ছুটি চলছে , অনেক লম্বা এবং অনাকাক্ষিত ছুটি । চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভুবনের এই ছুটি । ছুটি কে ভুবন চায়নি তবে ছুটি ভুবনের গলায় ঝুলে পড়েছে । সে ব্যস্ততা পাগল মানুষ । পড়াশুনা কিছুদিন হল শেষ হয়েছে ,কিন্তু ছাত্র জীবন থেকেই সে ব্যস্ত থেকেছে । পরিবারের বোঝা হয়নি ,বরং পরিবারের সবাইকে সাপোর্ট দিয়েছে । সেই মানুষটা আজ বিছানায় দীর্ঘ দিন ধরে শুয়ে বসে কাটাচ্ছে । ভুবনের মতে সে সুস্থ তবে পরিবারের সবার মতে সে এখনও মুমূর্ষু রোগী । পরিবারের চাপের জন্য আর অফিসের ছুটির জন্যই তার বাসায় থাকা । বাসায় ১দিন মানে ৪ বছর কাটানো মনে হয় তার কাছে । বসে বসে কোনভাবেই সময় কাটছে না । কেনেভাবেই না । বন্ধুবান্ধবের সাথে মাঝে মাঝে আড্ডা দেয়া যায় । ফেইসবুক আড্ডা । কারণ ফেসবুক ছাড়া কারও সময় হয় না । তবে ফেসবুকে সময় কাটাতে ভুবনের বেশ ভালোই লাগে । শুধু একটাই সমস্যা ,এক্স গার্লফ্রেন্ডের পোস্ট । এই মেয়ের আগে থেকেই ফেসবুকে উঠতে বসতে পোস্ট দেয়ার অভ্যাস । এখন আরও একটা ইস্যু পেয়েছে বর । বরের সাথে যেখানে যাচ্ছে যা করছে সবই ছবি তুলে পোস্ট দেয় । পোস্ট দিয়ে ভুবনকে ট্যাগ করে ,আর লাইক না দিলে কল করে ফকিরের মত লাইক চাই বে “ এই লাইক দেওনী কেন?তুমি কী আমার উপর রাগ করে আছ ? হাজার হোক তুমি আর আমি ইউনিভার্সিটিতে অনেকটা সময় একসাথে কাটিয়েছি ।” এইসব হাজার কারণে ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকেও বাদ দেয়া যাচ্ছে না । মাঝে মাঝে ভুবনের নিজের র্নিবুদ্ধিতা কথা ভেবে বিরক্ত লাগে আর মনে হয় ঐ মেয়ের গালে ঠাটায় থাপ্পড় দিতে ।কিন্তু হয়ে ওঠে না ।
(২)
এই ঘরের দখিনে জানালা নেই তাই পশ্চিমের খোলা জানালাটা দিয়েই হালকা কিন্ত মিষ্টি কামিনী ফুলের সুঘ্রাণ মেশানো বাতাস আসছে । এই বাতাসের সাথে যেমন ভালোবাসা মিশে থাকে তেমনি হাহাকারও মেশানো থাকে । যেটা গভীর রাতের মত নিঃচুপ আর অমাবস্যার মত আঁধার কালো দুঃঃখের কথা মনে করিয়ে দেয় । একটা মিষ্টি শব্দ ভাবনার জালগুলোকে দুমড়ে মুচড়ে ভুবনের মস্তিষ্কে গিয়ে আঘাত হানলো । মোবাইলএ টুংটাং। একটা কাক্ষিত ম্যাসেজের অনাকাক্ষিত উত্তর এসেছে । “আমি পারবো না । “
কে দিয়েছে?কেন দিয়েছে ?
(৩)
সেই মোবাইলের টুংটাং শব্দটা বেজে উঠল । কাজের চাপে যখন অতিষ্ট তখন এই টুংটাং শব্দটা বেশ মনটা অন্য দিকে ঘুড়িয়ে দেয় ,ভালোই লাগে এটা ভেবে যে ,কেউ মনে হয় আমার কথা মনে করেছে । ব্যস্ততা থাকলেও এটা মনের কোণায় অস্থিরতা সৃষ্টি করে ,কে মনে করেছে । শেষ পর্যন্ত সব ফেলে মোবাইলটা হাতে নিতে হলই । না কেউ ম্যাসেজ দেয়নি । একটা ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট একসেপ্ট হয়েছে ,তার নোটিফিকেশন এসেছে । ভুবন কবে পাঠিয়েছিল মনে নেই,চেনাও না । কিছুদিন আগে আইডি হ্যাক হয়েছিল তখন এসব কান্ড হয়েছে । তারপর টানা ৭ দিন বসে বসে ফ্রেন্ডলিস্টটা ঠিকঠাক করতে হয়েছে । এ আবার কোন নতুন ঝামেলা,আনফ্রেন্ড করলেই হয় । কিন্তু প্রোফাইলে যে মেয়ের ছবি ,সেই যদি এই আইডির মালিক হয় তাহলে তার চোখে কেমন জানি একটা কামনা ।ছবিটা দেখেই প্রথমেই যে শব্দটা মাথায় আসলো সেটা হল কামিনী । আর আনফ্রেন্ড করা হল না । শুরু হল একটু একটু করে চ্যাটিং । যে মেয়ে কখনোই ঠিকমত,ঠিক সময় মত রিপ্লে দেয় না । অথচ তার উত্তরের জন্যই মনে এক ফোঁটা করে করে সাগর সমান অস্থিরতা আর আকাক্ষা তৈরি হয়ে গেল ভুবনের । এভাবেই এক শ্রাবণের বৃষ্টি ভেজা রাতে কামিনীর সাথে আবারও ছোট ছোট কিছু কথা হচ্ছিল
কেমন আছেন?
বুঝতে পারছি না । আপনি?
অফিসের ঝামেলা ছাড়া তো ভালো । আপনাকে একটা কথা বলব?
সিরিয়াস কিছু হলে বলার দরকার নাই । আবার এমন কিছু যদি হয় ,যেটা শুনলে আমার মন খারাপ হবে এমন কিছুও বলার দরকার নাই ।তাছাড়া বলতে পারেন,তবে একটা কথার বেশি না ।
ওকে বাবা! আপনার সাথে দেখা করার ইচ্ছা আমার,করা যায় কি?
তারপর অনেক দিন পরে কিন্তু সেই শ্রাবণেই পাঁচটি কদম ফুল হাতে ভুবন দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার এপারে । ঠিক ১ ঘন্টা ২৭ মিনিট পরে কামিনীও এসে দাঁড়িয়েছে রাস্তার ওপারে । তখন সে ভেজা প্রকিৃতির সাথে মিশে আরও কামুক হয়ে উঠেছে । যার জন্য ভুবন ১ ঘন্টা ২৭ মিনিট শুধু নয় ইহকাল,পরকাল সব পার করতে পারবে ।
( ৪ )
এরপর অনেক ফুল হাতে নিয়ে ভুবন গিয়েছিল কামিনীর কাছে । সেগুলো এখন শুকিয়ে করুণ রূপ ধারণ করেছে ,কামিনী তার বইয়ের ভাজে,ডায়েরীর ভাজে শুকনো পাপড়ি রেখে নিরুদ্দেশ হয়েছিল । ভুবন তাকে জোড়া হারা শালিকের মত খুঁজেছে । খুজে খুঁজে জেনেছে কামিনী ২বছর আগে স্বামী হারা হয়েছে । বিয়ের ১ মাসের মাথায় কামিনী কলঙ্কিনীর মত তার স্বামীকে পথের মাঝে হারিয়েছে । সে বিধবা হয়েছে । সমাজ তাকে কলঙ্কিনী,অভিশপ্ত বলে ডেকেছে আড়ালে । তারপরও ভুবন তাকে ডেকেছে । তার সঙ্গী হতে চেয়েছে । কিন্তু কামিনী লিখেছে “ আমি পারবো না।“ সে ভেবেই বলেছে ।
ভুবনের জানালায় এখন আলো_ছাঁয়ার মত কামিনীর স্মৃতি আসা যাওয়া করে । ভুবন নিজেকে নিজের মত বুঝিয়েছে ,”আমার পরিবার কী ওকে এত সহজে মেনে নিত !আর সমাজ! তারচেয়েও বড় কথা ওর স্বামীর পরিবার ওকে এতদিন যত্নে রেখেছে ,পড়াশুনা করিয়েছে ,তাই তো ওর শ্বশুড় শ্বাশুড়ি চায় শেষ বয়সে কেউ সাথে না থাকলেও ও যেন থাকে । এটা তাদের শেষ ইচ্ছা । কিমিনীকে তো এটা পূরণ করতেই হবে,ও যে ঋণী !”
তবে বাসার পশ্চিমের কামিনী গাছটাকে এখন ভুবন আরও বেশি ভালোবাসে,আরও যত্ন করে । সেই গাছও তাই এখন ভুবনের ভুবনকে কামিনীর সুঘ্রাণে ভরিয়ে দেয় ।
২৩ জুলাই - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪