পোল্লাকান্দি ব্রিজ

রমণী (ফেব্রুয়ারী ২০১৮)

মুজাহিদ অনিক
আমার স্কুল ছুটির পর যেদিন তাড়াটিয়া বাজারের হাটের দিন থাকতো সেদিনটা প্রায়শই আমি আর জীবন পুরো হাটে একবার না ঘুরে যেতাম না। স্কুল ছুটির সময় হবার সাথে সাথেই হাট বসে যেত। হাই স্কুলের মাঠ পর্যন্ত হাট এসে ঠেকতো। পশ্চিমের বেলা তখন লাল যতো বাড়তো হাট ততবেশি গমগম করতে থাকতো। জীবনের বাবা বাজারেই একটি ছোট্ট দোকান চালাতো। আমার যদ্দুর মনে পড়ে সে দোকানটি পান চুরুটের ছিলো। জীবন আমাকে হাটের দুর্লভ অভিজ্ঞতা শোনাতো। হাটের শেষে জীবন প্রতিদিনই রাতের বেলায় একা একা এসে পুরো হাটে ছোট্ট টর্চ লাগিয়ে তন্ন তন্ন করে খুজতো। মানুষের ফেলে যাওয়া কোন টাকা পয়সা পাওয়া যায় কি না এই আশায়। কোনদিন এভাবে ও টাকা পেয়েছিলো কী না আমার জানা নাই। এছাড়াও বাজারে কোন ছেলের সাথে তার বন্ধুত্ব,কখন কি ঘটে-সেসবের নিত্তসাক্ষী বলা যায় জীবনকে। জীবনের যে ব্যাপারটা আমাকে ওর প্রতি টানতো তা হলো,প্রতি শুক্রবারে জীবন ভিসিআর দেখতো। জীবন ভিসিআর দেখে শনিবার স্কুলে এসে সে গল্পে বুদ হয়ে থাকতো। সে গল্প সব বন্ধুদের শোনাতো। আমি শুধু ওসব শুনতাম আর ভাবতাম , ‘আমার জীবনটা যদি এমন হতো’। ওর জীবনকে আমার কাছে এডভেঞ্চারিয়াস মনে হতো। আমি ওকে জিজ্ঞেস করতাম- ‘এতো রাতে বাড়ির বাইরে আসলে তোর আব্বা আম্মা কিচ্ছু কয় না?’
ওর সরল উত্তর- বাড়িই বাজারের কাছে কিই আর কওয়ার আছে।
আমার কাছে এই উত্তর অস্বাভাবিক ছিলো।
আমার চাকুরীজীবী বাবা মা’র মতামত,ইচ্ছা-অনিচ্ছা’র বাইরে আমার জগত নাই বললেই চলে ঐ সময়। আমার কাছে সেই জীবন তাই দুর্জ্ঞেয় এবং বাঁধনহারা। যে জীবনের হাতছানি আমাকেও দিতো আবার সেই হাতছানি বাবা মার প্রতি বিক্ষুব্ধও করে তুলতো। কেন এতো বাধা? এতো শৃঙ্খল?
-এসব আমার বালক বয়সের দুঃখ।
আমার বাবা মা আবার আমাকে নিয়ে রীতিমতো বহুদুর ভেবে রেখেছেন। আমার স্কুল শিক্ষক বাবার চাইতে সরকারি চাকুরে মা আমাকে নিয়ে বেশি তোরজোড় করতেন। তার কলিগদের যারা দেওয়ানগঞ্জ থানা শহরে থাকে তাদের ছেলেমেয়েরা কেমন জীবন যাপন করে তাদের ছেলেমেয়ে কখন ঘুমায় সব আমার উপর হুবহু আরোপ হতো। এই যেমন ধরুন, নিয়ম করে বিকেলে ঘুমুতে যাওয়া, রাত ১০ টা অবধি নিরবিচ্ছিন্ন পড়ার টেবিলে,আশেপাশের কারো সাথে না মেশা ইত্যাদি। ভাবখানা এমন যেন, শহুরে হলেই সব ল্যাঠা চুকে যায়। আমি বিকেল বেলা নিয়ম করে ঘুমালে আর আশপাশের দরিদ্রপীড়িত স্বাধীনচেতা ছেলেপুলেদের সাথে না মিশলে যেন আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ঠেকায় কে! সে সূত্রে আমি সাহস করে কখনো বলতাম না আমার স্কুলে কোন বন্ধু আছে এবং জীবনের কথাও বলতাম না। আমিও ভাবখানা তাই ধরতাম যে, আমার কোন বন্ধুটন্ধু নাই। আমার স্কুল শিক্ষক বাবা আরেক ধাপ এগিয়ে এক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। তার ধারণা , যারা শহরে থাকে তারা খেলাধুলা করে না। আমাকে ডাক্তার হতে হবে অথবা প্রভাবশালী এমন কিছু হতে হবে যাতে এলাকা মহল্লায় মুখটা চওড়া হয়ে উঠে আর সে কারনে খেলাধুলা করে সে ভবিষ্যৎ নষ্ট করার মানেই হয় না। আমার বাবার যেমন ধারণা তেমন তার তেজ। আমাকে খেলাধুলা করতে তাই লুকোছাপা,মিথ্যার আশ্রয় কিংবা সদা তটস্থ জবাবদিহিতা’য় থাকা ছাড়া উপায় ছিলো না।
আমার শৈশবের সে সময়টা তাড়াটিয়া বাজার, আমার বন্ধু জীবন অনেকটা জুড়ে আছে। একটি ছোট্ট বাজারের সেদিনকার ছবিটা এখনো আমার চোখে ভাসে। এই তো আজ থেকে ১৫ -১৬ বছর আগেকার কথা। সারা বাজারে একটি ঘড়ির দোকান ছিলো। গুনে গুণে ২০-২৫ টা দোকান ছিলো। রাস্তার দুধারে দোকানগুলোর সাথে সাথে ফেরিওয়ালার দোকান,নানা রকম ব্যাবহার্য জিনিসপত্রের সমাহার। সেইসাথে গুড়ের জিলিপি, আটা দিয়ে বানানো গুলগুলি, খুড়মা আর সাদা রসের মিস্টির দোকান বসতো। জিলিপির স্বাদ আমাকে এখনো অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যায়। শুনেছি গুলগুলি নাকি এখনো বিক্রি হয় তাড়াটিয়া বাজারে। আজ থেকে সেসময়েরই কোন একদিন এই বাজারে প্রথম বিদ্যুতের বাতি জ্বলেছিলো।বিদ্যুত যেদিন এলো সেদিন থেকে বাজারের ভিসিআর বিদ্যুতেই চলে , জেনারেটর তখন প্রায় বাতিল। এ খবর আমি জানতাম না, আমাকে জীবনই বলেছে। আর, বাজারের যে পাশে ভিসিআর এর শো দেখাতো সে জায়গায় আমাকে জীবন অনেক বার নিয়ে যেতে চেয়েছে কিন্তু আমি কখনোই যেতাম না। আমার ভয় হতো, যদি কেউ দেখে ফেলে আমার বাবাকে বলে দেয়। এই ভয় একদম অজানা ভয়, অতিশয় ভয়।
আমার কাছে জীবন প্রায়ই গর্ব করতো, ‘কি চেংরা রে জীবনে নাকি ভিসিআর দেখে নাই’।
আমি লজ্জা পেতাম আর নিজেকে অধম মনে করতাম তখন। ওর কাছে নানা বাংলা সিনেমা আর গানের গল্প শুনে আমি শুধু ভাবতাম , আমি কত অজানা, অপ্রাপ্তির জীবন নিয়ে আছি। আমাকে এই জ্বালা রাতে ঘুমাবার সময়ও পোড়াতো।
আমার সারাদিনের যাপিত জীবনের এক বড় অংশই ছিলো এই এতো অপ্রাপ্তির জীবনের দুখঃবিলাস করা এবং খেলাধুলা করতে না পারার দুঃখযন্ত্রনা।
......

এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরছি। অনেকটা পথ পেড়িয়ে জীবনের এই সময়ে এসে আমার সেই চিরচেনা তাড়াটিয়া বাজার, পরিশ্রান্ত হয়ে স্কুল থেকে ফেরার স্মৃতি কিংবা জীবন নামের সে বন্ধুর স্মৃতি আমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায় পুরনো জগতে। আমার গ্রামের সেই সবুজ ধানখেতের আলোড়ন এখন আমাকে দেখতে যেতে হয়, নিত্যবন্ধু জীবনকে খুজতে স্মৃতি হাতড়াতে হয়, এখন আমার জন্মভিটাই আমার খেয়ালে কালেভদ্রে উপভোগের সবুজভূমি হয়ে ধরা দেয়। ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে দেওয়ানগঞ্জে আসার উপলক্ষগুলো কতটা রঙ্গিন হয়ে উঠতো সে ছোটবেলায় তা আর বলে শেষ নেই। আমিও যেদিন বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম আমার মনে হয়েছিলো আবার হয়তো ফিরবো এখানে । কিন্তু এখন মনে হয় আবার কবে আসবো এখানে বা আসতে পারবো তো সদা বৃদ্ধিমান জীবনের ভিড় ঠেলে? এর উত্তর জানা নাই।
এখন যে সময়টাতেই বাড়ি ফেরা হয় কত পরিবর্তন চোখে পড়ে। এই যেমন কত মানুষের জীবন থেমে গেছে এই সময়ে, বাড়ির ধারে রাস্তার পাশে বড্ড শিমুল গাছটা আর নেই, আখের খেতের মাড়াই করা রসের ঘন গরম ফ্যাপরা আর নেই, গ্রামের পাশে খালটাও এখন আর নেই আর কত কিছুই যে নেই তারই ইয়ত্তা নেই। এতসব নেই এর মাঝে আবার অনেক কিছু গড়ে উঠেছে। আমার বুড়ো দাদু বলে ‘আগে মাঘ মাসে শীতে নাকি কাপুনি উঠতো এখন নাকি উনি আর তেমন শীত অনুভব করেন না। শীতে গরম, গরমে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, বর্ষা অসময়ে’।
প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্রের এখন আছে কোনরকমে। বেচে আছে সায়াহ্নে দাড়িয়ে। আমার দেখা যেসব পরিবর্তনের কথা বলছিলাম ব্রহ্মপুত্রের ভরাযৌবনে বলিরেখা তার একটি। এর বুক চিরে একটি ইটপাথর-কংক্রিটের সেতু দাড়িয়ে আছে। যে নদীর এক কূল থেকে আরেক কূল দেখা দায় ছিলো সে নদীর বক্ষে যন্ত্র তুলেছে মানুষ। একেবারে কব্জায় এনে মানুষের দুরন্ত চলাচলের সেতু বানিয়েছে। ‘পোল্লাকান্দি ব্রিজ’ বলে মানুষ এই সেতু’কে। মানুষের সে কি আকাঙ্খা! সে কি দাবি!
কেন হয় না পোল্লাকান্দি সেতু?
এখন হয়েছে মানুষের সে কি স্বস্তি!কি আরাম!
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তাড়াটিয়া বাজার হতে ভ্যানযোগে পোল্লাকান্দি আবার রিক্সায় দেওয়ানগঞ্জ। প্রথমে তিনচাকার ভ্যান চলতো, কিছুদিন আগেও কাচারাস্তায় গরু,মহিষের গাড়ি ছাড়া দেওয়ানগঞ্জ যাবার উপায় ছিলো না। মাঝে পাকারাস্তায় সব মিলিয়ে ৪-৫ ঘন্টার যাত্রাপথ ছিলো।কিন্তু পোল্লাকান্দি ব্রিজ হবার পর এখন লোকে বলে তাড়াটিয়া থেকে দেওয়ানগঞ্জে নাকি ৪৫ মিনিটের পথ। লোকের এতো স্বস্তির এই বুঝি তবে মানে!
আমার বাবা দেওয়ানগঞ্জে আসার কথা হলেই যেখানে ভোররাত হতে হাক ছাড়তো এখন সে দিব্যি হরহামেশা থানাশহরে ছুটে বেড়ায় হাতে এক ঘন্টা সময় নিয়ে। রাতের আধার বাড়ার সাথেই নিস্তব্ধ তাড়াটিয়া বাজারে যেখানে ঘুণাক্ষরেও জনমানব খুজে পাওয়া কঠিন ছিলো সেই বাজারে এখন অনেক রাত্তির পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা। আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষের কাছে মনে হতো দেওয়ানগঞ্জ বুঝি কী এক আজব শহর, কি এক রহস্য। সেখানটায় যেতে মানুষের কতশত আয়োজন চোখে পরতো। কারো কারো আবভাব দেখলে মনে হতো দেওয়ানগঞ্জের বাইরে পৃথিবীটা মনে হয় শেষ। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, আখখেতের মাঝ থেকে ছুটে আসা শেয়ালের ‘হুকি হো আ’ ডাক শুনে শুনে এ অঞ্চলের মানুষগুলো ঘুমিয়ে পরতো সন্ধ্যা বাজার খানিকটা পর হতেই। সকালটা তাদের হতো অনেক আগে। জীবন তাদের কাছে এমনি ছিলো। এই ইউনিয়নের নাম পাররামরামপুর। এর এক পাশেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত। ওপারে শুধু বড় পাহাড় দেখা যায় যে পাহাড়ের গায়ে শুধু সবুজ বনানী চোখে পড়ে। ছোট ছোট কয়েকটা খাল এসেছে এদেশে নেমে। এগুলোর উৎপত্তি বলা যায় ঐ পাহাড়ের ঢল আর ঝরনা। গ্রামের অনেক বয়েশি লোকেরা বলে অবিভক্ত অবস্থায় নাকি ভারতের সীমানা আর এদেশের এক অংশজুড়ে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল ছিলো। মানুষ বলতে এখানে কিচ্ছু ছিলো না। রাতে এই অঞ্চলে এখনো সেই জঙ্গলের নিরবতাই নেমে আসে কি না কে জানে!!

দেওয়ানগঞ্জের এক স্কুলেই আমাকে বাবা পাঠিয়েছিলো মাধ্যমিক পড়তে। দেওয়ানগঞ্জে তখন স্যাটেলাইট চ্যানেল, মানুষের মধ্যবিত্ত ধারার শহুরে জীবনের কতশত আয়োজন দেখা যায়। স্যাটেলাইট চ্যানেলের বহুরূপী রঙ্গিন বিনোদনে মানুষ বুদ হয়েছে তখন। বিদেশি সিরিয়ালগুলো জীবনের অত্যাবশ্যকীয় বিনোদন হয়ে উঠেছে। তরুণদের এক অংশ তখন টিভিতে নানা স্পোর্টস ইভেন্টের কথা বলে, আড্ডা দেয়। তাদের মুখে মুখে হিন্দি গানের কথা ভাসে। হিন্দি সিনেমাগুলোর গল্প তাদের আড্ডার উপসঙ্গ। আমার কাছে সেই আড্ডাগুলো অচেনা লাগে। নিজেকে এক সত্যিকারের গেয়ো মনে হয়। আমি শুধু তাদের সাথে থেকে থেকে নিজের বন্ধুত্ব করার চেষ্টাই করি। ওসব গল্প আর আড্ডাগুলো আমার আনন্দে ধরে না। কিন্তু না ধরেও বেশিদিন থাকে নি। আমিও একসময় ওসবে ধাতস্থ হয়ে যাই। আমি দেখি কেমন করে বার্থডে পার্টি করে, ফ্রেন্ডশিপ ডে সেলিব্রেট করে, কেমন করে কিশোররা প্রেমপ্রস্তাব দেয়, আয়োজন করে বন্ধু পাতায়। এসব আমার জীবনের নতুন অনুষঙ্গ। আমি তখন ভাবি সেসময়ে আমার সেই বন্ধু জীবনের কথা। তখন কারো জন্মদিন দেখি নি, কারো ফ্রেন্ডশিপ সেলিব্রেশন দেখি নি, প্রেম ভালবাসা তো দূরে থাক। এখন আমি অনেক কিছু বুঝি। আমার মা-বাবার স্বপ্নের সেই পাক্কা শহুরে ছেলেপুলের একজন। নিশ্চিত মনে হয়, আমি তাদের মুখ চওড়া করবোই।


কমলাপুর স্টেশনে থেকে তিস্তা এক্সপ্রেসে আমার বাড়ি যাচ্ছি। বাড়ি যাওয়া আমার নতুন নয়। দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে আমার বাড়ি সোজাপথ সিএনজি অটোরিক্সায় পোল্লাকান্দি ব্রিজের বদৌলতে। যথারীতি বাড়ি পৌছে আমার তাড়াটিয়া বাজারে যেতেই হবে একবার। এখন বাজারে গেলে দেখি প্রাথমিক পড়ার সময়ের কত বন্ধুকে। কিন্তু আমি কথা বলি না। এ মনে হয় কিঞ্চিত বিদ্যে আভিজাত্যের অবচেতন বড়াই। আমি মনে হয় কেমন দেয়াল তুলেছি আমার মধ্যে। আমি চিনেও না চেনার ভান করি। খেটেখাওয়া দিনমজুরের সেসব সন্তানরা আমাকে চেনে। কিন্তু কথা বলতে আসে না, ভাবে আমি যদি কথা না বলি। তবে আমাকে তা পোড়ায়; ভীষণ পোড়ায়। এ কেমন যে সংকোচ যা কিনা কাছেও নেয় না আবার অনুশোচনাও করে। অনেকের বউ বাচ্চাও হয়েছে দেখা যায়। আর জীবনকে দেখেছি অনেক দিন পর এবার, ওর বাবা আর বেঁচে নেই। ওর বাবার সেই ছোট্ট দোকানও নেই। বাজারেই ছোট একটা কনফেকশনারি দোকান করে। আমার অন্য বন্ধুগুলোর মতো ভয় পেয়ে সে আমাকে বর্জন করে নি । আমাকে ডেকে কথা বলেছে ,জড়িয়ে ধরেছে।
এবার আমি ঠিক করেছি কয়েকদিন নিয়মিত যাব বাজারে। আমার স্কুলের আশা ম্যাডাম, আমার বন্ধু আর চারপাশটা দম নিয়ে নিয়ে দেখব প্রাণ ভরে।
জীবনের দোকানে একদিন বসে দেখছি বাজারের মানুষ আগের মতো আছে কি না। আমি অনেক রাত অবধি বসে আছি আর ভাবছি সন্ধ্যার তাড়াটিয়া বাজার এখন অনেক আধুনিক হয়েছে বৈকি। জীবন আমাকে জিজ্ঞেস করছে, দুস্ত, আজনীতি ফাজনীতি করো না ভারসিটিত?
জীবন রাজনীতি করার কথা বলছে। আমি হাসলাম। ও পান চিবুচ্ছে, আমার উত্তর দেবার আগেই বলছে, তুমি দুস্ত যিব্যা মানুষ, করো টরো না মুনো হয়। না পুছ কল্লাম, ভার্সিটির পুলাপান নাই আজনীতি ছাড়া বাছেই না।
আমি যে রাজনীতি করি সে রাজনীতির কথা ও জানে না। বিরুদ্ধ সময়ের এই স্রোতে আমার রাজনীতি ওর কাছে অচেনাই আছে- এ আমি নিশ্চিত। তাই ওকে জিজ্ঞেস করলাম , তুই করস নাকি?
মুচকি হাসে আর পানের পিক ফেলে জীবন।
আমি বুঝে গেছি ও এখন এই বাজারের রাজনীতি করে। আমাকে বলল, তুই ১০ মিনিট থাক আমি মিছিল সাইরা আসি।
জীবন এখন রাজনীতির মিছিলও করে। তাড়াটিয়ার মানুষও করে। পাররামরামপুরের মানুষও করে। এখন মোটরবাইকে এখানে শোডাউনও করে জীবন।সরলতার জনপদে এখন বুঝি পরিবর্তন,উন্নাসিক পরিবর্তন।জীবন আমাকে বলেছে ও একটা ছাত্রসংগঠনের ইউনিয়ন শাখার সম্পাদক। আমি অকে জিজ্ঞেস করি নি, ‘তুই দোকান করিস, ছাত্র সংগঠন কিভাবে করিস?’
গত ৩ দিনে রাতের অনেকটা আমি এখানেই কাটাই। আমি আরও অবাক হই। দেওয়ানগঞ্জে লবিং করে পদ বাগিয়ে নিয়েছে জীবন , সে এখন বেশ বড় নেতা প্রায়, সামনে আরো বড় হবে। ও বলেছে, কোন এক ভাই ওকে সভাপতি বানাবে। রাতের ১০ টা না বাজলে তাড়াটিয়া বাজার এখন লোকশূন্য হতে শুরু করে না।তবে দোকানগুলোর মধ্যে এখন আর ভিসিআর দেখা যায় না। যে জায়গায় আগে ভিসিআর দেখাতো সেখানে এখন একটা মিনি ফার্স্টফুড শপ দেখা গেলো। অনেক আগেই ভিসিআর বিলুপ্ত হয়েছে জানতাম কিন্তু রেডিও টিভি রিপেয়ারমেন্টের দোকানগুলোতে যে আগে উচ্চস্বরে নানান ক্যাসেট বাজতো এখন সেসবের বদলে হাইস্ক্লেল বক্সে হিন্দি আইটেম গান বাজে। ঢাকায় ডিজে বাজানো হয়, এখানেও সেসব প্রচলিত হচ্ছে। কথাবার্তায় যা বুঝলাম তাতে মনে হচ্ছে যেন; কি যে এক উন্মাদনা। শহরের নব্য উত্থিত সংস্কৃতির উলঙ্গরূপ এখানে আরো নগ্ন,আরো নির্লজ্জ।
রাতে আমি চলে আসব।
জীবন আমাকে দাওয়াত দিচ্ছে, রাতে থাহো দুস্ত পার্টি আছে।দেওয়ানগুঞ্জ থাহি খানাদান আসপো।
আমি এই পার্টির মর্মার্থ না বুঝে রয়ে গেলাম। দোকানের সাটার বন্ধ করে কোন নিস্তব্ধ কাঠবাগানে ইয়াবা, বর্ডার থেকে আনা ফেনসিডিল আরো অনেক আয়োজন দেখলাম। জীবনের কয়েকজন বন্ধুও এসেছে দেওয়ানগঞ্জ থেকে।
............
আমি তখন ঢাকায়। সারাদেশে ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। আমার ফেসবুক ওয়ালে একটা সংবাদ দেখে চোখ আটকে গেলো। ‘দেওয়ানগঞ্জে ভোটের সময় গোলাগুলিতে ৩ জন নিহত’। আমি জীবনকে ফোন করেছিলাম। আমার কাছের এক বন্ধুর কাছে ফোন করলাম এরপর। সে বললো,
‘জীবন বাড়ীর পথে, পোল্লাকান্দি সেতু পার হয়েছে গাড়ি আর ৩০ মিনিট লাগবে পৌছতে’।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী চমৎকার গল্প, আরও দারুণ দারুণ গল্প পড়ার প্রত্যাশায় রইলাম
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত ভাল লাগল । আর ভাল ভাল গল্প / কবিতা পড়বার অপেক্ষায় রইলাম । ভাল থাকবেন । ভোট সহ শুভকামনা ।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া গল্প ও কবিতায় প্রথম লেখা হিসেবে দারুন। লেখায় গতি আছে। চরিত্রগুলোর আকস্মিকতায় নূতনত্ব আছে। ভালো লাগল। পছন্দ, ভোট ও শুভকামনা রইল। সময় পেলে আমার ‘ভয় ফ্রেন্ড’ ও ‘রমণী রমণ মন’ পড়লে খুশী হবো। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

৩০ সেপ্টেম্বর - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪