ভোরে ঘরে ফিরে, বকুল দেখে তার তিন সন্তান ঘুমুচ্ছে। কি সুন্দর করেই না ঘুমুচ্ছে ওরা, নিষ্পাপ তিনটি মুখ!বড় ছেলেটার বয়স দশ, মেজোটার আট আর ছোট মেয়েটার পাঁচ বছর।ওদের বাবা মারা গেছে দু'বছর হলো,গলায় ক্যান্সার হয়েছিল দুই বছর রোগে ভুগে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।অথচ এই লোক নদী ভাঙ্গনের গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিল, বউ আর ছেলেমেয়েদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিওয়ার জন্য কিন্তু জীবন যুদ্ধের কাছে পরাজিত হতে হল।বকুলের আজও মনে পরে ঢাকায় ওদের বাবার মৃত্যুর পর চাঁদা তুলে কাফনের কাপড় কিনতে হয়েছিল,ঘরে একটা পয়সাও ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর শোককেও বিদায় দিতে হয়েছিল তার, সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য ।কাজের অভাবে না খেয়েও থাকতে হয়েছে কোন সাহায্য পায়'নি কারো কাছে। রাস্তায় নেমে মাটি কাটা থেকে শুরু করে কি না করেছে বকুল...!!
মা ছাড়া বাচ্চাগুলো সারাদিন বস্তিতে ছুটোছুটি করতো।একবারতো ছোট ছেলেটি হারিয়েই গিয়েছিল অনেক খুঁজার পর পেয়েছিল। যেদিন ডিম ভাজতে গিয়ে ছোট মেয়েটি গা পুড়িয়ে ফেলেছিল,সেইদিন পাশের বাড়ির খালা বলেছিল "তোরে কইছিলাম..... দিনের কাম বাদদে , পোলাপাইনডি কত্তো কষ্ট করে তুই বাইত্তে থাকলে ওগো দেইখা রাখতে পারতি না "! এখনো ভাবলে গা আঁতকে উঠে ভয়ে।তারপর বাধ্য হয়েই দিনের কাজ বাদ দেয় বকুল। তৃপ্তির হাসি হেসে বকুল ভাবে "এই কামই ভালা,দিন ভোইরাতো পোলাপাইনডিরে চোখে চোখে রাখতে পারি"। পঁচিশ বছরের বকুল যেন নিষ্প্রাণ হওয়া কোন বকুল ফুল। সারারাতের উপার্জন পাঁচশত টাকার মধ্যে দুইশোত টাকাই খালাকে বকশিশ দিতে হয়,এটাই নাকি নিয়ম।
'ঐ মনি ইশকুলে যাবি না..?' তার মেয়ে একটা এনজিও স্কুলে পড়ে, আর ছেলেগুলো মাছের বাজারে কাজ করে। বকুলের বিশ্বাস ছেলেরা বড় হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন।
.
বট গাছের নিচে বকুল ওর সতেরো বছরের মেয়েকে নিয়ে বসে আছে।আজ বারো বছর পর ছেলেরা টাকা রোজগার করে বেশ ভালোই কোন অভাব নেই। তবুও বকুলের চাপা কষ্ট বুঝবার কেউ নেই। দুই ছেলের বউ'ই ঝগড়া করে।এক জনতো ঘৃণায় শ্বাশুড়ির সাথে কথাই বলে না,আরেক জন স্বামীর সাথে ঝগড়া করে বলে 'তোমার মায় আগে কি কু'কাম করতো মাইনসে কয়,আমার এডি হুনলে শরম করে।আমাগো পোলাপাইন ডাঙ্গর হইলে কি কইব....হুনি?আমি এই ব্যাডির লগে এ্যাহানে একখানে থাকমু না।'
এমন কথা পাশের ঘর থেকে শুনার পর বকুল ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে, যুবতী মেয়েকে সঙ্গে করে বকুলের যাওয়ার কোন যায়গা নেই। যেসব পুরুষ বকুলের খদ্দের ছিল, আজ তাদেরও ললুপ দৃষ্টি তার মেয়েটির দিকে।মেয়েটার বিয়েও হয় না, ছেলেপক্ষ মায়ের পূর্বের কাজ জানলেই পিছু হটে।কষ্টের মাঝে আজ নিজের চোখের জলও বকুলের শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
এ যেন পার্থিব জীবনে, ফুটুন্ত সেই বকুল,যা শোভা ছড়ানোর পূর্বেই শুকিয়ে, পথের মাঝে পদপিষ্ট হয়ে ধূলায় যায় গড়াগড়ি।যার ঠাঁই, না আছে ফুলদানিতে,না আছে কারো হাতে এমন'কি যে গাছে তার জন্ম সে গাছের তলায়ও তার ঠাঁই নেই,তাহলে যে গাছেরও শোভা কুলষিত হবে।
১৯ মে - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪