বেলাশেষে একদিন

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১৭)

শাহেদ শাহরিয়ার জয়
  • 0
  • 0
  • ৬১
"-আমার পকেটে ১০ ডলারও নেই'',জ্যাকের মতোই সত্যি বলেছিল সে।রিমি বল্লো,-''আমি কি টাকাকে ভালোবাসি?''সে আশ্বস্ত হয়েই হৃদয়টা দান করেছিল।তার মতো করে বলা,তার মতো করা চলা...প্রয়োজনে তার জন্য মিথ্যাও অকপটে বলতে পারতো সে।কুমিল্লায় যখন সে পোস্টিং,বাড়ি খুঁজছে থাকার জন্য।রিমি বল্লো -''তুমি ফ্যামিলি বাসা নাও!'' সে অবাক হয়েই বলে-''কেন,কেন?''-রিমির চোখ রাঙ্গানোর অভ্যাস পুরানো,সে ফোনের মাঝেও রিমির আগুন রাঙ্গা চোখ দেখতে পায়।ওপাশ থেকে আগুনের ফুলকি ছুটে আসার আগেই সে বলে ''ওকে ডান''।রিমির কথা সে কখনোই ফেলেনি,ফেলতে পারে না।বাস্তবতা হয়তো কিছু জিনিস এদিক ওদিক করে দেয় ঠিকই;কিন্তু সন্ধ্যা ঘনালে নীঁড়ের পাখি নীঁড়েই ফিরে।

কোন এক শীতের সকালে সে বুঝতে পারে রিমি কেন তাকে ফ্যামিলি বাসা নিতে বলেছিল।বাড়িওয়ালারা আচরণে সাধারণত ভদ্রলোক গোছের খুব একটা হয়না ,ওনি অমায়িক ছিলেন:সেই মানুষটার সাথে হাসি মুখে অকপটে মিথ্যা বলে ফেলতে একটুও ঠোঁট কাঁপেনি দেখে বাদলা সত্যিই অবাক হয়।এই মিথ্যার আশ্রয়ে রিমির পদচারণা টিনশেডের দু'রুমের ঘরটাকে রাজ প্রাসাদের রুপ দিয়েছিল সেদিন।হালকা গোলাপী রঙের ওপর ফুল করা একটা গোল সালোয়ার আর তার ওপর একটা কমলা রঙের সোয়েটার রিমির নাদুস-নুদুস শরীরে কি এক অালো ফেলেছিল সেটা বাদলা ছাড়া আর কেউ দেখেনি।ব্যাচেলর বাদলা ফ্যামিলি কোয়ার্টারে রিমির প্রথম পদধুলিতে বাদলার শরীর-মন দুটোই পুলকিত;এতটা দিন সে বাইরে খেয়েছে,আজ সে রান্না করবে,শুধু রিমির জন্য।কিন্তু ওর নড়ন-চড়নে কিংবা চুলের মাঝে বাতাসের হাওয়ায় যে ঘ্রাণ বাদলার ঘ্রাণেন্দ্রীয়কে মাতাল করে সেটা তার মনে বারংবারই ঝড় তুলে।রান্না বাদ দিয়ে তাই সে তার চুলে বেণি কাটে,চোখের তারায় চোখ ডুবিয়ে ভালোবাসা খুঁজে।রিমি ওর হাতটা স্পর্শ করতেই মনেহয় ২২০ ভোল্ট এসি কারেন্ট ওর ভিতর দিয়ে ওপর নিচে বয়ে যায় সহস্র মাইল বেগে!শরীরের উত্তাপ থার্মোমিটারের পারদে ধরে না।এ উত্তাপ অনেক দিনের ; মাঘের শীতেও সেটা অতটুকু কমে না,গ্রীষ্মের দাবদাহের মতো ঘর্মগ্রন্থির মুখে ঘাম জমে।নাকের ডগায় সে ঘামে আলোর প্রতিফলন হয়।ভালোবাসা কাছে থাকলে বাড়ে,দূরে গেলে দ্বিগুন হয়;তবে মন মরে যায়।রিমির কাছে আসাটা অহেতুক নয়,বাদলাকে এতটুকু সে বুঝিয়েছে সেও অঘোষিতভাবে এখন সংসারি।রিমি আর কেউ নয়;তার বেটার হাফ!

নাহয় কেনই বা একটা মেয়ে অতদূরে,শীতের কোন ভোরে বিলেতী কম্বলের উষ্ণতা ছেড়ে একটা জ্যাক টাইপ ছেলের বুকে উষ্ণতা খুঁজতে ছুটে আসবে?তারও তো পরিবারের প্রতি জবাবদিহিতা আছে;সে সেটা বাদলার ওপর আস্থা রেখেই দিয়ে আসছে অনেকটা দিন ধরে।ঘরের বিভীষণরা ওর কানে লাভা ঢালে রােজই,কিন্তু সে বাদলাকে ভালোবাসে,ওর ভালোবাসার উষ্ণতার কাছে সে লাভা গলে জল হয়ে যায় প্রতিটা দিন। সেই পুরানো উষ্ণতা,প্রথমবার যেটা সাইনির বাসায় টিপটাপ বৃষ্টিতে শুনশান নীরবতায় আর গভীর অনুরাগে কাছে আসায় সৃষ্টি হয়ে ছিল।সাইনিদের অজস্র নেতিবাচক কথায়ও যেটা অতটুকু শীতল হয়নি।সেটা আজো অনুভব হয়,রিমি কাছে আসলে,ওর নিশ্বাস বুকে বাজলে,ওর হাতের কোমল স্পর্শ বাদলার হাত স্পর্শ করলে সে আর স্থির থাকতে পারে না।
ভালোবাসাটাই বোধয় এক প্রকার অস্থিরতা,কাছে থাকলে আরো কাছে পাবার,দূরে গেলে বার বার ফিরে যাবার আর কোন ভুল বুঝাবুঝি হলেতো সে অস্থিরতার অন্ত নেই।কুমিল্লার ও্ই টিনশেড ঘরে একটা অস্থিরতা ছিল,কাছে থেকে কাছে পাবার অস্থিরতা! অনেকটা দিন তাদের দেখা হয়নি,কাছে আসার আকুলতাও প‌ূরণ হোচট খেয়েছে দূরত্বের কারণে,সামাজিক দায় বদ্ধতার কারণে। আজ সেটা ঘুচেছে বাদলার এক মিথ্যায়,বাড়িওয়ালা আঙ্কেল আর আন্টিতো বাদলাকে আপন করে নিয়েছে অল্প দিনেই ,রিমিকেও তারা বৌমা বলেই সম্বোধন করেছেন।বিয়ে না করেই এ অনুভূতি বাধেয় পৃথিবীর আর কারো নেই। দিব্যলোকে যে বিয়ে হয় কাগজে কলমে তার অনেকটাই মনের কােণে ঠাই নিতে পারে না।নতুন একটা ঘর হয়তো হয়,কিন্তু সে ঘরে ভালোবাসাটা থাকে না,জীবন কাটে হয়তো তবে সেটা বনের পাখি খাঁচায় বন্দী যে জীবন কাটায় তারই মতো।বাদলার সাথে রিমির পার্থিব কোন দলিলে দস্তখত দিয়ে বিয়ে হয়তো হয়নি,তবে ওদের মনের সমঝোতার একটা সংসার তারা গড়ে তুলেছিল সেদিন।তাই বাস্তবতার সামনে তারা বড়কে যায় নি।বাদলা বিশ্বাসকে অতটাই মজবুত রেখেছিল যতটা তার গত সাত বসন্তেও ছিল।
রিমি হয়তো অন্যকারো হচ্ছে খুব অল্প দিনেই;বাদলা জানে,সে আর কোন উপায়েই রিমির পরিবারকে বশে আনতে পারবে না। রিমিও পারবে না তার পরিবারের অবাধ্য হয়ে বাদলার মতো নিঁচু শ্রেণির কাউকে বিয়ে করতে।পরিবারের প্রতি যে তার অগাধ ঋণ,তার উচ্চ শিক্ষিতা হওয়া,তার ব্যাংক অফিসার হওয়া পরিবারের সাপোর্টেই।সে অনেক চেষ্টা করেছে তার দু'বার স্ট্রোক করা মা'কে বুঝাতে: ''বাদলা অনেক ভাল ছেলে''।তার বড় ভাই আর বোন-দুলা ভাইদের বুঝাতে: ''বাদলা জীবনে ভাল কিছু করবে''।কিন্তু এ সমাজে বিয়ে মানে একটা ছেলে আর মেয়ের মাঝে বন্ধন না;দুটো পরিবারের গাটছাড়া।তাই একটা মেয়েকে বিয়ে করা মানে তার পরিবারকেও বিয়ে করা।বাদলা পারে নি।তাই শেষবার রিমি যখন কুমিল্লা আসবে বলেছিল, বাদলা শর্ত দিয়েছে-''কান্না কাটি চলবে না,আর...আর এটা মনে রাখা যাবে না যে তুমি শেষবারই আসছো।রিমি শুধু একটি কথাই বলেছিল-''তোমাকেও বিশ্বাস রাখতে হবে,আমি আর কাউকে ভালবাসতে পারব না''! তারা উভয় কথা রেখেছে।তাই সারাটা দিন একটা বিরহের কথাও বের হয়নি মুখ দিয়ে,কষ্টে এক ফোটাও কাঁদেনি।চারদিকে আঁধার ঘনাবার আগ পর্যন্ত দেয়ালের ঘড়িটার দিকেও একবারও তাকায় নি।

কুমিল্লায় সেদিন বোধয় একটু তাড়াতাড়িই সূর্য পশ্চিমের দিকে ধাবিতে হয়েছিল,রিমির সাথে ওর একদিনের এক তৃতীয়াংশ সময়ের যে সংসার,সেটা বাদলাকে ছেলে থেকে পুরুষ করে দেয়,শারীরিক না যতটুকু মানসিক তার চাইতে বহুগুন।রিমির বিদায়ের বেলায় তাই মনটা ছোট হয়ে আসে বাদলার,তার চোখের বাদলের কণারা আপ্রাণ চেষ্টা করে ঝরে পরার,বাদলা সেটা রুখে দেয়।পুরুষরা কাঁদে না,বাদলা এখন পুরুষ। রিমির মতো এক নারীর কাঙ্খিত পুরুষ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

১৯ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪