কাশ্মীরী কন্যা

কাঠখোট্টা (মে ২০১৮)

এস জামান হুসাইন
  • ১২৪
নারী হিসেবে জন্ম নেওয়াটাই ছিল তার অপরাধ। যে পুরুষ জাতি নারীকুলের মাধ্যমে পৃথিবীতে অালোর মুখ দেখে সেই পুরুষই নারীর সম্ভ্রমহানী করে অবলীলায়, অসংকোচে এবং অপরাধবোধ ছাড়াই। পাষন্ডতা অার পশুত্ব হার মানায় মনুষত্বকে। অার তাদের নখ ও থাবার অাচরে ক্ষত বিক্ষত হয় অসহায় অবলা নারী ও শিশু। তবুও তাদের দাপটে থরথর করে কাপে সমাজ, প্রশাসনের সাথে তাদের সম্পর্কও খুব সুস্বাদু।

কাশ্মীর হলো পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ। কাশ্মীরের সৌন্দর্য কল্পনাতীত।এ হলো স্বচ্ছ-সবুজ মনোরম প্রকৃতির সৌন্দর্য। পর্বতের চূড়ায় উঠে আচমকা আবিষ্কৃত হওয়া অপার, অনাবিল সৌন্দর্য। পাহাড়ের পাশ দিয়ে প্রবাহিত জলপ্রপাতের সৌন্দর্য। ঘরের কিনার ঘেঁষে বয়ে চলা কিলবিল জলরাশির সৌন্দর্য। কালো পর্বতের কোলঘেঁষা সবুজ গাছের সারি, তার ওপরে নীল আকাশ আর নিচে তার প্রতিবিম্ব ধরা বিলের জল, মৌসুমি ফুল-ফল-প্রকৃতি; তার সঙ্গে দিন ও রাতে চাঁদ-সুরুজের আলো-আঁধারির খেলা। এমনই এক স্বর্গীয় প্রকৃতিতে কাশ্মীরের জম্মু শহর থেকে অাশি কিলোমিটার দূরে কাথুয়া জেলায় যাযাবর পরিবারে অাসিফার জন্ম হয়।

অাট বছর বয়সী অাসিফা। এমন বয়সের ছেলেমেয়েদের পিতামাতার কাছে বায়নার বালাই থাকে না ; অাজ এটা এনে দাও, কাল ওটা এনে দাও, এমন হাজারও বায়না থাকে শিশুদের মনে। পিতামাতা ও সন্তানের স্বর্গীয় ও এনজেলিক মুখের দিকে তাকিয়ে সাধ্যমত চেষ্টা করেন সন্তানের সকল বায়না পূরণ করার। দিন শেষে ক্লান্ত দেহে বাসায় ফেরার পর সন্তানের মুখের দিকে তাকানোর সাথে সাথে দূর হয়ে যায় সকল ক্লান্তি। মুগ্ধ হয় এমন বয়সী সন্তানদের মুখে জ্ঞানীদের মত কথা শুনে। জবাবে বাবা বলেন, “অামার মা বুড়ি, কিনে দিব ঘুড়ি।” অারও কত কি!

যাযাবর বাবা মুহাম্মাদ ইউসুফের পেশা ঘোড়া ও ভেড়া চড়ানো। ঘোড়া ও ভেড়া লালন পালন করেই তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে জীবন নির্বাহ করছিলেন সুখেই। কিন্তু তার এই সুখ বাঁধা হয়ে দাড়াল একদল কাঠখোট্টা, সাম্প্রদায়িক, পাষন্ড ও নরপশুর কাছে। বাবার সাথে ঘোড়া ও ভেড়া চড়ানোর সময় অাসিফাকে অপহরণ করা হয়।

হীরানগরের মন্দিরের পরিচালক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা সানজি তার ছেলে এবং ভাতিজাকে নিয়ে বৈঠকে বসে পরিকল্পনা করে, কিভাবে অাসিফাকে অপহরণ করা যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনজনে মিলে অাসিফাকে অপহরণ করে মন্দিরে অাটকে রাখে।

প্রাণের চেয়ে প্রিয় অাদরের মেয়ে অাসিফা অপহরণের পর তার পরিবার তাকে সকল জায়গায় এবং সকল অাত্মীয় সজনের কাছে অনেক খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু তাকে কোথাও না পাওয়ায় তার পরিবার বাধ্য হয়ে পরের দিন থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। এ যেন শিয়ালের কাছে বর্গাকৃত মুরগির অংশ চাওয়া।

রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন সুবিচারের অাশা করা বোকামি ছাড়া অার কিছুই নহে। যারা রক্ষা করবে অাইন শৃঙ্খলা, যারা দমন করবে অপরাধ, তারাই বিশৃঙ্খলার হোতা অার নিজেরাই জড়িয়ে পরে অপরাধের সাথে। অাসিফাকে যে মন্দিরে অাটকে রাখা হয় সেখানে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মন্দিরের পরিচালক, মন্দিরের পরিচালকের ছেলে, ভাতিজা ও থানার পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাত অাটজন মিলে অাটদিন ধরে অাট বছরের শিশু অাসিফাকে ধর্ষণ করে। অাহ!..........

অাসিফার হৃদয় ফাটা চিৎকার মন্দিরের চার দেওয়াল টপকাতে পারেনি, হৃদয় গলাতে পারেনি মন্দিরের পরিচালক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা কাঠখোট্টা সানজি, তার ছেলে ও ভাতিজা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ কয়েকজন নরপশুর। তার চিৎকারে অাকাশও কান দেয়নি, বাতাসও সাহায্যের জন্য এগিয়ে অাসেনি। ঝরনা কলকল ধ্বনি তুলে অাপন গতিতে ছুটে চলে, কারও দাড়ানোর সময় নেই। কারন অাসিফা কারও না!

অাটদিন পর জঙ্গলের মাঝে পাওয়া যায় অাসিফার লাশ। মদের বড়ি খাওয়ায়ে পুরো অাটদিন ধরে ধর্ষণেরর পর তাকে হত্যা করা হয় নৃশংসভাবে। কাটখোট্টা সানজি নিজের ছেলেকে ফোন করে ডেকে অানে যাতে সেও ধর্ষণ করতে পারে অাসিফাকে। অাটদিন ধরে ধর্ষণের পর তারা সিদ্ধান্ত নেয় অাসিফাকে মেরে ফেলতে হবে, তখন এক পুলিশ কর্মী তাদেরকে বলে “ ওকে এখনই মেরে ফেল না। অামি ওকে শেষবারের মত ধর্ষণ করে নেই।” সে অাবার তাকে ধর্ষণ করারর পর মেরে ফেলতে চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পরে সানজির ভাতিজা তাকে হত্যা করে। হত্যা নিশ্চিত করার জন্য পাথর দিয়ে অাসিফার মাথা থেঁতলে দেয়া হয়।

খুন হয় একটি শিশু, ধর্ষিত হয় নারী জাতি; ধর্ষিত হয় পৃথিবী, মনুষ্য বিবেক। যার কোন অপরাধ ছিলনা, যে কারও ঘরে অাগুন দিতে যায়নি ; কোথাও সে বোমা ও ফেলতে যায়নি, সেই হল ধর্ষণের শিকার; হত্যা করা হল তাকেই! সুবিচারের অাশ্বাস দেয় অনেকেই! অাসিফার বাবা তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রাতের অাঁধারে গ্রাম ছেড়ে চলে যায় অজানা এক ঠিকানায়।

বিচারের বাণী নিরবে কাঁদে!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
%3C%21-- %3C%21-- Ghotonati shundor bhabe tuley dhorechen. Kintu ek jaygay 'angelic' shobdota bebohar korechen jeta ektu 'out of place' shonacche. Golpoti jehutu Bangla, ekhane English shobdo bebohar na koratai bhalo. Shubhokamona roilo
মৌমিতা পুষ্প কাশ্মীরি কণ্যার করুন কাহিনীটি খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন লেখক। আমারও এ ধরনের একটি কবিতা আছে। অনুরোধ করব কবিতাটি পড়ার জন্য। ভোট রইল।
মৌরি হক দোলা Story remembers history........সত্যিই তাই। বর্তমান সমাজের চিত্র। ভালোলাগা ও শুভকামনা রইল.......
ফড়িং . হাজারও অাসিফা অাজ ধর্ষিত হচ্ছ কিন্তু বিচার হচ্ছে না কারও।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

অাট বছরের যে শিশুটি বাবা, মা, বড় ভাই - বোনের কাছে সবচেয়ে বেশি অাদর সোহাগ পায়, সেই শিশুটিই অাজ একদল নরপিশাচ, পাষন্ড, অাবেগ -ভালবাসাহীন কাঠখোট্টাদের অানন্দের খোরাক হল! হায়রে পৃথিবী! হায়রে মানবতা!

০৭ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৭৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪