বনলতা সেনের দুই টাকা

ঋণ (জুলাই ২০১৭)

আশরাফ বিল্লাহ্‌
  • ১১
শুরুর আগে:
ঋণ শব্দটার সাথে পরিচিত নয় এমন লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য ।ল্যাটিন শব্দ ‘ক্রেডে’ (সংস্কৃত-ল্যাটিন ক্রাড) থেকে উদ্ভূত ইংরেজি ক্রেডিট শব্দটিকে অর্থনীতিতে ঋণ হিসেবে ধরা হয় ।আবার কোন একজনের প্রতি অন্যজনের আস্থাও প্রকাশ করে এই ঋণ শব্দটি ।মানে কাউকে বিশ্বাস করে পরবর্তীতে ফেরত পাবার আশায় কাউকে অর্থ বা পণ্য ধার দেয়াকে আমরা মূলত ঋণ হিসেবে বুঝে থাকি ।
বিভিন্নরকম ঋণের সাথে আমরা পরিচিত ।আমরা দেখেছি ঋণের দায়ে জর্জরিত অনেক বৃদ্ধ বাবাকে আত্মহত্যা করতে ।দেখেছি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির কর্তাকে প্রতি মাসে ঋণের হিসেব কষতে কষতে ঘেমে যেতে ।অনেক ব্যাংক/প্রতিষ্ঠানকে ঋণের দায়ে দেউলিয়া হতেও দেখেছি ।আবার কিছু কিছু অপরিশোধযোগ্য ঋণের সাথেও পরিচিত আমরা ।নাটক সিনেমায় নায়িকা বিপদে পড়ার পর নায়ক তাকে উদ্ধার করলে কিভাবে সেই ঋণ শোধ করবে এটা নায়িকা খুঁজে পায়না ।আবার কিছু কিছু হারামি বন্ধু থাকে যারা টাকা নেয়ার সময় বলেই দেয় “দোস্ত তোর এই ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবোনা”।মানে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন এই টাকা আর কখনো ব্যাক পাবেন না ।এরকম নানান প্রকার ঋণ দেয়া নেয়ার ঘটনা আমাদের সাথে নিত্যদিনই ঘটে চলেছে ।ঘটনাচক্রে আমিও একজনের কাছে ঋণী ।

দৃশ্যপট ১:
ঋণ জিনিসটা আমার মোটেও পছন্দ না ।আমি সবসময় চেষ্টা করি যেন কারো কাছে ঋণী না হই ।হোস্টেল লাইফে অনেক বন্ধুকে দেখতাম ইচ্ছা করে ঋণী হতে ।হোস্টেলের পাশের দোকান থেকে টুকটাক জিনিস কিনে বাকীর খাতায় লিখিয়ে রাখত ।মাস শেষে আংশিক বা পুরো পরিশোধ করত ।এমন নয় যে তাদের আর্থিক অবস্থা ভালোনা এজন্য বাকী রাখে ।এটা জাস্ট এক ধরণের শখ বলা যায় ।দোকানদার মামা আমাকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতেন অন্য বন্ধুরা বাকী নেয় আমি কেন নেই না।আমার সরল জবাব ছিল _ ‘আমি নগদে বিশ্বাসী ঋণী থাকতে পছন্দ করিনা’ ।শুনে মামা হাসতেন ।আবার পরীক্ষায় ফেল বা কোন কোর্স বাকী রাখাটাও আমার কাছে এক ধরণের ঋণ মনে হত ।তাই কখনো কোন সাবজেক্ট ঝুলিয়ে রাখতাম না।
এরূপ সব বিষয়ে যে ঋণ শব্দটা অপছন্দ করে সেই আমিও একবার একজনের কাছে ঋণী হয়েছিলাম ।ঋণের পরিমাণ ছিল দুই টাকা ।টাকার এমাউন্ট শুনে অনেক অবাক হতে পারেন বা অনেকের হাসি আসতে পারে ।দুই টাকা কিভাবে ঋণ হয়!!!! হুম ......চিন্তার বিষয় বটে ।কিভাবে সেই দুর্ঘটনা ঘটল সেটাই দেখা যাক ।
আমি ছোট থেকেই নিরীহ টাইপের মানুষ ।কারন ছাড়া কারো সাথে তেমন কথা বলিনা আর প্রেম ভালোবাসা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রাখি
সবসময় ।অনেকে দেখি সকাল বিকাল ক্রাশ খায়,আমার এরকম খাই খাই স্বভাবও নেই ।আমি আবার সাহিত্য পাগল ।গল্প-উপন্যাস,কবিতা নিয়েই আমার সময় কাটে ।আশেপাশের মেয়েগুলোকে কেন জানি রবীন্দ্রনাথ বা শরৎ বাবুর গল্পের নায়িকার সাথে মেলাতে পারিনা ।সবাই কেমন জানি অভারস্মার্ট ।এজন্যই হয়তো কাউকে ওইভাবে ভালো লাগেনা ।
যায়হোক কলেজে তখন আমি ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট ।ফিজিক্স পরীক্ষার আগের দিন বিকেলে মোড়ের ষ্টেশনারীর দোকানে স্যারের লেকচারশিট ফটোকপি করতে গেছি ।ফটোকপি শেষে বিল আসলো ২২ টাকা ।আমার কাছে খুচরো ছিল ২০ টাকা ।আর একটা ৫০০ টাকার নোট ।দোকানীকে বললাম আজ ২০ টাকাই রাখেন অন্যদিন নিয়েন ।তিনি ছাড় দিতে নারাজ তার নাকি ঐ দুই টাকাই লাভ ।মন মেজাজ দুইটাই খারাপ হয়ে গেল,হোস্টেলে যেয়ে আবার টাকা নিয়ে আসবো এইটাও ইচ্ছে হচ্ছেনা ।কিছুটা না অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমুর অবস্থা ।এমন সময় একটা মধুর কণ্ঠস্বর কানে আসলো ।মনে হল যেন লতা মঙ্গেশকরের আওয়াজ ।দোকানদারকে বলছে আমার বিলটা তাড়াতাড়ি নেন রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে ।তার দিকে তাকিয়ে দেখেই কেমন যেন ওলট পালট হয়ে গেলাম ।মনে হল প্রহর শেষের আলোয় রাঙা কোন এক চৈত্র মাসে কবি এর চোখেই তাঁর সর্বনাশ দেখেছিলেন ।মেয়েটিকে দেখে হটাৎ নিজেরে জীবনানন্দ দাশ মনে হল ।মনে মনে ‘বনলতা সেন ২’ লিখে ফেললাম ।১৮ এর পরিবর্তে ৩৬ লাইন কবিতা লিখতেছি মনে মনে ।আমার কবিতা যখন ২২ লাইন অবধি এগিয়েছে তখন দোকানদারের কর্কশ শব্দে সাধনায় ব্যাঘাত ঘটল ।তিনি সেই ২২ টাকাতেই আটকে আছেন ।এদিকে আমার বনলতা সেনের রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে ,সেও তাড়াতাড়ি করছে ।কাহিনী বুঝতে পেরে সে দোকানদারকে বলল ঐ দুই টাকা আমার থেকে নেন ।দোকানদার প্রথমে কিছুটা ইতস্তত বোধ করলেও মেয়েটির তাড়া দেখে আর কথা বাড়ালো না ।মেয়েটি দ্রুত তার বাকী টাকা ফেরত নিয়ে হনহন করে চলে গেল । আমি দেখছি সে রিক্সায় উঠলো ,রিক্সা চলতে আরম্ভ করলো কিছুক্ষন পর দূরে মিলিয়ে গেল ।এতক্ষন আমি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি ।রিক্সাটা সম্পূর্ণ চোখের আড়াল হওয়ার পর আমার মনে হল আমি এখানে কি করছি ,আমার তো দোকানের কাজ কখন শেষ হয়ে গেছে ।যায়হোক দোকানদারকে মনে মনে কিঞ্চিৎ গালি দিয়ে দোকান থেকে বেড়িয়ে আসলাম ।

দৃশ্যপট ২:
সেদিনের সেই ঘটনা এত দ্রুত ঘটে গিয়েছিল যে আমি কিছু বলারও সুযোগ পাইনি ।সে আমার টাকা কেন দিবে বা আমি তাকে পরে কিভাবে টাকাটা ফেরত দিতে পারি এসব কিছুই জিজ্ঞেস করার সময় হয়নি ।ঐদিন হোস্টেলে এসে ৩৬ লাইনের কবিতাটা খাতায় লিখে ফেলেছিলাম ।আর পকেটে খুচরা ২ টাকার নোট নিয়ে সবসময় ঘুরতাম ।সেই টাকার উপর লিখে রেখেছিলাম “দেখিবামাত্র বনলতা সেনকে দিতে বাধ্য থাকিবো” ।মনে মনে ভাবছিলাম আবার দেখা হলেই দুই টাকা ফেরত দেয়ার উছিলায় আমি আমার বনলতা সেনের সাথে পরিচিত হবো ।এরপর কলেজে,রাস্তায় মার্কেটে ,বাসস্ট্যান্ডে সব জায়গায় মনে মনে অনেক খুঁজেছি তাকে ।কখনো তাঁর দেখা পায়নি ।কবিতাটা যেই খাতায় ছিল সেটাও কেজি দরে বিক্রি হয়ে গেছে ।হয়তো কোন এক বাদামআলার কাজে এসেছে কাগজটা ।
এরপর বহু বসন্ত পার হয়ে গেল,অনেক ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হল,একই রাস্তা একই কন্ডাক্টর অনেকবার মেরামত করলেন,কত শিশুশিল্পী নবাগত নায়িকার ভুমিকায় অভিনয় শুরু করল, সেদিনের সেই আমি কলেজ নাইফ শেষ করে ভার্সিটিও শেষ করে ফেললাম তবু কোনদিন বনলতা সেনের দেখা পাইলাম না ।তার মুখটা অনেকটা ভুলেই গিয়েছিলাম বলতে গেলে ।
কিছুদিন আগে এক মুদির দোকান থেকে সিগারেট কিনে লাইটার খুঁজতেছিলাম পকেটে ।এমন সময় এক পিচ্চি এসে দোকানদারকে তোতলা তোতলা স্বরে ললিপপ না কি যেন দেখিয়ে দিয়ে দিতে বলল ।দোকানদারকে সে খুচরা কিছু টাকা দিল ।দোকানদার বলল বাবু আরও ২ টাকা লাগবে,এটার দাম ৫ টাকা ।পিচ্চিটা মনে হয়না এত কিছু বোঝে ,সে হা করে তাকিয়ে আছে ।ভাবলাম পিচ্চির টাকাটা আমিই দিয়ে দেই ।আমি পকেট থেকে টাকা বের করতে যাবো এমন সময় এক শাড়ি পড়া মহিলা এসে টাকা দিয়ে দিল।পিচ্চিটা ললিপপ পাওয়ার খুশিতে আম্মু আম্মু বলে তার কোলে লাফিয়ে উঠলো ।অনিচ্ছা সত্ত্বেও মহিলার দিকে একঝলক তাকিয়েই আমি থ হয়ে গেলাম ।এই সেই চোখ ।মুখ কিছুটা ভুলে গেলেও এই চোখ কখনো ভোলার নয় ।একবার মনে হল জিজ্ঞেস করি ‘বনলতা সেন ,এতদিন কোথায় ছিলেন?’ তবে মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলনা ।বনলতা সেন তার মেয়েকে কোলে নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে গেল ।আমি এবারও কিছু বলতে পারলাম না ।তবে সেবারের বলতে না পারা আর এবারের বলতে না পারার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ ।সেবারে যে আশার জন্ম হয়েছিল এবারে তার সমাপ্তি ঘটল ।
গত বর্ষায় কয়েকজন বন্ধু মিলে পদ্মার ভাঙ্গন দেখতে গেছিলাম ।বড় বড় পাড় ভেঙ্গে নদীতে পড়ছে আর অনেক জোড়ে শব্দ হচ্ছে তারপর বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে ।আমি দোকান থেকে রাস্তায় বের হয়ে হাঁটা শুরু করলাম ।এতদিন পর হটাৎ সেই ভাঙ্গনের কথা কেন মাথায় আসলো বুঝলাম না ।মনে হল সেই শব্দ এখনো শুনতে পাচ্ছি ।আমার বুকে তো কোন নদী নেই তবে কেন আমি পাড় ভাঙ্গার শব্দ শুনছি!!সিগারেট ঠোঁটেই আছে,তখনও আগুন দেয়া হয়নি ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া মুটামুটি ভালো লাগল... ধন্যবাদ
মোঃ মোখলেছুর রহমান বনলতা শব্দটি গল্পে চমৎকারিত্ব এনেছে,বর্ননা ভঙ্গিও ভাল লাগল,তবে শুরুর প্যারাটা প্রবন্ধের জন্য ভাল হত,প্রথমে তাই মনে করেছিলাম।লেখনি চলতে থাকলে ভাল লেখা বেরিয়ে আসবে নিশ্চিত।ভোট রইল।
ভূবন Valo legeche tobe r ektu guchanor darkar
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী পাঠক হিসেবে কিছু একটা বলতে চাই; গল্পটা তেমন মননশীল হল না, কেমন যেন তাড়াহুড়া। গল্পের ধারাবাহিকতায় কোনো মিল নেই, মনে হল ডিল মারছি আর সাথে সাথে আম পড়ে গেছে। গল্পের ভূমিকা দিতে গিয়ে তো আপনি ইতিহাস করে ফেলছেন। গল্পের ভূমিকা দেয়ার কি দরকার? আপনাকে যখন কেউ প্রশ্ন করে তখনই ভূমিকা আলোচনা করাটা শ্রেয়। গল্পের নামটা বেশ অমায়িক, কিন্তু বিস্তারিত আলোচনাতে আপনি সুন্দর করতে পারেননি। বানানের প্রতি আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আরও কয়েকটা চরিত্র যোগ করার চেষ্টা করবেন। আর আপনার ধারাবাহিকতার চেয়ে চরিত্রের ধারাবাহিকতা বেশি তুলতে চেষ্টা করবেন। যা হোক, সামনে আরও ভালো পাবো এমন আশা করে অনেক শুভকামনা ও ভোট রইলো। এগিয়ে যান দীপ্ত পায়ে.....
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি বোঝাই যায় তাড়াহুড়ো করে লেখা....বেশ ভালো...শেষটাও ভালো....একটু যত্ন নিলে আরও ভালো হবে ...শুভ কামনা সহ সুভেচ্ছা রইলো....
ফেরদৌস আলম প্রথম " শুরুর আগে: ঋণ শব্দটার সাথে পরিচিত নয় এমন লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য ।ল্যাটিন শব্দ ‘ক্রেডে’ (সংস্কৃত-ল্যাটিন ক্রাড) থেকে উদ্ভূত ইংরেজি ক্রেডিট শব্দটিকে অর্থনীতিতে ঋণ হিসেবে ধরা হয় ।আবার কোন একজনের প্রতি অন্যজনের আস্থাও প্রকাশ করে এই ঋণ শব্দটি ।মানে কাউকে বিশ্বাস করে পরবর্তীতে ফেরত পাবার আশায় কাউকে অর্থ বা পণ্য ধার দেয়াকে আমরা মূলত ঋণ হিসেবে বুঝে থাকি । বিভিন্নরকম ঋণের সাথে আমরা পরিচিত " না দিলেই মনে হয় ভাল হত। তবে ভাল লেগেছে ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
জহিরুল ইসলাম ভাললাগলো বেশ,,, ভোট রইল
ইমরানুল হক বেলাল অসাধারণ গল্প । মন ছুঁয়ে গেল পাঠে ।
রুহুল আমীন রাজু বেশ লাগলো গল্পটি ... লেখককে শুভেচ্ছা । আমার পাতায় আমন্ত্রণ ।
আপনাকেও শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ ।

০৮ জুন - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪