আমরা আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ জন প্রশিক্ষণার্থী। গিয়েছিলাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অধীনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালায়। ১২ দিনের এ কর্মশালার ১১তম দিনে আমরা বেরিয়ে পড়েছি প্রকৃতির উদ্দেশে। প্রথমে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের অদূরে মাটিরাঙা উপজেলায় অবস্থিত রিসাং ঝর্ণা। নাম ঝর্ণা হলেও মূলত সেটি হলো জলপ্রপাত। পাহাড়ের চূড়া থেকে জলের ধারা সোজা নেমে অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে সমান্তরাল ভাবে পাহাড়ী খালে নেমে যায়। সেই জলের সমান্তরাল জলের ধারার রেঞ্জের মধ্যে যেতে পারলে নিজের অজান্তে ও অনিচ্ছা সত্বেও জল তার সঙ্গী করে বহুদূর নিয়ে যায়। রিসাং ঝর্ণার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পাকা সড়কের পরও কিছুদূর জিপগাড়ীতে করে যাওয়া যায়। আবার যারা লোক সংখ্যায় স্বল্প তাদের জন্য সেখানে ভাড়ায় মোটর সাইকেলের ব্যবস্থা রয়েছে। নিজস্ব মোটর সাইকেল থাকলে তো কথাই নেই। আমারা সংখ্যায় বেশি থাকায় জিপগাড়ীই ভাড়া করেছিলাম। গাড়ীতে কিছু পথ গিয়ে এরপর পায়ে হেঁটে যেতে হয়। প্রথমে উচু-নিচু পর্বতের সঙ্গে পদযুদ্ধ করে এরপর নেমে যেতে হয় খুব গভীরে। নামতে তেমন একটা শ্রম ব্যয় করতে হয়না। নামতে যতটুকু কষ্ট হয় নামার পর রিসাং ঝর্ণার মিলনে সে কষ্ট লাঘব হয়ে যায়। কিন্তু ঝরনার সঙ্গে দেহ ও হৃদয়ের এক গভীর মিলন শেষে উঠে আসার সময়টা হয়ে যায় অনেকের জন্য জীবনের সবচেয়ে দুর্গম মূহুর্ত। স্বাভাবিক কোন মানুষ রিসাং ঝর্ণায় গিয়ে একই দিন অন্য কোন কাজ করা প্রায়ই অসম্ভব। কিন্তু তবুও আমরা থেমে নেই। এরপর ছুটে চললাম আলুটিলার উদ্দেশ্যে। নাম টিলা হলেও সেখানে রয়েছে বিশাল পর্বত ও গভীর বনাঞ্চল। পাহাড়ের অপরিচিত অসংখ্য উদ্ভিদ ও হরেক রকম বেশে পাহাড়ের বাসিন্দারা। পাহাড়েই তাদের জীবন, পাহাড়ই তাদের স্বপ্ন। প্রকৃতির এক অপরূপ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এখানে একটি অন্ধকার সুড়ঙ্গের কথাও আমরা শুনেছি। মূলত সুড়ঙ্গে প্রবেশের জন্যই আলুটিলায় আসা। সেখানে পৌঁছেই দেখলাম এক অদ্ভুত দৃশ্য। এর আগে বিভিন্ন শ্রেণির পর্যটনকেন্দ্র দেখলেও ব্যতিক্রম এ দৃশ্য দেখে হঠাৎ চমকে গেলাম। কারণ পর্যটনকেন্দ্রের সঙ্গে এমন দৃশ্য একদম চমকে দেওয়ার মতোই। কেউ কেউ কেরোসিন, পাটের আঁশসহ মশাল তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ব্যস্ত। অনেকে আবার মশাল সংগ্রহ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কয়েকজন স্মার্ট ফোনের বাতির ভরসায় থাকায় আর মশাল নেয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। এরপর নামলাম পর্বতের নিচের দিকে। হাঁটুতে প্রচ- ব্যথা করছিল। কারণ সারা দিনই উৎসর্গ করেছি প্রকৃতির প্রেমে। আলুটিলায় পৌঁছতেই সূর্য ডুবি ডুবি করছে। শেষ পর্যন্ত পর্বতের পাদদেশে যেতেই দেখি প্রত্যাশিত মহা সুড়ঙ্গ। ভেতরের উপর-নিচ ও ডান-বাম মাটি ও পাথর দ্বারা বেষ্টিত। আলো জ¦ালালেই শুধু সামনের দিকে রাস্তা দেখা যায়। পাদদেশে স্যাতস্যাতে হালকা করে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এরপরই মশাল সংগ্রহের উদ্দেশ্য বোঝতে পারলাম। দেখতে মনে হল, অন্ধকারের পূর্ব-পুরুষ হবে। অনেকেই ঢুকে পড়ছে ভেতরের দিকে। আমাদের ভ্রমণসঙ্গী সবাই আমাকে বরাবরই সামনে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ শত সাহস ও আনন্দের মাঝেও প্রাণ হারানোর ভয় কার না থাকে? আমাদের সঙ্গে ছিল নারী ও শিশুরাও। নারীরা অন্ধকার দেখে ভয় পেলেও গহিন রহস্যের সঙ্গে আলিঙ্গনে বঞ্চিত হতে নারাজ তারা । শিশুদের কোলে নিয়ে তারাও চললো আমাদের পিছু। একটু ভয়ের আভাস থাকলেও প্রথম এ ধরণের রহস্যপূর্ণ কিছু দেখার আনন্দ অন্যরকম। একপ্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে আঁধার ডিঙ্গিয়ে বের হলাম অন্যপ্রান্ত দিয়ে। আবার আগের মতো একই আকাশ ও পৃথিবীর সন্ধান পেলাম। সবাই যেন স্বস্তির কোলাহল ফেলে দিল চারদিকে। এটিই ছিল আমাদের অধিকাংশের জীবনের এক আশ্চর্য দর্শন এবং অভিজ্ঞতা। ভ্রমনের মাঝে এমন রহস্যের সন্ধান যেন জীবনে এ প্রথম। সেখানে যেন রহস্য তার আঁধারেই প্রকৃতির কোন মহারাণীকে লুকিয়ে রেখেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
আলুটিলা, মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি
০২ অক্টোবর - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।