ঝাড়ুটা আমার ঝগড়াটে।
উঠোন পরিষ্কারের সময় ফাঁকি দেয়,কাজ করতে চায় না। বলে, আমাকে এসবে মানায় না।যার নাকে গন্ধ যায় সেই করুগ্গে । শুনে তাজ্জব বনে যাই, ত্রিশ টাকা খরচ করে মঙ্গলবারের হাট থেকে এনেছিলাম। পথে আনতে কম কষ্ট হয়নি, সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই দাঁতমুখ খিচিয়ে বকেছে, সে-সব শুনে লোকজন বেধড়ক পিটিয়েছিলো। যা হোক, সব সহ্য করেছিলাম, এই আশায়, বাড়িতে এসে নিয়মিত উঠোন টুকো তো পরিষ্কার করবে! বিধিবাম, ঝগড়াটে ঝাড়ুটি প্রথমদিনেই ভদ্রলোক হয়ে ওঠে। বখাটে বেড়াল আর নালায়েক হাতিটার সাথে গল্প করতেই তার দিন যায়। এদিকে আমার ছোট্ট উঠোনটায় ময়লার ওপর ময়লা জমে কয়েক বিঘত স্তর হয়ে বিকট গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। নিজের উঠোন, পা দিতেই হয়, পা আমি দিই, রোজ দিই। গন্ধে গা গুলিয়ে আসে, উগড়াতে পারি না, অঅ করতেই দিন যায়। রাতের বেলায় ঝাড়ুটার পায়ে ধরি, দিন মহাশয় একটু ঝাড়ু দিয়ে দিন, গন্ধে তো আর টিকতে পারি না। ঝাড়ুটা আমার নাক কুঁচকে বলে, হিমালয় ঝাড়ু দিয়ে সোজা করতে পারি,কিন্তু তোমার ঐ নোংরা উঠোন ঝাড়ু দেয়া আমার কম্ম নয়, অন্য পথ দেখো বাপু। মন ভেঙে গেলো। ভাঙা মন নিয়ে আবারো মঙ্গলবারের হাটে গেলাম, এবার একটু দাম বেশি দিয়ে বড়সড় ঝাড়ু কিনে ফেললাম, এতো ময়লা জমেছে, বড়সড় ঝাড়ু না হলে কী হয়! বেশ নিশ্চিন্তে ঝাড়ুটাকে ঘরে আনলাম, পথে কোনো সমস্যাই হয়নি, দেহ বড় হলে কী হবে, এ ঝাড়ু ঝগড়াটে নয়। বিশ্বাস করুন, পথে এতএত মানুষ ছিলো, কাউকে একটা গালি পর্যন্ত দেয়নি, এমন কী টিপ্পনীও নয়। এমন ভদ্র ঝাড়ু ঘরে পেলে, কে না খুশি হয়! সকাল বেলায় দেখলাম বলার আগেই কাজে নেমে গেছে, খুশিখুশি মনে নাকে রুমাল বেঁধে বের হয়ে এলাম মিষ্টি কিনতে, উঠোন পরিষ্কার হলে ঝাড়ুটাকে মিষ্টি মুখ করাতে হবে, আসার সময় শুনলাম ঝগড়াটেটা গজড়াচ্ছে, যা-তা বলে গালিগালাজ করছে,আমি চুপচাপ না শোনার ভান করে বেরিয়ে এলাম, এসব কু-কথা শুনে কী ফায়দা! বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে মিষ্টি হাতে বাড়ি ফিরে দেখি, এ্যা মা, আমার উঠোন টাতো পরিষ্কার হয়নি, ময়লা গুলো খুঁচিয়ে আরো নোংরা করে রেখেছে। এখন আর নাকে রুমালেও কাজ হচ্ছে না। ঝাড়ুটা করছে কী! কোথায় সে? ঝগড়াটেটাও তো আশেপাশে নেই, কোথায় গেলো সব? উঁকিঝুঁকি মেরে আবিষ্কার করলাম, বেশ খানিকটা দূরে বসে ওরা খোশগল্প করছে। নিরাপদ দূরত্ব, ওখানে উঠোনের দূর্গন্ধ পৌঁছায় না। মেজাজ চড়ে সপ্তসাগর পেরিয়ে পৃথিবীর বাহিরে চলে গেলো। গর্জন দিলাম, 'খামোস'। গলা শুনে ওরা চমকে উঠলো,কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে আবারো সেই গল্পেই মজে যেতে থাকলো। ভাবখানা এমন,যেনো এদিকে কেউ নেই। ভয় পেয়ে গেলাম। ঝাড়ুর খোঁচা খেয়ে জীবন হারাতে চাই না, এরচে ভালো দুটো রুমাল নাকে বেঁধে রাখা। গন্ধ বাড়বে, দুটোর জায়গায় তিনটে বাঁধবো, এরপর ধীরেধীরে চার-পাঁচ-ছয় অসংখ্য, অসংখ্য রুমাল বাঁধবো।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
নিজের কেনা ঝাড়ু, তার দায়িত্ব পালন করে না। তবুও এদের পুষতে হয়, ভয় পেয়েই পুষতে হয়। এখানে রূপক ভাবে নিজের অধিকার বা দেশের অধিকার ত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে।
১০ নভেম্বর - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪