটা ফাঁক করে ঝুপড়িতে মাথা গলাল। পকেট থেকে ম্যাচ বের করে মোমবাতি ধরিয়ে দেখল হাসি অর্থাৎ হাসিনা – তার পোয়াতি বউ কাত হয়ে পাকুড় গাছের গুঁড়ির মত শুয়ে আছে। তার পোয়াতি হওয়ার অজুহাতে উত্তমমধ্যমের মাত্রা ইদানীং কম–বৈশ্যা শেষ বিচারে মানুষতো!

ঘামভেজা ময়লা গেঞ্জি আর গামছা ঝুপড়ির গা-লাগোয়া তারে ঝুলিয়ে দিয়ে হাসিনার গা ঘেঁষেই বসল সে। ঝুপড়িটা এতটুকুন। অনেকটা ডাবল সাইজ কবর। হাসেম মোল্লার গ্যারেজে রিক্সা জমা দিয়ে মিরপুর সিরামিকসের দেয়ালঘেঁষা ঝুপড়িতে ফিরে আসতে আসতে তার রাত এগারটা। বেচারি হাসি কতক্ষন আর বসে থাকবে। হাসি বৈশ্যার তৃতীয় পক্ষ। গত কুরবানীর ঈদে বিয়ে করেছে হাসিকে। এবার নিজের দেশেই – আলমডাঙ্গায়। তিন বছর আগে ঢাকায় এসে লটরপটর করে বিএনপি বস্তির সখিনাকে বিয়ে করে কাটাল এক বছর সাড়ে তিন মাস। পেটে বাচ্চা আসার পর সখিনা একটু ঝুলঝুলে হয়ে পড়ার সময়েই কালশীর নূরজাহানের সাথে ঝুলে পড়ে বৈশ্যা। নূরজাহানের মা বিহারী, বাপ বাঙালি – ভাঙ্গারি শ্রমিক; সবাই ভাঙ্গারি ফটিক হিসেবে চেনে। সখিনা বাচ্চা বিয়োনোর আগেই বৈশ্যা নূরজাহানের টানে বিএনপি বস্তি ছেড়ে কালশীতে আস্তানা গাড়ে । নূরজাহান সাক্ষাৎ অজগর । শিকারকে প্যাঁচ মেরে কীভাবে কাবু করতে হয় তা তার ভালই জানা। সন্তানের মায়ায় বৈশ্যা বিএনপিমুখী হয়েও যেতে পারে - এই ঝুঁকি সে জিইয়ে রাখতে চায়নি। তাই নিজেই মোল্লা-কাজির ব্যবস্থা করে বাপের বস্তিঘরে আটকে রাখে বৈশ্যাকে। নতুন রিক্সা জোগাড় করতেও বেগ পেতে হয়নি তার।

নূরজাহানের সাথে খলবল করে সময় ভালই কাটাতে থাকে বৈশ্যা। আদর সোহাগের কমতি নেই। হিন্দি ছায়াছবির নায়িকার মত সূচালো ভুরু নাচিয়ে চিকনি কোমর দুলিয়ে মায়াজাল রচনায় পটু নূরজাহান; গা থেকে মিঠে মিঠে সুবাসও বেরোয়। সহসা বাচ্চা নেবে না বলে স্বাস্থ্যকর্মির দেয়া জন্মনিয়ন্ত্রণ বটিকাও সেবন করে। কিন্তু গোল বাঁধল অন্যত্র। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই সে টের পায় নূরজাহানের কদর অসামান্য। বস্তির এন্তার ছেলেছোকরাই তাকে আশনাই করে বেহদ। হেসে হেসে কথা বলে, আইসক্রিম খাওয়ায়। কেউ কেউ গরুর চাপ নিয়ে আসে রব্বানী হোটেল থেকে, সাথে শাহী নান। আবার কখনও দুয়েকটা অপরিচিত কেতাদুরস্ত ছোকরাও উপস্থিত থাকে এসব মজমায়। নিজেদের ঘরের চিলতে দাওয়ায় মোড়া পেতে বসে কিংবা আজগরের মোবাইল চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে নূরজাহান এসব খায় আর খিলখিল করে হাসে। আগে এসব নজরে না পড়লেও কিছুদিন থেকে বৈশ্যা ব্যাপারটা ভালভাবে লক্ষ করছে। কিন্তু হলে কী হবে। বৈশ্যা গ্যারেজে রিক্সা রেখে রাতের বেলা ফিরে আসতে না আসতেই নূরজাহান হৈচৈ করে এমন দৃশ্য রচনা করে যেন সে সোয়ামির অপেক্ষায় এতক্ষণ লবেজান ছিল। ফলে বৈশ্যার মনের মধ্যে ইঁদুর ছোটাছুটি করলেও স্ত্রীর সোহাগের আঁটুনি গলে তা কখনও বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেনি।

তবে ঘটবার যা তা একসময় ঘটেই গেল। এক সন্ধ্যায় বৈশ্যা বস্তিতে ফিরে এসে দেখে নূরজাহানের সাড়াশব্দ নেই। পাশের ঘরে মাথা বাড়িয়ে শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলে শাশুড়িও শুকনো মুখে জবাব দিল, ‘আমিও বহুত পেরেশান আছি বাবা। কোথায় যে গেল; হারামজাদি বলেও গেল না। রাতের বেলাতো সিনেমা দেখতে যায় না। ওর তো ফোন আছে। একটা ফোন দাও না।‘ বৈশ্যা ইতিমধ্যেই দু’বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। নূরজাহানের ফোন বন্ধ। তাই চিৎকার চেঁচামেচি না করে একটা সিগারেট মুখে পুরে বড় রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে বস্তির চিপা গলিতে উঁকিঝুঁকি দিয়ে শেষমেশ আজগরের মোবাইল চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় বৈশ্যা। আজগর তার কেরোসিন কাঠের চাকালাগানো বাক্সে ইতিমধ্যে পানির ফ্লাস্ক, চায়ের কাপ, বোল, বয়াম ইত্যাদি ঢুকিয়ে ফেলেছে। বৈশ্যা তাই আজগরের বেঞ্চে না বসেই আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল, ‘নূরজাহান আইছিল রে, হাঞ্জাবালা?’ আজগর বেঞ্চিটা বাক্সের উপরে রাখতে রাখতে বৈশ্যার দিকে না তাকিয়েই রবোটের মত উত্তর দিল, ‘দেখি নাই।‘

বৈশ্যা এরপর আর বেশি দিন কালশী বস্তিতে থাকেনি। থাকার তেমন কারণও ছিল না। আজগরের কাছ থেকেই নূরজাহানের বিচ্ছিন্ন চিত্রনাট্য সংগ্রহ করে সেগুলো জোড়া দিয়ে সে মোটামুটি একটা এপিসোড দাঁড় করাতে পেরেছিল। তাছাড়া বস্তির মেয়েদের কানাঘুষা থেকেও সে বুঝতে পেরেছিল যে নূরজাহান ধ-ব্লকের এক মিনিবাসের হেল্পারের সাথেই পালিয়েছে। সেই সাথে বৈশ্যার জমানো কিছু টাকাও গেছে। শ্বশুর ফটিক মুন্সী চেয়েছিল মেয়েকে কৌশলে ফিরিয়ে এনে একশ ঘা দোররা মেরে আবার বৈশ্যার হেফাজতে দিয়ে দেবে। কিন্তু বৈশ্যা তাতে রাজি হয়নি।

কিছুদিন পর মনে মনে দোয়াদরুদ পড়ে আলমডাঙ্গার হাসিনাকে বিয়ে করে ঢাকায় নিয়ে এসে আলুব্দির হাসেম মোল্লার সাথে দেখা করে বৈশ্যা। গ্যারেজমালিকদের সাথে রিক্সাওয়ালাদের এমনিতেই জানাশোনা থাকে। আগে দুয়েকবার খেপ মারতে এদিকে এসে হাসেম মোল্লার সাথে খেজুরে আলাপ করেছেও সে। বৈশ্যার বৃত্তান্ত সহানুভূতির সাথে শুনে হাসেম মোল্লা বলে, ‘শুরু কইরা দে কাইল থেইক্কা।‘ তারপর ঘোমটাটানা হাসিনার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এইটারে নিয়া কী করবি? টিকতে পারব ঢাকা শহরে?’

ঢাকা যে যুদ্ধের শহর আর এ শহরে থাকতে হলে সেপাই হয়ে থাকতে হবে এ দীক্ষা হাসিনাকে পুরো একমাস দিয়েছে বৈশ্যা। সে হাসেম মোল্লাকে নিশ্চিত করল, ‘পারব, পারব না ক্যান। পরথম পরথম একটু আউলাঝাউলা লাগব, আগে ঢাকায় আসে নাইতো।‘

হাসেম মোল্লা একটা সহজ সমাধান বাতলে দিয়ে বলল, ‘তাইলে এক কাজ কর; আমার বিবি বেশ কষ্টে আছে। তোর বউ হের কাছে থাউক। আস্তেধীরে থাকার জাগা ঠিক কইরা লইয়া যাইস।‘

প্রতিদিন কাজ শেষে বউকে নিয়ে এসে গ্যারেজের এককোনায় রাত্রি যাপন করার অনুমতি হাসেম মোল্লা বৈশ্যাকে দিয়েছে বটে। কিন্তু বৈশ্যার এ ব্যবস্থা পছন্দ হয় না। অন্য রিক্সাওলারা ফিসফিস করে; টিপ্পনী কাটে। তাই একটা সুবিধাজনক বাসস্থানের জন্য সে মরিয়া হয়ে ওঠে। থাকার একটা ব্যবস্থা প্রায় বিনে পয়সায় পেয়েও যায় সে; মিরপুর সিরামিকসের দেয়াল ঘেঁষে আট-দশটা পলিথিনঢাকা ঝুপড়ির পাশে বাঁশের খুঁটি গেড়ে সেও নিজের জন্য একটা বানিয়ে নেয়। জায়গাটা নিরাপদ, উটকো ঝামেলা নেই। আর্মিদের এলাকা – ক্যান্টনমেন্ট-ডিওএইচএস কাছাকাছি। কিন্তু সমস্যা হল, হাসেম মোল্লার বউ হাসিনাকে ছাড়তে চায় না। অবশেষে অনেক টানাহেঁচড়ার পর একটা রফা হয়েছে: হাসিনা সারাদিন হাসেম মোল্লার বাড়ি থাকবে, আর সন্ধার পর সে তার ডেরায় ফিরে আসবে। হাসিনার এ ক’দিনে বাস্তব প্রশিক্ষণ হয়েছে ঢের, সাহসও বেড়েছে। স্বামী তেমন গাঁইগুঁই না করাতে সেও মোল্লাদের চাপে রাজি হয়ে যায়। মালিক অর্থাৎ হাসেম মোল্লার বাঁকাচোখ আর দাঁতকেলানী ছাড়া আর তেমন কোন উপদ্রব নেই অবশ্য সে ঘরে। বাড়তি কিছু আয় করতে গেলে এরকম একটু আধটু উষ্টাবিষ্ঠা ঢাকা শহরে কিছুই না।

প্লাস্টিকের বোতল থেকে সামান্য পানি ঢেলে হাতটা ধুয়ে বৈশ্যা যেইনা বোলের উপরের ঢাকনাটা সরাল অমনি একটা আরশোলা কোথা থেকে বেরিয়ে ফুড়ুৎ করে দৌড় দিল। আর যায় কই! ‘এই খানকি মাগী, আমার লাইগ্যা তেলাচোরা রাইন্দা রাখছোস’ বলে একটা ভাল ওজনদার কিল হাসির পশ্চাদ্দেশে বসিয়ে দিল সে। হাসিনা ‘ওরে বাবারে’ বলে চিৎকার করে তার ভারি শরীরটাকে টেনে নিয়ে উঠে বসে। তারপর সাধারণত যা হয় -খিস্তিখেউড়, চড়-থাপ্পড়, কান্নাকাটি বেশ কিছুক্ষন চলল।

পাশের ঝুপড়ির মধ্যবয়সী আয়নালের মা চেঁচামেচি শুনে এসে কিছুক্ষণ ধীরশান্ত গলায় উঁচুনিচু স্বরে দুজনকেই মোটামুটি ধোলাই করল। বেশি করে বকল বৈশ্যাকেই, ‘বেটা, তুই মানুষনি? এই সময়ে কেউ বউ পিটায়?’ বৈশ্যা খ্যাঁকখ্যাঁক করে তার যুক্তি দেখায়, ‘না, আমি মানুষ না। মানুষ অইলে আমারে তেলাচোরা খাওয়াইতো নি?’ যাই হোক আয়নালের মা শেষপর্যন্ত দুজনেরই মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষনা করে।

তেলাপোকা যে বোলের ভেতরে ঢুকতে পারেনি সেটা বৈশ্যাও ভাল করে বুঝতে পেরেছে। কিন্তু বেটাগিরি ফলানোরতো একটা মওকা দরকার। দিনভর যাত্রীরাই চোটপাট দেখায়। সে চটবে কার ওপর? বউই হল একমাত্র মৌরসী স্বত্ব। অতএব জমিদারের লাঠি তার ওপরেই ঘোরাও! আয়নালের মা চলে গেলে একপাশে বউ কুকুরকুণ্ডলী পাকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকল আর অন্যপাশে বৈশ্যা কোন কথা না বলে অই খাবারটাই খেল। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে ঝুপড়ির বাইরে এসে নর্দমার স্ল্যাবের উপর বসল।

বাসের ঝুপড়িগুলোর সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও বৈশ্যা ঝিম ধরে একই জায়গায় বসে থাকল। হয়ত কিছুটা অনুশোচনা হচ্ছে তার। আর যাই হোক, এই বউটাইতো বাড়তি দুই হাজার টাকার যোগান দিচ্ছে সংসারে। এই টাকাগুলোইতো তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আরও কিছুদিন মোল্লার বাড়িতে ঝি-গিরি করলে বউয়ের রোজগারের টাকা দিয়ে নিজের একটা রিক্সা কিনতে পারে সে। তাছাড়া বউটাও নম্র, লাজুক। নূরজাহানের মত ক্যাটরিনা দীপিকার সাথে তার কোন ভাব-বন্ধুত্ব নেই। হতে পারে আড়ালে আবডালে মোল্লাদের টেলিভিশনে চোখ রাখার সুযোগ পায় । কিন্তু কারা যে ওখানে ঝাকানাকা করে তা জানার মত জ্ঞান তার হয়নি এটা বৈশ্যা বেশ বুঝতে পারে। খোদার বিশেষ রহমত, নূরজাহানের ইন্দ্রপুরী থেকে সে অল্পদিনেই মুক্তি পেয়ে গেছে। নইলে কী যে হত! আবার একথা ভাবলে সে চুপসে যায় – সে কি নিজে ধোয়া তুলসিপাতা? সখিনার মত একটা নিরীহ মেয়ের পেট বাঁধিয়ে দিয়ে সে লুচ্চামি আরম্ভ করল। নিজের ঔরসের বাচ্চাটা রক্ত আমাশয়ে ভুগতে ভুগতে বছর ঘোরার আগেই মারা গেল, অথচ সে পালিয়ে বেড়াল। বিএনপি বস্তির মাকনা দেখা হলেই বৈশ্যাকে বকাঝকা করে বলত, ‘বউয়ের কথা বাদ দে, নিজের অসুখ্যা পোলাডারে একবার দেইক্যা আয়।‘ না, বৈশ্যার যাওয়া হয়নি। ছেলের মৃত্যুর খবর দুই মাস পর পেয়েছে, মাকনার কাছেই।

অনতিদূরের কোন এক ঝোপ থেকে একটা শিয়াল ডেকে উঠলে প্রায়-নিরব মিরপুর সিরামিকস এলাকা প্রতিধ্বনি করে ওঠে। বৈশ্যার মাথায়ও হঠাৎ ঝাঁকি লাগে। হাতের রংচটা মোবাইল ফোনে টিপ দিয়ে দেখে রাত প্রায় এগারটা। না, আর বসা যায়না। একটু দূরের দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে জলবিয়োগ করে সে দ্রুত ঝুপড়িতে ঢুকে যায়।

হাসি ঘুমিয়ে পড়েছে কি না বোঝা যাচ্ছেনা। তবে কোন ফোঁপানি-গোঙানির আওয়াজ নেই আপাতত। এলাকার এক উটতি নেতার ঈদ মোবারক-লেখা পলিব্যানার দিয়ে বানানো ঝুপড়ির ঢাকনাটা টান দিয়ে নামিয়ে বৈশ্যাও শুয়ে পড়ল বিছানায়। কিন্তু এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছেনা দেখে একটু সাহস সঞ্চয় করে হাসির দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিচু গলায় বলল, ‘কিরে ঘুমাইয়া পড়ছস?’
উত্তর নেই।
একটু পর গলার স্বর খাদ থেকে উপরে তুলে বৈশ্যা আবার ডাকল, ‘মইরা গেলি নাকি?’
এবারও উত্তর নেই।
বৈশ্যার পৌরুষ এবার যেন আড়মোড়া ভাঙল। অধৈর্য হয়ে সে হাসির কাঁধে ধাক্কা মেরে বলে, ‘হুনছ না?’
হাসি হয়ত ঘুমিয়েই ছিল, কিংবা ঘুম না আসায় ঘাপটি মেরে পড়েছিল। সে এক ঝটকায় বৈশ্যার হাত তার কাঁধের উপর থেকে সরিয়ে নিজে আরেকটু সরে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু সরবে কোথায়?
বউয়ের প্রতিক্রিয়ায় বৈশ্যার পৌরুষ এবার পুরোপুরি জেগে উঠল। সে হ্যাঁচকা টানে হাসিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল, ‘দেমাগ দেখাস, মাগি?’
হাসি এবার হুহু করে কেঁদে উঠলে তাকে আর সুযোগ না দিয় সেই কান্নার উৎসমুখে বৈশ্যা তার ঠোঁটের ছিপি আচ্ছা করে ঠেসে ধরে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Mokbul Hossain সত্যি চমৎকার একটা লিখা; প্রতিফলিত হয়েছে রুঢ় বাস্তবতার চিত্র
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী আপনার লেখার ভাব দেখলে এমনেতেই পড়তে ভালো লাগে। নিখুঁত ও সাবলীল বর্ণনা সহজে পাঠকের মন কেঁড়ে নেয়। অসাধারণ বলা ছাড়া কোনভাবেই উপায় নাই কবি। ভোট বন্ধ, তাই ভোট দিতে পারলাম না। তবে শুভকামনা নিশ্চয় ...
ভোটের চেয়ে ভালবাসার ওজন বেশি! অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Shamima Sultana অনেক ভাল লাগ্ল।বস্তির অচেনা জীবন সম্পর্কে কিছু তা জানা গেল
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
%3C%21-- %3C%21-- খুবই মানসম্পন্ন একটি লেখা। ভাল লাগল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কাজী জাহাঙ্গীর আমি ভাবছিলাম ‘বস্তির রোজনামচা’ কেন পরে শিরোনামটা দেখতে মাউস ঘুরিয়ে উপরে উঠে দেখলাম নাম রেখেছেল ‘ঝুপড়িকথন’ পুরোপুরি পারফেক্ট মনে হয়েছে নামকরনটা। বস্তির নিত্যদিনের ফ্যাচর ফ্যাচরগুলো ভালো করেই তুলে এনেছেন। অনেক শুভকামনা রইল। ভাল থাকবেন।
নামকরনটা ভাল লেগেছে জেনে এবং গল্পটা পড়েছেন দেখে ভাল লাগল। অনেক ধন্যবাদ।
Tahmina Alom Mollah আচ্ছা হয়েছে...
আপনার মন্তব্যে খুশি হলাম। ধন্যবাদ।
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া এবারের গল্পটিও সেরাদের তালিকায় থাকতো। কিন্তু ভোটিং বন্ধ। জীবনমুখী গল্পগুলো নিশ্চয় পাঠক উপভোগ করবে। আমারতো বরাবরই ভালো লাগে। বন্ধু বলে কথা। দোয়া করবেন।
আমিতো ভাবলাম আপনি গেলেন কোথায়! ষোলকলা পূর্ণ হল, বন্ধু। অনেক ভালবাসা।
ARJUN SARMA ভালো লেগেছে আপনার গল্প।ঝরঝরে লেখা।
হাহ্‌ হা! ভাল বলেছেন, দাদা। আপনার প্রশংসা পেয়ে আমারও ঝরঝরে লাগছে! অনেক ধন্যবাদ।
Fahmida Bari Bipu আপনার গল্প আগে পড়া হয়নি আমার। বেশ পরিণত লেখনী আপনার। সত্যি যদি বলি, গক'তে খুব বেশি গল্প মন ছুঁয়ে যায় না ইদানীং। তাই অনেক গল্প পড়া হয় না। তবে এই না পড়া অনেক গল্পে মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা লুকিয়ে থাকে। খুব ভালো লাগলো। সর্বোচ্চ ভোট দিলাম আমি। খুব পরিণত লেগেছে আপনার লেখাটি।
ওহ হো! ভোটিং লাইন ত দেখি বন্ধ! আপনার ভাগ্য মন্দ। আমার সর্বোচ্চ ভোট থেকে বঞ্চিত হলেন। :)
আপনি গক'র বনেদি লিখিয়ে। হঠাৎ করে আমার বাড়ির সামনে থামলেন - স্বাগতম! গল্পটি আপনার ভাল লেগেছে, এটাই আমার স্বার্থকতা। (ভোট, পুরস্কার ওসবে মোহ অল্পই।) একরাশ কৃতজ্ঞতা।
ভাই আপনার পরিশীলিত কথন ও সাহিত্যের প্রতি নিখুঁত ভালোবাসাতেই আপনার বাড়ির সামনে থেমেছি। আশাকরছি ইনশাল্লাহ সবসময়েই থামবো। গক তে নিয়মিত লিখে যাবেন এই আশারাখি।
আমি আনন্দে (more than) আটখানা! অকৃত্রিম ধন্যবাদ।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত ভাল লাগল । শুভেচ্ছা আর শুভকামনা রইল ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পে বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এক যুবক রিক্সাওলার মনোদৈহিক অবস্থানকে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করেছি আমি, মোটাদাগে এ কথাই বলতে পারি। সূক্ষ্ম বিচারে দেখতে গেলে আমাদের সমাজের রিক্সাচালকের আর্থসামাজিক অবস্থান এবং একই কারণে তার পরিবেশ-পারিপার্শ্বকতা তাকে অনেকটা নির্মোহ, আবেগহীন, প্রায়-যান্ত্রিক এক সত্তায় পরিণত করে। তবে সার্বিক বিচারে সে-ও এক জীব। তারও জীবন আছে, আছে জৈবিক তাড়না। তাই দেখা যায়, বিয়ের পরও একজন রিক্সাওলা বহুগমন করে; আর বউপেটানোতো ডালভাত। বহুগমন কিংবা স্ত্রীগমন তার কাছে অনেকটা ধূমপানের মত। এখানে ভালবাসা বা হৃদয়ঘটিত আবেগের উপস্থিতি অতি গৌণ। উপরের বিশ্লেষণের বস্তুরূপ আমরা দেখতে পাই বৈশ্যার চরিত্রে। সখিনাকে যে সে তার যৌন চাহিদা পূরণের জন্যই পটিয়েপাটিয়ে বিয়ে করেছিল, এ কথার প্রমাণ মেলে তার নূরজাহানের সাথে সখ্য গড়ার মধ্যে। শুধু দৈহিক কারণেই সখিনাকে ফেলে নূরজাহানকে বেছে নেয়। এখানে আমরা বৈশ্যার মধ্যে নিজের স্ত্রীর প্রতি কোন দরদতো দেখতে পাই-ই না, নিজের অনাগত সন্তানের জন্যও না। হাসিনাকে বিয়ে করার মধ্যেও আমরা আবেগ-ভালবাসার উপস্থিতি তেমন দেখিনা। দোয়াদরুদ পড়ার কারণ হল, বৈশ্যা নূরজাহানের আচরণে কিছুটা কাবু হয়ে গিয়েছিল – সে নূরজাহানকে খেলতে পারেনি, নূরজাহানই তাকে খেলেছিল। হাসিনাকে বিয়ে করার পরও এমনকি হাসিনার উপার্জিত বাড়তি আয়ের উপর স্বপ্ন রোপন করেও বৈশ্যা তার সাথে কোমল প্রেমসিক্ত কোন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি। অকারণে পোয়াতি স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছে। মারামারি, কান্নাকাটির মত ঘটনার পরেও যখন তার শরীর জেগে উঠেছে, তখনও সে স্ত্রীকে একটু আদর-সোহাগ দেখাতে পারেনি। বরং সে পশুর শক্তিমত্তায় স্ত্রীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সে কাঠখোট্টা নয়ত কী?

১৯ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১৬১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪