ফেসবুক

ডিজিটাল ভালবাসা (নভেম্বর ২০২১)

মিঠুন মণ্ডল
  • 0
  • ৫৮
কি রে এতো দেরী করলি? আমি প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি, একটা ফোন বা মেসেজ করে জানাবি তো, দেরী হবে। অমর একটু অভিমানের সুরেই বলল রোশনীকে। সরি রে! মোবাইলে চার্জ নেই কখন সুইচ অফ হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। এখানে তো আরও অনেক সুন্দরী মেয়ে রয়েছে, একটু ঝাড়ি মারলেই পারতিস, টাইম পাসও হয়ে যেত, বোর ফিলও করতিস না! রোশনী মুচকিয়ে হেসে বলল। অমর কয়েক পলক রোশনীর দিকে চেয়ে থেকে বলল, ‘সত্যি কথা বলতে আমি তো তাই করছিলাম! সামনে যে কাপলটা বসে রয়েছে তাকিয়ে দেখ্, মেয়েটা যেন টাইটানিকের রোজ! ঠোঁটটা গোলাপের পাপড়ি মতো, আর চোখের দিকে তো তাকানো যায় না, যেন গভীর সমুদ্র... অমরকে থামিয়ে রোশনী বলে আমার তো উল্টোটাই মনে হচ্ছে, মেয়েটার রং টাই যা ফর্সা, মুখশ্রী ফিগার কোনটাই তেমন অ্যাট্রাকটিভ নয়। অথচ ছেলেটা কে দেখ টল, ডার্ক হ্যান্ডসাম। আচ্ছা ছাড়! অনেক ভাট্ বকেছিস কি জন্য দেরী হল বল। স্যার ফাইন্যাল সেমিস্টারের কিছু সাজেশন দিচ্ছিল, তাই ক্লাস থেকে বেরোতেই দেরী হয়ে গেল। কবে যেন পরীক্ষা তোর? এই তো চলে এলো, এপ্রিল মাসে। এই এক দেড় মাস দেখা করতে পারব না। O.K ম্যাম ভালো করে পড়াশুনা করুন আমি ডিস্টার্ব করব না। হ্যাঁ তোর তো বেশ ভালই হল, এই এক মাস অন্য মেয়ের সঙ্গে ডেটিং করতে পারবি, তোর গার্ল ফ্রেন্ডের তো অভাব নেই। আরে তুই তো বললি ডিস্টার্ব না করতে? আমি চললাম দেরী হয়ে যাচ্ছে! রিয়াদের বাড়ী যাব নোটস আনতে। আমি কি যাবো তোর সাথে? থাক আর দরকার নেই, যাকে ঝাড়ি মারছিলিস তাকে ঝাড়ি মার, পারলে মেয়েটা কে নিয়ে দু চারটে কবিতাও লিখে ফেল, পরীক্ষার পর শুনব। রোশনী কিছুটা অভিমানের সুরে কথাটা বলেই হাঁটতে লাগল। অমর কি করবে বুঝতে না পেরে রোশনীর যাওয়া দেখতে লাগল। নীল শালোয়ার পড়ে রোশনীকে খুব সুন্দরী দেখাছিল। তারপর আবার বেনুনি করে চুল বাঁধা ওকে একটু বেশিই আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। কিন্তু কিছুই বলা হয়ে উঠল না অমরের। বাজে কথায় সময় নষ্ট হল। এটাও বলা হল না যে পরের মাসেই ও একটা সফট ওয়্যার কোম্পানি তে জয়েন করছে।

II
টিভিতে আই পি এল দেখতেই দেখতেই অমর দেখল রোশনী ম্যাসেজ করেছে , সরি! আমার এই ভাবে চলে আসা ঠিক হয়নি’। অমর ইটস্ ওকে লিখে একটা রিপ্লাই দিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা ম্যাসেজ এলো, ‘ তুই কিছু মাইন্ড করেছিস’? ‘না টিভি তে আই পি এল দেখছি, দাদা ভারসেস কলকাতা নাইট রাইডারস, পরে কথা বলছি’। কিছুক্ষণ পরেই বাউন্ডারীর কাছে ক্যাচ তুলে আউট হয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে অমরের মনটা খারাপ হয়ে গেল। দাদার আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুনে ওয়ারিওয়ারের জেতার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেল। মাঝে মাঝে অমরের মনে হয় দাদা কেন যে আই পি এল খেলছে! রাত্রে খাওয়ার পর ফেসবুক খুলে দেখল, অনেকে দাদাকে পরামর্শ দিয়েছে খেলা ছেড়ে দিয়ে ‘দাদাগিরিতে’ মন দেওয়ার। ইতিমধ্যে রোশনী ম্যাসেজ করেছে ‘মন খারাপ, দাদা হেরে গেছে বলে’? ‘না, পুনে যে হারবে সেটা জানাই ছিল’ লিখে অমর রিপ্লাই দিল। যদিও অমর মনে প্রানে চাইছিল আজকের ম্যাচটা যেন দাদা জেতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রোশনী ফেসবুকে অনলাইন হল। কি রে কার সাথে চ্যাট করছিস? আরে কারো সাথে নয়, লোকজন দাদা সম্পর্কে কি লিখেছে তাই পড়ছিলাম। ‘দাদার ব্যাড লাক্ আজ সাত নম্বরে নেমেও ম্যাচটা জেতাতে পারল না, বাই দি ওয়ে আই ই এম থেকে কিছু জানিয়েছে কয়েকদিন আগে ইন্টার্ভিউ দিয়ে এলি যে? হ্যাঁ আজই এইচ আর থেকে ফোন করেছিল, নেক্সট মান্থের ৫ তারিখের মধ্যে জয়েন করতে বলেছে। ‘দ্যাটস্ গ্রেট! কবে খাওয়াছিস? তখন জানাসনি তো’! তুই বলার সুযোগ দিলে তো বলব, এমন ভাবে চলে এলি... । বাবা এখনও রাগ পড়েনি ? আসলে হটাৎ করে মাথাটা গরম হয়ে গেল। আরও কিছুক্ষণ কথা বলে অমর ফেসবুক থেকে লগ আউট করল। শুয়েও অমরের ঘুম আসছে না। ভালো খারাপ মিশিয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। দুর্গাপুর থেকে বিটেক করে বেশ কিছু দিন বসে ছিল অমর। তারপর এক সিনিয়র দাদার রেফারেন্সে আ ই এম এ ইন্টার্ভিউ এ ডাক পায়। যদিও অমর ইলেকট্রিক্যালে বিটেক করেছে! এখন কজনেই বা নিজের কোর সাবজেক্টে জব পায়। অমর সব সময় নিজের যোগ্যতায় কিছু করতে চায়। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় সি ভি পাঠানোর পরও যখন কোন রিপ্লাই পারছিল না, তখন সত্যিই নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিল। এই সময় রোশনীই এনকারেজ করত। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে, তুই একদিন বড়ো চাকরী পাবি। অমর বুঝতে পারত সান্তনা দিচ্ছে, তবুও ভালো লাগত কারো সাথে তো নিজের হতাশা গুলো ভাগ করে নেওয়া যাচ্ছে।

III
আজ তিন মাস হয়ে গেল অমরের আই ই এমে জয়েন করা। এই তিন মাসেই এক ঘেয়েমি অনুভব করছে। রোজ কোডিং করা আর একটু ভুল হলেই বসের বাজে ব্যবহার। বস কি কোন দিন ভুল করেনি? আমরের মনের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। যদিও সে কাউকে কিছু বলে না, এমনকি রোশনীকেও না। কাজটার মধ্যে কোন নতুনত্ব খুঁজে পায় না অমর। এদিকে ১০-১২ ঘণ্টা একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে থাকতে কোমরে ঘাড়ে ব্যথা হয়ে যায়। চা-সিগারেটের নেশা না থাকায় অফিসে অন্য কলিগদের মতো ক্যান্টিনে আড্ডা মারতেও যায় না। সকাল ৯ টায় অফিস ঢোকে আর রাত্রি ৭-৮ টায় বেরোয়। মাঝখানে একবার লাঞ্চ ব্রেক নেয়। অমরের পাশের কেবিনে বসে রিতা অগ্রবাল। রিতা অমরের ৬ মাস আগে জয়েন করেছে। অমর আগে শুনেছিল মারোয়াড়ী ছেলেরা ভীষণ পরিশ্রমী হয়, এখন দেখল মারোয়াড়ী মেয়েরাও কিছু কম যায় না। বসেরা রিতার কাজে খুশি। বেশির ভাগ দিন অমর অফিস থেকে ফিরে খবর শোনে তারপর খাওয়া দাওয়ার পর গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে। শনিবার অফিস ছুটি তাই শুক্রবার একটু বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। ছোটো থেকেই অমরের অ্যাডভেন্চার বই পড়তে ভালো লাগে। মূলত ইংরেজী গোয়েন্দা বইই পড়ে। ইদানিং রোশনীর সাথেও বেশি কথা হয় না। কেমন আছিস, কি করছিস বলেই কথা ফুরিয়ে যায়। অথচ বছর খানেক আগে যখন সদ্য সদ্য আলাপ হয়ে ছিল তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট করে যেত তবু কথা ফুরাত না। এখন যেন নিজের মনের ভেতরেই একটা সেন্সর তৈরি হয়ে গেছে। সব কথা রোশনীর সাথে শেয়ার করা যায় না। প্রথম মাসের স্যালারী পাওয়ার পর অমর ফেম অ্যান্ড গ্রীলে ট্রিট দিয়েছিল। সেদিন রোশনীকে রাগানোর জন্য রীতার একটু বেশিই প্রশংসা করে ছিল। খুব মিষ্টি দেখতে, যেকোন পুরুষই প্রেমে পড়তে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি। সব শেষে রোশনী একটা কথায় বলেছিল এখানে আমার পরিবর্তে রীতাকে আনলেই পারতিস। এরপর থেকে কথা বলার ফ্রিকোয়েন্সি কমতে থাকে। আজ ফেসবুক খুলতেই দেখে রোশনী অনলাইন। অমর হাই লিখে এন্টার মারে। মিনিট সাতেক পর রিপ্লাই আসে বিজি, আই উইল ক্যাচ ইউ লেটার।
IV
‘হে অমর, ইটস্ লাঞ্চ টাইম, লেটস্ গো’! রীতা বলল। আই উইল গো আফটার ইউ। আর ইউ বিজি? রীতা আবার জিজ্ঞেস করল। নট রিয়েলি! ওকে লেটস্ মুভ। ‘কবে বিয়ের ভোজ খাওয়াচ্ছ? তোমার গার্ল ফ্রেন্ড এখন কি করছে’? রীতা এক চামচ ব্রীয়ানী মুখে ঢুকিয়ে প্রশ্নটা করল। আমাদের ব্রেক আপ হয়ে গেছে। আমর খেতে খেতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দিল। এই অপ্রত্যাশিত উত্তর পেয়ে রীতা একটু হকচকিয়ে যায় তারপর কথা ঘোরানোর জন্য বলে, ‘ওকে লেটস্ ফরগেট, মুভ অন... । আজ সাইন্স সিটিতে শংকর মহাদেবন আসছেন তুমি যাবে’? না গো সময়টা ভালো যাচ্ছে না। বছর খানেক আগে ফেসবুকেই রোশনীর সাথে আলাপ। তারপর চ্যাট করতে করতে ফোন নাম্বার দেওয়া নেওয়া সবই হয়েছিল কিন্তু কোথাও যেন একটু ফাঁক থেকে গিয়েছিল। আমাদের বন্ডিং টা ...। ছাড়ো পুরানো কথা ভেবে কষ্ট পেওয়া না। জানো রীতা আমি রিজাইন করেছি। সত্যি কথা বলতে বাধ্য হয়েছি নাহলে ওরা আমাকে পিঙ্ক স্লিপ ধরিয়ে দিত। ‘কিন্তু কেন’? রীতা প্রায় চমকে উঠে প্রশ্ন করল।বসেদের মতে আমার পারফর্মেন্স নট আপ টু দা মার্ক।
V
আজ ১৪ ই আগস্ট আই ই এমে অমরের শেষ দিন। অফিসিয়াল ফর্ম্যালিটিস, অ্যাকাউন্টস ক্লিয়ারেন্স করতে করতেই ৬টা বেজে গেল। হাতে দুমাসের স্যালিরির চেক আর একটা এক্সপেরিন্স সার্টিফিকেট নিয়ে অমর কলেজ মোড়ের দিকে হাঁটতে লাগল। বাইরে টিপ্ টিপ্ বৃষ্টি পড়ছে,। অন্যদিন হলে ছাতা খুলত। কিন্তু আজ আর ইচ্ছে হল না। চারিদিকে লোকজন ছোটা ছুটি করে বাস, স্যাটেল গাড়ী ধরছে। আজ অমরের কোন তাড়া নেই। গতকাল রোশনী ওর বিয়ের কিছু ছবি পোষ্ট করেছে। খুব সুন্দর লাগছিল ওকে। অমর খুব তাড়াতাড়ি ফেসবুক থেকে লগ আউট করে এই ভয়ে যদি কিছু কমেন্ট করে বসে। আজও লাঞ্চের টেবিলে রীতা সাহস জোগাচ্ছিল। ইতিমধ্যে রীতা কয়েকজন পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে কয়েকটি কোম্পানিতে অমরের সিভি পাঠিয়েছে। সামনে দিয়ে ST-6 বেড়িয়ে যাচ্ছে, ভিড় দেখে ভাবছে উঠবে কি উঠবে না। এমন সময় একটা ম্যাসেজ এলো অমরের মোবাইলে। হে অমর, হ্যাভ ইউ রীচড্ ইউর হোম? দে আফটার টুমোড়ো ইউ উইল বে কলড্ ফর অ্যান ইন্টার্ভিউ। কীপ ইন টাচ্, গুড নাইট।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী সুন্দর এবং সাবলীল প্রকাশ। খুব ভালো লাগল।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

আজ কাল অনেক বন্ধুই পাওয়া যায় ফেসবুকে। কখনও কখনও বন্ধুত্ব কিছুটা প্রেমেও পৌঁছে যায়। সেই নিয়েই এই গল্প। আশাকরি পাঠকের ভালো লাগবে।

২৬ জুলাই - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪