বর্ষাকাল চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে, তার মাঝে ছোট্ট একটি গ্রাম। গ্রামের নাম অজান্তাপুর। এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই জেলে। মাছ ধরাই তাঁদের বংশগত পেশা। তবে ইদানীংকালে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ চলে যাচ্ছে শহরের দিকে। এই অজান্তাপুরেই বাস করে ভোলানাথ। বাপ-মা আদর করে নাম ভোলানাথ রাখলেও সবাই তাকে ভুলু বলে ডাকে। ভোলানাথের চাচাতো ভাই তারানাথ। তাঁর নাকি শহরে বড় ব্যবসা আছে। সে অনেকদিন ভোলানাথকে বলল; এই ভুলু চলে আয় শহরে। আমার কাছে সবসময় থাকবি আর আমার ব্যবসা দেখাশোনা করবি। ভুলু কোনক্রমেই রাজি হয়না। তাঁর এক কথা কই যামু বাপ-দাদার ভিটা ছাইড়া, তাঁদের এতদিনের কাম যা তারা কইরা আইছে, এর প্রতি আমি অসম্মান দেখাইয়া আমি কোনো জায়গায় যামু না।
ভোলানাথের স্ত্রী কমলা। গাঁয়ের রং ফর্সা, ৫ ফিট ২ ইঞ্চি লম্বা, গোলগাল চেহারা। এই তল্লাটে এ রকম সুন্দরী আর একটিও নেই। গরীবের সন্তান বলে, ভুলুর মত জেলের কাছে কমলাকে বিয়ে দিছে। নয়তো কমলাকে যে কোন রাজপুত্রের কাছেই বিয়ে দিতে পারত। কমলা যখন পানি আনতে কলসি নিয়ে নদীর ঘাটে যায় তখন কত পুরুষই না তাঁর দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকায়, চোখ দিয়ে কমলাকে ছিড়ে ছিড়ে খায়। তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছে রাজেন্দ্র। কমলা এসব খেয়ালই করে না। সে এখন পুয়াতি।
ভুলুর সংসারে তাঁর স্ত্রী ছাড়াও আর একজন আছে তাঁর মা। বয়স সত্তরের উপর। ভুলুর স্ত্রীও তাকে অনেকদিন বলল আমাদের অভাবের সংসার, তাঁর উপর তোমার বৃদ্ধা মা। মাছ ধরে যা আয় রোজগার কর তা দিয়েতো আমাদেরই হয়না। নতুন অতিথি এলে খাওয়াবে কী? এর চেয়ে ভাল তুমি শহরে চলে যাও। তারানাথ দাদার কথামত কাজ কর। তাহলে তুমি দু’পয়সা বেশি রোজগার করতে পারবে আর আমাদের অভাবও ঘুচাবে। ভোলানাথ কিছু বলে না, চুপটি করে বেরিয়ে যায়।
যাওয়ার পথে শংকর দাসের সাথে দেখা হয়। শংকর দাস স্থানীয় জমিদারের কাছাড়ি দেখাশোনা করে। বয়স ৪৫ ছুই ছুই কিন্তু এখনো দেখতে ২৫ বছরের যুবকের মতই। ভোলানাথকে বলল কীরে ভুলু তোর খবর-টবর কী? শুনলাম তোর বউ নাকি পুয়াতি? জী হুজুর। তো কয়মাস চলে? আট মাস কর্তা। আচ্ছা যায়রে ভুলু। আবার পিছনে ফিরে এসে এই ভুলু এদিকে আয়। জী কর্তা, আমার কাছাড়িতে একজন লোক দরকার। তুই কী কাজ করবি? মাসে দুই টাকা পঞ্চাশ পয়সা পাবি। ভোলানাথ বলল সবই আপানার দয়া কর্তা। ঠিক আছে যা।
বাড়ি ফিরে কমলাকে সব বলল। কমলাও কাছাড়ির কাজে সম্মতি দিল। ভুলু এতদিনের পেশা ছেড়ে কাছাড়ির কাজে মন দিল। কিছুদিন পর কমলা একটা মেয়ে জন্ম দিল। দেখতে খুব সুন্দর, ফুটফুটে ঠিক তাঁর মত। সাতদিন পর মেয়ের নাম কমলার নামের সাথে মিলিয়ে কামিনী রাখা হল।
এই কয়দিন ভোলানাথ কাছাড়িতে যায়নি বন্ধ করেছে। আজ সে কাছাড়িতে যাবে, বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি কিন্তু কাছাড়িতে যেতেই হবে। আজ যে জমিদার বাবু আসার কথা। ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ভোলানাথ। যেতে যেতে দেখা হল রাজেন্দ্রের সাথে। কাছাড়িতে কাজ করার সুবাদে এখন তাকে সবাই মোটামুটি সম্মান করে। কেউ আর তাকে এখন ভুলু বলে ডাকে না। রাস্তায় যেতে যেতে রাজেন্দ্রের সাথে অনেক কথা হল। কী কথা হল তা জানা গেল না। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরার পর থেকে কী যেন চিন্তা করছে? কিছুক্ষণ পর কমলাকে বলল কাছাড়ির কাজটা ছেড়ে দিবে। আজকাল রাজেন্দ্র প্রায়ই ভোলানাথের বাড়িতে আসে, কী যেন যুক্তি করে দুজনে মিলে। কমলা তাঁর কিছুই বুঝেনা। তাছাড়া রাজেন্দ্র যেন কেমন কেমন করে কমলার দিকে তাকায় আর হাসে। কমলার এসব ভালো লাগে না।
কিছুদিন পর কাছাড়ির কাজ ছেড়ে দিল ভোলানাথ। কাছাড়ির কাজ ছাড়ার পর থেকে, কী যে একটা কাজ করে রাতে? আর সারাদিন ঘুমায়। আয় রোজগারও আগের থেকে অনেক বেশি। কমলা মাঝেমাঝে তাঁর স্বামীকে জিজ্ঞাসা করে কী কাজ কর সারারাত বাহিরে? কিন্তু ভোলানাথ এই প্রশ্নটা এড়িয়ে যায়, কিছু বলে না। এভাবে কিছুদিন চলার পর হঠাৎ করে একদিন ভোলানাথের বাড়িতে পুলিশ আসল। কিন্তু ভোলানাথকে পেল না। কমলা কারণ জানতে চাইলে পুলিশ বলল, তাঁর স্বামী নাকি পাশের গ্রামের বল্লভ রায়ের বাড়ির ডাকাতির সাথে জড়িত। একথা শোনার পর কমলার শাশুড়ী জ্ঞান হারাল কিন্তু সে জ্ঞান আর ফিরল না। মৃণালিনী দেবী অক্কা পেলেন।
পরের দিন শশ্মানঘাট থেকে ভোলানাথকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। এখন সে জেলখানায়। তাঁর সাথে কমলা দেখা করতে গেলে সে বলে;
অর্থের কামনায় হারালাম তোকে, হারালাম বাড়িঘর অর্থের কামনায় হারালাম আত্মসম্মান সবার চোখে এখন আমি পর।
কমলা জিজ্ঞাসা করে ঘটনা সত্য কিনা? সে ডাকাতির সাথে জড়িত কিনা? ভোলানাথ বলল সে ডাকাতির সাথে জড়িত না কিন্তু রাজেন্দ্রের কথায় টাকার লোভে রাত্রিতে ডাকাতের নৌকা বাইত। আর আজ সেই রাজেন্দ্র নাকি তাঁর কোন খবর নেয়নি। কমলা সবকিছু শোনে বাড়ি চলে যায়।বাড়ি যাওয়ার পথে রাজেন্দ্রের সাথে দেখা। রাজেন্দ্রকে ভোলানাথের ছাড়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, ছাড়িয়ে আনতে পারে তবে একটা শর্ত আছে। রাজেন্দ্রের অন্তরের কামুক বাসনা তা নাকি কমলার চরিতার্থ করতে হবে। তা’না হলে তাঁর স্বামীকে আরো জটিল মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিবে। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে রাজেন্দ্রের কথায় রাজি হল কমলা। আর রাজেন্দ্র চরিতার্থ করল তাঁর কামুক বাসনা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।