অপি

রমণী (ফেব্রুয়ারী ২০১৮)

এস জামান হুসাইন
স্বামী ও সন্তানহীনা এক রমণী অপি । রাস্তার পাশে কুঁড়েঘরে তার বসবাস । ঘরের সামনে ছোট্ট একটি ভাঙা চালায় তার রান্নার ব্যবস্থা । শীতের সময় অপির ভাঙা ঘরে হু হু করে বাতাস ঢুকে আর বর্ষার সময় ঘরে পানির অভাব হয় না । খাবার সময় কেউ রাস্তা অতিক্রম করলে জিজ্ঞাসা করতে হয় না, কি তরকারি?

অপির পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস তার ছাগল । যাকে সে ছায়া বলে ডাকে । প্রতিদিন দুই পোয়া করে দুধ দেয় । এক পোয়া সে খায়। বাকি এক পোয়া বিক্রি করে সংসারের খরচ চালায় । আর বছরে দুটি করে বাচ্চা প্রসব করে যা লালন পালন করার পর বিক্রি করে দেয় ।

অপির আয়ের আর একটি উৎস রাস্তার গাছ দেখাশুনা করে আয় করা । বন বিভাগের কাছ থেকে তিন কিলোমিটার রাস্তায় গাছ লাগানোর দায়িত্ব নেয় সে । গাছ লাগানোর পর পানি দেওয়া থেকে শুরু করে পরিচর্যাসহ সব কাজই সে করে । এখান থেকে সে সামান্য পয়সা হাজিরা পায় ।

অপির পরিবারের সদস্য অপি একাই । ছায়া তার একমাত্র বন্ধু । অপির জীবনে ছায়া ছায়ার মত লেগে আছে । তাদের জীবন একে অপরের সাথে জড়িত । একজনের দুঃখে আর একজন দুঃখি হয় । একজনের সুখ আর একজন ভাগ করে নেয় ।

অপি যখন ছায়াকে ডাকে তখন ছায়া মাথা নেড়ে সাড়া দেয় । ভাত রান্নার সময় ভাতের মাড় নিয়ে ছায়াকে ডাকে, "ছায়া মাড় খাবি না? "
ছায়া দৌড়ে কাছে এসে মাথা নেড়ে সাড়া দেয় । ভাতের মাড় খাওয়ার পর অপির গায়ের সাথে গা ঘষে কৃতজ্ঞতা স্বীকার ।
অপিও তার গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয় ।

অপি রাস্তায় কাজে যাওয়ার সময় ছায়াকে সাথে নিয়ে যায় । আবার যখন বাড়িতে ফিরে আসে তখন ছায়াকে সাথে নিয়ে আসে । অপির কথা বলার সংঙ্গী এক মাত্র ছায়া ।
অপি না ঘুমালে ছায়া ঘুমায় না । রাতে ঘুমানোর সময় ছায়াকে বলে, "ঘুমাবি না?"
ছায়া "ম্যা" বলে সম্মতি প্রকাশ করে ।
- ঘুমিয়ে যা ছায়া ।
ছায়া আর শব্দ করে না । ঘুমিয়ে পরে দুজনেই।

অপির অসুস্থতায় ছায়া অস্থির হয় । সারাদিন আনমনা হয়ে থাকে । চিৎকার নাই, ম্যা ম্যা নাই । মনে মনে শুধু সুস্থতার জন্য দোয়া করে সৃষ্টিকর্তার কাছে ।

অপির কোন সন্তান নেই । রাস্তার গাছগুলোই তার সন্তান । একটি দুটি সন্তান নয় । তিন হাজার সন্তান । একজন মা যেমন কষ্ট করে সন্তান লালন পালন করে তেমনি অপিও সকাল সন্ধ্যা কঠোর পরিশ্রম করে গাছগুলোর সেবা করে ।

গাছ মানুষের বন্ধু । মানুষ ও গাছের বন্ধু । গাছ মানুষকে অক্সিজেন দেয়, মানুষের ছেড়ে দেওয়া বিষাক্ত গ্যাস কার্বন - অক্সাইড চুষে নেয় , ছায়া দেয়, কাঠ দেয় । আবার মানুষ ও গাছকে সহায়তা করে, বনায়ন করে, গাছের যত্ন করে,আগাছা পরিষ্কার করে । কিছু মানুষ আছে, যারা এর বিপরীত । তারা গাছ কাটে, বন উজাড় করে কৃষি জমি বানায়, পুকুর করে, তৈরী করে বিল্ডিং বসবাসের জন্য । অপি এর বিপরীত । গাছ কাটা দেখলে অপির কান্না আসে । অপি বলে, "রাস্তার গাছগুলো আমার সন্তান ।" রাস্তার একটি গাছ মারা গেলে সে কেঁদে অস্থির । সে বলে " আমার একটি সন্তান মারা গেল ।"

অপির ঘুম ভাঙে তার লাগানো গাছ দেখে । ধীরে ধীরে গাছ বড় হয় অপির ও ভাল লাগে । সে বলে, "আমার সন্তানের প্রাইমারির পাঠ শেষ হল ।" এভাবেই অপির সন্তানের সেকেন্ডারী, কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ হয় ।

রাস্তার গাছগুলোর জীবনে আজ পর্যন্ত দশ বার নতুন পাতা পেয়েছে । কিন্তু অপি! তার দশ বছরের জীবনে একবারও নতুন পাতা পায়নি । এখন তার আর কোন খোঁজ নেই । কেউ খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না । তার অবশ্য খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই । খোঁজ নেওয়ার মত তার একজন বন্ধু ছিল । সে হল তার ছাগল । যেটা এখন আর জীবিত নেই । আর তার সন্তান গাছগুলো । যেগুলো যৌবন পেরিয়ে আজ বৃদ্ধ । প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলছে । কদিন আগে তাদের গায়ে সিরিয়াল নাম্বার পরেছে । মৃত্যুর সিরিয়াল নাম্বার । অপরাধ, তারা মানুষকে অক্সিজেন দিয়েছে, ছায়া দিয়েছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে এবং প্রবল বর্ষার সময় রাস্তা ভেঙে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করেছে । এখন মানব সেবার তরে কাঠ হয়ে করাতের কাছে আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ।

আজ হয়তোবা অপিও তার সন্তানতুল্য গাছের মত কাঠ হয়ে মানব সেবা করছে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী সুন্দর গল্প। গল্পের উপস্থাপন খুব ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা নিবেন। শুভকামনা নিরন্তর
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
ফড়িং . প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে গভীর ভালবাসা প্রকাশ পেয়েছে অপি চরিত্রের মাধ্যমে। শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া অমন সুন্দর লেখাখানি কি পছন্দ না করে পারা যায়? ভালো লাগল গল্পটি। উপস্থাপনায় স্বকীয়তা গল্পটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। আরো ভালো ভালো গল্প লিখবেন আশা করি পাঠকদের জন্য। পছন্দ, ভোট ও শুভ কামনা রইল। সময় পেলে আমার গল্প ও কবিতাটি পড়ে মন্তব্য জানালে অনুপ্রাণিত হবো। ভালো থাকবেন সবসময়।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

০৭ অক্টোবর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৭৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪