যাত্রা

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১৭)

Imran Hossain Emu
  • 0
  • 0
সমীক্ষা চলছে।গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষা ।নাসা সম্প্রতি নতুন একটা গ্রহের সন্ধান পেয়েছে। গ্রহের নাম রাখা হয়েছে, ' নিয়াম'।সেটি নাকি মানব সম্প্রদায়ের বসবাসের উপযোগী।দ্বিতীয় পৃথিবীও বলা যেতে পারে।সে গ্রহে তারা এগারজন মানুষ পাঠাতে চাচ্ছে। এটা প্রাথমিক ধাপ।যারা যাবে, তারা ফিরে নাও আসতে পারে।সারা পৃথিবী থেকে দু'লক্ষ পঁচিশ হাজার সাতশ বিয়াল্লিশজন নিয়াম গ্রহে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছে।যাচাই-বাছাইয়ের পর এগারজনকে সিলেক্ট করা হয়েছে।তারমধ্যে বাংলাদেশি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে নেহাও আছে।
নেহা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।তার বালিশ ভেজা। একটু আগে সে কাঁদছিল।সে কাঁদার সময় কোলবালিশ জড়িয়ে রাখে।কান্না শেষ হলে বারান্দায় এসে বসে। নেহা কান্না শেষ করে বারান্দায় এসে বসেছে। কান্না শেষ হলেও সে এখনও ফোঁপাচ্ছে।সবকিছু শেষ হতে সময় লাগে।কান্নাও এর বাইরে নয়। হঠাৎ কিছু একটা পড়ার আওয়াজ হল।নেহা পাশ ফিরে তাকাল।একটা সুদর্শন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।খুব সম্ভব ছাদ থেকে নেমে এসেছে। কেন এসেছে সে? ছেলেটা বলল,আমার নাম অর্যু, তোমার?
নেহার হাসি পেয়ে গেল।অর্যু কারও নাম হয়?সে হাসতে হাসতে বলল, আমার নাম নেহা।
' তুমি সেই ভাগ্যবতী,যে নিয়াম নামক গ্রহে যাচ্ছো।কিন্তু তুমি কি জানো, গ্রহ থেকে তুমি ফিরে নাও আসতে পারো?'
'জানি।'
'জেনেও কেন এই সিদ্ধান্ত নিলে?'
' তা তোমাকে কেন বলব?'
' আমি নাসা থেকে এসেছি। আমার কাজ, এগারজন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা।'
নেহা ছেলেটার দিকে তাকাল।বড়ই সুন্দর চেহারা।তাকালেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। নেহা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কি ছাদ থেকে নেমে এসেছো?
'হ্যাঁ।'
'কেন? বাসার দরজা দিয়ে আসো নি কেন?'
'উপরের নির্দেশ। নাসা থেকে এসেছি তো।তাই ভাবলাম অদ্ভুতভাবে উপর থেকে আসি।'
নেহার হাসি পেয়ে গেল।কান্না করলে মানুষের মন হালকা হয়।হালকা হওয়ার পর মন ভালও হয়ে যায়।তখন অল্প কথায় মন খুলে হাসতে ইচ্ছে করে।এই পৃথিবীতে যারা মন খুলে হাসতে পারে, তারা কখনও মন খুলে কাঁদতে পারে না।যারা মন খুলে কাঁদতে পারে, তারা কখনও মন খুলে হাসতে পারে না।ঠোঁট আর চোখের এই নিয়ম বা অনিয়মটা বড়ই জটিল।
নেহা ছেলেটার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, পৃথিবীতে আমাকে কেউ ভালবাসে না।বাবা,মা,ভাই -কেউ না।আমি ক্রিকেটার হতে চাই। তারা আমাকে ক্রিকেট খেলতেই দেয় না।তারা শুধু বলে,পড়, পড়, পড়! আমি পড়ালেখায় ভাল না দ্যাখে মা বলে, তুমি মাথামোটা, তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।ভাইয়া বলে, তুই জীবনেও ক্রিকেটার হতে পারবি না।বাবা তো আরও একধাপ এগিয়ে,তোমাকে দিয়ে পড়াশুনা,ক্রিকেট কিছুই হবে না।তার উপর তুমি দ্যাখতেও যাচ্ছে-তাই।তোমাকে তো আমি বিয়েও দিতে পারব না।মা-ও তখন বলে,তুমি সবসময় আমাদের জ্বালিয়ে আসছো।আই গেস, (I guess) বিয়ের সময়ও আমাদের জ্বালিয়ে মারবে। পড়াশুনা করতে ভাল লাগে না,তাই ক্রিকেটের অজুহাত দ্যাখানো হচ্ছে, তাই না? বুঝি বুঝি, সব বুঝি...
নেহার চোখে জল চলে আসছে।ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
নেহা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,আমি টিউশনির টাকা দিয়ে গ্লাভস,হেলমেট,ব্যাট কিনেছি।তবুও তারা বাঁধ সাধলেন।ক্রিকেট খেললে পড়াশুনায় ক্ষতি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তু আমি কি করব? ছোটবেলা থেকে আমি নিজেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দ্যাখিয়ে আসছি।এতবছর পর নিজেই নিজেকে বলে দিব, তোমার স্বপ্ন শেষ? তুমি আর অন্যকারও থেকে আলাদা হতে পারবেনা।আমি ব্যতিক্রম তারমানে তো এই না যে, আমি সবার থেকে আলাদা। আমি ব্যতিক্রম তারমানে তো এই, সবাই আমার থেকে আলাদা।আমাকে নাহয় কেউই ভালবাসে না, তাই বলে নিজেও নিজেকে ভালবাসব না? জানো, প্রতিরাতে আমি কেন কাঁদি?নিজের জন্য।প্রতিদিন আর এই ঝামেলা আর ভাল লাগে না।তাই নিয়ামে চলে যাব।সেখানে কেউ যেন আমাকে না বলতে পারে,তুমি মাথামোটা, তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।তোমাকে তো আমি বিয়েও দিতে পারব না...
নেহা আবার মুখে হাত দিয়ে কাঁদতে থাকল।অপরিচিত একটা ছেলের সামনে সে কিভাবে ঝরঝর করে কাঁদছে, তা সে নিজেও জানে না।ছোটবেলায় সে খুব ছিঁচকাদুনে ছিল।প্রকৃতির একটা নিয়ম হচ্ছে,ছোটবেলার সাথে বড়বেলার অমিল ঘটানো।ছোট-বড় যেমন বিপরীত শব্দ,তেমনি ছোটবেলার সেই দুষ্ট মেয়েটিও বড়বেলায় এসে শান্ত হয়ে যায়।
মেয়েটাকে খুব নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে।এই পৃথিবীর নিয়মটা বড় অদ্ভুত। যে একা,তাকে আরও একা করে দেয়।অর্যু নেহার দিকে তাকিয়ে আছে।রাতের চাঁদ অনুপস্থিত।নক্ষত্রের আকাশের ক্ষীণ আলোতে এই মেয়েটাকে অপূর্ব লাগছে।অর্যু ভেবে পেল না, কেউ কিভাবে এইমেয়ের চেহারা নিয়ে প্রশ্ন তোলে!নেহা এখনও কাঁদছে, কখন এই কান্না শেষ হবে তা সে নিজেও জানে না।বাবা-মায়ের সামনে সে কাঁদে না।একবার কেঁদেছিল।মা বকা দিয়ে বলেছিলেন, ন্যাকামি করিস?এইতো গত পরশু স্মৃতিরা কক্সবাজার থেকে ঘুরে এল।তিন্নি মায়ের সাথে জাফলং দ্যাখে এসেছে।অথচ সে কখনওই বাবা-মায়ের সাথে দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারে নি।যতবারই ঘুরার কথা বলেছে,ততবারই তারা পড়ার কথা বলেছে।নেহা বান্ধবীদের সাথে যেতে চেয়েছিল, মা
না করে দিয়েছেন।স্কুল থেকে পিকনিকেও সে যেতে পারে নি।
অর্যু নেহার কাঁধে হাত রাখল।এই মেয়েটার জন্য তার অসম্ভব মায়া হচ্ছে।যদিও তার এই মায়া হওয়ার কোনও কারণ নেই।তার মস্তিষ্কের থ্যালামাসে একটা ইমপ্ল্যান্ট যুক্ত আছে,সেখানে সামান্য মমতা মিশ্রিত আছে।নিয়াম গ্রহের প্রধান ইরদ তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।মানুষ পৃথিবীতে থাকবে,নিয়ামে আসবে কেন -এই তাদের আক্রোশ। তাই যে এগারজন তাদের গ্রহে আসবে,তাদের হত্যা করার দায়িত্ব অর্যুর উপর।
অর্যু ধীরে ধীরে তার প্যান্টের পেছনের পকেটের লেজার ছুরিতে হাত রাখল।
নেহা ছলছল চোখে তার কাঁধের উপর রাখা ছেলেটার হাত ধরে বলল, অর্যু,তুমি কি আমার বন্ধু হবে...?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

২৩ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪