বিসর্জনের ভ্রান্তি

অশ্লীল (এপ্রিল ২০২০)

শাহী শুভ
  • ৩১

বিছানায় আর থাকতে না পেরে মাথার কাছ থেকে টর্চটা তুলে খিলটা খুলে বাহিরে বেরিয়ে এলো শফিক। বাড়ির পাশের জংলা থেকে অসংখ্য ঝিঝি পোকা ডাকছে। ঝিঝির ডাক ছাড়া আর কোথাও কোনো শব্দ নেই। কী অদ্ভুত! আজ রাত জাগা কোনো পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে না। সব পাখিরা কি ঘুমিয়ে গেলো? গোয়াল ঘর থেকে চপচপ শব্দ হচ্ছে, বোধহয় বাছুরটা দুধ খাচ্ছে,সারাদিনের ঝামেলায় সন্ধ্যায় গরুটাকে গোয়ালে তুলে বাছুরটাকে বাঁধা হয়নি। সকালে দুধ দোয়াতে গেলে কিচ্ছু পাওয়া যাবে না। বাছুরটা মনের সুখে সব খেয়ে আয়েশ করে ঘুমোতে যাবে। শফিক ইচ্ছে করলেই গোয়ালে যেয়ে বাছুরটা কে বাঁধতে পারে, কিন্তু ইচ্ছে করছে না। খাচ্ছে খাক, সবদিনি তো আর সুযোগ পাবে না৷ আজ সুযোগ পেয়েছে তার সৎ ব্যবহারটা করে নিক।

জ্যাৎস্নায় শরীরের লোম পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, টর্চ জ্বালানোর প্রয়োজন নেই। তবুও টর্চটা হাতে রেখেছে। আজকে চাঁদটাকে বড় সুন্দর লাগছে। থালার মতোন বড় চাঁদ। এখন নবনী থাকলে বলতো 'আহেন চান্দ আহেন,আপনেরে খাইয়া ফেলি। ও, চাঁদ কে আপনি করে বলতো। যা কিছু ওর চোখে সুন্দর ছিলো তা, ও খেয়ে স্বাদ নিতে চাইতো। গোলাপ বকুল প্রায়ই চিবিয়ে চিবিয়ে ফেলে দিতো। নবনীর কথা ভাবতে ভাবতেই গোয়াল ঘরের পেছন থেকে কোদালটা হাতে তুলে নিয়ে গোরস্তানের দিকে হাঁটতে শুরু করলো শফিক । বাড়ি থেকে গোরস্থান খুব একটা দূরে নয়, মাত্র মিনিট দুয়েকের পথ। ঝোপঝাড় পেরিয়ে বউয়ের কবরের সামনে এসে দাঁড়ালো শফিক। নতুন মাটির গন্ধটা এখনো কাটেনি, খেজুর গাছের ডালের গোড়ায় দেয়া পানিও মিলিয়ে যায়নি। চারদিক নির্জন, এমন মধ্যে রাতে নতুন বিয়ে করা স্বামী-স্ত্রী ছাড়া আর কেউ জেগে থাকার কথা না। এ সময় রতিক্রিয়ার উপযুক্ত সময়। কান পেতে থাকার মতোন কেউ জেগে থাকে না, তাই মনের সুখে কথা বলা যায়।

নবনীর মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কবর দেয়ার পর বউকে দেখলে কী পাপ হবে?খানিকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে বের করলো, নিজের বউ কে নিজে দেখবে, এতে পাপের কী হলো? নষ্ট করার মতোন সময় হাতে নেই, মাটি খুঁড়ে বউ কে দেখে আবারো আগের মতোন মাটি সাজিয়ে রাখতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। কয়েক ঘন্টা বাদেই মোয়াজ্জেম উঠবে,এরপর ধীরে ধীরে সকলেই উঠবে,পূর্ব দিকে সূর্যটা শিশু হয়ে জন্মাবে, ধীরেধীরে কৈশোর পার করে যুবক হবে, যৌবন শেষ করে বৃদ্ধ হবে,বৃদ্ধকাল শেষ করে মৃত্যু বরণ করবে, আগামীকাল ভোরে আবারো নতুন করে জন্ম নেবে। শুধু নবনীই নতুন করে আর জাগবে না৷ মৃত্যু শেষে ফিরে আসবে না। এসব চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দ্রুত হাতে কোদাল দিয়ে মাটি সরাতে লাগলো শফিক। আলগা মাটি, সরাতে তেমন একটা বেগ পেতে হলো না। অল্প একটু খুঁড়তেই বাঁশের ফালটা বেরিয়ে এলো। দ্রুত মাটি পরিষ্কার করে বাঁশ গুলো তুলে একপাশে রাখলো। বাঁশের চাটাই সরাতেই কাফনে ঢাকা তাজা লাশটা বেরিয়ে এলো।মুখের কাছের কাপড় সরাতেই বউয়ের হলদেটে মুখটা দেখতে পেলো শফিক। কতো চেনা সেই মুখ। কতো সময় এই মুখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়েছে, তার কি কোনো হিসেব আছে? শফিক তাকিয়ে আছে মুখটার দিকে,মনেই হচ্ছে না যে মরে গেছে,মনে হচ্ছে যেনো ঘুমোচ্ছে, যে কোনো সময় জেগে উঠে বলতে পারে, এমন কইরা কী দেখতাছো? আজকে ঐসব হবো না,শরীর ভালা না।মনে মনে কথাগুলো ভেবে শফিক উত্তর দেয়, শরীর তো তোমার সবসময়েই খারাপ থাকে। একটু আদর করবারো দেও না। শফিক পরের উত্তর গুলো ভেবে নেয়, গত পরশুও না আদর করলা! তুমি তো খালি অত্যাচার করো, সবখানেই খালি অত্যাচার করবার চাও। কী করমু কও, আমার তো সবখানেই আদর করতে মন চায়। আজকে আসলেই হবো না, শইল নাপাক হইছে, যাও শুইয়া পড়ো। মনে মনে বাক্যলাপে বউ রাজি না হওয়াতে কবরের মধ্যে বসেই শফিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। গরম কামনার জল ঢেলে ফেলতে না পেরে একটু কষ্ট হয়। সুক্ষ্ম চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে। বউকে কোনোদিন মুখে নিতে রাজি করাতে পারেনি। কতোদিন ঠেলে দিয়েছে মুখে কিন্তু ও বমি করতে করতে বের করে দিয়েছে। বিয়ের নতুন নতুন গন্ধ ফুরোতেই দাঁতে দাঁত লাগিয়ে মুখ বন্ধ করে থাকতো, খুব বেশী হলে তাও ধস্তাধস্তি করে ঠোট পর্যন্ত নিতে পারতো। এর বেশী আর পারেনি৷ শফিক নিজেকে প্রতারিত ভাবছে, মাওলানার মুখেতো শুনেছিলো, কোরানে আছে, তোমাদের বউ তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেতের মতোন,যেভাবে খুশি সেভাবেই চাষ করো। এরপরেও নবনী ওকে সুযোগ দেয়নি,ইচ্ছে মতোন চাষ করতে পারেনি। এই প্রতারণার কোনো শাস্তিই নবনীকে দিতে পারেনি কোনোদিন। আজ তো দেয়াই যায়! আজ ওর কোনো শক্তিই নেই বাঁধা দেয়ার। হ্যাঁ ওকে শাস্তি দেবে, অন্যায়ের শাস্তি দেবে। নবনীকে শাস্তি দিতে নিজের লুঙ্গিটা খুলে উপরে ঢিল দিলো। লুঙ্গি খুলতেই ফুঁসলে উঠলো বিষধর সাপ, যে কিনা প্রতিবাদের বিষ ছড়াতে তিড়িংবিড়িং নাচ নাচছে । জীবিত থাকতে মুখে নেয়নি, ওকে বঞ্চিত করেছে। আজ আর বাঁধা কীসের? পাপ হবে কী? পাপের কথা মাথায় আসাতে খানিক সময় থমকে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ ভাবলো, নাহ পাপ হবে না। অন্যায়ের শাস্তি দিলে কখনো পাপ হয় না। শফিক নিশ্চিন্ত হয়, ও যা করছে তাতে ওর পাপ হবে না। দংশনে দংশনে নিশ্চিহ্ন করে সমাজ। পথভোলা ক্লান্ত পথিকের মতোন অপেক্ষা করে, উঠে দাঁড়াবার শক্তির জন্য। আদি রসে দেহ নিঃস্ব হলে কবরটা ঠিকঠাক করে লুঙ্গি পড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় শফিক।

শফিক আজ খুব তৃপ্তি পেয়েছে। বিয়ের এত বছরেও এমন তৃপ্তি পায়নি কখনো। আজকে যেখানে খুশি যেমন খুশি তেমন ভাবেই গিয়েছে। আহ শান্তি। জীবিত থেকে মরা মানুষি ভালো, কোনো বাঁধা নেই, চিৎকার নেই, শীৎকার নেই। দুটো পাখি কোথায় যেনো ডেকে উঠলো,আজানের সময় হয়ে এসেছে। দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ি এসে কোদালটা জায়গা মতোন রেখে টিউবওয়েল থেকে হাতমুখ ধুয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। কাল সকালে সব বাড়ির চুলোয় আগুন জ্বালাবে নরম শরীরের মেয়েরা। শুধু ওর বাড়িতেই পুরুষের অনভ্যস্ত হাত, খড়ি আর আগুনের সাথে যুদ্ধ করে যাবে৷ নবনী থাকলে কতো ভালোই না হতো, সকালে উঠে কী খাবে সে চিন্তা করতে হতো না। নবনী ফিরে এসো। ফিরে এসো, শফিক জানে ডেকে লাভ নেই, তবুও বার কয়েক ডাকলো, নবনী নাম জপতে জপতে কখন যে দু-চোখে ঘুম নেমে এলো তা বুঝতেই পারলো না। ক্লান্তির পর আরামের ঘুম। এভাবেই বুঝি সব কিছু শেষ হয়।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী   দারুণ লেখা ,বেশ ভালো লাগলো ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

পুরোটা গল্প জুড়ে একজন ভোগবাদী অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের কথা রয়েছে। যার অশ্লীলতা যে কাউকে ছাড়িয়ে যায়। এরা আমাদের এই সভ্য সমাজেরি অংশ।

১০ নভেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪