মেজাজটাই গেল খারাপ হয়ে, বেশী মাতবারি করলে যা হয় আরকি, এমনিতে সাথে নাই ম্যাপ তার উপর আনিনি ক্যাম্পিং এর জিনিস-পত্র। খালি একটা হান্টিং নাইফ কাঁধে ছোট খাটো একটা ব্যাগ আর একটা রাইফেল শিকারের জন্য। শিকার তো করতেই পারলামনা উল্টো এক হরিণের পিছনে দৌড়ায়ে আমার দিন নষ্ট। এদিকে মানুষের আসা-যাওয়া নেই বললেই চলে তাই ভাবলাম ভালোই শিকার টিকার পাওয়া যাবে আর এ উদ্দেশে এই বনে আসা। কে জানে এ বন মরা, শিকার টিকার তেমন কিছুই নাই। আর গাছ-পালা এত ঘন যে দিনের বেলায় পথ চলতে কষ্ট হয়এখন তো আমার মনে হচ্ছে ঐটা হরিণ না অন্য কিছু ছিল আলো-আঁধারে হয়তো ভুল দেখেছি। যখন ক্ষুধা লাগলো তখন টেরপেলাম যে প্রায় বিকাল হয়ে গেছে, তাই শিকার ফেলে বাসার দিকে রওনা দিলাম কিছু দূর এসে দেখলাম পথ হারিয়েছি মেজাজ গেল আরো খারাপ হয়ে। বাধ্য হয়ে এবার উল্টো রাস্তা ধরলাম প্রায় আনুমানিক ৪৫ মিনিট পর খেয়াল করলাম হটাৎ করেই বন শেষ হয়ে গেছে সামনে একটা পাহাড় পাশে বিশাল খাঁদ।
আমি বরাবরই একলা থাকতে পছন্দ করি তবে সাথে যদি কিছু ভালো বন্ধু থাকে তাহলে ভালোই লাগে। আমি আড্ডা বা গানের আসরে আছি কিন্তু পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে ১০০ হাত দূরেথাকি সব সময়। কিন্তু যখন একেবারে কাছের কোন বন্ধু অনুরোধ করে তখন কিছুই করার থাকেনা আর আমার ও কিছুটা আগ্রহ জন্মালো যখন শুনলাম যে ওদের পুরো এলাকা পাহাড় আর বনের ছড়াছড়ি। বন-পাহাড় চষে বেড়ানোর অভ্যাস আমার অনেক আগে থেকেই। ছোট বেলায় বাবার কাছে শিখেছি রাইফেল চালানো শিকারের জন্য ফাঁদ পাঁতা, বাবার সাথে শিকারেও গিয়েছি অনেকবার। বড় হবার পরও আমি অনেক বন আর পাহাড় ঘুরেছি শিকারে গিয়েছি, বেশীর ভাগ সময় বন্ধুদের সাথে আবার কখনো একা। সুবজ বন পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়া, খোলা আকাশের নীচে আগুন জ্বালিয়ে তা ঘিরে গোল হয়ে বসে গান গাওয়া, শুয়ে আকাশের তাঁরা গোনা অথবা শিকার শেষে সবাই একসাথে খাওয়া,ইসস! তা যে কি মধুময় তা কাউকে বুঝানো যাবেনা। তাই একটু গুই-গাই করে রাজি হয়ে গেলাম। জামা-কাপড় আর ক্যাম্পিং সব জিনিসপত্র নিয়ে গত পরশু ভোরে ওদের বাড়িতে এসে পৌঁছলাম। গতপরশু সকালে এখানে পৌঁছানোর পর দুই বন্ধু সামান্য কিছু খেয়ে ঘুম দিলাম। ঐ ওর সাথে আমার শেষ খাওয়া, আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি ও হাজারো কাজে ব্যাস্ত তাই আন্টির জোড়াজরি তে বাধ্য হয়ে দুপুর এমনকি রাতেও আমাকে একাই খেতে হোল।গতকালও একই অবস্থা আজ সকালে ও তাই অথচ বিয়ে আরো তিনদিন পরে। তাই চিন্তা করলাম বিয়ে বাড়ি সবাই ব্যস্ত আমি যদি কয়েক ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যাই কেউ লক্ষ্য করবেনা এমন কি আমি যদি একদিন ও না থাকি তা ও কেউ খেয়াল করবেনা যদিও একা বনে যাওয়ার কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে গতরাতে বলেছিলাম কিন্তু ওর ভাষ্য মতে বনের ও দিকটা অভিশপ্ত এলাকা ওখানে ভূত থাকে, আমি চুপচাপ শুনে গেছি কানে নেইনি। তাই সকালে সামান্য কিছু জিনিসপত্র আর কয়েক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে পালালাম।
হটাৎ একটা বুদ্ধি খেললো মাথায়, আমি যদি পাহাড়ে উঠতে পারি তাহলে আশেপাশের চারপাশ খুব ভালো করে দেখা যাবে, আর আমি খুব সহজেই বাড়ি যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পাবো। কিন্তু পাহাড়ে উঠার মতো এনার্জি এখন শরীরে নেই, তাই এক প্যাক বিস্কুট আর পানি খেয়ে একটু বিশ্রাম নিবো বলে একটা গাছের সাথে হেলান দিলাম। চোখ মেলে দেখি বিকাল প্রায় শেষ হয়ে গেছে, কোন সময় যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম টের পাইনি। তাড়াতাড়ি উঠে পাহাড়ে উঠার রাস্তা খুঁজতে লাগলাম, আলোও ধীরে ধীরে কমে আসছে, মোবাইলের টর্চ আর ছোট্ট একটা পকেটটর্চই বলতে গেলে শেষ ভরসা, একবার বন্ধুটিকে ফোন দিতেগিয়েও দিলাম না ওকে শুধু শুধু ঝামেলায় ফেলার কোন মানেই হয় না আর দিলেও যাবেনা নেটওয়ার্কে সমস্যা, ধুর ছাই! কিছুক্ষণ খোঁজার পর একটা রাস্তা পেলাম অবশেষে তবে বেশী সুবিধারনা কিছুই করার নেই এ ছাড়া অন্য কোন রাস্তা ও নেই। উপরে উঠার সময় খেয়াল করলাম রাস্তাটির উপরের দিকটা নিচের চাইতে অনেক ভালো, আরো কিছুক্ষণ পর দেখলাম ভাঙ্গা রাস্তা আর নেই পুরো পাহাড় কেটে সিঁড়ি বানান, আমি অবাক হয়ে গেলাম, বুঝতে পারলাম মানুষ আছে, ইতিমধ্যে সূর্য ও ডুবে গেছে আমি যখন পাহাড়ে উঠলাম তখন পুরো অন্ধকার। ১ ঘণ্টার কিছু বেশী লেগেছে উপরে উঠতে, কোথাও থামিনাই, আমার জান শেষ। উঠে দেখি পাহাড়ের উপরটা মোটামুটি সমতল আর ভালই বড়, সামনে একটা বাড়ি চোখে পড়ল কিন্তু পুরো ঝাপসা! বাড়ি ঝাপসা হবে কেনো? তাই ভালো করে চোখ ডোললাম না এইবার আর ঝাপসা নাই, আসলে ক্লান্তি আর ঠাণ্ডায় চোখ মুখ সব জমে যাচ্ছে, ঝাপসা লাগাটাই স্বাভাবিক । আমার ডান দিকে একটা কুয়া কিন্তু এতক্ষণ খেয়াল করিনি বাম পাশে একটা ছোটঘর, দেখে মনে হোল ওখানে ফায়ারপ্লেসের জন্য কাঠ রাখা হয়।প্রচুর ঠাণ্ডা, কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো তুষার পরবে। সে যাই হোক এবার বাড়িটার দিকে এগোলাম । অন্ধকার, তবুও বোঝাযাচ্ছে বাড়িটি অনেক কারুকার্য সম্পন্ন নিশ্চয়ই বাড়িটির মালিক অনেক সৌখিন ও অত্যন্ত সুরুচি সম্পন্ন। অন্ধকারেও বাড়িটি যেন উজ্জ্বল আভা ছড়াচ্ছে। বাহিরে কোন আলো নেই ঘরের একটা জানালা দিয়েআলো আসছে হঠাৎ খেয়াল করলাম কুকুর আকৃতির একটি বিশাল প্রাণী জানালার সামনে দিয়ে গেল। কুকুরই হবে হয়তো কিন্তু মুখ এত চোখা কেনো বুঝলামনা, তবে এতোটুকু বুঝলাম যে কুকুর আছে তাই সাবধান হলাম। গিয়ে একবার গেট নাড়তেই ভেতর থেকে অনেক সুরেলা কণ্ঠে কেউ একজন বলল আসছি দাড়াও, আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম প্রথমে, পরে মনে হোল কারো হয়তো আসার কথা। গেট খুললো অতীব সুন্দর এক ভদ্র মহিলা বয়স কমপক্ষে ৩৫ বা এর কিছু কম/বেশি কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নাই(পরে অবশ্য কথায় কথায় জানলাম তার বয়স ৪৫ বছর), যেমন তার পোশাক তেমনি তার রূপ তেমনি তার কণ্ঠ, দেখে মনে হোল এ বাড়িতে শুধু তাকেই মানায়। আমার হাঁ হয়ে যাওয়া মুখ আর নিস্পলক দৃষ্টি দেখে তিনিই নীরবতা ভাঙলেন, কে তুমি বাবা ? কাকে চাও? অ্যামির কাছে এসেছো?। জি আসলে আমি পথ ভুল করে এ দিকে এসেছি, পাহাড়ে উঠেছিলাম রাস্তা খোঁজার জন্য, আর এখন আপনার সামনে। আমার কথার ধরন শুনে তিনি হেসে দিলেন আর আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম তার হাসি দেখে। তিনি বললেন এসো ভিতরে এসো, আমি ভিতরে গেলাম। ভেতরে গিয়ে আমি তো আরো অবাক সব এন্টিক জিনিস দিয়ে ঘর সাজানো, এতটাই সুন্দর সাজানো যে ফায়ার প্লেসের আগুনটাকে ও অনেক সুন্দর মনে হচ্ছে। তিনি আমাকে সোফায় বসতে দিলেন আর আমার অবাক চাহনি দেখে বললেন যে এগুলা একটা ও আসল না সব ডুপ্লিকেট, কফি চলবে? আমি সম্মতি জানালাম। কিছুক্ষণ পর এক কাপ কফি নিয়ে ফেরত আসলেন, সাথে ছিলেন একজন বৃদ্ধা ও একটি মেয়ে । আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁদের সবার সাথে, বৃদ্ধ মহিলাটি তার মা আর মেয়েটি তার এক মাত্র সন্তান (যদিও দেখে মনে হবেনা কারন মা যেমন সুন্দর মেয়েটি ততটাই অসুন্দর), আমিও আমার পরিচয় দিলাম। আস্তে আস্তে জানতে পারলাম যে উনারা প্রতি বছর এই সময় পাহাড়ে ঘুরতে আসেন আর আসলে ন্যূনতম এক সপ্তাহ কখনো কখনো মাস ও থাকেন। এই পাহাড়টি তার পৈত্রিক সম্পত্তি আর আদিনিবাস তাই মায়া ছাড়তে পারেননা, এখানকার পরিবেশ ও অনেক ভালো তাই শহরের জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেতে এখানে আসেন। মহিলার মেয়েটি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত নিয়ে অনার্স করছে। মহিলার স্বামী বিশাল ব্যাবসায়ি, দেশ-বিদেশে সারা বছর ঘুরে বেড়ান তাই কোথাও যাওয়ার সময়ই হয়না, আর ও অনেক কিছু। আমিও মাঝে আমার গল্প বললাম কিছুক্ষণ, আমি কি করি, কোথায় থাকি, কি ভাবে এখানে আসলাম ইত্যাদি। তিনি ডিনার রেডি করতে উঠে চলে গেলেন তারপর একটু নীরবতা নেমে এলো কারন আমি আসলে কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না, অ্যামি(মহিলার মেয়ে) আর বৃদ্ধা মহিলা একটু বেশী চুপচাপ তাই আমি দু একবার কথা বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু তাদের অনিহা দেখে চুপ করে বসে থাকলাম। মোবাইল বাহির করে দেখি মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে, খোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু হলনা , হয়তো চার্জ শেষ কিন্তু আমি যখন নীচে ছিলাম তখন ৫০% এর মতো ছিল কিন্তু এখন পুরা শেষ! ব্যাটারী মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ পর ডিনারের ডাক পড়ল । গিয়ে দেখি অনেক আয়োজন টার্কি, ম্যাস পটেটো, স্মকেডস্যামন মাছ, বান, সালাদ আরডেজার্টহিসাবেআছেস্পঞ্জচকলেটকেক, বাটারপুডিংআরআইসক্রীম।এতসুস্বাদুখাওয়ারদেখেপেটেরআগুনদিগুনহারেবেড়েগেলো,রান্নাওহয়েছেঅসাধারনবিশেষকরেটার্কিআরবাটারপুডিংনিয়েকথাবলেকোনলাভনেই, এককথায়আমারজীবনেরসেরাবাটারপুডিংআরটার্কিখেয়েছিআজ।খাওয়াশেষেতিনিএকগ্লাসপানীয়ওধরিয়েদিলেনআমাকেযদিওপেটেবিন্দুপরিমানযায়গানেইতবুওএকচুমুকখেয়েভালোইলাগলো, তাইগ্লাসহাতেনিয়েইড্রয়িংরুমেগিয়েবসলামসবারসাথে।আবারমহিলাগল্পশুরুকরলেন,জানতেপারলামতিনিখুবভালোগানগাইতেন , তাইভদ্রতারখাতিরেএকটুঅনুরোধকরতেতিনিগানধরলেন।কিযেঅপূর্বতারগলাবলেবুঝানোযাবেনা,তারসুরেরমূর্ছনায়সবাইস্তব্ধহয়েবসেরইলোকারোমুখেকোনকথানাই,এভাবেপ্রথম,দ্বিতীয়এবংতৃতীয়গানটিধরলেন।হটাৎআমিতিনটিঅদ্ভূতজিনিসখেয়ালকরলামশেষগানটিগাওয়ারসময়মহিলাটিএকটিঅবিশ্বাস্যদৃষ্টিতেআমারদিকেতাকিয়েছিলেন, গানশেষকরেএকটারাগীদৃষ্টিতেতিনিআমারদিকেতাকিয়েথাকলেনএবংমহিলারমাএকটালোভার্তদৃষ্টিনিয়েআমারদিকেতাকিয়েআছেন।আমিএকটুঅবাকহয়েগেলাম।আমিমাঝেমাঝেগ্লাসেছোট্টকরেএকচুমুকদিচ্ছিকেনোজানিএইপানীয়টিএখনবিরক্তলাগছে, হঠাৎমহিলাটিএকটুজোরেবলেউঠলেনগ্লাসতাড়াতাড়িখালিকরো।আমিঅবাকহবারবদলেএকটুরেগেগেলামআরবললামআমিআরখাবোনাআরসবকিছুরজন্যধন্যবাদআমিএবারচলিবলেদরজারদিকেএগোলাম।আমিহতভম্বহয়েগেলামনিজেরব্যাবহারে, আমিকখনোইএতটাঅভদ্রনই।আমি কিছুদূর এগোতে তিনি আমার পুরো নাম একটু ব্যাঙ্গ করে ডাকলেন, আমি ঘুরে তাকালাম, তিনি একে একে আমার পুরো ইতিহাস বলা শুরু করলেন এমন কিছু ঘটনা বললেন যা আমার বন্ধুরা ও জানেনা। যেমন আমার বাবা কিভাবে মারা গেছে, আমার ছোট বেলায় একটা কঠিন রোগ ছিল। আমি অবাক হয়ে দাড়িয়ে তার কথা শুনতে লাগলাম, তিনি আরো বলতে লাগলেন তোমার কি একবার ও জানতে ইচ্ছে করেনি এই পাহাড়ে এত সুন্দর একটি বাড়ি কি ভাবে এলো যেখানে পাহাড়ে উঠার রাস্তা অনেক খারাপ? এখানে বিদ্যুৎই বা কোথা থেকে এলো? কই আমিতো কোন জেনারেটরের শব্দ পাচ্ছি না। আমি এবার কিছুটা ভয় পেলাম কারন আমাকে নিয়ে বলা প্রতিটি কথাই সত্য আমার বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি আর এ কথা খুব কম মানুষই জানে আর আমার ছোট বেলায় অনেক খারাপ একটা অসুক হয়েছিল এবং একটু আধ্যাত্মিক ভাবেই তার চিকিৎসা হয়েছিল আমি নিজেও এই ঘটনাটি ভালো ভাবে জানতাম না কেবল তার মুখ থেকে জানলাম। আর তার করা প্রশ্ন গুলো ও সত্যি, আমি অনেক খুঁতখুঁতে স্বভাবের মানুষ আমার মাথায় কেন এ ব্যাপার গুলো আগে এলোনা আমি বুঝলাম না সত্যি এ পথ ছাড়া অন্য কোন পথ নাই পাহাড়ে উঠার আর কারেন্টের লাইন থাকা তো অসম্ভব। আমি ভয় লুকিয়ে একটু রাগী গলায় বললাম আপনি কে? তিনি উত্তরে হেঁসে বললেন, এত সাহস ভালনা আর হরিণ দলবেঁধে চলে একা চলেনা বলে হাসতে লাগলেন আর তার সাথে যোগ দিলেন তার মেয়ে আর মা আস্তে আস্তে হাঁসিটি শব্দ কর্কশ হতে লাগলো, তিনি হাসতে হাসতে মেয়ের পাশে বসলেন মেয়েটি তার মার দিকে হাসতে হাসতে ঢোলে পড়তেই লম্বা মুখ আর কুৎসিত চেহারার একটি কুকুর সদৃশ প্রাণিতে পরিণত হোল, আমি এবার অবাক হব না ভয় পাবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কি হচ্ছে এখানে!!!!!!!!!! মহিলাটি এবার তার মাকে স্পর্শ করলেন সাথে সাথে মহিলাটির মা ও অদ্ভূত কুৎসিত চেহারার প্রাণিতে পরিণত হোল। আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি, আমার হাত পা কিছুই নরছেনা, আমার সামনে ঘটে যাওয়া দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে আমি কোন ভৌতিক সিনেমা দেখছি, এতক্ষণ পরে বুঝলাম যে বৃদ্ধা আমার দিকে কেন লোভার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। মহিলাটি আমার দিকে তাকিয়ে অবাক কণ্ঠে বললেন তুমি এখনো দাড়িয়ে আছো! দৌড় দাও। এবার আমার হুঁশ ফিরলো হাত, পা, মাথা সব যেন একসাথে কাজ করলো, ঘুরেই দৌড় দিলাম। দরজার কাছে গিয়ে অনেকে চেষ্টা করেও দরজা খুলতে পারলামনা দরজার কাছেই আমার ব্যাগ আর রাইফেল পরে আছে আমি রাইফেল তুলে নিলাম ঘুরে দেখি তারা হাজির। মহিলা আমাকে উদ্দেশ করে বলতে লাগলেন তুমি তোমার বাবার মতোই সাহসি হয়েছো তারপর তিনি হাসতে হাসতে কুৎসিত চেহারার এক মানুষ, না, মানুষ বললে ভুল হবে অন্য কিছুতে পরিনিত হোলেন। কোথায় সেই সুন্দর বাড়ি, পুরো বাড়ি পরিণত হোল পোড়া বাড়িতে, পুরো বাড়িটি এক রকম বেগুনি আভা ছড়াচ্ছে। আমি বন্দুকতাক করে গুলি করলাম তাদেরকে কিন্তু তাতে কিছুতো হোলই না উল্টো তাদের হাসি বেড়ে গেল, হাসতে হাসতে বলতে লাগলো সকালে যে শিকার খুঁজেছে এখন সে আমাদের শিকার। আমার মনে হচ্ছে আমি যে কোন সময় অজ্ঞান হয়ে যাব আমার শরীল দুর্বল হয়ে আসছে তারাও এগিয়ে আসছে আস্তে আস্তে ঠিক সাপ যেমন শিকারের আগে শিকারকে দুর্বল করে নেয় ঠিক তেমনি আমি নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা আমাকে ধরতে আসছে। আমাকে স্পর্শ করবে ঠিক এ সময় হঠাৎ দরজা খুলে গেলো সাথে সাথে ঐ তিন জন এক লাফে অনেক দূরে চলে গেলো, কেউ একজন দরজা দিয়ে ঢুকল খুব সম্ভবতো কালো আর সাদা আলখেল্লা পরা, পুরো মুখ কালো কাপরে ঢাকা ,আমাকে ধরে তুললো, তুলে প্রায় ছুড়ে বাহিরে বের করে দিয়ে বলল দৌর দাও ! আমার মনে হোল কেউ আমার ২ পায়ে জেট ইঞ্জিন লাগিয়ে দিয়েছে আমি এত জোরে দৌর দিলাম যা দেখে মনে হবে আমি উড়ছি, কিছু দূর গিয়ে পাহাড়ের ঢালবেয়ে নামার সময় গতি কিছুটা কমে গেলো হঠাৎ প্রথম এ করুণ আর পরে বীভৎস একটা চিৎকার শুনলাম যা শুনে আমার গতি কয়েক গুন বেড়ে গেলো। কিভাবে যে আমি ঢাল বেয়ে নেমেছি আমি জানিনা, তবে নামার পরে বুঝতে পারলাম যে আমি নেমেছি, আমার সারা শরীর গুলিয়ে আসছে একবার বমি করলাম তারপর চেতন হারালাম।
আমার সম্পূর্ণ চেতনা ফিরল অনেকক্ষণ পরে, মাঝে মাঝে কিছুটা ফিরলে আবছা ভাবে একবার মনেহোল প্রচণ্ড শীতে আমি মরে যাচ্ছি আমার পুরো শরীর জমে যাচ্ছে, একবার মনে হোল কেউ আমাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে, আবার মনে হোল কেউ আমাকে গরম তরল কিছু খাওয়ায়ে দিচ্ছে। সম্পূর্ণ চেতন যখন ফিরল তখন আমি বনের ভিতরে, কিছু মরাপাতা দিয়ে একটা বিছানার মতো করা হয়েছে তার উপর আমি শুয়ে আছি আমার শরীর একটা চাদর দিয়ে ঢাকা আর একটু দূরেই আগুন জ্বলছে। আমি উঠতে চেষ্টা করলাম কিন্তু খেয়াল করলাম আমার শরীরে বিন্দু পরিমান শক্তি নেই।কেউ একজন পেছন থেকে বলে উঠলো থাক উঠার দরকার নেই আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকো, এবার আমি একটু জোর করেই উঠলাম উঠে সামনে তাকাতেই দেখি একজন মানুষ সাদাকালো একটা আলখেল্লা পরা মুখ কালো কাপরে ঢাকা। আমি উঠতেই তিনি বলে উঠলেন, তুমি একে বারে তোমার বাবার মতো হয়েছ, একরোখা, সাহসী আর শক্তিশালী। এই বার মেজাজ কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো, সবাই আমাকে চেনে কিন্তু আমিই কাউকে চিনিনা! আমি প্রশ্ন করলাম, কে আপনি? আপনি আমাকে কিভাবে চিনেন? আর ওই মহিলা গুলো কি ছিল? আপনি ওদের কি করেছেন? আর আমি এখানেই বা কি ভাবে এলাম? তিনি প্রশ্ন শুনে হাসলেন বললেন একসাথে এতো প্রশ্ন! সব জানতে পারবে সময় হোক, ওই বোতলের ঔষধ টুকু পুরো শেষ কর, ঐইখানে যা খেয়েছো তা সব পেট থেকে বাহির হয়ে আসবে আর তোমার দুর্বলতা কেটে যাবে। আমি বাধ্য ছেলের মতো ঔষধ শেষ করলাম। ঔষধ শেষ করার সাথে সাথে আমি কেমন জানি একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। আমি আমার বন্ধুকে দেখতে পেলাম, ও আমার নাম ধরে ডাকছে সাথে আর কিছু লোকজন সবার হাতে টর্চ কয়েক জনের হাতে লাঠি তারা আমাকে খুঁজছে, হঠাৎ করেই আমার ঘোর কেটে গেলো তারপর বমি হোল আবার। বমি করার পর কিছুটা শান্তি লাগছে মাথা পুরা পরিষ্কার আর শরীর ও কিছুটা ঝর ঝরে লাগছে। কত জন মানুষ? আমি বললাম প্রায় ২০ জনের মতো, কতক্ষণ লাগবে আসতে? আমি বললাম আধাঘণ্টার মতো, আমি নিজে বলে নিজেই অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন আর বললেন ভোর হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই তোমার বন্ধু বাহির হয়েছে তোমাকে খুঁজতে। আমার মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে কিছুটা অনুযোগের সুরেই বললাম এখানে সবাই সব কিছু জানে আমি একমাত্র মানুষ যে কিনা কিছুই জানিনা। আমার কথায় তিনি হাসলেন কিন্তু এবার খেয়াল করলাম তার মুখ আর ঢাকা নেই, একটা কঠর ভয়ংকর চেহারা চোখের নীচে থেকে একটা কাটা দাগ একে বারে গলা ছুঁই ছুঁই করছে কপালে ভাঁজের দাগ নাকি কাটা দাগ তা ভালো করে বুঝা গেলনা, মুখ ভর্তি কাঁচাপাকা দাড়ি তার চেহারায় কেমন জানি একটা মায়া মায়া ভাব ও আছে, আসলে মায়া নাকি একাকীত্ব তা বুঝতে পারলামনা। তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা লকেট দিলেন, একটা কালো মোটা সুতার সাথে একটা লম্বা পানির মতো স্বচ্ছ দাঁত, খুব সম্ভবতো বাঘের দাঁত কিন্তু বাঘের দাঁত এটার মতো স্বচ্ছ হয়না। তিনি বললেন সময় হলে এটা তোমাকে তোমার গন্তব্যে পৌঁছে দিবে এখন এটা গলায় পরো । পরার সাথে সাথে মনে হোল আমি আগুনের কোন মালা গলায় দিয়েছি, আমি আর সহ্য করতে পারলাম না চেতন হারালাম, চেতন হারানোর আগে খালি একটা কথাই শুনলাম বিদায় বাছা, বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।
আমার যখন চেতনা ফিরে, দেখি আমার বন্ধু আমাকে ডাকছে আর ঝাঁকাচ্ছে, আমি চেতনা ফিরে পাওয়ার পরে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে। আমি তেমন কিছুই বলি নাই, বলি নাই আমার সাথে কি হয়েছে পাহাড়ে, বলি নাই লোকটি কি ভাবে আমাকে বাঁচিয়েছে, কিছুই না। খালি বলেছি পথ হারিয়েছি আর বাসার তুই ব্যস্ত তাই আর ফিরে যাইনি এখনেই রাত কাটিয়েছি।
আমি ও জানতে পারলাম যে গত সন্ধ্যায় ওর ২ ভাই শহর থেকে বাসায় ফিরে তাই ও কিছুটা অবসর পায়, পরে আমাকে খুঁজতে গিয়ে দেখে আমি নেই আশেপাশে কোথাও নেই আমার নাম্বার এ ফোন দিলে নাম্বার ও বন্ধ পায়। পরে ও বুঝতে পারে যে আমি বনে গেছি কিন্তু রাত হয়ে যাওয়াতে কেউ আর বনে আসতে চাইনি তাই বাধ্য হয়ে সকালে আসতে হয়েছে।
এর পর কিছুদিন কেটে যায়, বিয়ে শেষ হয় কিন্তু আমি কেন জানি কোন কিছুতেই মন দিতে পারিনি, আমার বন্ধুরা ও অনেক জোর করেছে আমার কাছ থেকে সত্যটি জানতে কারন ওদের ধারনা আমার সাথে কিছু একটা ঘটেছে কিন্তু আমি কিছুই বলিনি খালি হেঁসে উরিয়ে দিয়েছি। আজ আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি, বন্ধু ও তার পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসা আর অনেক অগোছালো, বীভৎস আর রহস্য নিয়ে। সাথে নিয়ে যাচ্ছি সে সবের স্মৃতি স্বরূপ একটি লকেট। জানিনা সামনে কি আছে, কি হবে আমার সাথে, তবে এতো টুকু বুঝতে পারছি এবারের চাইতে ভয়ংকর কিছুই আসছে.............................................।